ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রেমের সম্পর্কের জেরে কলেজছাত্রীর ছবি দিয়ে ভুয়া আইডি খুলে আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও ছড়ানোর অভিযোগে এক তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)। ভুক্তভোগীর পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে গতকাল শনিবার বিকেলে উপজেলার চৌরঙ্গীর মোড় এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার তরুণের নাম মো.

তাজিমুল ইসলাম (২০)। তিনি মুক্তাগাছা উপজেলার চাপুরিয়া গ্রামের মো. আবদুল মান্নানের ছেলে। এ ঘটনায় গতকাল রাতে কলেজছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে পর্নোগ্রাফি আইনে একটি মামলা করেছেন। ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাজিমুলকে আজ রোববার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মুক্তাগাছার এক কলেজছাত্রীর (১৭) সঙ্গে ফেসবুকে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি করেন তাজিমুল ইসলাম। তাঁদের মধ্যে ফেসবুক মেসেঞ্জারে নিয়মিত কথা হতো। তাজিমুল কলেজছাত্রীকে দেখা করার জন্য চাপ দেন। দেখা না করলে সম্পর্কের বিষয়টি সবাইকে জানিয়ে দেবেন বলে হুমকি দেন। বাধ্য হয়ে ৬ এপ্রিল মুক্তাগাছা জমিদারবাড়িতে তাজিমুলের সঙ্গে দেখা করে কলেজছাত্রী। এ সময় কলেজছাত্রীর মুঠোফোন থেকে কৌশলে তার কিছু ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও নেন তাজিমুল। পরে সেই ছবি ও ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্কে জড়াতে প্রস্তাব দেন। কিন্তু কলেজছাত্রী রাজি হয়নি। এরপর তার ছবি দিয়ে ফেসবুকে দুটি ভুয়া আইডি খোলেন তাজিমুল। পরে মেসেঞ্জারে কলেজছাত্রীর আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও পরিচিতজনদের কাছে পাঠান। এরপর কলেজছাত্রী বিষয়টি জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯–এ কল দিলে এপিবিএন–২–এর মুক্তাগাছার সাইবার ক্রাইম সেলে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। কলেজছাত্রীর পরিবার এ বিষয়ে এপিবিএন কার্যালয়ে অভিযোগ দিলে গতকাল বিকেলে উপজেলার চৌরঙ্গীর মোড় থেকে তাজিমুলকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এপিবিএনের উপপরিদর্শক (এসআই) আমির খসরু বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ও অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ওই তরুণকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাঁর শরীর তল্লাশি করে মুঠোফোন জব্দ করা হয়। মুঠোফোনে কলেজছাত্রীর একাধিক আপত্তিকর ছবি, ভিডিও ও দুটি ভুয়া ফেসবুক আইডি খোলার তথ্য পাওয়া যায়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি আপত্তিকর ছবি–ভিডিও ছড়ানোর সত্যতা স্বীকার করেছেন।

মুক্তাগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. কামাল হোসেন বলেন, এ ঘটনায় কলেজছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে পর্নোগ্রাফি আইনে গতকাল রাতে থানায় একটি মামলা করেছেন। ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আসামিকে আজ আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর ফ সব ক গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস

স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।

মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’

সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।

অনাহারে মৃত্যু ১৫৪

গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।

গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।

ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।

বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।

গাজায় স্টিভ উইটকফ

শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ