চট্টগ্রামে প্রথম বাংলা বর্ষবরণ উৎসব শুরু হয় ১৯৭৩ সালে নগরের সার্সন রোডের ইস্পাহানি পাহাড়ে। পল্লিকবি জসীমউদ্‌দীন প্রথম এই বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেছিলেন। তিন বছর এখানেই ছোট পরিসরে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান হয়। ১৯৭৮ সাল থেকে নন্দনকাননের ডিসি হিলে বাংলা বর্ষবরণ উৎসব শুরু হয়।

কিন্তু এবার ভিন্ন প্রেক্ষাপট। বর্ষবরণের আগের দিন গতকাল রোববার মিছিল নিয়ে এসে একদল লোক অনুষ্ঠান মঞ্চ ভাঙচুর করে চলে যায়। ফলে আয়োজকেরা অনুষ্ঠান না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অথচ ৪৭ বছরে চট্টগ্রামবাসীর প্রাণের মেলায় রূপ নিয়েছে ডিসি হিলের বাংলা বর্ষবরণ উৎসব।

চট্টগ্রামের আগে ষাটের দশক থেকে ঢাকায় নববর্ষ বরণ শুরু হয় আনুষ্ঠানিকভাবে। রাজধানীতে ১৯৬৭ সালে প্রথম রমনার বটমূলে পয়লা বৈশাখের সূর্যোদয়ের সময় সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল সংগীত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছায়ানট। সেই অনুষ্ঠানই মূলত নববর্ষ বরণের সাংস্কৃতিক উৎসবকে সারা দেশে বিস্তারিত হতে প্রেরণা সঞ্চার করেছে।

চট্টগ্রামের কবি–সাহিত্যিক ও সংস্কৃতিকর্মীরাও উৎসব আয়োজনের তাগিদ অনুভব করতে থাকেন। তত দিনে রক্তস্নাত একাত্তর পার করে মুক্তির সুবাতাস বইছে। আলোচনা থেকে এভাবে একসময় ১৯৭৩ সালে পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় ইস্পাহানি পাহাড়ে। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর নামে এই আয়োজনটি হয়েছিল। প্রথম ওই অনুষ্ঠানের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন ভাষাসৈনিক ও রাজনীতিক আতাউর রহমান খান কায়সার এবং তখনকার সাংস্কৃতিক সংগঠক সাংবাদিক সুভাষ দে।

পরে তা ডিসি হিলে স্থানান্তরিত হয়। চট্টগ্রামের ডিসি হিলে পয়লা বৈশাখ আয়োজন উদ্যোগের পেছনে প্রধান ভূমিকা ছিল শিল্পী, সংগীতজ্ঞ ওয়াহিদুল হকের। তিনি তখন চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত ইংরেজি দৈনিক ডেইলি লাইফে যোগদান করেন। সেই সুবাদে চট্টগ্রামে থাকতেন। তিনি চট্টগ্রামের গণমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে উদ্যোগ নেন সম্মিলিত পয়লা বৈশাখ উদ্‌যাপনের।

শুরুর সেই সময়ে এই আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন কাজী হাসান ইমাম, কবি অরুণ দাশগুপ্ত, কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন, নাট্যকর্মী মাহবুব হাসান, নির্মল মিত্র, সুভাষ দেসহ আরও কয়েকজন। শুরুর দিকে অনুষ্ঠানের ব্যাপ্তি ছিল সকালে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। পয়লা বৈশাখ অনুষ্ঠানের আগে বিভিন্ন সভা হতো বর্তমান ফুলকি বিদ্যাপীঠে কিংবা এনায়েত বাজারে অরুণ দাশগুপ্তের বাসায়। ফুলকিতে তখন নিয়মিত একটা পাঠচক্র বসত। ওই পাঠচক্রের তরুণ কবি-সাহিত্যিক ও লেখকেরাও এই আয়োজনের তখন কর্মী।

আবুল মোমেন স্মৃতি হাতড়ে বললেন, ‘১৯৭৮ সালে ডিসি হিলে নববর্ষ বরণের উদ্যোগটা নিয়েছিলেন ওয়াহিদুল হক। আমরা সঙ্গে ছিলাম। এর আগে বিচ্ছিন্নভাবে ’৭৩ থেকে অনিয়মিত আয়োজন হতো। কখনো ইস্পাহানি পাহাড়ে, কখনো গ্রিনলেজ পাহাড়ে অনিয়মিত এই আয়োজন চলত। ডিসি হিলে অনুষ্ঠান আয়োজনে গানের দিক থেকে অন্যতম দায়িত্ব পালন করতেন মিহির নন্দী। তিনি শিল্পীদের নিয়ে অনুশীলন করাতেন। সম্মিলিত পয়লা বৈশাখ উদ্‌যাপন পরিষদ নামেই ডিসি হিলে নববর্ষ বরণের আয়োজনটি হয়ে আসছে। শুরুর দিকে উদীচী, আলাউদ্দিন ললিত কলা একাডেমি, অগ্রণী সংঘ, শিল্পী নিকেতনসহ নানা সংগঠন পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠানে অংশ নিত।’

সুভাষ দেও সেই দিনগুলোর স্মৃতিচারণা করলেন। তিনি বলেন, ‘ওয়াহিদুল হক ও কাজী হাসান ইমামের আবৃত্তির মধ্য দিয়ে প্রথম দিকে অনুষ্ঠান শুরু হতো। তখন ডিসি হিল ছিল উঁচু পাহাড়। গাছপালাঘেরা। গাছের ফাঁকে ফাঁকে মাটি কেটে মানুষের বসার ব্যবস্থা করেছিলাম আমরা। এরপর আস্তে আস্তে অনুষ্ঠানের ব্যাপ্তি বাড়তে থাকে।’

সামরিক সরকারের আমলে ডিসি হিলে পয়লা বৈশাখ আয়োজন শুরু হলেও তেমন কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি আয়োজকদের। ওয়াহিদুল হক চট্টগ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার পরও এই ধারা অব্যাহত ছিল। বরং ক্রমে বেড়েছে এর ব্যাপ্তি। আয়োজনকে ঘিরে ধীরে ধীরে কারুপণ্য এবং বইমেলা বসতে শুরু করে ডিসি হিল ঘিরে। আশির দশকের শেষ দিকে এটা দুদিনের অনুষ্ঠানে পরিণত হয়। বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণ উৎসব। বের করা হতো শোভাযাত্রাও।

চট্টগ্রাম নগরের ডিসি হিলে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানের জন্য নির্মিত মঞ্চ ভাঙচুর করেছে একদল লোক। আজ সন্ধ্যা সাতটায়.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র অন ষ ঠ ন অন ষ ঠ ন র বরণ র প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

ভালোবাসার ফ্রেমে মেহজাবীন-রাজীব, পেছনে আইফেল টাওয়ার

বিয়ের পর নতুন জীবনের প্রতিটি দিন যেন কবিতার পঙ্‌ক্তি হয়ে ধরা দিচ্ছে তাদের জীবনে। উভয়ের জীবনেই একের পর সুখবর আসছে। বিয়ে পরবর্তী জীবনটা তাই দারুণ উপভোগ্য হয়ে উঠেছে মেহজাবীন চৌধুরী ও আদনান আল রাজীবের কাছে। এবারের ৭৮ তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে নিজের নির্মিত স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা ‘আলী’ নিয়ে উড়াল দিয়েছিলেন ফ্রান্সে। উৎসবের রাজীবের সিনেমাটি স্পেশাল মেনশন সম্মাননায় ভূষিত হয়েছে। এই সাফল্যের উদযাপনে শেষ হতে না হতেই  মেহজাবীনও রাজীবেরর সঙ্গে ইউরোপ ঘুরতে উড়াল দেন। সেখানে তাদের নানা মুহুর্তের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ারও করেন তারা। 

সম্প্রতি ভালোবাসার শহর প্যারিসে, আইফেল টাওয়ারের ছায়াতলে এক রোমান্টিক ফটোশুটে অংশ নিয়েছেন এই জুটি। ছবিতে ধরা পড়েছে আবেগঘন মুহূর্তযেখানে রাজীবের আলিঙ্গনে নিজেকে সঁপে দিয়েছেন মেহজাবীন, আর তাদের চোখে-মুখে ছড়িয়ে আছে নিঃশব্দ ভালোবাসার ভাষা।

ছবিগুলো প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে নেটিজেনদের প্রশংসার জোয়ারে ভেসে যায় এই দম্পতি। মেহজাবীন নিজের অনুভূতি ভাগ করে নিয়েছেন ক্যাপশনে, যেখানে তিনি লিখেছেন, "এখনো স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে, তবু এটা আমাদেরই। ভালোবাসার শহরে, যেখানে প্রতিটি রাস্তা বলে যায় এক একটি প্রেমকাহিনি। আমি আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ, তিনি আমাদের গল্পটা এভাবে লিখেছেন।”

উল্লেখ্য, মেহজাবীন চৌধুরীর মিডিয়ায় যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০০৯ সালে, লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার বিজয়ের মধ্য দিয়ে। এরপর মোবাইল ফোন অপারেটর বাংলালিংকের একটি বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজ করে প্রথমবারের মতো দর্শকদের নজরে আসেন তিনি।

তারপরই অভিনয়ে আত্মপ্রকাশ, এটিএন বাংলার জনপ্রিয় নাটক ‘তুমি থাকো সিন্ধু পাড়ে’-র মাধ্যমে। এরপর একে একে বহু নাটক, বিজ্ঞাপনচিত্র ও বিশেষ নাটকে অভিনয় করে জায়গা করে নেন দর্শকের হৃদয়ে।

এখন, ক্যামেরার বাইরেও রাজীব ও মেহজাবীনের প্রেমভরা গল্প যেন বাস্তব জীবনের এক স্বপ্নের পৃষ্ঠায় ধরা দিচ্ছে। আর এই গল্পে মিশে আছে ভালোবাসা, বন্ধন, কৃতজ্ঞতা আর সৌন্দর্যের চিরন্তন ছায়া।


 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বর্ষা উৎসবে বন ও পরিবেশ ধ্বংসের প্রতিবাদ, পান্থকুঞ্জ পার্ক রক্ষাসহ কয়েকটি দাবি
  • নাচ-গান-আবৃত্তিতে চারুকলায় বর্ষাবরণ
  • মেঘ-রোদের লুকোচুরির সকালে নাচে-গানে বর্ষাবরণ 
  • মেঘ-রোদের লুকোচুরি সকালে নাচে-গানে বর্ষাবরণ 
  • আষাঢ়ের প্রথম দিন আজ
  • কলিজা ঠান্ডা করে দেওয়া ছবি ‘উৎসব’
  • খুলনায় আওয়ামী লীগ নেতাকে বেধড়ক পেটানোর পর পুলিশে সোপর্দ
  • ভালোবাসার ফ্রেমে মেহজাবীন-রাজীব, পেছনে আইফেল টাওয়ার
  • ‘উৎসব’ নিয়ে আগ্রহ দর্শকের, শো বাড়ল দ্বিতীয় সপ্তাহে
  • ভারতে ভয়ংকর যত বিমান দুর্ঘটনা