ছাত্রদলের দুই নেতাকে কারাগারে প্রেরণ
Published: 16th, April 2025 GMT
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক নেতার ওপর হামলার মামলায় মেহেরপুরের মুজিবনগরে ছাত্রদলের দুই নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার রাতে এ মামলা করেন শাওন শেখ। এতে জেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক তৌফিকুল ইসলাম মিঠুন ও মুজিবনগর সরকারি ডিগ্রি কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি রুবেল হাসানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আজ বুধবার সকালে আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।
উপজেলার বাগোয়ান গ্রামের হারু শেখের ছেলে শাওন শেখ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা পর্যায়ের মুখ্য সংগঠক। মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, প্রায় ২৫ দিন আগে ভিজিএফ কার্ডে চাল বিতরণকে কেন্দ্র করে মোবাইল ফোনে তাঁকে হত্যার হুমকি দেন মিঠুন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৪ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা যাওয়ার জন্য মুজিবনগরের কেদারগঞ্জ চার রাস্তার মোড়ে পৌঁছালে হামলার শিকার হন।
মামলার বিষয়ে জেলা ছাত্রদল সভাপতি আকিব জাবেদ সেনজির বলেন, বিএনপির একটি নিউজে শাওন শেখ আপত্তিকর মন্তব্য করেন। সোমবার রাতে তাঁকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেন মিঠুন। বিষয়টি নিয়ে দু’জনের মধ্যে হাতাহাতি হয়। শাওন শেখ জুলাই-আগস্টের ছাত্র আন্দোলনে জড়িত ছিলেন না। তাঁর বিরুদ্ধে এলাকায় চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। তিনি প্রশাসনের কাছে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেন।
মুজিবনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমানের ভাষ্য, মামলার পর দু’জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়। পুলিশ সুষ্ঠু তদন্ত করছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ছ ত রদল ন ত ছ ত রদল র ম জ বনগর
এছাড়াও পড়ুন:
কাছের মানুষ পাশে থাকলে কঠিন যুদ্ধেও জেতা যায়, তার প্রমাণ বিসিএস ক্যাডার মালিহা
মালিহার মা আসমা বেগমের কথা না বললেই নয়। জন্ম মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং থানার কলমা গ্রামে। ঢাকায় বড় হয়েছেন। বেগম বদরুন্নেছা সরকারি মহিলা কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেন।
১৯৯৩ সালে জগন্নাথ কলেজে (সে সময় কলেজ ছিল, ২০০৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয় হয়) ভর্তি হন। এর এক বছর পর তাঁর বিয়ে হয়ে যায়।
একঝটকায় ঢাকার শিক্ষার্থী থেকে ঝিনাইদহের হরিশংকরপুর ইউনিয়নের বাকড়ি গ্রামের গৃহবধূ হয়ে গেলেন। আসমা বেগমের খুব ইচ্ছা ছিল পড়াশোনা শেষ করে চাকরি করার।
স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার পাট চুকে গেল। চাকরির স্বপ্নের সমাপ্তি। মালিহা তাঁর মাকে সারাটা জীবন কেবল অন্যের জন্য করে যেতে দেখেছেন। বিনিময়ে মা পেয়েছে কেবল উপেক্ষা আর অবহেলা।
নতুন জীবন নতুন সংগ্রামউচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পরই বিয়ে হয়ে যায় মালিহার। বিয়েতে মালিহার মায়ের কেবল একটা অনুরোধ ছিল পাত্র ও তাঁর মা-বাবার কাছে—তাঁর কন্যার লেখাপড়ার যাতে কোনো ত্রুটি না হয়। বিয়ের পর মায়ের ইচ্ছায়, স্বামীর পরামর্শে মালিহা ভর্তি হন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধীন ঝিনাইদহ সরকারি ভেটেনারি কলেজে।
মালিহা এই কলেজের প্রথম ব্যাচের ছাত্রী। তখন কলেজটি ছিল শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত। বর্তমানে কলেজটি যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
২০১৯ সালের মার্চে ইন্টার্ন চলাকালীন মা হন মালিহা। মা হয়েও ভালোভাবে পড়াশোনা শেষ করেন। তারপর সময় নষ্ট না করে শুরু করেন চাকরির পড়াশোনা।
সারা জীবন কেবল চেয়েছি মায়ের কষ্টের ভাগ নিতে। কী করলে আমার মা একটু স্বস্তি পাবে। আমার স্বামী সব সময় আমার পাশে ছিলেন। আমাকে অনুপ্রাণিত করেছেন। বলেছেন, “তুমি কেবল আবেগ নিয়ে কখনোই মায়ের পাশে দাঁড়াতে পারবা না। এ জন্য তোমার পায়ের নিচের মাটি শক্ত হতে হবে।” আমাকে আরও বলত, “আমার মতো স্টুডেন্টের যদি সরকারি চাকরি (ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার) হয়, তোমার কেন হবে না। তুমি আমার চেয়ে বেশি যোগ্য, বেশি পরিশ্রমী, তোমার আরও ভালো চাকরি হবে।”মুলকে সাদ মালিহা, লাইভস্টক ক্যাডার, ৪৪তম বিসিএসযে কান্না আনন্দেরমালিহার মামি শিক্ষা ক্যাডার হন। সে সময় থেকে তাঁর রঞ্জু মামা তাঁকে বিসিএসের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলেন। মালিহা ২০২০ সাল থেকে চাকরির পড়াশোনা শুরু করেন। ২০২৫ সালে এসে প্রথম সরকারি চাকরি পান। যোগ দেন সরকারি ব্যাংকের অফিসার পদে।
এর কিছুদিন পর ৩০ জুন ৪৪তম বিসিএসের ফল প্রকাশ করে। তবে তখন ক্যাডার পদ আসেনি মালিহার। বেশ হতাশ হয়ে গিয়েছিলেন।
লাইভস্টক ক্যাডারে ৬৮জন ‘রিপিট ক্যাডার’ ছিল। সেসব পুনর্মূল্যায়ন করে আবার যখন ৬ নভেম্বর নতুন ফল প্রকাশ করা হয়, তাতে নাম আসে মালিহার। বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্নপূরণ হয় তাঁর।
মালিহার মা আসমার নিজের অপূর্ণ স্বপ্ন যেন মেয়ের ভেতর দিয়ে সত্য হয়ে ধরা দেয়। মালিহা যখন চাকরির সুখবর জানাতে মাকে ফোন করে কাঁদতে কাঁদতে ‘আম্মুউউউ’ বলে একটা চিৎকার দিয়েছেন, মা আসমা বেগম ভয়েই অস্থির! নিশ্চয়ই মেয়ের কোনো বিপদ হয়েছে। এরপরই শুনলেন খবরটা। মা-মেয়ে দুজনেই ফোনের দুই পাশে কাঁদছেন, যে কান্না আনন্দের, প্রাপ্তির, সফলতার।
মামির শাড়ি আর ব্লেজার পরে বিসিএসের ভাইভা দিয়েছেন মালিহা