পাকিস্তানে কেএফসির বিরুদ্ধে বিক্ষোভে নিহত ১
Published: 19th, April 2025 GMT
পাকিস্তানের পুলিশ দেশজুড়ে কেএফসির শাখাগুলো লক্ষ্য করে একের পর এক বিক্ষোভ ও ভাঙচুরের ঘটনায় কয়েক ডজন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করেছে। বিক্ষোভ চলাকালে গুলিবিদ্ধ হয়ে কেএফসির এক কর্মীর মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার (১৯ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের অব্যাহত হামলা এবং এতে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি সমর্থনের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েছে পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ। এই রোষ গিয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ফাস্টফুড চেইন কেএফসির ওপর।
আরো পড়ুন:
বিবিসির প্রতিবেদন
ক্ষমা ও ক্ষতিপূরণের বাংলাদেশের দাবির উল্লেখ নেই পাকিস্তানের ভাষ্যে
প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব
বিশ্বে পূর্বশত্রুদের মিত্রে পরিণত হওয়ার অনেক উদাহরণ রয়েছে
ক্ষুব্ধ বিক্ষোভকারীরা এই ফাস্টফুড চেইনের বয়কটের আহ্বান জানাচ্ছেন। দাবি করছেন এটি যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্র ইসরায়েলের প্রতীক।
পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তালাল চৌধুরী বিবিসিকে বলেন, “গত সপ্তাহে দেশজুড়ে কমপক্ষে ২০টি কেএফসি আউটলেটে হামলার চেষ্টা রেকর্ড করা হয়েছে।”
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, লোহার রড হাতে জনতা কেএফসি আউটলেটে ঢুকে পড়ছে এবং দোকান জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে। করাচিতে দুটি দোকানে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
একটি ভিডিওতে দেখা যায় একজন লোক চিৎকার করে বলছেন, “তোমরা যেটা থেকে টাকা কামাচ্ছো, ওরা সেই টাকা দিয়ে গুলি কিনছে।”
সহিংসতার নিন্দা জানিয়ে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বিবিসিকে বলেন, “এখানে জড়িত বেশিরভাগ বিক্রেতাই পাকিস্তানি এবং এই লাভ পাকিস্তানিদের কাছেই যায়।”
একজন পুলিশ কর্মকর্তা বিবিসিকে নিশ্চিত করেছেন, নিহত ব্যক্তি আসিফ নওয়াজ। তার বয়স ৪৫ বছর। কেএফসির এই কর্মী ১৪ এপ্রিল লাহোরের উপকণ্ঠে শেইখুপুরা শহরে এক বিক্ষোভ চলাকালে গুলিবিদ্ধ হন।
শেইখুপুরা অঞ্চলের পুলিশ কর্মকর্তা আতহার ইসমাইল জানান, নওয়াজ তখন রান্নাঘরে কাজ করছিলেন এবং তার কাঁধে একটি গুলি লাগে যা ১০০ ফুট দূর থেকে পিস্তল থেকে ছোঁড়া হয়েছিল। তিনি বিবিসিকে বলেন, মূল অভিযুক্ত এখনও পলাতক। তবে পুলিশ এখন পর্যন্ত ৪০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
এত দূরত্ব থেকে ছোড়া গুলি প্রাণঘাতী হয় না। তবে ময়নাতদন্তে দেখা গেছে, গুলি কাঁধে লাগার পর বুকে চলে যায়।
ইসমাইল বিবিসিকে আরো বলেন, এখন পর্যন্ত এমন কোনো প্রমাণ যায়নি যাতে বোঝা যায় নওয়াজকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়েছিল—এটি দুর্ঘটনাবশত ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পাকিস্তান জুড়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বরা গাজা যুদ্ধের নিন্দা জানিয়েছেন।
ইসলামপন্থি দল তেহরিক-ই-লাব্বাইক পাকিস্তান (টিএলপি) ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে, কিন্তু কেএফসিতে হামলায় তাদের কোনো সদস্যের জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে।
পাকিস্তানের সবচেয়ে প্রভাবশালী সুন্নি পণ্ডিত মুফতি তাকি উসমানি যুদ্ধের সঙ্গে সম্পর্কিত বলে মনে করা পণ্য বর্জনকে উৎসাহিত করেছেন।
তবে উভয়ই বিক্ষোভকারীদের সহিংসতা না করার আহ্বান জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার জাতীয় ফিলিস্তিন সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যে উসমানি বলেন, ইসরায়েলের পণ্য এবং কোম্পানি বর্জন করা অপরিহার্য হলেও, ইসলাম ‘এমন ধর্ম নয় যা অন্যদের ক্ষতি করতে উৎসাহিত করে’। তিনি বলেছেন, “কারো জীবন ঝুঁকি ফেলা নিষিদ্ধ কাজ।”
তিনি বলেন, “সুতরাং, আপনার প্রতিবাদ এবং বর্জন চালিয়ে যান, তবে শান্তিপূর্ণভাবে তা করুন। সহিংসতা বা অশান্তিপূর্ণ আচরণের কোনো উপাদান থাকা উচিত নয়।”
টিএলপি মুখপাত্র রেহান মহসিন খান বলেছেন, দলটি মুসলমানদের ইসরায়েলি পণ্য বর্জনের আহ্বান জানিয়েছে, তবে কেএফসির আউটলেটের সামনে বিক্ষোভের কোনো আহ্বান জানায়নি।
গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে পাকিস্তান এবং অন্যান্য মুসলিম দেশে পশ্চিমা ব্র্যান্ডগুলো আক্রমণ, বয়কট এবং বিক্ষোভের মুখোমুখি হওয়ার বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে।
কেএফসি এবং তাদের মূল কোম্পানি ইয়াম ব্র্যান্ডস এখনও এ বিষয়ে বিবিসির অনুরোধের জবাব দেয়নি।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক এফস র ইসর য
এছাড়াও পড়ুন:
‘আমার সোনার বাংলা’ গাওয়ায় রাষ্ট্রদ্রোহী মামলার তীব্র সমালোচনা
‘আমার সোনার বাংলা...’ গাওয়ায় রাষ্ট্রদ্রোহী মামলার নির্দেশ দিয়েছেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। রাজ্যের এক সিনিয়র কংগ্রেস নেতার বিরুদ্ধে এই মামলা করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এ ঘটনায় তীব্র সমালোচনা করেছেন রবীন্দ্রপ্রেমীরা। রবিবার আসমের এই ঘটনার প্রতিবাদে পথে নেমেছে বিশ্বভারতীর এসএফআই ইউনিটের সদস্যরা।
গত সোমবার আসামের শ্রীভূমি জেলার ইন্দিরা ভবনে কংগ্রেস সেবা দলের বৈঠকের সময় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি’ গানটি গেয়েছিলেন বিধুভূষণ দাস নামে এক সিনিয়র কংগ্রেস কর্মী। এরপরই বিতর্ক ছড়ায়।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানটি বিভিন্ন সময় গেয়েছেন প্রখ্যাত শিল্পী সুচিত্রা মিত্র, মান্না দে, শান্তিদেব ঘোষ, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, লতা মঙ্গেশকর, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, লোপামুদ্রা মিত্র, নচিকেতাসহ আরো অনেক প্রথিতযশা শিল্পীরা। কিন্তু সেই গান নিয়েই এত বিতর্ক মেনে নিতে পারছেন না শান্তিনিকেতনের আশ্রমিক, শিক্ষার্থী থেকে বিদ্বজনেরা।
রাজ্যটির বীরভূম জেলার শান্তিনিকেতনে সিনিয়র আশ্রমিকেরা বলছেন এ তো একেবারে ‘হাস্যকর’! রবি ঠাকুরের পরিবারের সদস্য সুপ্রিয় ঠাকুরের প্রশ্ন ‘আমরাও কি তাহলে রাষ্ট্রদ্রোহী?’
১৯০৫ সালে লর্ড কার্জনের ‘বঙ্গভঙ্গ’ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ। এর প্রতিবাদে রাখিবন্ধন করে পথে নেমেছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সেই সময় ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি রচনা করেছিলেন তিনি। ১৯৭২ সালের ১৩ জানুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার এই গানটিকে ‘জাতীয় সঙ্গীত’ হিসাবে গ্রহণ করে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরিবারের সদস্য সুপ্রিয় ঠাকুর বলেন, “এক্কেবারে হাস্যকর ব্যাপার। রবীন্দ্রনাথের গান সবার জন্যই, সবাই গেয়ে থাকেন। আমরাও এখনো গেয়ে থাকি। এটা যদি দেশদ্রোহীতা হয়, তাহলে আমরা দেশদ্রোহী। একজন মুখ্যমন্ত্রী (হিমন্ত বিশ্ব শর্মা) যদি এধরনের কথা বলেন, তাকে তাহলে ‘মুখ্য’ বলা যাবে না, অন্য কিছু বলতে হবে।”
বিশ্বভারতীর পাঠভবনের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর ও সিনিয়র আশ্রমিক সুব্রত সেন মজুমদার বলেন, “ব্যাপারটা আমার কাছে অত্যন্ত হাস্যকর ও লঘু মনে হয়। রবীন্দ্রনাথ বিশ্ববন্দিত, তাই তার গান সব জায়গায় গাওয়া যায়। কিন্তু, একথা স্বীকার করি ‘আমার সোনার বাংলা’ বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত এবং তারা গুরুদেবের এই গানটিকে জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে গ্রহণ করেছেন বলে আমরা সম্মান করি। এই গান কোথাও গাওয়া যাবে না এমন বিধিনিষেধ থাকা ভালো নয়। এটা অত্যন্ত ছোট মনের পরিচয়। তাই এই ধরনের ঘটনা দেখে আমরা অত্যন্ত মর্মাহত। তাদের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে তারা যেন আকাশের মত মন নিয়ে বিষয়গুলি দেখেন। মুখ্যমন্ত্রীকে সবাইকে নিয়ে রাজ্য চালাতে হয়, তাই তার অনেক উদার হওয়া উচিত।”
আরেক সিনিয়র আশ্রমিক অপর্ণা দাস মহাপাত্র বলেন, “জিনিসটা খুব হাস্যকর। রবীন্দ্র সঙ্গীত যে কোনো জায়গায়, যে কোনো পরিস্থিতিতে গাওয়া যায়। তার সঙ্গে দেশদ্রোহীতার সম্পর্ক খুঁজতে যাওয়া অত্যন্ত হাস্যকর। ‘আমার সোনার বাংলা’ এত সুন্দর একটি গান, যা যে-কোন উপযুক্ত পরিস্থিতিতেই গাওয়া যায়। আসামের মুখ্যমন্ত্রীর যদি এইটুকু জ্ঞান না থাকে বা রবীন্দ্রসঙ্গীতের প্রতি ভালোবাসা না থাকে সেটা আমাদের কাছে খুব দুঃখের।”
আশ্রমিক সুলগ্না মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমার সোনার বাংলা গানটি একটা জাতীয় সঙ্গীতের ঊর্ধ্বে গিয়ে এটা রবীন্দ্র সঙ্গীত। আর কি বলবো, কিছু বলারই নেই।”
আসামের ঘটনার নিন্দায় সরব হয়েছে বিশ্বভারতীর বাম ছাত্র সংগঠন ‘স্টুডেন্টস ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া’ (এসএফআই)। তাদের সদস্যরাও পথে নেমে স্লোগান দিয়ে প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন।
আসমের এই ঘটনার প্রতিবাদে রবিবার পথে নেমেছে বিশ্বভারতীর এসএফআই ইউনিটের সদস্যরা। এসএফআই ইউনিটের সম্পাদক বান্ধুলি কারার বলেন, “আমরা একটা বড় সমস্যার মধ্যে দাঁড়িয়ে আছি। রবীন্দ্রনাথের লেখা গান গাওয়ায় আসামে একজনের বিরুদ্ধে এফআইআর হয়েছে। এই গানটা শুধু একটা দেশের জাতীয় সংগীত নয়। এই গানটা মাটির গান, ভালোভাসার গান, মানবতার গান, একতার গান। এই গান গাওয়ায় যারা রাষ্ট্রদ্রোহী বলছেন, আসলে তারা মানবতাবিরোধী। রবীন্দ্রনাথের গান, তার লেখা, তার মুক্ত চিন্তা এগুলো বাঙালির চেতনার একটা অংশ। রবীন্দ্রনাথকে যদি অপমান করা হয় তার অর্থ বাঙালির শিক্ষা, সংস্কৃতির অপমান করা। রবীন্দ্রনাথ কেবলমাত্র বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা নন, তিনি আমাদের বাংলার গর্ব, ভারতের গর্ব। যারা বাংলার শিক্ষা, সংস্কৃতিকে মুছে ফেলতে চাইছে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদ চলবে।”
সুচরিতা/শাহেদ