মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যেভাবে দ্বিপক্ষীয় পর্যায়ে বাণিজ্যঘাটতি মোকাবিলার চেষ্টা করছেন, পৃথিবীর ইতিহাসে তা বিরল ঘটনা। এমন ঘটনা আগে কখনো দেখা যায়নি। এর মধ্য দিয়ে বাজার অর্থনীতি ছুড়ে ফেলে দিলেন ট্রাম্প।

আজ মঙ্গলবার পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সেন্টার ফল পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান।

যারা বিশ্বায়ন শুরু করেছিল, অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র, সেই তারা আজ বিশ্বায়ন ব্যবস্থা ফেলে দিচ্ছে। এ বাস্তবতায় বাংলাদেশসহ অন্যদের টিকে থাকতে হবে। এত দিন বিশ্বব্যবস্থা একভাবে চলেছে; এখন বিশ্বব্যবস্থা আরেকভাবে চলবে বলে মন্তব্য করেন রেহমান সোবহান। তিনি বলেন, এখন আর সারভাইভার অব দ্য ফিটেস্ট নয়, অর্থাৎ সেরা মানুষেরা টিকে থাকবে এই নীতি নয়, বরং যারা সবচেয়ে ভালো আলোচনা বা চুক্তি করতে পারবে, তারা টিকে থাকবে।

আজ রাজধানীর পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআিরআই) কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রেহমান সোবহান এসব কথা বলেন। ‘শুল্ক কারসাজির যুগে বাণিজ্যনীতি, বাংলাদেশ ও বৈশ্বিক পরিপ্রেক্ষিত’ শীর্ষক সেমিনার সঞ্চালনা করেন পিআরআইয়ের চেয়ারম্যান জাইদী সাত্তার। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান।

নিয়মভিত্তিক বাণিজ্যব্যবস্থা থেকে পৃথিবী যেন আবার সেই স্তালিন যুগের কমান্ড অর্থনীতিতে চলে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন রেহমান সোবহান। তিনি বলেন, অর্থনীতি ও বাণিজ্যকে রীতিমতো অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। অর্থনীতির সমস্যা অর্থনীতির নিয়মে সমাধান করা হচ্ছে না, বরং অন্যান্য বিবেচনায় তা করা হচ্ছে।

ট্রাম্পে যেভাবে বাণিজ্যঘাটতি কমাতে চাচ্ছেন, সেভাবে ঘাটতি কমানো সম্ভব নয় বলে মনে করেন রেহমান সোবহান। বাংলাদেশও যেভাবে উচ্চ শুল্কের খড়্গ থেকে বাঁচতে রপ্তানি বৃদ্ধির কথা বলেছে, তা বাজার অর্থনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলে তাঁর মন্তব্য। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে কটন বা সুতা আমদানি করা হয় বিনা শুল্কে। সেই সুতা দিয়ে তৈরি পোশাক বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়। কিন্তু আমরা কি চাইলেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে সুতা রপ্তানি বাড়াতে পারব? আমরা বিভিন্ন ধরন, দাম ও বাজারের জন্য পোশাক উৎপাদন করি। ফলে সব পোশাক মার্কিন সুতা দিয়ে তৈরি করা যাবে না; কমান্ড ইকোনমির মতো হুকুম দিয়ে তো এই আমদানি বাড়ানো সম্ভব নয়।

পিআরআই চেয়ারম্যান জাইদী সাত্তার বলেন, নতুন করে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ইতিহাসে এটা খারাপ অধ্যায় হয়ে থাকবে। এটা শেষ ধাক্কা। আমরা কীভাবে সেখান থেকে বের হব, সেটা কেউ জানে না। যুক্তরাষ্ট্রও বাণিজ্যঘাটতিতে আছে, তারা যা উৎপাদন করে, তার চেয়ে বেশি খরচ করে। বাংলাদেশ চলতি হিসাবের ঘাটতিতে আছে, অর্থাৎ আমরা সঞ্চয়ের চেয়ে বেশি বিনিয়োগ করছি। এটা খারাপ কিছু নয়।

জাইদী সাত্তার আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বলছে, বাংলাদেশের করভার অনেক; নিয়মনীতিতে স্বচ্ছতা নেই। দুর্নীতি আছে, মেধাস্বত্ব অধিকার নেই। সরকার কর কমিয়ে দিতে পারবে, কিন্তু এর বাইরে যে সমস্যাগুলো আছে, তার সমাধান হবে কীভাবে।
২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যঘাটতি কমিয়ে আনতে বিশ্বের সব দেশের পণ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপ করেন। বাংলাদেশের পণ্যে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে ৩৭ শতাংশ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

‘আমার তো একেবারেই গন্ডারের চামড়া’

ভারতীয় বাংলা সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেত্রী শ্রীনন্দা শঙ্কর। সৃজিত মুখার্জির ‘এক যে ছিল রাজা’, সুমন ঘোষের ‘বসুপরিবার’-এর মতো সিনেমায় অভিনয় করেছেন এই তারকা। বলা যায়, টলিউডের প্রথম সারির সব নির্মাতার সঙ্গেই কাজ করেছেন এই নৃত্যশিল্পী। 

গত কয়েক বছর ধরে কলকাতা ছেড়ে মুম্বাইয়ে বসবাস করছেন শ্রীনন্দা। সেখানে সংসার, কাজ নিয়ে সময় কাটছে তার। তবে অভিনয়ে নেই। অভিনয় থেকে দূরে থাকার কারণ কী? ফের কী অভিনয়ে ফিরবেন না শ্রীনন্দা?  

ভারতীয় একটি গণমাধ্যমে আলাপকালে এসব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন শ্রীনন্দা। এ অভিনেত্রী বলেন, “টলিউডে যাদের সঙ্গেই কাজ করেছি, তাদের সঙ্গে এখনো আমার খুব ভালো সম্পর্ক। ভীষণ ভালো অভিজ্ঞতাও বলা চলে। মুশকিল হলো, বাংলা সিনেমায় তেমন বাজেট থাকে না। সত্যিই যদি খুব ভালো সিনেমা হয় বা এমন কোনো পরিচালক আমাকে অফার দেন যেখানে কোনো ভাবেই ‘না’ করব না। আমি নিশ্চয়ই আবার অভিনয়ে ফিরব।”

আরো পড়ুন:

কলকাতায় গ্রেপ্তার বাংলাদেশি অভিনেত্রী

পরিচালকের আপত্তিকর মন্তব্য নিয়ে মুখ খুললেন শোলাঙ্কি

কিছু কিছু লোকের সঙ্গে কাজ করতে গিয়েও মাঝপথে থেমে গিয়েছেন শ্রীনন্দা। কারণ, তাদের সঙ্গে মানসিকভাবে মেলেনি। তার ভাষায়—“মুম্বাই, কলকাতা বা সাউথ ইন্ডাস্ট্রি যেখানেই হোক না কেন, আমি ভালো মানুষের সঙ্গে কাজ করতে চাই। কেউ এমন চরিত্রে সুযোগ দেন, যেখানে প্রয়োজনে টাকাটা ভুলে গিয়ে শুধু পরিচালকের নাম দেখেই কাজটা করব।”

কিছুটা ইঙ্গিপূর্ণভাবে শ্রীনন্দা বলেন, “কাজের পাশাপাশি আমার সংসারও রয়েছে। কর্মক্ষেত্রে এমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অবশ্যই পেতে হবে, যার জন্য সংসারটা ইগনোর করার কথা ভাবব। অর্থাৎ মনে হবে সংসার ফেলে এই সিনেমাটা আমাকে করতেই হবে। এই বয়েসে একটু কফি খেতে যাবেন? কাজ দেবেন? এগুলো করতে পারব না। সবাই তো চেনেই আমাকে। কাজ দিতে হলে দেবেন।”

সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব শ্রীনন্দা। অনেকে ভেবেছিলেন, এ মাধ্যমে কাজ করে টাকা আয় করে থাকেন। তাদের উদ্দেশে শ্রীনন্দা বলেন, “অনেকেরই ভ্রান্ত ধারণা এটাও আমার পেশা। এখান থেকে অনেক টাকা উপার্জন করা যায়। আমি নিজেও আগে বিষয়টা জানতাম না। পোস্ট করতে করতে বুঝেছি। আমি এখন মুম্বাইয়ে মায়ের সঙ্গে পুরোদমে নাচের স্কুল চালাচ্ছি। এখন মোট ছয়টা ব্রাঞ্চ এবং ছাত্রছাত্রীর সংখ্যাও নেহাতই কম নয়। সব মিলিয়ে ভালো আছি।”

সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রলের শিকার হন শ্রীনন্দা। এ বিষয়ে তিনি বলেন, “আমার তো একেবারেই গন্ডারের চামড়া হয়ে গিয়েছে। কয়েকদিন আগে আমাকে একজন বলেছিলেন, ‘রিল মামনি’। আমি আর মা এটা শুনে হেসে গড়িয়ে পড়েছি। মাঝেমধ্যে এসব বেশ মজাও লাগে। তবে যে পরিমাণ ভালোবাসা পাচ্ছি, সেটা খুব মন থেকেই ভক্তরা দিচ্ছেন বলে আমার বিশ্বাস। আমি মনে করি, এটা আমার জীবনে আশীর্বাদ।”

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ