বর্ষবরণ উৎসবে যেসব খেলায় মেতে ওঠেন পাহাড়ের মানুষ
Published: 9th, April 2025 GMT
বনে-জঙ্গলে জন্ম নেয় ঘিলালতা। সেই লতায় শিমজাতীয় বীজ পাওয়া যায়, যা পরিচিত ‘ঘিলা’ নামে। পাহাড়ের মানুষের নানা ঐতিহ্য-বিশ্বাসের সঙ্গে যোগ রয়েছে লতাটির। চাকমা লোকসাহিত্যের অমর প্রেমকাহিনি রাধামন-ধনপুদির একটি পর্বে ঘিলা সংগ্রহ ও ঘিলা খেলার বিবরণ রয়েছে। ধনপুদির অনুরোধে রাধামন অনেক দূর থেকে ঘিলা সংগ্রহ করে নিয়ে আসেন। পরে ঘিলা খেলা নিয়ে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।
পাহাড়ে ঘিলা খেলার প্রচলন এখন তেমন নেই। তবে প্রতিবছর বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে এই খেলা আয়োজনের মধ্য দিয়ে ঐতিহ্যকে স্মরণ করতে দেখা যায় পাহাড়ি বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষকে। এবারও যার ব্যতিক্রম হয়নি। কেবল ঘিলা খেলা নয়, বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণের উৎসব ঘিরে পাহাড়ের প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় মানুষ এখন মেতে উঠেছে নাদেং, পত্তি, ফোর, বাঁশ খড়ম দৌড়, গুডুসহ বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী খেলায়।
বর্ষবরণ ও বর্ষবিদায় পাহাড়িদের প্রধান সামাজিক উৎসব। পাহাড়ি বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষ বিজু, বিহু, বৈসুক, সাংগ্রাই, চাংক্রানসহ নানা নামে বর্ষবরণ ও বর্ষবিদায়ের অনুষ্ঠান উদ্যাপন করে থাকেন। প্রতিবছর এপ্রিল মাসের শুরু থেকেই এসব ঘিরে পাহাড়ে উৎসবের আমেজ তৈরি হয়। এবার ৩ এপ্রিল থেকে রাঙামাটিতে জেলা পরিষদ ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের উদ্যোগ সাত দিনব্যাপী বিজু, সাংগ্রাই, বৈসুক, বিষু ও বিহু মেলা শুরু হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন সংস্থা, ক্লাব ও পাড়ার উদ্যোগে প্রত্যেক গ্রাম ও শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
পাহাড়ের বাসিন্দারা জানান, ‘নাদেং’ হলো লাটিম নিয়ে খেলা। বিশেষ করে চাকমা ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এই খেলাটি। দাড়িয়াবান্দা পাহাড়ে পরিচিত ‘ফোর’ নামে। ‘পত্তি’ বলা হয় বউচিকে। হাডুডুকে বলা ‘গুডু’। বর্ষবরণ-বর্ষবিদায়ে এ ছাড়া মহাসমারোহে আয়োজন করা হয় বলি খেলা। কোথাও কোথাও চলছে বাঁশ খড়ম দৌড়। এই দৌড়ে রণপা নিয়ে দৌড়ান প্রতিযোগীরা। উৎসবকে ঘিরে বাঁশ দিয়ে তৈরি বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র বাজানো হয়। যার মধ্যে রয়েছে খেংগরং, বাঁশি, ধুধুক ও শিঙা।
হাতে ঘিলা নিয়ে খেলায় মেতেছেন কয়েকজন.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ
এছাড়াও পড়ুন:
প্রাগে পুরস্কৃত ‘নট আ ফিকশন’,অনলাইনে মুক্তি ১ মে
প্রাগ চলচ্চিত্র উৎসব, ২০২৫ এ বেস্ট সুপার শর্ট ফিল্মের পুরষ্কার জিতেছে বাংলাদেশের ওয়ান শট ফিল্ম ‘নট আ ফিকশন’। এটি নির্মাণ করেছেন তরুণ নির্মাতা শাহনেওয়াজ খান সিজু। এর আগে তিনটি অস্কার এবং দুটি কানাডিয়ান স্ক্রিন এওয়ার্ডস কোয়ালিফাইং উৎসব ঘুরে আসা এই ছবিটি মূলত একটি ঐতিহাসিক দলীল যা গত দুই যুগে বাংলাদেশের আনাচে কানাচে ঘটে যাওয়া অসংখ্য বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে কথা বলে।
চেক প্রজাতন্ত্রের রাজধানী প্রাগের কিনো পাইলোটু থিয়েটারে গত ২৩ থেকে ২৬ এপ্রিল আসর বসেছিল ফিল্মফ্রিওয়ের র্যাং কিং এ পূর্ব ইউরোপের সেরা হিসেবে খ্যাত এই উৎসবের। উৎসবের এবারের আসরে জমা পরা ৯৫টি দেশের ৩২৬৬টি ছবির মধ্যে অফিসিয়াল সিলেকশন পেয়েছিলো ৭২টি ছবি যার মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র প্রতিনিধি ছিলো এই ছবিটি। গত ২৬ এপ্রিল প্রাগ সময় রাত ৯টায় উৎসবের গালা নাইটে ঘোষণা করা হয় পুরষ্কার বিজয়ীদের নাম যেখানে বেস্ট সুপার শর্ট ফিল্মের এওয়ার্ড পায় ‘নট আ ফিকশন’।
এই উৎসবের বিচারকের দায়িত্বে ছিলেন কান চলচ্চিত্র উৎসব ২০২৩ এর পাম ডি অর স্পেশাল মেনশন ‘শর্ট ফিল্ম’ বিজয়ী নির্মাতা ও অভিনেত্রী গুন্নুর মার্টিনসডোত্তির স্লুটার এবং পোলিশ নির্মাতা এলজবিয়েতা বেঙ্কোভস্কা যার ছবি ‘ওলেনা’ ২০১৩ সালের কান উৎসবের অফিসিয়াল সিলেকশন ছিলো। এর মাধ্যমেই ইউরোপীয়ান প্রিমিয়ার হলো বাংলাদেশের আইনবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে নির্মিত ছবি নট আ ফিকশনের।
পুরষ্কারটি গ্রহণ করার জন্য প্রাগে গিয়েছিলেন নির্মাতা শাহনেওয়াজ খান সিজু। বর্তমানে বার্লিনে অবস্থানরত এই নির্মাতা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, ‘এটাই আমার প্রথম আওয়ার্ড যে কারনে এখনো ঘোর কাটছে না। কাফকার শহরে এসে দেশের নাম উজ্জ্বল করতে পারছি এটাই গর্বের বিষয়। তবে এই পুরো জার্নিতে সবচেয়ে ভালো লেগেছে একজন বিচারকের কথা শুনে, তিনি বলেন আমার এই ছবিটির সাথে তীব্র প্রতিযোগিতা করছিলো ইউরোপেরই আরেকটি আলোচিত ছবি যার বাজেট প্রায় ৫০ হাজার ইউরো অথচ এওয়ার্ড উইনার হিসেবে ১০০ ইউরোরও কম বাজেটে নির্মিত নট আ ফিকশন কে নির্বাচিত করার পেছনে গল্প এবং নির্মাণের জোরকেই প্রাধান্য দিয়েছিলেন তারা, কারন বড় বাজেটের ছবি তো অহরহই হতে থাকে কিন্তু নট আ ফিকশনের মতো কাজ হয় কালেভদ্রে এবং তারা এই ছবিটিকে যথাযথ সম্মান জানাতে চেয়েছিলেন এখন একটা ভাল সংবাদ দিতে চাই, আগামী ১ মাসের মধ্যেই অনলাইনে মুক্তি পাবে নট আ ফিকশন।’’
নির্মাতা সিজুর সঙ্গে নট আ ফিকশনের সহ-প্রযোজক হিসেবে কাজ করছেন চলচ্চিত্র সমালোচক ও সাংবাদিক সাদিয়া খালিদ রীতি এবং লাইলি বেগম। ছবিটির গল্প এবং চিত্রনাট্য লিখেছেন মোকাররম রানা। এছাড়া অভিনেতা হিসেবে কাজ করেছেন উদয়ন রাজীব, নাঈমুল আলম মিশু, ঐশিক সামি আহমেদ, রুদ্রনীল আহমেদ, জাওয়াদ সৌধ এবং মিথুন।