সবার জন্য কল্যাণ ও সমৃদ্ধি বয়ে আনুক
Published: 14th, April 2025 GMT
আজ ১ বৈশাখ, বাংলা নতুন বছরের প্রথম দিন। অতীতের গ্লানি-দুঃখ-জরা মুছে ফেলে নতুন বছর সবার জন্য আনন্দ ও মঙ্গলের বার্তা নিয়ে আসবে, এটাই প্রত্যাশিত।
বাংলা নববর্ষ বাঙালির জাতীয় উৎসব, প্রাণের উৎসব। প্রতিবছরের মতো এবারও বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষ বাংলা নববর্ষ বরণ করতে অধীর অপেক্ষায় আছে। মেলা, উৎসব, শোভাযাত্রা, সংগীতানুষ্ঠানসহ নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ১ বৈশাখ উদ্যাপন করার সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ইউনেসকোর ‘ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ অব হিউম্যানিটি’র তালিকায় যোগ হয়েছে নববর্ষের শোভাযাত্রা। এটা নিশ্চয়ই আনন্দের খবর।
পাকিস্তান আমলে বৈরী পরিবেশে ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট রমনার বটমূলে ঐতিহ্যবাহী সংগীতানুষ্ঠানের মাধ্যমে বর্ষবরণ শুরু করে। এবার তাদের প্রতিপাদ্য, ‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয়’। ১৯৬৭ সালে ছায়ানট বর্ষবরণের যে ধারা শুরু করেছিল, সেটাই এখন ছড়িয়ে পড়েছে পাড়ায়, মহল্লায়, গ্রামে–গঞ্জে সর্বত্র।
আমরা স্মরণ করতে পারি, সম্রাট আকবরের সময় খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য বাংলা নববর্ষ চালু হয়। এর পর থেকে নববর্ষকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ীরা সারা বছরের হিসাব-নিকাশ করে থাকেন, হালখাতা খোলেন। ক্রেতারা বকেয়া শোধ করেন। শত শত বছর ধরে এ ধারা চলে আসছে। আশার কথা, বাংলা নববর্ষকে কেন্দ্র করে বৈশাখী অর্থনীতি বেশ চাঙা হয়ে উঠেছে। উৎসবের পাশাপাশি নববর্ষকে ঘিরে ব্যবসা-বাণিজ্যও প্রসারিত হয়।
নববর্ষ নিয়ে আমাদের যেমন আনন্দের স্মৃতি আছে, তেমনি আছে বেদনার স্মৃতিও। ২০০১ সালের পয়লা বৈশাখ রমনা বটমূলে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর বোমা হামলার ঘটনায় ৯ জন প্রাণ হারান। এ ছাড়া যশোরে উদীচীর সম্মেলনে বোমা হামলাসহ আরও অনেক নাশকতার ঘটনা ঘটায় এই অপশক্তি।
পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এবার নববর্ষ উদ্যাপনের ধরন নিয়ে নানা প্রশ্ন ছিল। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শোভাযাত্রা নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণা চলছিল। অনেকের মনে শঙ্কা ছিল, নববর্ষের অন্যতম অনুষঙ্গ নববর্ষের শোভাযাত্রা হবে কি না। শেষ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শোভাযাত্রা আয়োজনের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছে, যদিও নাম বদল হয়েছে।
নামের বিতর্কে না গিয়ে যে কথাটি বলা প্রয়োজন, তা হলো শোভাযাত্রার মূল উদ্দেশ্য অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের বার্তা, অশুভর বিরুদ্ধে শুভবার্তায় দেশবাসীকে যুক্ত করা। কেবল শোভাযাত্রা নয়, মেলা, সংগীতের মূর্ছনায় দেশের সর্বস্তরের মানুষ আজ সাদরে নববর্ষকে বরণ করবে। এবার নববর্ষের শোভাযাত্রায় বাঙালির বাইরের অন্যান্য জনগোষ্ঠীকে যুক্ত করার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। এর মাধ্যমে দেশের বাঙালির সঙ্গে অন্যান্য জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতির সম্মিলন ঘটবে।
বাংলা নববর্ষ বাঙালির সর্বজনীন উৎসব। ধর্ম-বর্ণ-গোত্রনির্বিশেষে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ এতে অংশ নিয়ে থাকে। এটি আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ। বাঙালির আত্মপরিচয় প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে বাংলা নববর্ষেরও একটি উজ্জ্বল ভূমিকা আছে। সমতলে বাঙালিরা যখন নববর্ষ উদ্যাপন করে, তখন পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর তিনটি সম্প্রদায়ও নতুন বছরের শুরুর উৎসব বৈসাবি উদ্যাপন করে থাকে; যা ত্রিপুরাদের কাছে বৈসুব, বৈসু বা বাইসু, মারমাদের কাছে সাংগ্রাই এবং চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যাদের কাছে বিজু নামে পরিচিত। এটাও তাদের বর্ষবরণ।
বাংলা নববর্ষের পাশাপাশি আমরা বৈসাবি উৎসবকেও স্বাগত জানাই। নতুন বছর সবার কল্যাণ ও সমৃদ্ধি বয়ে আনুক। কেবল আনুষ্ঠানিকতা নয়, আমাদের চিন্তাচেতনা, মনন ও প্রাত্যহিক জীবনেও বাংলা নববর্ষ প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠুক। স্বাগত ১৪৩২।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
পূজাকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলায় বাহিনী তৎপর : ডিসি
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, আইনসৃঙ্খলা স্বাভাবিক রয়েছে, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজাকে ঘিরে সকল ধর্মমত, সকল সম্প্রদায় তারা একত্রিত হয়েছে।
সকলেই সার্বিক সহয়তা করছে যাতে করে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পূজা উৎসব সুন্দর ভাবে পজলন করতে পারে। পূজাকে ঘিরে একটি গোষ্ঠি চাইবে পূজা উৎসব নষ্ট করে দেয়ার জন্য।
সে জন্য আমাদের তৎপরতা রয়েছে। আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে। তার পাশাপাশি র্যাব, বিজিবি, সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশ পুলিশবাহিহনী সবাই কাজ করছে যাতে করে সুন্দর ভাবে পূজা উৎসব শেষ করতে পারি।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে ৫নং ঘাটে দূর্গা পূজার প্রতিমা বিসর্জনের স্থান পরিদর্শনকালে তিনি এ নির্দেশনা দেন।
দূর্গা পূজা বিজয়া দশমী শেষে প্রতিমা বিসর্জনের সময় যেকোনো অপ্রীতিকর দূর্ঘটনা এড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সুন্দর ভাবে প্রতিমা বিসর্জনের স্থান নিরাপদ রাখতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন জেলা প্রশাসক।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, নারায়ণগঞ্জের ২২৩টি পূজা মণ্ডপে সুষ্ঠুভাবে পূজা উদযাপনে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। শান্তি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে এবং সম্প্রীতি বজায় রেখে বর্তমানে পূজা উদযাপনের প্রস্তুতি চলছে।
এসময় তিনি প্রতিটি মণ্ডপে সুষ্ঠুভাবে ও নির্বিঘ্নে পূজা অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে যথাযথ সহযোগিতার নির্দেশনা দেন।
তিনি বলেন, সকলে মিলে সব উৎসব উদযাপন করাই বাংলার ঐতিহ্য ও গৌরব।
এসময় জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিআইডব্লিউটিএ, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।