বাংলাদেশ কী কী করবে, জানতে চায় যুক্তরাষ্ট্র
Published: 12th, April 2025 GMT
মার্কিন পণ্য আমদানিতে শুল্ক ও অশুল্ক বাধা দূর করা এবং বাণিজ্য–ঘাটতি কমাতে বাংলাদেশ কী কী পদক্ষেপ নিতে চায়, তা জানতে চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
দেশটির বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) দপ্তরের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে বাংলাদেশের কর্মপরিকল্পনা জানাতে অনুরোধ করা হয়।
ইউএসটিআরের সঙ্গে গত বুধবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। ভার্চ্যুয়াল বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দুই দেশের কর্মকর্তারা।
বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত তিন মাসের জন্য স্থগিত করার আগেই ইউএসটিআরের সঙ্গে আমাদের বৈঠকটি হয়েছে। সেখানে অশুল্ক বাধা সব দূর করার চেষ্টার কথা তাদের বলেছি।’ তিনি বলেন, ‘গত টিকফা (বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা ফোরাম চুক্তি) বৈঠকে আমাদের দিক থেকে যা যা করার আলোচনা উঠেছিল, সেগুলোর হালনাগাদ চিত্র তারা জানতে চেয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে একটা প্রতিবেদন তাদের দেওয়া হবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বের ৬০টি দেশ ও অঞ্চলের সঙ্গে বাংলাদেশি পণ্যের ওপরও পাল্টা শুল্ক বা রেসিপ্রোক্যাল ট্যারিফ আরোপ করেছিলেন। অনেক দেশের ওপর উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল। পাশাপাশি ন্যূনতম শুল্ক ছিল ১০ শতাংশ। বাংলাদেশের ওপর আরোপ করা হয়েছিল ৩৭ শতাংশ।
যদিও বুধবার বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাতে ট্রাম্প ১০ শতাংশ রেখে বাকি শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন। এর আগে বিভিন্ন দেশে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে আলোচনা ও মার্কিন পণ্য আমদানি বাড়াতে পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেয়। ট্রাম্প যেসব দেশে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের রপ্তানি কম, আমদানি বেশি, সেসব দেশের ওপর বেশি শুল্ক আরোপ করেছিলেন।
নতুন শুল্ক তিন মাস স্থগিত রাখার অনুরোধ জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ৭ এপ্রিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চিঠি দিয়েছিলেন। বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন একই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি (ইউএসটিআর) জেমিসন গ্রিয়ারের কাছে চিঠি পাঠান। চিঠি দুটি ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস ওই দিনই হোয়াইট হাউস ও ইউএসটিআরের দপ্তরে পৌঁছে দেয়।
বাংলাদেশের পাঠানো চিঠি দুটি পাঠানোর দুই দিন পর, অর্থাৎ বুধবার ইউএসটিআরের সঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে ভার্চ্যুয়াল বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, মূলত বাংলাদেশের দুটি চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য–ঘাটতি দূর করতে বাংলাদেশ সুনির্দিষ্টভাবে কী করতে চায়, সেটি যুক্তরাষ্ট্র জানতে চেয়েছে। অর্থাৎ সোজা কথায় দুই দেশের বাণিজ্যে–ঘাটতি কমাতে বাংলাদেশের কর্মপরিকল্পনা জানতে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র।
বাণিজ্য উপদেষ্টা ইউএসটিআরকে দেওয়া চিঠিতে বলেছিলেন, বাংলাদেশের শুল্ক তালিকায় বর্তমানে ১৯০টি পণ্যের ওপর শুল্কহার শূন্য, অর্থাৎ কোনো শুল্ক নেই। আরও ১০০টি পণ্যকে শুল্কমুক্ত তালিকায় যুক্ত করার চিন্তা করা হচ্ছে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, যুক্তরাষ্ট্র সরকার বাংলাদেশি পণ্যের ওপর যে অগ্রাধিকারমূলক সুবিধা প্রত্যাহার করেছে, এর পর থেকে বাংলাদেশ সব রপ্তানি পণ্যের ওপর ১৫ শতাংশ হারে শুল্ক দিয়ে আসছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর গড়ে ৬ দশমিক ১০ শতাংশ হারে শুল্ক রয়েছে। এর মধ্যে তুলা আমদানিতে শুল্ক নেই। আর লোহার স্ক্র্যাপ আমদানিতে শুল্কহার ১ শতাংশ।
শুল্কহার কমানো, অশুল্ক বাধা দূর করা এবং পারস্পরিক বাণিজ্যকে আরও লাভজনক করতে বিভিন্ন সংস্কারমূলক উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ—এ কথা জানানো হয় চিঠিতে। উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে আমদানি নীতি হালনাগাদ করা, শুল্কপ্রক্রিয়া সহজ করা, মেধাস্বত্ব সংরক্ষণ, ট্রেডমার্ক ও পেটেন্ট সুরক্ষা ইত্যাদি।
এদিকে আগামী মঙ্গলবার চার দিনের সফরে ঢাকায় আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিকোল চুলিক। গত ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প শপথ নেওয়ার পর চুলিক হতে যাচ্ছেন বাংলাদেশ সফরকারী যুক্তরাষ্ট্রের জ্যেষ্ঠ পর্যায়ের প্রথম কোনো প্রতিনিধি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ সফরের সময় নিকোল চুলিক অন্তর্বর্তী সরকারের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দুই দেশের সম্পর্কের নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন। প্রাসঙ্গিকভাবেই ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক আরোপের বিষয়টি আলোচনায় আসার কথা রয়েছে।
চুলিক অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারপ্রক্রিয়া, বিশেষ করে গণতান্ত্রিক উত্তরণে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা নিয়ে আলোচনা করতে পারেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ ল ক আর প দ র কর সরক র আমদ ন
এছাড়াও পড়ুন:
তিন সাংবাদিকের চাকুরিচ্যুতির ঘটনায় ডিআরইউ’র উদ্বেগ
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সদস্য সাংবাদিক রফিকুল বাসার, মুহাম্মদ ফজলে রাব্বি ও মিজানুর রহমানসহ কয়েকজন সংবাদকর্মীর চাকরিচ্যুতির ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছে ডিআরইউ।
বুধবার (৩০ এপ্রিল) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির কার্যনির্বাহী কমিটির পক্ষে সভাপতি আবু সালেহ আকন ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল সংবাদকর্মীদের চাকুরিচ্যুতির ঘটনায় এ উদ্বেগ জানান।
উল্লেখ্য, চ্যানেল আই’র সাংবাদিক রফিকুল বাসার, এটিএন বাংলার মুহাম্মদ ফজলে রাব্বি ও দীপ্ত টিভির সাংবাদিক মিজানুর রহমানকে মঙ্গলবার কোনো রকম পূর্ব নোটিশ ছাড়াই চাকরিচ্যুত করে কর্তৃপক্ষ।
ডিআরইউ নেতৃবৃন্দ তিন সাংবাদিককে চাকরিচ্যুতির কারণ ব্যাখ্যা করার দাবি জানিয়েছেন।
এএএম//