বৈশাখের প্রথম দিনটার প্রহর গুনতে শুরু করেছেন নিশ্চয়ই! লাল-সাদা পাঞ্জাবি আর জিন্স পরে সেদিন রঙের খেলা দেখাবেন বন্ধুদের। আর প্রিয় মানুষটিকে মনের কথাটা জানাবেন রঙচঙা সে দিনটায়। আপনিও কি সেই দলে?
মেলাই নববর্ষের প্রাণ
নববর্ষ পালনের ধরনটা একেক দেশে, একেক জাতির কাছে একেক রকম। বিদেশের কথা বাদ দিয়ে দেশে চোখ রাখি আমরা। যেমন ঢাকার নববর্ষের মূল আকর্ষণ আনন্দ শোভাযাত্রা, মেলা, পান্তা-ইলিশ এসবে। সারাদেশে কিন্তু ঢাকার মতো এমন ঘটা করে শোভাযাত্রা চোখে পড়ে না। তবে পুরো দেশের কথা ভাবলে মেলাই হচ্ছে নববর্ষের প্রধান বিষয়। বৈশাখী মেলা। রাজ্যের মানুষ হাজির হয় সেখানে। এখানে ধর্ম-বর্ণ এবং গোত্র বলতে কিছু নেই। এসব মেলার আয়োজক স্থানীয়রা। বৈশাখে সারাদেশ মেতে ওঠে রাজ্যের খেলাধুলায়। এখনও পহেলা বৈশাখে বলীখেলা হয় চট্টগ্রামে। পহেলা বৈশাখ আর বলীখেলা যেন অঙ্গাঙ্গী মিশে আছে। নববর্ষের উৎসবে আরও দেখা যায় মুরগির লড়াই, গরুর দৌড় ও ঘোড়দৌড়! ঐতিহ্যের হাত ধরে নতুন সংস্কার, নতুন সংস্কৃতি, নতুন চিন্তাধারার স্রোতে এসে আজ মিলেছে আমাদের উৎসব উদযাপন। জীর্ণ, পুরোনো, মিথ্যা, অসত্যকে হটিয়ে আবির্ভূত হয় নতুন, সত্য, নবজীবন। এর প্রতীক হয়ে ওঠে কালবৈশাখী। এই কালবৈশাখীই নববর্ষের সহচর। সুন্দরের অগ্রপথিক!
সেই আদিকাল থেকে
সেই আদিকাল থেকে মানুষ বছরের এই দিনে রোজকার চেনা রুটিন তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে মেতে উঠে উদযাপনে। ঘরবাড়ি ধুয়েমুছে ধোপদুরস্ত পোশাকে বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা করে পানাহারে মেতে ওঠে। জড়ো হয় বটতলায়, মাঠেঘাটে খেলায় বসে পড়ে, তড়াক-পুকুরে সাঁতার কাটে, ডুব দেয় ও নদ-নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সবকিছু মিলে দেশটা হয়ে ওঠে উৎসবমুখর।
চাতকের আকুতি
চৈত্র শেষে বৈশাখের শুরু থেকে দেখা যায় গ্রীষ্মের তাপদাহ। আকাশ থেকে যেন আগুন ঝরে এ সময়টায়। গাছের ছায়ায় ঝিমুয় পশু-পাখি। মানুষের হাতে তালপাখা। চাতকেরা চেঁচাতে থাকে পানির জন্য। চাতকের আকুতি মানুষের কণ্ঠেও ঝরে পড়ে হাহাকার হয়ে। মেঘের কাছ থেকে জল ভিক্ষা করাও বাংলা নববর্ষের আরও একটা সর্বজনীন অনুষ্ঠান। বাংলাদেশে এমন আকুতি কৃষিপ্রধান দেশেরই প্রতিধ্বনি। যতই আমরা শিল্প শিল্প বলে চেঁচাই, কৃষিই আমাদের গর্ব। কৃষি আমাদের সব। আর কে না জানে, এই কৃষিতে ভর করে বাংলা নববর্ষের এ উচ্ছ্বাস। এ উদ্দাম। এ উৎসব। খাজনা, হালখাতা, পুণ্যাহ– সবই কৃষিনির্ভর দেশের বৈশাখী আয়োজন।
সামলান নিজেকে
বয়সের প্রায় প্রতিটি ধাপেই রং পাল্টায় সৌন্দর্য। ঠিক বৈশাখের মতো করে। কিংবা বৈশাখ আমাদের নতুন করে তা মনে করিয়ে দেয়। সেটি যৌবনে যেমন হতে পারে, তেমনি বৃদ্ধ বয়সেও হতে পারে। এটাই স্বাভাবিক। বয়সের সঙ্গে এই সৌন্দর্যটা মেনে নিলে হয়। এই মানামানির চুক্তিটা প্রতিটি কাজের সঙ্গে করে নিতে পারলে সহজে শৃঙ্খলে চলে আসে যাযাবর জীবনটাও!
বরণ করুন হাসি মুখে
বছর ঘুরে আবার আসছে পহেলা বৈশাখ। এ বিশেষ দিনটিকে সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের মিশেলে সাজাতে এর মধ্যে শুরু হয়েছে নানা প্রস্তুতি। এ প্রস্তুতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ আপনি। বিগত বছরের সব দুঃখকে ভুলে নতুন বছরকে বরণ করে নিন হাসিমুখে। প্রস্তুতি নিন বৈশাখের সঙ্গে নিজেকে রাঙানোর। প্রিয় মানুষটিকে মনের কথা জানানোর জন্য বেছে নিতে পারেন এই রঙচঙে দিনটিকে! u
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৬০ দিন পর শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীরা, উৎসবের আমেজ
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) দীর্ঘ ১৬০ দিন পর একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে টানা বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে এসেছেন। সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে বইছে উৎসবের আমেজ।
সকালে কুয়েট ক্যাম্পাসে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস। ছাতা মাথায় দল বেঁধে ছুটছেন ক্লাসরুমের দিকে। কখনো এক ছাতার নিচে দু-তিনজন। কারও সঙ্গে অভিভাবকও এসেছেন। সকাল নয়টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি শিক্ষাবর্ষের প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী ক্লাসে যোগ দেন। নতুন উপাচার্য অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে শ্রেণি কর্মসূচি পর্যবেক্ষণ করেন।
ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (ইসিই) বিভাগের ২২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী দীপ্ত বলেন, ‘আমাদের প্রায় এক সেমিস্টার নষ্ট হয়ে গেছে। এই সময়টা খুব অস্বস্তিতে কেটেছে। ক্ষতি যা হওয়ার হয়েছে, তবে এখন আবার ক্লাস শুরু হওয়াটা ইতিবাচক দিক। আমরা আশাবাদী।’ একই ব্যাচের শিক্ষার্থী আম্মান বলেন, ‘অনেক দিন জীবনটা থেমে ছিল। আজকের দিনটা বিশেষ মনে হচ্ছে। ঠিক যেন স্কুলজীবনের প্রথম দিনের মতো। সব হতাশা কাটিয়ে আমরা অনেকটা নতুন করে শুরু করছি।’
হুমায়ুন কবির নামের এক অভিভাবক বলেন, ‘আমার ছেলে বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পড়ে। পাঁচ মাস ধরে ক্লাস বন্ধ থাকায় ও মানসিকভাবে খুব চাপের মধ্যে ছিল। একসময় অসুস্থও হয়ে পড়ে। কুয়েটে এমন পরিস্থিতি আগে দেখিনি। কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করলে হয়তো আগেই খুলে যেত। তারপরও এখন অন্তত খুলেছে, এটা বড় স্বস্তি।’
কুয়েটের ছাত্র পরিচালক আবদুল্লাহ ইলিয়াস আক্তার বলেন, আজ থেকে কুয়েটে ক্লাস শুরু হয়েছে। তবে এখনো সব শিক্ষার্থী আসেননি। যাঁদের কেবল ক্লাস রয়েছে, তাঁরা অংশ নিচ্ছেন। যাঁদের পরীক্ষা ছিল, তাঁরা প্রস্তুতির জন্য কিছুটা সময় চেয়েছে। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন হবে ১৪ আগস্ট, ক্লাস শুরু ১৭ আগস্ট।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। ওই রাতেই তৎকালীন উপাচার্য ও কয়েকজন শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ ওঠে। এরপর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২৬ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ মাছুদ ও সহ-উপাচার্য অধ্যাপক শরিফুল আলমকে অব্যাহতি দেয়। ১ মে চুয়েটের অধ্যাপক হজরত আলীকে অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনার বিচার দাবিতে ৪ মে থেকে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা দেয় শিক্ষক সমিতি। এরপর কোনো শিক্ষকই ক্লাসে ফেরেননি। শিক্ষক সমিতির বিরোধিতার মুখে হজরত আলী দায়িত্ব পালন করতে না পেরে ২২ মে পদত্যাগ করেন।
এরপর ১০ জুন নতুন উপাচার্য নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয় সরকার। সেই ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার কুয়েটের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী। পরদিন শুক্রবার তিনি খুলনায় এসে দায়িত্ব নেন। দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় আন্দোলন কর্মসূচি তিন সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে গতকাল সোমবার ক্লাস শুরুর নোটিশ জারি করা হয়।