আজ পহেলা বৈশাখ। অতীতের ভুলত্রুটি ও ব্যর্থতার গ্লানি ভুলে নতুন করে সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় উদযাপিত হচ্ছে বাংলাসনের প্রথমদিনটি। বরণ করে নেওয়া হয় নতুন বছরকে।
দিনটিকে ঘিরে এ বছর ঢাকার নানা আয়োজনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। চলুন এক নজরে দেখে নেওয়া যাক বৈশাখের দিনে ঢাকার কোথায় কখন কী আয়োজন থাকছে।
রমনা বটমূল: সূর্যোদয়ের পর রমনার বটমূলে শুরু হয় ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। এবার বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের মূল বার্তা ‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয়’। আলো, প্রকৃতি, মানুষ ও দেশপ্রেমের গান দিয়ে সাজানো হয়েছে আজকের অনুষ্ঠান। রমনার আশপাশের এলাকায় চলে পান্তা-ইলিশ ও হরেক বাঙালি খাবারের মেলা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’ প্রতিপাদ্য নিয়ে পহেলা বৈশাখের সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে শুরু হয় ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’। সকাল থেকেই টিএসসি ও চারুকলা প্রাঙ্গণ ছিল উৎসবমুখর। বিভিন্ন রঙিন মুখোশ, বিশালাকৃতির পুতুল এবং নানা শিল্পমণ্ডিত সাজে অংশ নেয় হাজারো মানুষ।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যান: বৈশাখী কনসার্টে ব্যান্ড সংগীতের ঝড় বিকেল ৩টা থেকে শুরু হবে বৈশাখী কনসার্ট। এতে অংশ নেবে জনপ্রিয় ব্যান্ডদল ওয়ারফেজ, দলছুট, এভোয়েড রাফা, লালন, ভাইকিংস, স্টন ফ্রি। এছাড়া, বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ব্যান্ড যেমন গারোদের ‘এফ মাইনর’, চাকমাদের ‘ইনভোকেশন’, ত্রিপুরাদের ‘ইমাং’, মারমাদের ‘চিম্বুক’, ও খাসিয়াদের ‘ইউনিটিরও’ পরিবেশন করবে নিজস্ব সংস্কৃতি ও সংগীত।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি: দুই দিনের সাংস্কৃতিক উৎসব পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে সেগুনবাগিচায় অবস্থিত বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজন করা হয়েছে দুই দিনব্যাপী এক সাংস্কৃতিক উৎসবের।১৩ ও ১৪ এপ্রিল এই উৎসবের আয়োজন করছে ‘নবপ্রাণ আন্দোলন’।
উৎসবে গান, নৃত্য, নাটক, আবৃত্তি ও প্রদর্শনীতে অংশ নেবেন দেশের স্বনামধন্য শিল্পীরা। নানা রঙের পরিবেশনায় প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে শিল্পকলা প্রাঙ্গণ।
রবীন্দ্র সরোবর: ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে সকাল ৬টা থেকে সুরের ধারা আয়োজনে পাহাড় ও সমতলের জাতিগোষ্ঠীর অংশগ্রহণে বর্ষবরণ হয়। এই আয়োজনে থাকে মুক্তমঞ্চে গান, কবিতা ও নাচের পরিবেশনা, সঙ্গে রয়েছে বাঙালি খাবারের নানা আয়োজন।
জাতীয় সংসদ ভবন: ড্রোন শো ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ছিল চীনা প্রযুক্তি দলের অংশগ্রহণে ব্যতিক্রমী ড্রোন শো। সন্ধ্যায় থাকবে বৈশাখী ব্যান্ড শো এবং বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
ঢাকা/হাসান/ইভা
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
সিডনিতে ড্র অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের কেউ না থাকায় হতাশ প্রবাসীরা
সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে সিডনির ঐতিহাসিক টাউন হল যেন পরিণত হলো এক রঙিন উৎসবের মঞ্চে। ঝকঝকে আলোর ঝলকানি, দৃষ্টিনন্দন সাজসজ্জা, নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা আর বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে দলে দলে আসা অতিথিদের পদচারণে মনে হচ্ছিল এ যেন কোনো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব বা পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। অথচ এটি ছিল ২০২৬ নারী এশিয়ান কাপ ফুটবলের ড্র অনুষ্ঠান, যেখানে এশিয়ার সেরা নারী ফুটবল দলগুলোর ভাগ্য নির্ধারিত হচ্ছিল।
বিকেল সাড়ে পাঁচটায় দরজা খোলার আগেই টাউন হলের সামনে জড়ো হয়েছিলেন নানা দেশের ফুটবলপ্রেমীরা। তাঁদের হাতে নিজ নিজ দেশের পতাকা, পরনে ঐতিহ্যবাহী পোশাক। অস্ট্রেলিয়া, চীন, উত্তর কোরিয়া, জাপান, ভারত, ভিয়েতনাম, উজবেকিস্তান, ফিলিপাইন, ইরানসহ ১১টি দেশের ফুটবল দলের প্রতিনিধি, অধিনায়ক বা কোচের কেউ না কেউ সেখানে উপস্থিত ছিলেন। বিশ্ব ফুটবলের এই মিলনমেলায় সবাই নিজ দেশের নাম উজ্জ্বল করতে এসেছেন। কিন্তু এই আলো ঝলমলে মঞ্চে ছিলেন না বাংলাদেশের নারী ফুটবল দলের কোনো প্রতিনিধি।
অস্ট্রেলিয়ায় বিশ্ব ফুটবলের এত বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ একটি আয়োজন হলো, অথচ বাংলাদেশের কোনো প্রতিনিধি নেই—এটা মেনে নেওয়া যায় না, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা এখানে এসেছিলাম আমাদের মেয়েদের দেখতে, নিজেদের দেশের জার্সি গায়ে দেওয়া তারকাদের সঙ্গে ছবি তুলতে চেয়েছিলাম।সাঈদ ফয়েজ, অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী সাংস্কৃতিক কর্মী ও ইভেন্ট সংগঠকঅথচ এটা বাংলাদেশের জন্য ইতিহাস গড়ার বছর। এই প্রথম বাংলাদেশের মেয়েরা এশিয়ান কাপের মূল পর্বে জায়গা করে নিয়েছেন। কিন্তু সেই গৌরবময় মুহূর্তে, যখন বিশ্ব ফুটবল পরিবার সিডনিতে একত্র, তখন মঞ্চে অনুপস্থিত বাংলাদেশ। না কোনো ফুটবলার, না কোচ, না বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) কোনো কর্মকর্তা। এই অনুপস্থিতি ছিল অত্যন্ত দৃষ্টিকটু এবং বেদনাদায়ক, কারণ মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন ভারতের তারকা খেলোয়াড়সহ অন্যান্য দেশের ক্রীড়া ব্যক্তিত্বরা। তাঁরা ট্রফির পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন, বিশ্ব গণমাধ্যমের সামনে নিজেদের দেশকে তুলে ধরেছেন, আর স্মৃতির ক্যামেরায় ধরে রাখছেন ঐতিহাসিক মুহূর্ত। আর বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বের জায়গাটিতে খাঁ খাঁ শূন্যতা।
ভারত নারী দলের মিডফিল্ডার সংগীতা বাসফোর ড্র–তে বাংলাদেশের নাম তোলেন