মায়ের কোলে থাকা সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুকে কখনও কোলে নিচ্ছেন প্রতিবেশীরা, কখনও শিশুটির ছোট বোন। আবার কেউ কেউ কোলে নিয়ে আদর করছে শিশুটিকে, কেউ আবার সৃষ্টিকর্তার কাছে দোয়া-চাইছেন শিশুটির জন্য। ঝিনাইদহের হরিনাকুণ্ডু উপজেলার দুর্লভপুর উত্তরপাড়া গ্রামে কৃষক আব্দুর রাজ্জাকের বাড়িতে তাঁর নাতিকে নিয়ে এমনই আনন্দের বন্যা বইছে।
মঙ্গলবার সকালে ওই বাড়িটিতে গিয়ে দেখা যায় এমন চিত্র। বাংলা নববর্ষের প্রথম প্রহরে সকাল পৌনে ৬টার দিকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে মা জুলেখা বেগমের কোল আলোকিত করে জন্ম নেয় ফুটফুটে ছেলে শিশু।
জানা যায়, ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার সিদ্ধি গ্রামের রাশেম মণ্ডলের স্ত্রী জুলেখা বেগম। জুলেখা বেগম অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন আর এখন তিনি গৃহিণী। তাঁর স্বামী এইচএসসি পাস করে বর্তমানে ব্র্যাক ব্যাংক কুষ্টিয়া শাখায় চাকরি করেন। ২০০৫ সালে তাদের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়েছিল। মেয়ের বাবার বাড়ি ঝিনাইদহের হরিনাকুণ্ডু উপজেলার দুর্লভপুর উত্তরপাড়া গ্রামে আর ছেলের বাড়ি শৈলকুপা উপজেলার সিদ্ধি গ্রামে। স্বামীর সঙ্গে কুষ্টিয়া শহরে থাকতেন জুলেখা। পরে সন্তানসম্ভবা হওয়ার কিছুদিন পর ঝিনাইদহের হরিনাকুণ্ডু উপজেলার দুর্লভপুর উত্তরপাড়া গ্রামে বাবা আব্দুর রাজ্জাকের বাড়িতে চলে আসেন জুলেখা।
গর্ভাবস্থায় বাবার বাড়িতে থাকার সময় নিয়মিতই সেখানে আসতেন জুলেখার স্বামী রাশেম মণ্ডল। খোঁজখবর নিতেন স্ত্রীর। গর্ভের সন্তানকে ভালো রাখতে যত্নের কমতি রাখেননি জুলেখা। তাঁর স্বামীও পুষ্টিকর খাবার খাওয়া, নিয়মিত চেকআপ করানোসহ অন্যান্য দিকে নজর রাখতেন। তাঁর কোনো শারীরিক জটিলতাও দেখা দেয়নি।
রোববার রাত ১২টার পর থেকে প্রসব বেদনা শুরু হয় জুলেখা বেগমের। এরপর তাঁর মা-বাবাসহ অন্যান্য আত্মীয় ও প্রতিবেশীরা পাখি ভ্যানযোগে প্রায় ১৫ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে ওই রাত ২টার দিকে নিয়ে আসেন ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে। সে সময় হাসপাতালে চিকিৎসক ও নার্সরা তাঁর শারীরিক খোঁজখবর নেন। এরপর সকাল পৌনে ৬টার দিকে হাসপাতালের ‘ই ও সি’ বিভাগে নরমাল ডেলিভারিতে জুলেখা বেগম জন্ম দেন এক ফুটফুটে ছেলে শিশু। জন্মের পরপরই হাসপাতাল থেকে আজান শোনানো হয় শিশুটিকে। তার ওজন হয়েছিল দুই কেজি পাঁচশ গ্রাম। এটি জুলেখা বেগমের তৃতীয় সন্তান। তাঁর বড় ছেলে নয়ন মণ্ডল এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে আর মেয়ে রাবেয়া খাতুনকে এখনও স্কুলে ভর্তি করাননি।
সদর হাসপাতালের গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা.
এদিকে সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুটির মা জুলেখা বেগম বলেন, বাচ্চা হওয়ার কথা ছিল মে মাসের ৫ তারিখে। তবে একটু আগে হলেও সম্পূর্ণ সুস্থ থাকায় আমি খুবই খুশি। হাসপাতালের ডাক্তার নার্স সবাই খুবই আন্তরিক ছিল। তারা সবসময় খোঁজখবর নিয়েছে। জন্মের পর থেকেই বুকের দুধ খাচ্ছে সন্তানটা। সন্তান পেটে আসার পর থেকেই আমি এবং আমার স্বামী খুবই সতর্ক থাকতাম।
তিনি আরও জানান, আমাদের তিন সন্তান। বড় ছেলে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে, মেয়েটার বয়স ছয় বছর, ওকে স্কুলে ভর্তি করাব। এরপর ইচ্ছা ছিল একটা ছেলে সন্তান হবে। মেয়েটা জন্মের ৬ বছর পর আল্লাহ আমাদের ইচ্ছা পূরণ করেছেন। বিশেষ করে বাংলা নববর্ষের মতো বিশেষ একটি দিনে আমার সন্তান হয়েছে, আমিসহ পরিবারের সবাই খুবই খুশি। এখন আমাদের প্রত্যাশা তিন সন্তানকেই যেন লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তুলতে পারি। ছেলেটিকে প্রথম কোলে নিয়েছিল আমার ফুফু অর্থাৎ ছেলেটির নানি। তিনি প্রথম সাদা গেঞ্জি কিনে দিয়েছেন।
ছেলের বাবা রাশেম মণ্ডল বলেন, খুবই খুশি আমরা। বিশেষ করে নববর্ষের দিনে সন্তান হওয়াতে।
শিশুটির নানি সুন্দরী খাতুন বলেন, আমরা খুবই খুশি এমন ফুটফুটে নাতি ছেলে পেয়ে। নাতি ও আমার মেয়ে সুস্থ আছে। আল্লাহ যেন আগামী দিনেও এদের ভালো রাখে।
এদিকে শিশুটির নানা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এ আনন্দ আসলে ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। নাতি-নাতনি যে কী আদরের জিনিস, সেটা যার আছে সেই ভালো জানে। সদ্য ভূমিষ্ঠ নাতিকে কোলে নিয়েছি, মনে হচ্ছে আল্লাহ যেন আমাদের বড় একটি উপহার দিয়েছে। নাতনিটা মাঝেমধ্যে এসে বলছে, নানা তুমি কি ভাইয়াকে বেশি আদর করবা। তখন বলছি, তোরা যে আমার কলিজার টুকরা। তোরা দুই ভাই ও বোন সবাই আমার কাছে সমান। তোদের কাউকেই আদরের কমতি রাখব না।
এদিকে শিশুটি জন্মের সময় সদর হাসপাতালে ছিলেন সম্পর্কে শিশুর নানি সালেহা খাতুন। তিনি বলেন, রাতে হাসপাতালে আনার সময় অনেক চিন্তায় ছিলাম। শেষমেশ হাসপাতালে সবার আন্তরিকতায় ছেলে সন্তানের জন্ম হলো। আমরা খুবই খুশি, আনন্দিত।
ছোট শিশুটিকে দেখতে এসে প্রতিবেশীরা বলেন, জুলেখার কোলজুড়ে একটি সুস্থ সন্তান জন্ম নিয়েছে। এতে আমরা খুবই খুশি। আল্লাহ যেন তাদের ভালো রাখে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: শ শ র জন ম ঝ ন ইদহ ঝ ন ইদহ র নববর ষ র খ বই খ শ উপজ ল র জন ম র র জন ম আম দ র আল ল হ আনন দ প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
যেকোনো উৎসবকে রাজনৈতিক প্রভাবের ঊর্ধ্বে রাখার আহ্বান বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের
কেবল বাংলা নববর্ষই নয়, যেকোনো উৎসবকে রাজনৈতিক প্রভাবের ঊর্ধ্বে রাখার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম।
মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে "বাংলা নববর্ষ: ইতিহাস, সংস্কৃতি ও উত্তরাধিকার" শীর্ষক এক সেমিনারে বাংলা নববর্ষের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, সাংস্কৃতিক তাৎপর্য ও সামাজিক প্রভাব নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ অনুরোধ করেন।
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেন, কেবল বাংলা নববর্ষই নয়, যেকোনো উৎসবকে রাজনৈতিক প্রভাবের ঊর্ধ্বে রাখা জরুরি। রাজনীতির সঙ্গে রাষ্ট্র ও সমাজের সম্পর্ক সঠিকভাবে গড়ে উঠলে কোনো উৎসবই নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত হয় না। মানুষের দৈনন্দিন জীবনে সাংস্কৃতিক চিন্তা-চেতনার যে স্বকীয়তা রয়েছে, তা অক্ষুণ্ন রাখাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত। বুদ্ধিভিত্তিক ও সচেতন উদ্যোগের মাধ্যমে ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব। বাংলা নববর্ষের প্রতি জনগণের গভীর অনুরাগ রয়েছে, তাই এটিকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে হবে।
সেমিনারে আইআরডিসি’র সাধারণ সম্পাদক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ তাজাম্মুল হকের সঞ্চালনায় সভাপতিত্ব করেন
আইআরডিসি-এর সভাপতি ও ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বিলাল হোসাইন।
সেমিনারে ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. নাছির আহমেদ তার মূল প্রবন্ধে বাংলা নববর্ষের ঐতিহাসিক বিবর্তন এবং নববর্ষ উদযাপনের ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকার নিয়ে দুই পর্বে বিশদ আলোচনা করেন। তিনি বলেন, বাংলা নববর্ষ কেবল বাঙালিদের উৎসব নয়, বরং এটি ধর্ম, গোত্র ও সম্প্রদায় নির্বিশেষে সকল বাংলাদেশির একটি সমন্বিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এছাড়া, বাংলা সনের উৎপত্তি, এর অর্থনৈতিক প্রাসঙ্গিকতা এবং ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক মাত্রা নিয়েও তিনি গভীরভাবে আলোকপাত করেন।
এছাড়াও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. রইছ উদ্দীন এবং বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. ফজলে এলাহি চৌধুরী প্যানেল আলোচক হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন। তাঁরা বাংলা নববর্ষের আন্তর্জাতিক ও সামাজিক সংহতি এবং সাংস্কৃতিক বিকাশে এর ভূমিকা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মতামত তুলে ধরেন। একইসাথে বাংলা নববর্ষের বহুমাত্রিক তাৎপর্য ও এর প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে গঠনমূলক আলোচনা করেন।
এসময় সেমিনারে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, গবেষক উপস্থিত ছিলেন।