চীনা পণ্যে উচ্চ শুল্ক ট্রাম্পের, বাংলাদেশের সামনে সুযোগ
Published: 12th, April 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চীনের পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে চলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চীনা পণ্যে ১৪৫ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। চীনও ১২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করছে। চীন-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এমন বাণিজ্যযুদ্ধে বাংলাদেশসহ প্রতিযোগী দেশগুলোর জন্য সামনে নতুন সুযোগ নিয়ে আসতে পারে।
বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদ ও রপ্তানিকারকেরা বলছেন, উচ্চ শুল্কের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে অধিকাংশ পণ্যে চীনের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা থাকবে না। ফলে চীন থেকে মার্কিন ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান ক্রয়াদেশ সরাবে। সঙ্গে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগও স্থানান্তরিত হবে। চীনের ব্যবসা নিতে হলে বাংলাদেশের দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ লাগবে। ব্যবসা সহজীকরণেও সরকারকে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য-ঘাটতি কমাতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর ন্যূনতম ১০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক (রেসিপ্রোক্যাল ট্যারিফ) আরোপ করেন। এ ছাড়া ৫৭ দেশের ওপর বিভিন্ন হারে বাড়তি পাল্টা শুল্ক বসানো হয়। যদিও গত বুধবার পাল্টা শুল্ক ৯০ দিনের স্থগিত করেন ট্রাম্প। তবে ন্যূনতম ১০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক সব দেশের পণ্যের ওপর বহাল রয়েছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধের মাত্রা বেড়ে চলেছে। শুরুতে ২ এপ্রিল চীনের পণ্যের ওপর ৩৪ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তা বেড়ে হয়েছে ১৪৫ শতাংশ। বিপরীতে চীনে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর শুল্ক বেড়ে হয়েছে ১২৫ শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্র-চীনের বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক বাজারে অস্থিরতা থাকবে। তাতে স্বল্প মেয়াদে পণ্যের চাহিদা কমে যেতে পারে। তবে মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশের জন্য সোনালি সময় আসবে। এম এ রাজ্জাক, চেয়ারম্যান, রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টচলমান বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে পণ্যবাণিজ্য ৮০ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারে বলে জানিয়েছে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও)। এটি মোট বৈশ্বিক বাণিজ্যের ৩ শতাংশ। সংস্থার প্রধান এনগোজি ওকোনজো-ইওয়েলা বলেন, চীন-যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধের ফলে বিশ্ব অর্থনীতির বড় ক্ষতি হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের সেনসাস ব্যুরোর তথ্যানুযায়ী, ২০২৪ সালে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ৫৮২ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হয়। তার মধ্যে চীন থেকে দেশটিতে ৪৩৮ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১৪৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে চীন।
চীনের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য খুবই নগণ্য। যুক্তরাষ্ট্রের সেনসাস ব্যুরোর তথ্যানুযায়ী, গত বছর উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য হয়েছে ১০ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে আমদানি করেছে ৮ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। দেশটি থেকে ২ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ।
বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র্যাপিড) চেয়ারম্যান এম এ রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র-চীনের বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক বাজারে অস্থিরতা থাকবে। তাতে স্বল্প মেয়াদে পণ্যের চাহিদা কমে যেতে পারে। তবে মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশের জন্য সোনালি সময় আসবে। কারণ, চীন থেকে ব্যবসা ও বিনিয়োগ দুটোই সরবে। চীন আগামী দিনে যতই দর-কষাকষি করুক না কেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে অতিরিক্ত শুল্ক শূন্য হবে না।’
বাংলাদেশের সুযোগ কোথায়
যুক্তরাষ্ট্রে শীর্ষ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হচ্ছে চীন। তারপর রয়েছে ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ, ভারত ও ইন্দোনেশিয়া। বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির একক বড় বাজার হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে রপ্তানি হওয়া পণ্যের মধ্যে ৮৭ শতাংশ তৈরি পোশাক।
ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশের পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছিল। তাতে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্য প্রবেশে দাঁড়াত ৫২ শতাংশ। পাল্টা শুল্ক স্থগিত হওয়ায় আগামী তিন মাস ন্যূনতম ১০ শতাংশ শুল্ক থাকছে। তাতে গড় মোট শুল্ক হবে ২৫ শতাংশ। তার বিপরীতে চীনের পণ্যে নতুন শুল্ক বসেছে ১৪৫ শতাংশ।
পাল্টা শুল্ক আরোপের কারণে তৈরি পোশাক, চামড়া পণ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের রপ্তানিকারকেরা মার্কিন ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ক্রয়াদেশ স্থগিতাদেশ পেতে শুরু করেছিলেন। এখন সেগুলো আবার ফিরছে। পাশাপাশি তৈরি পোশাকের নতুন ক্রয়াদেশের বিষয়ে খোঁজখবর নিতে শুরু করেছে ক্রেতা প্রতিষ্ঠান।
এমনটা জানিয়ে স্প্যারো গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শোভন ইসলাম গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানের কাছে থেকে বেশ কিছু ই-মেইল পেয়েছি। তারা চীন থেকে ক্রয়াদেশ সরাতে চায়। কারণ, দেশটির ওপর যে হারে শুল্ক বসেছে, তাতে চীন থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করে ব্যবসা করতে পারবে না মার্কিন ব্র্যান্ডগুলো।’
রপ্তানিকারকেরা বলছেন, উচ্চ শুল্ক আরোপের পর চীনের তৈরি পোশাকের ক্রয়াদেশ স্থগিত করতে শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান। চীন থেকে বর্তমানে জাহাজে করে যেসব পণ্য যাচ্ছে, সেগুলোও বাতিল করে দিচ্ছে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান।
চীনের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ শুল্ক আরোপকে বাংলাদেশের জন্য বড় সুযোগ মনে করেন তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সহসভাপতি ও টিম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল্লাহ হিল রাকিব। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘চীনের ব্যবসা নিতে আমাদের প্রতিযোগী দেশও চেষ্টা করবে। তবে আমাদের অতিরিক্ত উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে, যা অনেকের নেই। ঠিকমতো কাজ করতে পারলে আগামী ১০ বছরের জন্য সম্ভাবনা খুলে যাবে।’
আব্দুল্লাহ হিল রাকিব আরও বলেন, ‘চীনের তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকেরা এখন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাজারে নজর দিচ্ছে। তারা অনেক কম দাম প্রস্তাব করছে। কারণ, দেশটির সরকার প্রচুর ভর্তুকি দিচ্ছে। ফলে আমাদের যেসব প্রতিষ্ঠান শুধু ইইউ বাজারে পণ্য রপ্তানি করে তাদের প্রতিযোগিতা বেড়ে যেতে পারে।’
ইউএন কমট্রেড, চীনের কাস্টমস এবং ইউনাইটেড স্টেটস ইন্টারন্যাশনাল কমিশনের (ইউএসআইটিসি) তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয় ইলেকট্রনিকস পণ্য। তারপর রয়েছে হোম অ্যাপ্লায়েন্স, তৈরি পোশাক, চিকিৎসা পণ্য, কাঠের পণ্য, নির্মাণযন্ত্র, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি, ব্যাটারি, রাসায়নিক, কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, যাতায়াতের সরঞ্জাম, সেমিকন্ডাক্টর ইত্যাদি।
অন্যদিকে বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হওয়া পণ্যের মধ্যে রয়েছে তৈরি পোশাক, ক্যাপ, চামড়ার জুতা, হোম টেক্সটাইল, পরচুলা ও চামড়া পণ্য।
জানতে চাইলে অন্যতম শীর্ষস্থানীয় তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান অনন্ত গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরীফ জহির প্রথম আলোকে বলেন, ‘চীন থেকে রপ্তানি হওয়া উচ্চমূল্যের পোশাকের ক্রয়াদেশ সরবে। আমাদের সেসব পণ্য উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে বিনিয়োগ করতে হবে। চীন থেকে বিনিয়োগ সরবে। তার একটি অংশের গন্তব্য হবে বাংলাদেশ। তবে বিনিয়োগ নেওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষায়িত পোশাক, কৃত্রিম তন্তু, ইলেকট্রনিকস, জুতা, খেলনা পণ্য উৎপাদনকে অগ্রাধিকার দেওয়া দরকার। তবে তার আগে পাল্টা শুল্ক থেকে বাঁচতে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রথম আল ক শ ল ক আর প র জন য স র ব যবস আম দ র আমদ ন দশম ক
এছাড়াও পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় ৩ পুলিশ নিহত
যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যে বন্দুক হামলায় তিন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। গুরুতর আহত হয়েছেন আরো দুই পুলিশ।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় সময় দুপুর ২টার কিছু পর এক পারিবারিক বিরোধের তদন্তে গিয়ে হামলার মুখে পড়ে পুলিশ। খবর বিবিসির।
আরো পড়ুন:
শেরপুরে পুলিশের উপর হামলা: থানায় মামলা, গ্রেপ্তার ৪
ভাঙ্গা উপজেলা পরিষদ ও থানায় হামলা, ভাঙচুর-আগুন
পেনসিলভানিয়া স্টেট পুলিশের কমিশনার কর্নেল ক্রিস্টোফার প্যারিস জানান, অভিযুক্ত বন্দুকধারী পুলিশের গুলিতে ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছে।
গুলির ঘটনার পর ইয়র্ক কাউন্টির নর্থ কোডোরাস টাউনশিপের স্প্রিং গ্রোভ এলাকার একটি স্কুল জেলা সাময়িকভাবে ‘শেল্টার ইন প্লেস’ ঘোষণা করে। তবে পরে জানানো হয়, স্কুল কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, জনসাধারণের জন্য বর্তমানে কোনো সক্রিয় হুমকি নেই। এ ঘটনা ঘটে ফিলাডেলফিয়া থেকে প্রায় ১০০ মাইল (১৬০ কিমি) পূর্বে অবস্থিত ইয়র্ক কাউন্টির এক গ্রামীণ এলাকায়।
তারা বলছে, আগের দিন শুরু হওয়া একটি তদন্তের অংশ হিসেবে কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েছিলেন। তবে তদন্ত চলমান থাকায় বিস্তারিত কিছু প্রকাশ করা হয়নি।
পেনসিলভানিয়ার গভর্নর জোশ শাপিরো বিকেলে ঘটনাস্থলে পৌঁছে নিহতদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি বলেন, “আমরা তিনজন মহামূল্যবান প্রাণ হারালাম, যারা এই দেশকে সেবা দিয়েছেন। এই ধরনের সহিংসতা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। সমাজ হিসেবে আমাদের আরো ভালো করতে হবে।”
নিহত তিন কর্মকর্তার সম্মানে গভর্নর শাপিরো রাজ্যের সব সরকারি ভবন ও স্থাপনায় পতাকা অর্ধনমিত রাখার নির্দেশ দেন।
ঢাকা/ইভা