বাবেলের অধিবাসীরা যখন হজরত ইবরাহিমের (আ.) কথা কর্ণপাত করল না, শক্ত যুক্তিও মেনে নিতে রাজি হলো না, তখন তিনি দাওয়াত দেওয়ার ভিন্ন একটি কৌশল অবলম্বন করলেন। তাদের মন্দিরে অনেকগুলো কাঠের দেবদেবী ছিল, এর মধ্যে একটি ছিল প্রধান দেবতা। তিনি পরিকল্পনা করলেন তার জাতিকে দেখাবেন এই প্রতিমাগুলো কত দুর্বল—নিজের শরীর থেকে একটি মাছি তাড়াবারও শক্তি এদের নেই।
একদিন বাবেলে ধর্মীয় মেলা হবে, লোকজন ইবরাহিমকে (আ.
এরপর তারা যখন চলে যায়, তিনি চুপি চুপি প্রতিমাগুলোর কাছে গেলেন। যাদের সামনে ছিল থরেথরে সাজানো ফলমূল আর সুস্বাদু খাবার। তিনি বললেন, ‘তোমরা কি খাবে না? তোমাদের কী হয়েছে, কথা বলছো না কেন?’ (সুরা সফফাত, আয়াত: ৯১-৯৩) তিনি সজোরে মূর্তিগুলোর ওপর আঘাত হানলেন। কিন্তু বড় মূর্তিটাকে কিছু করলেন না, যেন ওটার ওপর সব দোষ চাপানো যায়।
লোকজন ধর্মমেলা থেকে ফিরে যখন মন্দিরের এই হাল দেখল, রেগেমেগে একদম বেহাল হয়ে হয়ে গেল। তারা বলল, ‘কে আমাদের দেবদেবীর এই অবস্থা করল? সে নিশ্চয় সীমালংঘনকারী। কেউ কেউ বলল, এক যুবককে দেখেছি এদের সমালোচনা করতে, তার নাম ইবরাহিম। তারা বলল, তাকে জনতার সামনে উপস্থিত করো, যেন তারা তাকে দেখতে পারে।’
ইবরাহিমকে (আ.) উপস্থিত করার পর তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, ‘তুমিই কি আমাদের দেবদেবীদের এই হাল করেছ? ইবরাহিম (আ.) বললেন, ওই বড় দেবতাটাই এসব করেছে, ওটাকে জিজ্ঞেস করো, যদি কথা বলতে পারে!’
এ কথা শুনে তারা চিন্তায় পড়ে গেল। তারা একে অপরকে বলল, তোমরা দেবদেবীদের অরক্ষিত রেখে গেছ, তোমরাই বরং সীমালঙ্ঘনকারী। তারপর লজ্জায় তাদের মাথানত হয়ে গেল। তারা ইবরাহিমকে (আ.) বলল, ‘তুমি তো ভালো করেই জানো এরা কথা বলতে পারে না।’
আরও পড়ুনসুরা ইয়াসিনের সার কথা১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ইবরাহিম (আ.) এই মন্তব্য শোনারই অপেক্ষায় ছিলেন। তিনি বললেন, ‘তবে কি তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছুর ইবাদত করো, যা তোমাদের কোনো উপকার করতে পারে না এবং কোনো ক্ষতিও করতে পারে না? ধিক তোমাদের এবং আল্লাহর পরিবর্তে তোমরা যাদের ইবাদত কর তাদের। এরপরও কি তোমরা বুঝবে না?’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত ৫৯-৬৭)
মূর্তিপূজার অসারতার এমন স্পষ্ট প্রমাণের পর বাবেলের অধিবাসীদের উচিত ছিল এক আল্লাহয় বিশ্বাস করা, হজরত ইবরাহিমকে (আ.) নবী বলে মেনে নেওয়া। কিন্তু তারা তা না করে ফন্দি আঁটতে থাকে কীভাবে মূর্তি ভাঙার প্রতিশোধ নেওয়া যায়, কীভাবে তাকে কঠিন শাস্তি দেওয়া যায়।
আল্লাহর শরিয়ত কোনো প্রাণীকেই জ্যান্ত পুড়িয়ে মারার অনুমতি দেয় না, আর মানুষ তো সবচেয়ে সম্মানিত প্রাণী, তার বেলায় তো আরও আগে না। (মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস: ৩,৫৪২) কিন্তু কাফেরদের নীতিতে ইনসাফ নাই, মানবতা নাই, আছে কেবল পাশবিকতার জয়গান। আর তাই বাবেলের মূর্তিপূজারীরা সিদ্ধান্ত নেয়—এই যুবককে নিরস্ত করার একটাই উপায় আছে, আর তা হলো জ্যান্ত পুড়িয়ে মারা।
আরও পড়ুনআল্লাহর কাছে যে দোয়া করেছিলেন নবী সোলায়মান (আ.) ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইবর হ ম করল ন বলল ন
এছাড়াও পড়ুন:
আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পাবিপ্রবির ৩ শিক্ষার্থীর কৃতিত্ব
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) তিন শিক্ষার্থী মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ভিত্তিক আন্তর্জাতিক পর্যায়ের উদ্ভাবনী প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বে উত্তীর্ণ হয়েছেন।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ১ হাজারের বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন। আগামী ২৩ ও ২৪ আগস্ট মালয়েশিয়ার কেবাংসান বিশ্ববিদ্যালয়ে এ প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হবে।
আইইইই ইয়েসিস ১২-২০২৫ (ইয়ুথ ইন্ডিয়েভার্স ফরর সোশাল ইনোভেশন ইউজিং সাসটেইনেবল টেকনোলজি) একটি আন্তর্জাতিক পর্যায়ের উদ্ভাবনী প্রতিযোগিতা, যা বিভিন্ন দেশের তরুণ উদ্ভাবকদের সামাজিক সমস্যা সমাধানে প্রযুক্তি নির্ভর টেকসই সমাধান খুঁজতে উৎসাহিত করে।
আরো পড়ুন:
করোনা ও ডেঙ্গু: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জরুরি নির্দেশনা
ক্যানস্যাট প্রতিযোগিতায় এশিয়ায় দ্বিতীয় ইউআইইউ অ্যাসেন্ড দল
তারা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিক অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের মাহমুদুল হাসান বাপ্পী, নাইমুর রহমান ও কর্নেল আহমেদ রাহুল।
অনলাইনে তাদের দাখিলকৃত প্রজেক্ট ‘ইন্টেলিজেন্স সেফগার্ড’ একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ভিত্তিক স্মার্ট ডিটেকশন অ্যান্ড ইমার্জেন্সি রেসপন্স সিস্টেম-বিচারকমন্ডলী দ্বারা প্রশংসিত হয়ে বিশেষ বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে চূড়ান্ত পর্বে পৌঁছেছে। এই প্রজেক্টটির তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন ওই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক লিটন চন্দ্র পাল।
সহকারী অধ্যাপক লিটন চন্দ্র পাল বলেন, “পাবিপ্রবির তিন শিক্ষার্থীর প্রজেক্ট ‘ইন্টেলিজেন্স সেফগার্ড’ একটি অত্যাধুনিক বুদ্ধিমত্তা (এআই) ভিত্তিক স্মার্ট ক্রাইম ডিটেশন অ্যান্ড ইমার্জেন্সি রেসপন্স সিস্টেম মানুষের কণ্ঠ, ছবি, ভিডিও এবং যানবাহনের নাম্বার প্লেট ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে অপরাধ প্রতিরোধে সহায়তা করতে সক্ষম। অত্যাধুনিক এই প্রযুক্তি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়ক হিসেবে কাজ করতে পারে। ফলে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে সমস্যা চিহ্নিত করে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারবে। এই প্রজেক্টের আইডিয়া বাস্তবায়িত হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার ফলে অপরাধের মাত্রা কমবে, নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।”
তিন শিক্ষার্থীর কৃতিত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম আব্দুল-আওয়াল, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. শামীম আহসান অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
এক বার্তায় তারা বলেন, শিক্ষার্থীদের এই অর্জন বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরব বৃদ্ধি করেছে এবং প্রমাণ করেছে আমাদের শিক্ষার্থীরা বিশ্বমানের মেধা ও দক্ষতার অধিকারী। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তাদের যাত্রা আমাদের শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবন ও কৃতিত্বের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। তাদের সাফল্য সকল শিক্ষার্থীকে অনুপ্রাণিত করবে বলে বিশ্বাস করেন তারা।
ঢাকা/শাহীন/মেহেদী