হঠাৎ কেন আইপিএলে ‘ব্যাট টেম্পারিং’ নিয়ে কড়াকড়ি
Published: 17th, April 2025 GMT
চলতি মৌসুমের আইপিএল শুরু হয়েছে ২৯ মার্চ। কিন্তু ১৩ এপ্রিল থেকে হুট করে ‘ব্যাট টেম্পারিং’ নিয়ে সরব হয়েছে আইপিএল কর্তৃপক্ষ। বেশি লম্বা, চওড়া ও ভারি ব্যাট নিয়ে খেলার অভিযোগে কয়েক জনের ব্যাটও বাতিল করেছেন আম্পায়াররা।
কেন এই কড়াকড়ি: ব্যাট টেম্পারিং নিয়ে আইপিএলে কড়াকড়ি শুরু হলেও আইপিএল কর্তৃপক্ষ কিংবা বিসিসিআই কোন বিবৃতি বা ব্যাখা এ বিষয়ে দেয়নি। তবে সংবাদ মাধ্যম ক্রিকইনফো দাবি করেছে, আইপিএল কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মেনে ব্যাট ও বলের লড়াইয়ের ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য আম্পায়াররা ব্যাট পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেছেন।
পূর্বের নিয়ম বাদ: আইপিএলের গত মৌসুমেও ব্যাট পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছিল। কিন্তু এবার নিয়মে কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে। গত বছর চতুর্থ আম্পায়ার ম্যাচ শুরুর আগের দিন ব্যাটারদের ব্যবহৃত ব্যাট গেজ দিয়ে পরীক্ষা করতেন। কিন্তু এতেও সন্দেহ থেকে যায়। ব্যাটাররা এক ব্যাট পরীক্ষা করিয়ে অন্য ব্যাট নিয়ে মাঠে নেমেছেন এমন অভিযোগ ওঠে। এবার তাই সন্দেহ হওয়া সাপেক্ষে মাঠে থাকা আম্পায়ার ‘ব্যাট টেম্পারিং’ হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করছেন।
ব্যাটের সাইজ কেমন হতে হবে: ব্যাটের সাইজের ক্ষেত্রে পুরুত্ব ৪ সেন্টিমিটার বা ১.
ব্যাট সাইজ সম্পর্কে আইন কী বলে: ব্যাট মাপার ক্ষেত্রে এমসিসির ল ৫ অনুসরণ করা হচ্ছে। এমসিজি উপরে উল্লেখিত ব্যাটের সাইজ হতে হবে বলে উল্লেখ করেছে। ২০১৮ সালে ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড ঘরোয়া ক্রিকেটে এটি চালু করে।
গেজ কীভাবে কাজ করে: ব্যাট টেম্পারিং মাপার জন্য একটি গেজ তৈরি করা হয়েছে। গেজটি ব্যাটের সর্বোচ্চ সাইজের মাপে তৈরি করা। কোন ব্যাটারের ব্যাট নিয়ে সন্দেহ তৈরি হলে এই গেজের মধ্যে তার ব্যাট প্রবেশ করানো হয়। গেজের মুখে ব্যাট আটকে গেলে ব্যাট টেম্পারিং ধরা পড়ে। প্রতিটি দলকে এই গেজ সরবরাহ করা হয়েছে। যাতে ব্যাট মেপে তারা মাঠে নামতে পারেন। এরপরই সন্দেহ হলে আম্পায়ার ব্যাট মাপবেন।
ব্যাট টেম্পারিংয়ে সাজা: কোন ব্যাটার ব্যাট টেম্পারিং করলে আপাতত কোন সাজার মুখে তাকে পড়তে হচ্ছে না। কেবল মাত্র ওই ব্যাট দিয়ে খেলার অনুমতি হারাবেন ওই ব্যাটার।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
জামিন দেওয়াকে কেন্দ্র করে আদালতে হাতাহাতি, স্টেনোগ্রাফার আহত
লক্ষ্মীপুরে আদালতে একটি জামিনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে একজন বিচারকের আদালত বর্জন করেছে আইনজীবীরা। এ সময় আইনজীবীদের সাথে আদালতের কর্মচারীদের হাতাহাতি ও এজলাসে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এতে আহত হন ওই এজলাসের স্টেনোগ্রাফার আশরাফুজ্জামান।
রবিবার (১৫ জুন) দুপুর ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। আদালত বর্জন করায় ভোগান্তিতে পড়েন বিচারপ্রার্থীরা।
জানা গেছে, রায়পুর প্রিন্সিপাল কাজী ফারুকী স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক আহম্মেদ কাউসার উদ্দিন জামান (৩৫) এর বিরুদ্ধে গত ৬ জুন সদর থানায় চুরির মামলা দায়ের করেন তারই প্রতিবেশি জেলা জজ আদালতের আইনজীবী আবু তৈয়ব। মামলায় আরও দুইজনকে আসামি করা হয়। ওই মামলায় আসামি কাউসার ও রুবেল গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে ছিলেন। এরপর গত ১০ জুন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ এর বিচারক এম সাইফুল ইসলাম তাদের জামিন মঞ্জুর করেন। এ নিয়ে তাৎক্ষণিক ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দসহ আইনজীবীরা।
মামলায় অভিযোগ আনা হয়, বাদী এবং আসামিদের মধ্যে পূর্ব বিরোধ রয়েছে। ৫ জুন দিবাগত গভীর রাতে আসামিরা পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে বাদীর ভবনের সামনে থাকা একটি লোহার গেট কেটে নিয়ে এবং গেটের পিলার ভেঙে একটি পিক-আপ গাড়িতে করে রায়পুরের দিকে নিয়ে যায়। রায়পুর বাসাবাড়ি এলাকায় গেলে পিকআপ গাড়িটি টহল পুলিশ আটক করে। পরে গাড়িটি জব্দ ও চালক রুবেলকে আটক করে পুলিশ। মামলায় বাদী আড়াই লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে উল্লেখ করেন।
আদালত সূত্র জানায়, গত ৯ জুন আসামিদের জামিন প্রার্থণা করা হয়। এতে আসামিপক্ষ উল্লেখ করেন, মামলার বাদি আইনজীবী হওয়ায় আদালতে তাদের পক্ষে কোন আইনজীবী জামিন শুনানিতে অংশ নিতে ইচ্ছুক নয়। আসামিরা তাদের পক্ষে আইনজীবী না পেয়ে জামিন শুনানির জন্য লক্ষ্মীপুর লিগ্যাল এইড অফিসে আইনি সহায়তা চান। সেখান থেকে দুইজন আইনজীবীকে শুনানি করতে বলা হলেও তারা অন্য আইজীবীদের দ্বারা হেনস্তার ভয়ে জামিন শুনানিতে অংশ নেননি। অন্যদিকে বাদী পক্ষের আইনজীবী আসামিদের বিরুদ্ধে জামিনের বিরোধিতা করেন।
আদালত সূত্র আরও জানায়, আসামিরা ৯ জুন জামিনের জন্য আবেদন করলে পরদিন ১০ জুন নথি প্রাপ্ত সাপেক্ষে জামিন শুনানির জন্য রাখা হয় এবং তদন্তকারী কর্মকর্তা ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন।
বিষয়টি নিয়ে আদালতের পর্যালোচনায় উঠে আসে, ঈদুল আজহার বন্ধে আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় এবং গ্রেপ্তারের পর থেকে আসামিরা জামিনের শুনানির সুযোগ পাননি। চারদিন তাদের হাজতবাস হয়েছে। ৬ জুন আসামি গ্রেপ্তার হলেও বাদী একজন আইনজীবী হওয়ায় আসামিরা জামিন শুনানির জন্য কোন আইনজীবী পাননি এবং লিগ্যাল এইড অফিসের আইনজীবীরাও শুনানিতে অংশ নিতে অনীহার বিষয়টি পরিষ্কার হওয়ায় ১৪ জুন পর্যন্ত ঈদের ছুটিতে আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় জামিন অযোগ্য ধারায় গুরুতর অভিযোগ না থাকায় উভয় পক্ষের শুনানি অন্তে উভয় দরখাস্ত নিষ্পত্তি করা হলো।
আদালত আসামিদের রিমান্ড না মঞ্জুর করে চারদিনের হাজতবাস ও ঈদ বিবেচনা করে আসামি কাউসার ও রুবেলকে ১০০ টাকা বন্ডে একজন গণ্যমান্য ব্যক্তির জিম্মায় জামিন মঞ্জুর করেন। তাদের জামিন হওয়ায় পর থেকেই আইনজীবীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করে। এ ঘটনায় তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করে বিচারকের অপসারণের দাবি জানান।
ঈদের বন্ধ শেষে রবিবার (১৫ জুন) আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হয়। আইনজীবী সমিতি বৈঠক করে ওই আদালতের বিচারক এম সাইফুল ইসলামের আদালতের বর্জনের ঘোষণা দেন। এদিন সকাল থেকে ওই বিচারকের কক্ষে বিচারপ্রার্থীরা এসে উপস্থিত হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন বিচারপ্রার্থী জানান, আদালতের বিচারক এজলাসে বসা ছিলেন। এ সময় ৭-৮ জন আইনজীবী কক্ষে ঢুকে আদালত বর্জনের ঘোষণা দেন। এতে হট্টগোল দেখা দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিচারক আদালত কর্মচারীদের দরজা বন্ধ করে দিতে বলেন। এ সময় আইনজীবী ও কর্মচারীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। আহত হন এজলাসের স্টেনোগ্রাফার আশরাফুজ্জামান। এতে বিচারকার্য সম্পন্ন না করেই এজলাস থেকে নেমে যান বিচারক।
আহত আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘‘আইনজীবীরা হট্টগোল করায় বিচারকের নির্দেশে আমি দরজা বন্ধ করতে গেলে আমার ওপর আইনজীবীরা হামলা করে। এতে আমার বাম চোখের পাশে রক্তাক্ত জখম হয়।’’
উপস্থিত আইনজীবীদের মধ্যে অ্যাডভোকেট আশিকুর রহমান জানান, কয়েকজন আইনজীবী এজলাসে গিয়ে আদালত বর্জনের বিষয়টি জানিয়ে দিতে গিয়েছেন। আদালত কর্মচারীরা উল্টো তাদের ওপর হামলা করেছে। এতে তিনি নিজেও আহত হন।
ঢাকা/লিটন/টিপু