বাজার অর্থনীতি ছুড়ে ফেলেছেন ট্রাম্প: রেহমান সোবহান
Published: 8th, April 2025 GMT
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যেভাবে দ্বিপক্ষীয় পর্যায়ে বাণিজ্যঘাটতি মোকাবিলার চেষ্টা করছেন, পৃথিবীর ইতিহাসে তা বিরল ঘটনা। এমন ঘটনা আগে কখনো দেখা যায়নি। এর মধ্য দিয়ে বাজার অর্থনীতি ছুড়ে ফেলে দিলেন ট্রাম্প।
আজ মঙ্গলবার পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সেন্টার ফল পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান।
যারা বিশ্বায়ন শুরু করেছিল, অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র, সেই তারা আজ বিশ্বায়ন ব্যবস্থা ফেলে দিচ্ছে। এ বাস্তবতায় বাংলাদেশসহ অন্যদের টিকে থাকতে হবে। এত দিন বিশ্বব্যবস্থা একভাবে চলেছে; এখন বিশ্বব্যবস্থা আরেকভাবে চলবে বলে মন্তব্য করেন রেহমান সোবহান। তিনি বলেন, এখন আর সারভাইভার অব দ্য ফিটেস্ট নয়, অর্থাৎ সেরা মানুষেরা টিকে থাকবে এই নীতি নয়, বরং যারা সবচেয়ে ভালো আলোচনা বা চুক্তি করতে পারবে, তারা টিকে থাকবে।
আজ রাজধানীর পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআিরআই) কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রেহমান সোবহান এসব কথা বলেন। ‘শুল্ক কারসাজির যুগে বাণিজ্যনীতি, বাংলাদেশ ও বৈশ্বিক পরিপ্রেক্ষিত’ শীর্ষক সেমিনার সঞ্চালনা করেন পিআরআইয়ের চেয়ারম্যান জাইদী সাত্তার। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান।
নিয়মভিত্তিক বাণিজ্যব্যবস্থা থেকে পৃথিবী যেন আবার সেই স্তালিন যুগের কমান্ড অর্থনীতিতে চলে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন রেহমান সোবহান। তিনি বলেন, অর্থনীতি ও বাণিজ্যকে রীতিমতো অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। অর্থনীতির সমস্যা অর্থনীতির নিয়মে সমাধান করা হচ্ছে না, বরং অন্যান্য বিবেচনায় তা করা হচ্ছে।
ট্রাম্পে যেভাবে বাণিজ্যঘাটতি কমাতে চাচ্ছেন, সেভাবে ঘাটতি কমানো সম্ভব নয় বলে মনে করেন রেহমান সোবহান। বাংলাদেশও যেভাবে উচ্চ শুল্কের খড়্গ থেকে বাঁচতে রপ্তানি বৃদ্ধির কথা বলেছে, তা বাজার অর্থনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলে তাঁর মন্তব্য। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে কটন বা সুতা আমদানি করা হয় বিনা শুল্কে। সেই সুতা দিয়ে তৈরি পোশাক বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়। কিন্তু আমরা কি চাইলেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে সুতা রপ্তানি বাড়াতে পারব? আমরা বিভিন্ন ধরন, দাম ও বাজারের জন্য পোশাক উৎপাদন করি। ফলে সব পোশাক মার্কিন সুতা দিয়ে তৈরি করা যাবে না; কমান্ড ইকোনমির মতো হুকুম দিয়ে তো এই আমদানি বাড়ানো সম্ভব নয়।
পিআরআই চেয়ারম্যান জাইদী সাত্তার বলেন, নতুন করে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ইতিহাসে এটা খারাপ অধ্যায় হয়ে থাকবে। এটা শেষ ধাক্কা। আমরা কীভাবে সেখান থেকে বের হব, সেটা কেউ জানে না। যুক্তরাষ্ট্রও বাণিজ্যঘাটতিতে আছে, তারা যা উৎপাদন করে, তার চেয়ে বেশি খরচ করে। বাংলাদেশ চলতি হিসাবের ঘাটতিতে আছে, অর্থাৎ আমরা সঞ্চয়ের চেয়ে বেশি বিনিয়োগ করছি। এটা খারাপ কিছু নয়।
জাইদী সাত্তার আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বলছে, বাংলাদেশের করভার অনেক; নিয়মনীতিতে স্বচ্ছতা নেই। দুর্নীতি আছে, মেধাস্বত্ব অধিকার নেই। সরকার কর কমিয়ে দিতে পারবে, কিন্তু এর বাইরে যে সমস্যাগুলো আছে, তার সমাধান হবে কীভাবে।
২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যঘাটতি কমিয়ে আনতে বিশ্বের সব দেশের পণ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপ করেন। বাংলাদেশের পণ্যে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে ৩৭ শতাংশ।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা বিভিন্ন দলের
ইরানে ইসরায়েলের হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন দল। অবিলম্বে এই হামলা ও গাজায় গণহত্যা বন্ধের দাবি জানিয়ে এ বিষয়ে দুনিয়ার শান্তিকামী দেশ ও বিশ্ববাসীকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে তারা। গতকাল রোববার পৃথক বিবৃতিতে এসব দলের নেতারা এই দাবি জানান। তারা ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ঘোষণা এবং মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ-ইহুদিবাদী ষড়যন্ত্র প্রতিরোধ ও ইরানের জনগণের পাশে দাঁড়াতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহমুদুল হাসান মানিক ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নুর আহমদ বকুল এক বিবৃতিতে বলেন, বর্তমান সময়ের সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ও তার নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প ইহুদিবাদী রাষ্ট্র ইসরায়েলকে দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘস্থায়ী সংকট সৃষ্টি করে রেখেছে। একতরফা যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়ে ইরানের রাজনৈতিক সামরিক অগ্রযাত্রাকে রুখতে চেষ্টা করছে। যুদ্ধবাদী রাষ্ট্র ইসরায়েলকে এখনই থামতে হবে। অন্যায়ভাবে ইরানের শিশু-নারী ও সাধারণ নাগরিকদের ওপর বোমা ও মিসাইল হামলা বন্ধ করতে হবে।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক পৃথক বিবৃতিতে বলেন, ইরানের পরমাণু স্থাপনাসহ গুরুত্বপূর্ণ সামরিক অঞ্চল লক্ষ্য করে ইসরায়েলের বেপরোয়া ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা রাষ্ট্রীয় ভয়ানক সন্ত্রাসী তৎপরতা। পরিকল্পিত এই হামলা আন্তর্জাতিক সব ধরনের বিধিবিধানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর শামিল। জাতিসংঘকেও এরা পুরোপুরি ঠুঁটো জগন্নাথে পরিণত করেছে।