হাওর অধ্যুষিত জেলা সুনামগঞ্জে আগামী শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কায় হাওরের শতভাগ ধান কাটা সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত জেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও কৃষি অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীর সব ছুটি বাতিল করা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) বিকালে নিজ কার্যালয়ে হাওরের ধান দ্রুত কর্তন ও আগাম বন্যায় করণীয় সম্পর্কে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া।

জেলা প্রশাসক বলেন, আগামী ১৮ এপ্রিল থেকে সুনামগঞ্জে সপ্তাহব্যাপী বৃষ্টি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে। এতে হাওরের ধান ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তাই ধান পাকার সঙ্গে সঙ্গে কর্তন করতে হবে। এ সময় তিনি বলেন, কৃষকরা প্রস্তুত থাকবেন। ধান পাহারা দিতে পারেন, যাতে হঠাৎ পানি বেড়ে ধানের ক্ষতি এড়ানো যায়। 

এ সময় উপস্থিত ছিলেন সুনামগমঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সমর কুমার পাল, জেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোস্তফা ইকবাল আজাদ, সুনামগঞ্জ রিপোর্টার্স ইউনিটের সভাপতি মাহবুবুর রহমান পীর, সুনামগঞ্জ জেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি লতিফুর রহমান রাজু, সাংবাদিক আল হেলাল প্রমুখ।

সুনামগমঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার রাইজিংবিডি-কে, আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে আগামী সপ্তাহে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। এতে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে। 

ঢাকা/মনোয়ার/বকুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ন মগঞ জ

এছাড়াও পড়ুন:

‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল কুফরি’ বলার তাৎপর্য

এটি একটি দোয়া। মহানবী (সা.) এই দোয়া সাহাবিদের শিখিয়েছেন। আমরা মানুষ হিসেবে খুব দুর্বল প্রাণী, আমাদের প্রতিনিয়ত মহান শক্তিমান আল্লাহর কাছে তাই সাহায্য চাইতে হয়। এই দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে আমরা অবিশ্বাস ও আল্লাহকে অস্বীকার করার মানসিক রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারি।

দোয়ার প্রেক্ষাপট

রাসুল (স.) তাঁর সাহাবিদের এ দোয়া নিয়মিত পড়ার পরামর্শ দিতেন, বিশেষ করে নামাজের পর ও সকালে-সন্ধ্যায়। এক বর্ণনায় এসেছে, “নবীজি (সা.) এ দোয়া নিয়মিত পাঠ করতেন—

উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল কুফরি, ওয়াল ফাকরি, ওয়া আউজুবিকা মিন আযাবিল কবর।’”

অর্থ: “হে আল্লাহ, আমি তোমার আশ্রয় চাই কুফর (অবিশ্বাস) ও দারিদ্র্য থেকে এবং তোমার আশ্রয় চাই কবরের আজাব থেকে।” (সুনানে নাসাঈ, হাদিস: ৫৪৬৫)

এতে বোঝা যায়, নবী (স.) কেবল অবিশ্বাস (কুফর) নয়, বরং এমন সব পরিস্থিতি থেকেও আশ্রয় চাইতেন, যা মানুষকে কুফরের দিকে ঠেলে দিতে পারে, যেমন চরম দারিদ্র্য বা হতাশা।

আরও পড়ুনকেন শিরক সবচেয়ে বড় পাপ১৮ জুন ২০২৫কুফর অর্থ কী

কুফর শব্দের আদি অর্থ “ঢেকে ফেলা” বা “অস্বীকার করা”। ইসলামি পরিভাষায় কুফর মানে হলো,

আল্লাহর অস্তিত্ব, একত্ব বা তাঁর নির্দেশ অস্বীকার করা, কিংবা এমন কোনো কাজ বা বিশ্বাস রাখা যা ইমানের বিপরীত।

কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, “যারা কুফরি করে, তাদের আমল ধূলিকণার মতো ম্লান হয়ে যায়।” (সুরা ইবরাহিম, আয়াত: ১৮)

আরেক আয়াতে সতর্ক করা হয়েছে, “যে কেউ ইমানের পর কুফরি করে, সে সরল পথ থেকে বিভ্রান্ত হয়ে গেল।” (সুরা নিসা, আয়াত: ১৩৭)

কেন কুফর থেকে আশ্রয় চাওয়া জরুরি

১. কুফর মানব জীবনের সর্বনাশ ডেকে আনে। যখন কেউ ইমান হারায়, তখন তার জীবনের উদ্দেশ্য, নৈতিক দিকনির্দেশ ও আখিরাতের পরিণতি—সব কিছু ধ্বংস হয়ে যায়।

২. কুফর থেকে শুরু হয় নৈতিক অবক্ষয়। যে আল্লাহকে ভয় করে না, তার হৃদয় ধীরে ধীরে পাপ ও অন্যায়ের প্রতি উদাসীন হয়ে যায়।

৩. কুফরের পরিণতি ভয়াবহ। কোরআনে বলা হয়েছে, “যারা কুফরি করেছে, তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন।” (সুরা মুলক, আয়াত: ৬)

দোয়ার শিক্ষণীয় দিক

১. ইমান রক্ষা সর্বপ্রথম কর্তব্য। এই দোয়া শেখায় যে জীবনের সবচেয়ে বড় অনিষ্ট কুফর; তাই প্রথমেই আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতে হবে এই বিপদ থেকে।

আরও পড়ুনইসলামে ‘কলব’ ও ‘আকল’–এর সম্পর্ক১০ নভেম্বর ২০২৫

২. দারিদ্র্য থেকেও আশ্রয় চাওয়া উচিত। কারণ, অভাব ও হতাশা অনেক সময় মানুষকে কুফর ও অন্যায়ের পথে ঠেলে দেয়। ইবন কাসির ব্যাখ্যা করেছেন, “রাসুল (স.) কুফর ও দারিদ্র্যের মধ্যে সম্পর্ক উল্লেখ করেছেন, কারণ অভাব অনেক সময় ঈমানের পরীক্ষায় মানুষকে দুর্বল করে।” (তাফসির ইবন কাসির, ২/ ৪৮৫, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়্যাহ, বৈরুত, ২০০০ খ্রি)

৩. কবরের আজাব থেকে আশ্রয় চাওয়ার বিকল্প নাই। এ দোয়ার শেষাংশে কবরের আজাবের উল্লেখ আমাদের মনে করিয়ে দেয়, এই জীবন ক্ষণস্থায়ী, প্রকৃত নিরাপত্তা হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি।

নবীজির (স.) কুফর থেকে আশ্রয় প্রার্থনা

আরেক হাদিসে এসেছে, “নবীজি (স.) দোয়া করতেন,  ‘হে আল্লাহ, আমি তোমার আশ্রয় চাই কুফর, ঋণ, পাপ ও দারিদ্র্য থেকে।’” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৭০৬)

এখান থেকে বোঝা যায়, নবীজি (স.) বিশ্বাস করতেন, ইমান নষ্ট হওয়ার ভয় যেকোনো বিপদের চেয়ে বড় বিপদ।

আধুনিক প্রেক্ষাপটে দোয়ার তাৎপর্য

আজকের যুগে কুফর কেবল মুখের অবিশ্বাস নয়, বরং তা নানা আকারে আসে। যেমন:

ধর্মকে উপহাস করা,

পাপকে স্বাভাবিক মনে করা,

আল্লাহর বিধান অমান্য করে আধুনিকতার নামে গাফেল হওয়া।

এই সময় এ দোয়া প্রতিটি মুমিনের জন্য আত্মরক্ষার ঢালস্বরূপ। মনোবিজ্ঞানীরাও বলেন,  বিশ্বাসী মানুষরা জীবনের কষ্টে অধিক মানসিক স্থিতিশীল থাকে, কারণ তারা আশ্রয় খোঁজে এক উচ্চতর সত্তার কাছে। (Harold G. Koenig, Handbook of Religion and Health, Oxford University Press, 2012, পৃ. ১৮–২০)

“আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল কুফরি”, এই সংক্ষিপ্ত অথচ গভীর দোয়া প্রতিটি মুসলমানের জন্য দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হওয়া উচিত। এটি কেবল অবিশ্বাস থেকে নয়, বরং আল্লাহর ইচ্ছায় সেই মানসিকতা থেকেও রক্ষা করবে, যা মানুষকে ধীরে ধীরে ইমান থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।

আসুন আমরা প্রতিদিন এই দোয়া পড়ি, যেন আল্লাহ আমাদের ইমান অটুট রাখেন, কুফর ও হতাশা থেকে রক্ষা করেন, এবং দুনিয়া ও আখেরাতে নিরাপত্তা দান করেন।

আরও পড়ুনদারিদ্র্যের ক্ষতিকর প্রভাব, ইসলামের সমাধান২৪ অক্টোবর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ