সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়স সর্বনিম্ন ৩২ বছরের প্রজ্ঞাপন বাতিল করে পুরুষদের সর্বনিম্ন ৩৫ ও নারীদের সর্বনিম্ন ৩৭ বছর করার দাবি জানিয়েছেন ৩৫ প্রত্যাশী সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ। দাবি বাস্তবায়ন না হলে আগামী ২৭ এপ্রিল বৃহৎ সমাবেশের ডাক দিয়েছেন তারা।

রবিবার (১৩ এপ্রিল) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (ডুজা) কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এ ঘোষণা দেন ।

লিখিত বক্তব্যে তারা বলেন, চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বাস্তবায়নের দাবিতে দীর্ঘ ১২ বছর ধরে আন্দোলন-সংগ্রাম করে আসছি। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার আমাদের যৌক্তিক দাবির প্রতি কোনো গুরুত্ব দেয়নি। বর্তমান অন্তবর্তী সরকারও ৩৫ এর পরিবর্তে ৩২ বছরের প্রজ্ঞাপন জারি করে আমাদের সঙ্গে প্রহসন করেছে, যা আমরা ইতোমধ্যে প্রত্যাখ্যান করেছি। 

আরো পড়ুন:

ঢাবিতে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম খুঁজতে তদন্ত কমিটি

‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নাম পরিবর্তন করায় ঢাবি শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ

তারা আরো বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়ে করোনা, সেশনজট, অর্থনৈতিক মন্দা, টানা ১৬ বছর দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ, নিয়োগ দুর্নীতি, প্রক্সি, সুপারিশসহ নানা কারণে প্রকৃত মেধাবী সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের মেধার স্বাক্ষর রাখার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। 

প্রত্যাশার কথা জানিয়ে তারা বলেন, আমাদের প্রত্যাশা ছিল দীর্ঘ ১৬ বছরের লড়াই, সংগ্রাম, আত্মত্যাগ আর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত নতুন সরকার চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫/৩৭ (সুপারিশ) বাস্তবায়ন করে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত প্রজন্মগুলোকে নতুন করে নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ করে দেবে। কিন্তু বর্তমান সরকার তা না করে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ বছর করার কারণে বিগত ১৬ বছরে প্রকৃত ক্ষতিগ্রপ্ত প্রজন্মগুলো বাদ পড়ে গেছে ।

হুশিয়ারি দিয়ে তারা বলেন, আবেদনের বয়সসীমা সর্বনিম্ন ৩২ বছরের প্রজ্ঞাপন বাতিল করে পুরুষদের সর্বনিম্ন ৩৫ ও নারীদের সর্বনিম্ন ৩৭ বছর করতে হবে। আগামী ২০ এপ্রিলের মধ্যে এ দাবি বাস্তবায়নে সরকারের পক্ষ থেকে উপযুক্ত পদক্ষেপ দৃশ্যমান না হলে আগামী ২৭ এপ্রিল জাতীয় জাদুঘরের সামনে বৃহৎ সমাবেশ করা হবে।

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র বয়সস ম ৩২ বছর চ কর ত বছর র

এছাড়াও পড়ুন:

ভাঙা বেড়িবাঁধ, আমন নিয়ে দুশ্চিন্তায় মাতারবাড়ীর চাষিরা

চলতি মৌসুমে আমন চাষ করার জন্য এক ব্যক্তির এক একর জমি ১৮ হাজার টাকায় ইজারা নেন কক্সবাজারের মহেশখালীর সাগর উপকূলীয় মাতারবাড়ী ইউনিয়নের নয়াপাড়ার কৃষক জাকের হোছাইন। এই মাসের শেষের দিকে আমন চাষ শুরু করার কথা তাঁর। তবে সাগরে বিলীন হওয়া বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে বর্ষায় ফসলি জমিতে পানি ঢুকে পড়ার শঙ্কায় আমনের চাষাবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কেবল জাকের হোছাইন নন, তাঁর মতো একইভাবে আমনের চাষাবাদ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন মাতারবাড়ী ইউনিয়নের অন্তত ২০০ চাষি।

কুহেলিয়া নদীর পশ্চিমে আর বঙ্গোপসাগরের পূর্বে জেগে ওঠা প্রায় ১২ বর্গকিলোমিটার চর নিয়ে মহেশখালীর মাতারবাড়ী ইউনিয়ন। এর পশ্চিম পাশে রয়েছে আট কিলোমিটার বেড়িবাঁধ, যার মধ্যে প্রায় এক কিলোমিটার ভাঙা অবস্থায় পড়ে রয়েছে এক দশক ধরে। ওই অংশ দিয়ে আশপাশের লোকালয় ও ফসলি জমিতে পানি ঢুকে পড়া ঠেকাতে সর্বশেষ চার বছর আগে বসানো হয়েছিল জিও টিউব। তবে গত ২৯ ও ৩০ মে নিম্নচাপের প্রভাবে সাগরের উত্তাল ঢেউয়ে জিও টিউব বিলীন হয়ে গেছে। এ অবস্থায় বেড়িবাঁধের ওই ভাঙা অংশ দিয়ে লোকালয় ও ফসলি জমিতে পানি ঢুকে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সম্প্রতি তিন দফায় লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে ভেঙে গেছে অন্তত ১০টি কাঁচা বসতঘর। স্থানীয় মানুষের চোখে ঘুম নেই। চাষিরাও আমন ধানের চাষাবাদ আদৌ করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে উৎকণ্ঠায় রয়েছেন।সরওয়ার কামাল, সদস্য, মাতারবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ

বেড়িবাঁধের ক্ষতিগ্রস্ত অংশটি ইউনিয়নের ষাইটপাড়া এলাকায়। গত শনিবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভাঙা বেড়িবাঁধের পাশে বসানো জিও টিউব সাগরে বিলীন হয়ে গেছে। সাগরের পানি ঢেউয়ের সঙ্গে বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশ উপচে পাশের ফসলি জমিতে ঢুকে পড়ছে। সেখানে স্থানীয় মাঝের ডেইল এলাকার বাসিন্দা আবদুল কাদেরের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, বেড়িবাঁধের জিও টিউব বিলীন হওয়ার দুই সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দারা খুবই উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। আমনচাষিরা চাষাবাদ করতে পারবেন কি না তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। মানুষ তাঁদের ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন। জরুরি ভিত্তিতে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সংস্কার করা উচিত।

মাতারবাড়ী ইউনিয়নে দায়িত্বরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নুরুল হোছাইন মোহাম্মদ তৈয়ব প্রথম আলোকে বলেন, ভাঙা বেড়িবাঁধের কারণে ষাইটপাড়াসহ আশপাশের চারটি গ্রামে জলাবদ্ধতার শঙ্কা রয়েছে। এ কারণে এসব এলাকার অন্তত ৮০ একর জমিতে আমন চাষাবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

স্থানীয় মাতারবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য সরওয়ার কামাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘সম্প্রতি তিন দফায় লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে ভেঙে গেছে অন্তত ১০টি কাঁচা বসতঘর। স্থানীয় মানুষের চোখে ঘুম নেই। চাষিরাও আমন ধানের চাষাবাদ আদৌ করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে উৎকণ্ঠায় রয়েছেন।’ ইউপি সদস্য সরওয়ার কামাল আরও বলেন, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুম এলেই এলাকার মানুষের উদ্বেগ বাড়ে। অথচ ভাঙা বেড়িবাঁধ সংস্কারের কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না পানি উন্নয়ন বোর্ড।

মহেশখালীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. হেদায়েত উল্যাহ প্রথম আলোকে বলেন, জরুরি ভিত্তিতে বেড়িবাঁধ সংস্কারের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বলা হয়েছে। জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নুরুল ইসলাম বলেন, সম্প্রতি নিম্নচাপের প্রভাবে মহেশখালী ও কুতুবদিয়ায় অন্তত ১ হাজার ৬০০ মিটারের বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আপাতত বর্ষা মৌসুমে জোয়ারের পানি টেকানোর জন্য ভাঙা বেড়িবাঁধের ওপর জিও টিউব বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। শিগগিরই কাজ শুরু হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের কক্সবাজারের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. জামাল মুর্শিদ প্রথম আলোকে বলেন, মাতারবাড়ী ও ধলঘাট ইউনিয়নে স্থায়ী বাঁধের জন্য প্রায় ৩ হাজার ৮২৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় চারপাশে ১৭ দশমিক ৯ কিলোমিটার সুপার ডাইকের আদলে স্থায়ী বেড়িবাঁধ ও ৭টি স্লুইসগেট নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া খনন করা হবে সাড়ে ১৯ কিলোমিটার কুহেলিয়া নদী। গত এপ্রিলে প্রকল্প প্রস্তাবনা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ