তেল রান্নাঘরের একটি অপরিহার্য উপাদান, যা বিভিন্ন খাবারের স্বাদকে প্রাণবন্ত করে তোলে। খাবারে স্বাদ বাড়ালেও তেলের অতিরিক্ত ব্যবহার স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। আমাদের জানা উচিত সুস্বাস্থ্যের জন্য রান্নায় কী পরিমাণ ব্যবহার করব।
তেল কেন গুরুত্বপূর্ণ
তেল কেবল স্বাদ যোগ করে না, তেলের মধ্যে প্রয়োজনীয় ফ্যাটি এসিড এবং ভিটামিন এ, ডি, ই এবং কে রয়েছে। তেলের স্বাস্থ্যকর চর্বি শরীরের পুষ্টিগুলোকে আরও ভালোভাবে শোষণ করতে পারে। আপনি কোন ধরনের তেল রান্নায় বেছে নেন এবং কী পরিমাণ তেল ব্যবহার করেন তা পার্থক্য তৈরি করতে পারে। এক চা চামচ তেল থেকে আমরা ৯ কিলোক্যালরি শক্তি পেয়ে থাকি, যা শরীরে সহজে শক্তি সরবরাহ করে।
তেল কেন সীমিত করবেন
অতিরিক্ত তেল ব্যবহারের ফলে শরীরে যেসব সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে
lঅনেক তেলে স্যাচুরেটেড ফ্যাট রয়েছে বেশি, যা খারাপ কোলেস্টেরল এলডিএল বাড়াতে পারে।
lতেলে ক্যালরির পরিমাণ বেশি থাকে এবং প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত গ্রহণে শরীরে ক্যালরি জমে ওজন বাড়িয়ে তোলে।
lঅতিরিক্ত তেল ব্যবহারে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। সুস্বাস্থ্যের জন্য পরিমিত পরিমাণে তেল গ্রহণ করা উচিত।
দৈনিক তেল গ্রহণের পরিমাণ
একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক ৩ থেকে ৪ চা চামচ তেল গ্রহণ করা উচিত, যেটা প্রায় ১৫ থেকে ২০ মিলি। এর পরিমাণ প্রতি মাসে ৫০০ থেকে ৬০০ মিলি। যদি শারীরিকভাবে আরও সক্রিয় থাকেন তাহলে একটু বেশি হতে পারে। যাদের ওজন বা কোলেস্টেরল বেশি কিন্তু নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান তারা দৈনিক ২ থেকে ৩ চা চামচ তেল কিংবা তারও কম গ্রহণ করতে পারেন। তবে তা শারীরিক অবস্থাভেদে হতে পারে। মনে রাখবেন সব তেলেই ক্যালরির পরিমাণ বেশি, যা প্রতি টেবিল চামচ প্রায় ১২০ ক্যালরি, তাই তেলের প্রতিটি ফোঁটা গুরুত্বপূর্ণ। এটি সামান্য পরিমাণ মনে হলেও আপনি কত ক্যালরি পাচ্ছেন তেলের ভেতর থেকে তা জানতেও পারছেন না।
সঠিক তেল নির্বাচন করুন
সব তেল সমানভাবে তৈরি হয় না। জলপাই তেল, সরিষার তেল এবং তিলের তেল অসম্পৃক্ত চর্বির কারণে স্বাস্থ্যকর বলে মনে করা হয়। ঘি, নারকেল তেল পরিমিত পরিমাণে খাওয়া ভালো। কারণ এতে স্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিমাণ বেশি। তেলের মিশ্রণ পুষ্টির ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে; তবে এর পরিমাণ গুরুত্বপূর্ণ। মাঝে মধ্যে তেল পরিবর্তন করা বা মিশ্রিত তেল ব্যবহার করলে এর বিভিন্ন উপকারিতা পেতে পারেন। কারণ তেলে বিভিন্ন ধরনের চর্বি ও পুষ্টি থাকে; যার ফলে শরীর নানা ধরনের স্বাস্থ্যকর চর্বি থেকে উপকৃত হতে পারে। যেমন জলপাই তেল, নারকেল তেল, সরিষার তেল, রাইস ব্রান তেল, ক্যানোলা তেল। সালাদে জলপাই তেল ব্যবহার করা ভালো।
তেল নিয়ন্ত্রণ রাখার টিপস
খাবারে তেলের ভারসাম্য ঠিক রাখতে আপনাকে ছোট ছোট কিছু পরিবর্তন করতে হতে হবে।
lতেলের পরিমাণ সারাদিন কতটুকু খাবেন তা মেপে একটি ছোট বাটি বা বোতলে স্টক করে রাখুন।
lপরিবারের সদস্য বা যে রান্না করবেন তাঁকে প্রশিক্ষণ দিন রান্নায় তেলের ব্যবহার সম্পর্কে, কীভাবে কতটুকু রান্না করবেন। এটা তাঁর নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত করুন।
lননস্টিক রান্নার পাত্র ব্যবহার করুন। এটি তেলের ব্যবহার কমাতে সাহায্য করে।
lতেল স্প্রে বা ব্রাশ ব্যবহার করে দেখুন। বিশেষ করে সালাদ এবং সবজি ভাজার ক্ষেত্রে।
lস্বাদের জন্য অতিরিক্ত তেল ব্যবহার না করে ভেষজ মসলা, লেবুর রস, ভিনেগার, সস এসব দিয়ে রান্না করুন।
লেখক: পুষ্টিবিদ, রাইয়ান হেলথ কেয়ার হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার, দিনাজপুর v
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ত ত ল ব যবহ র ব যবহ র কর র ব যবহ র পর ম ণ ব র পর ম ণ র জন য গ রহণ
এছাড়াও পড়ুন:
ভাঙা বেড়িবাঁধ, আমন নিয়ে দুশ্চিন্তায় মাতারবাড়ীর চাষিরা
চলতি মৌসুমে আমন চাষ করার জন্য এক ব্যক্তির এক একর জমি ১৮ হাজার টাকায় ইজারা নেন কক্সবাজারের মহেশখালীর সাগর উপকূলীয় মাতারবাড়ী ইউনিয়নের নয়াপাড়ার কৃষক জাকের হোছাইন। এই মাসের শেষের দিকে আমন চাষ শুরু করার কথা তাঁর। তবে সাগরে বিলীন হওয়া বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে বর্ষায় ফসলি জমিতে পানি ঢুকে পড়ার শঙ্কায় আমনের চাষাবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কেবল জাকের হোছাইন নন, তাঁর মতো একইভাবে আমনের চাষাবাদ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন মাতারবাড়ী ইউনিয়নের অন্তত ২০০ চাষি।
কুহেলিয়া নদীর পশ্চিমে আর বঙ্গোপসাগরের পূর্বে জেগে ওঠা প্রায় ১২ বর্গকিলোমিটার চর নিয়ে মহেশখালীর মাতারবাড়ী ইউনিয়ন। এর পশ্চিম পাশে রয়েছে আট কিলোমিটার বেড়িবাঁধ, যার মধ্যে প্রায় এক কিলোমিটার ভাঙা অবস্থায় পড়ে রয়েছে এক দশক ধরে। ওই অংশ দিয়ে আশপাশের লোকালয় ও ফসলি জমিতে পানি ঢুকে পড়া ঠেকাতে সর্বশেষ চার বছর আগে বসানো হয়েছিল জিও টিউব। তবে গত ২৯ ও ৩০ মে নিম্নচাপের প্রভাবে সাগরের উত্তাল ঢেউয়ে জিও টিউব বিলীন হয়ে গেছে। এ অবস্থায় বেড়িবাঁধের ওই ভাঙা অংশ দিয়ে লোকালয় ও ফসলি জমিতে পানি ঢুকে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সম্প্রতি তিন দফায় লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে ভেঙে গেছে অন্তত ১০টি কাঁচা বসতঘর। স্থানীয় মানুষের চোখে ঘুম নেই। চাষিরাও আমন ধানের চাষাবাদ আদৌ করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে উৎকণ্ঠায় রয়েছেন।সরওয়ার কামাল, সদস্য, মাতারবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদবেড়িবাঁধের ক্ষতিগ্রস্ত অংশটি ইউনিয়নের ষাইটপাড়া এলাকায়। গত শনিবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভাঙা বেড়িবাঁধের পাশে বসানো জিও টিউব সাগরে বিলীন হয়ে গেছে। সাগরের পানি ঢেউয়ের সঙ্গে বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশ উপচে পাশের ফসলি জমিতে ঢুকে পড়ছে। সেখানে স্থানীয় মাঝের ডেইল এলাকার বাসিন্দা আবদুল কাদেরের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, বেড়িবাঁধের জিও টিউব বিলীন হওয়ার দুই সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দারা খুবই উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। আমনচাষিরা চাষাবাদ করতে পারবেন কি না তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। মানুষ তাঁদের ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন। জরুরি ভিত্তিতে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সংস্কার করা উচিত।
মাতারবাড়ী ইউনিয়নে দায়িত্বরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নুরুল হোছাইন মোহাম্মদ তৈয়ব প্রথম আলোকে বলেন, ভাঙা বেড়িবাঁধের কারণে ষাইটপাড়াসহ আশপাশের চারটি গ্রামে জলাবদ্ধতার শঙ্কা রয়েছে। এ কারণে এসব এলাকার অন্তত ৮০ একর জমিতে আমন চাষাবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় মাতারবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য সরওয়ার কামাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘সম্প্রতি তিন দফায় লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে ভেঙে গেছে অন্তত ১০টি কাঁচা বসতঘর। স্থানীয় মানুষের চোখে ঘুম নেই। চাষিরাও আমন ধানের চাষাবাদ আদৌ করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে উৎকণ্ঠায় রয়েছেন।’ ইউপি সদস্য সরওয়ার কামাল আরও বলেন, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুম এলেই এলাকার মানুষের উদ্বেগ বাড়ে। অথচ ভাঙা বেড়িবাঁধ সংস্কারের কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না পানি উন্নয়ন বোর্ড।
মহেশখালীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. হেদায়েত উল্যাহ প্রথম আলোকে বলেন, জরুরি ভিত্তিতে বেড়িবাঁধ সংস্কারের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বলা হয়েছে। জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নুরুল ইসলাম বলেন, সম্প্রতি নিম্নচাপের প্রভাবে মহেশখালী ও কুতুবদিয়ায় অন্তত ১ হাজার ৬০০ মিটারের বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আপাতত বর্ষা মৌসুমে জোয়ারের পানি টেকানোর জন্য ভাঙা বেড়িবাঁধের ওপর জিও টিউব বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। শিগগিরই কাজ শুরু হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের কক্সবাজারের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. জামাল মুর্শিদ প্রথম আলোকে বলেন, মাতারবাড়ী ও ধলঘাট ইউনিয়নে স্থায়ী বাঁধের জন্য প্রায় ৩ হাজার ৮২৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় চারপাশে ১৭ দশমিক ৯ কিলোমিটার সুপার ডাইকের আদলে স্থায়ী বেড়িবাঁধ ও ৭টি স্লুইসগেট নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া খনন করা হবে সাড়ে ১৯ কিলোমিটার কুহেলিয়া নদী। গত এপ্রিলে প্রকল্প প্রস্তাবনা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।