বাঁশির সুরে সুরে ৪৫ বছর ধরে ‘ঘটিগরম’ চানাচুর বিক্রি করেন আবুল
Published: 7th, April 2025 GMT
হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মতো মাথায় রঙিন লম্বা টুপি পরে বাঁশিতে সুর তুলে ৪৫ বছর ধরে ‘ঘটিগরম’ চানাচুর বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন যশোরের আবুল হোসেন।
‘ও কী গাড়িয়াল ভাই’, ‘মনে বড় আশা ছিল’, ‘প্রাণ সখী রে...’ এমন অসংখ্য গানের সুর তুলে আবুল হোসেন হাটে-বাজারে ধোঁয়া ওঠা ঘটিগরম চানাচুর বিক্রি করেন।
যশোর সদর উপজেলার এড়েন্দা গ্রামের বাসিন্দা আবুল। তাঁর বাবা কালু মিয়া ছিলেন কৃষক। বাবার পেশায় না গিয়ে তিনি হলেন চানাচুর বিক্রেতা। স্ত্রী, তিন মেয়ে ও দুই ছেলেকে নিয়ে ছিল তাঁর সংসার। তিন মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। বড় ছেলে রুটি-বিস্কুট তৈরির কারখানায় কাজ করেন। ছোট ছেলে ইমারত নির্মাণ কারিগরের সহযোগী। স্ত্রী কয়েক বছর ধরে অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী।
আবুল হোসেন জানালেন, দৈনিক ২০০ থেকে ৪০০ টাকা রোজগার হয় তাঁর। এ দিয়েই সংসার চলে। জীবনে বড় কোনো প্রত্যাশা নেই ষাটোর্ধ্ব আবুল হোসেনের। বাকি জীবনটা কাজ করে কাটিয়ে দিতে পারলেই খুশি তিনি। বাবার রেখে যাওয়া ৭ শতাংশ জমির ওপর তাঁর বসতবাড়ি। সেখানেই পরিবার নিয়ে বাস।
নিজের জীবনের কথা বলতে গিয়ে আবুল হোসেন বলেন, ৪৫ বছর আগে বিয়ে করেছেন। তখন কোনো কাজ ছিল না। সংসারে অভাব-অনটন। বাবার কাছ থেকে দেড় হাজার টাকা নিয়ে রঙিন পোশাক তৈরি করে সং সেজে ঘটিগরম চানাচুর বিক্রির সরঞ্জাম কিনে রাস্তায় নামেন। প্রথম দিন ১০০ টাকা বিক্রি হয়। প্রায় অর্ধেক লাভ হয়েছিল। সেই থেকে এই ব্যবসাতেই আছেন তিনি।
গতকাল রোববার রাতে আবুল হোসেনকে দেখা গেল যশোর জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সামনে বাঁশিতে গানের সুর তুলছেন। সেই সুর শুনে অনেকে ভিড় করছেন তাঁর কাছে। তাঁদের অনেকেই তাঁর কাছ থেকে কিনে নিচ্ছেন গরম–গরম ‘ঘটিগরম’ চানাচুর।
সেখানে কথা হয় যশোর শহরের কাজীপাড়া এলাকার বাসিন্দা সৈয়দ মিকাইল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি যখন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ি, তখন থেকেই আবুল হোসেন চাচার ঘটিগরমের ভক্ত। সঙ্গে তাঁর বাঁশির সুরেরও ভক্ত আমি। তাঁর ঘটিগরম অন্যদের চেয়ে স্বাদে ভিন্ন। তিনি ভালো মানের চিড়ার সঙ্গে বেশি পরিমাণ পেঁয়াজ দেন। এতেই এটা খেতে এত সুস্বাদু হয়। ১৫ বছর ধরে আমি তাঁর কাছ থেকে এই ঘটিগরমের স্বাদ নিচ্ছি।’
কথায় কথায় আবুল হোসেন বলেন, ‘তখন সবকিছুর দাম কম ছিল। শান্তি ছিল। এখন সবকিছুর দাম বেশি। শান্তি নাই। এখন মাসেও এক কেজি গরুর মাংস কেনা যাচ্ছে না।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
নওগাঁয় ১০ জনকে ঠেলে দিল বিএসএফ
নওগাঁর ধামইরহাট সীমান্ত দিয়ে ১০ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) ভোরে ধামইরহাট উপজেলার আগ্রাদ্বিগুন সীমান্ত পিলার ২৫৬/৭ এস কাছ দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হলে বিজিবির সদস্যরা তাদেরকে আটক করেন। তাদের মধ্যে দুজন পুরুষ এবং আটজন নারী।
বৃহস্পতিবার দুপুরে এসব তথ্য জানিয়েছেন পত্নীতলা ১৪ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন।
আরো পড়ুন:
গাংনী সীমান্ত দিয়ে ১৮ জনকে ঠেলে পাঠিয়েছে বিএসএফ
বড়লেখা সীমান্ত দিয়ে ১০ রোহিঙ্গাকে ঠেলে দিয়েছে বিএসএফ
আটকরা হলেন—আছমা বেগম (৪০), খাদিজা বেগম (৩৪), পাখি বেগম (২৪), রুমা বেগম (২৫), কাকলি আক্তার (২৭), রুজিনা আক্তার (৩৩), কোহিনুর বেগম (২৬), নাসরিন বেগম (৩৩), মঞ্জুরুল ইসলাম (৩৬), সুমন হোসেন (২৭)। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তারা প্রত্যেকেই বাংলাদেশের নাগরিক।
বিজিবি জানিয়েছে, আগ্রাদ্বিগুন বিওপির টহল কমান্ডার জেসিও সুবেদার মো. জিহাদ আলীর নেতৃত্বে একটি টহল দল সীমান্তের শূন্য লাইন থেকে আনুমানিক এক কিলোমিটার বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মহেষপুরে ওই ১০ জনকে ঘোরাঘুরি করতে দেখে আটক করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, তারা বিভিন্ন সময়ে অবৈধভাবে ভারতে যান। মুম্বাই শহরে পুরুষ দুজন রাজমিস্ত্রি হিসেবে এবং নারী আটজন গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতেন। সেখানে তাদেরকে আটক করে ভারতীয় পুলিশ। গত ২৯ জুলাই ভারতের হরিবংশীপুর বিএসএফ ক্যাম্পে তাদেরকে হস্তান্তর করা হয়। বৃহস্পতিবার ভোর রাতে বিএসএফ ওই ১০ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে দিলে বিজিবি টহল দল তাদের আটক করে। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
ঢাকা/সাজু/রফিক