চাঁদাবাজির প্রতিবাদকারীর নামে মামলা দিলেন জবি ছাত্রদল নেতা
Published: 13th, April 2025 GMT
ফেসবুক পোস্টে চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ইতিহাস বিভাগের শাহিন মিয়ার নামে মানহানির অভিযোগ তুলে মামলা করেছেন শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক ওমর ফারুক।
রবিবার (১৩ এপ্রিল) মামলার দায়িত্বে থাকা কোতোয়ালী থানার তদন্ত অফিসার এসআই মো. শরিফুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, “কোতয়ালী থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগে ফেসবুক পোস্টে বিষয়টি উল্লেখ করেছেন তিনি। এখন তদন্ত করে সঠিক বিষয়টি জানা যাবে।”
জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের পাঁচ শিক্ষার্থী মিলে ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বরে ‘খাওন দাওন’ নামে একটি খাবারের দোকান চালু করেন। প্রাথমিকভাবে ব্যবসা ভালো চললেও চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে পরীক্ষার কারণে সাময়িকভাবে দোকান বন্ধ রাখা হয়। এ সুযোগে জবি শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক রাশেদ বিন হাসিম ও ওমর ফারুক দোকানের জায়গা দখলের চেষ্টা করেন এবং প্রতিদিন ৫০০ টাকা চাঁদা দাবি করেন বলে ফেসবুক পোস্টে অভিযোগ জানান নৃবিজ্ঞান বিভাগের দোকানী ভুক্তভোগীরা।
শাহীন মিয়া ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, “প্রতিদিন নাকি খাওন-দাওন নামে দোকানের শিহাবসহ পাঁচ বন্ধুর কাছে ৫০০ টাকা করে চেয়েছেন। শিহাব নিজেও একজন ছাত্রদলের কর্মী। এই ছেলেটা জুলাই আন্দোলনের সামনের সারির একজন যোদ্ধা। অথচ তার কাছেই আজ ছাত্রদলের অন্য গ্রুপের লোকেরা চাঁদা দাবি করে। কতটা ছোটলোক হলে একজন সিনিয়র তার ছোট ভাইয়ের কাছে চাঁদা দাবি করে!! একজন রানিং ব্যাচের শিক্ষার্থীর কাছে চাঁদা দাবি করে এমন একজন, যার এখন ছাত্রত্ব নেই।”
তিনি আরো লিখেছেন, “ছাত্রদল ক্ষমতায় আসার আগেই এরা নিজের দলের লোকজনের কাছেই চাঁদাবাজি শুরু করছে। তাহলে যারা সাধারণ, তারা কতটা নিরাপদ এদের কাছে!!?”
পোস্টের বিষয়ে শাহীন মিয়া বলেন, “পোস্ট করার কারণে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের ওমর ফারুক ভাই (আমি তাকে চিনিও না ভালো করে) আমার নামে পুলিশে মানহানির অভিযোগ দায়ের করেছেন । অথচ অভিযোগ দেওয়ার কথা ছিল শিহাবের। কারণ ওর দোকান উঠিয়ে দিয়েছিল।”
তিনি বলেন, “১০০ বার চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কথা বলবো। তাতে যদি আমার ফাঁসি হয় হবে; মাথা পেতে মেনে নেব।”
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী শিহাব বলেন, “জুলাইয়ে পরে আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে ছোটখাটো ব্যবসা করার সিদ্ধান্ত নেই। আমরা নিজের জমানো প্রায় দেড় লাখ টাকা দিয়ে শুরু করি। আমরা নভেম্বর থেকে শুরু করেছি। মাঝখানে আমাদের পরীক্ষা ও ফিল্ডওয়ার্ক ছিল। এরপর আবার রোজা চলে আসে। এই সময়ের মধ্যে আমাদের একজনকে কল দিয়ে প্রতিদিনের ৫০০ টাকা করে চাঁদা দাবি করেন।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক ওমর ফারুক বলেন, “আমার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণেই মিথ্যা বানোয়াট তথ্য দিয়ে অভিযোগ করেন তারা। আমি এজন্যই মানহানির অভিযোগ করেছি। সুষ্ঠু তদন্ত করবে পুলিশ। আমি বিষয়টা দেখতে চাই এবং মামলার বিষয়ে তারপরে সিদ্ধান্ত নেব।”
গত ২৭ মার্চ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের খাবারের দোকান দখল, চাঁদাবাজির অভিযোগে ওমর ফারুককে শোকজ করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।
ঢাকা/লিমন/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ সব ক প স ট ওমর ফ র ক ছ ত রদল র ব ষয়ট
এছাড়াও পড়ুন:
৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে
বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।
আরো পড়ুন:
ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০
বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী
প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন।
দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।
হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী।
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”
শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।
লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।
স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, “হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”
রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?”
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”
বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”
ঢাকা/মাসুদ