আগামীকাল সারা দেশে মহাসমাবেশ করবেন কারিগরি শিক্ষার্থীরা
Published: 19th, April 2025 GMT
ছয় দফা দাবিতে আগামীকাল রোববার সারা দেশে মহাসমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে কারিগরি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ। সব কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে এ সমাবেশ হবে।
আজ শনিবার সকালে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সামনে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। মানববন্ধন শেষে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের মূল ফটকের নামফলক লাল কাপড়ে ঢেকে দেন আন্দোলনকারীরা। আজকে তাঁদের কর্মসূচি ছিল ‘রাইজ ইন রেড’।
আজকের কর্মসূচি পালনকালে আন্দোলনকারীরা ‘মামা থেকে মাস্টার, মামাবাড়ির আবদার’, ‘এক হও এক হও, পলিটেকনিক এক হও’, ‘ষড়যন্ত্রের কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘কুমিল্লায় হামলা কেন, প্রশাসন জবাব দাও’ এমন বিভিন্ন স্লোগান দেন।
কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি মাসফিক ইসলাম মানববন্ধনে বলেন, আগামীকাল মহাসমাবেশের মাধ্যমে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা ছয় দফা দাবি বাস্তবায়নে চূড়ান্ত সময়সীমা ঘোষণা করবেন।
উল্লেখ্য, পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবির মধ্যে প্রথমটি হলো, জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের ৩০ শতাংশ পদোন্নতি কোটা বাতিল করতে হবে। এ ছাড়া জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের পদোন্নতির রায় বাতিল, ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের পদবি পরিবর্তন, মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের চাকরিচ্যুত, ২০২১ সালে নিয়োগপ্রাপ্ত ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের নিয়োগ বাতিল এবং সেই বিতর্কিত নিয়োগবিধি অবিলম্বে সংশোধন করতে হবে।
আজকের মানববন্ধনে মাসফিক ইসলাম বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে থেকে বলা হয়েছিল বৈঠকে উপদেষ্টা, সচিব থাকবেন। কিন্তু সেরকম কিছু হয়নি। শুধু দাবিদাওয়ার পক্ষে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে আর কোনো বৈঠক নয়, রাজপথে কঠোর থেকে কঠোরতর কর্মসূচি চলমান থাকবে।
এদিকে একই দাবিতে বেলা দেড়টা থেকে দুইটার মধ্যে আগারগাঁও মেট্রোস্টেশন মোড়ে রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ করেন ঢাকা মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাঁরা বিভিন্ন স্লোগান দেন।
গত বুধবার ছয় দফা দাবিতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা সড়ক, মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। সড়ক আটকে রাখায় তীব্র যানজটে পড়ে দিনভর ভোগান্তি পোহাতে হয় সাধারণ মানুষকে। পরে তাঁরা সারা দেশে বৃহস্পতিবার ‘রেল ব্লকেড’ বা রেলপথ অবরোধ করার ঘোষণা দেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালে আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, দুপুরে শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে তাঁদের বৈঠক আছে। বৈঠকের আগপর্যন্ত রেল ব্লকেড কর্মসূচি শিথিল থাকবে।
বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক থাকায় শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরার (সি আর আবরার) দুপুর পর্যন্ত মন্ত্রণালয়ে ছিলেন না। কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব খ ম কবিরুল ইসলামও ঢাকার বাইরে ছিলেন। এ অবস্থায় অতিরিক্ত সচিব (কারিগরি অনুবিভাগ) রেহানা ইয়াছমিনের সঙ্গে বৈঠক করে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধিদল। দুপুর ১২টার দিকে বৈঠক শুরু হয়ে শেষ হয় বেলা ৩টার দিকে।
এই আলোচনায় শিক্ষার্থীরা সন্তুষ্ট হননি। এ অবস্থায় তাঁরা আন্দোলনের কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। সেই ঘোষণার অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় দেশের সব পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে মশালমিছিল করেন তাঁরা। গতকাল শুক্রবার দেশের সব পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা জুমার নামাজের পর একযোগে মাথায় কাফনের কাপড় বেঁধে বিক্ষোভ মিছিল করেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপদ ষ ট
এছাড়াও পড়ুন:
শিবচরে তরুণকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা, বিচারের দাবিতে মানববন্ধন
মাদারীপুরের শিবচরে জামিনে থাকা আসামি রাকিব মাদবরকে (২৫) প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। এতে ২২ জনকে এজাহারভুক্ত ও অজ্ঞাত আরও ৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকালে নিহত ব্যক্তির চাচি পারুল আক্তার বাদী হয়ে শিবচর থানায় মামলাটি করেন।
এর আগে গত রোববার রাত আটটার দিকে শিবচর পৌর বাজারের প্রধান সড়কে একটি ব্যাংকের সামনে রাকিব মাদবরকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। রাকিব শিবচর উপজেলার চরশ্যামাইল এলাকার নাসির মাদবরের ছেলে। তিনি সরকারি বরহামগঞ্জ কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন।
দুই দিন পার হয়ে গেলেও এই ঘটনায় কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এর প্রতিবাদে আজ দুপুরে শিবচর পৌর বাজারের সদর রোডে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থী ও স্থানীয় লোকজন। এ সময় বক্তারা বলেন, প্রকাশ্যে শত শত মানুষের সামনে হত্যাকাণ্ড কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। একটা সভ্য স্বাধীন দেশে এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ড হতে পারে না। হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার না করা হলে ভবিষ্যতে কঠোর আন্দোলনের ডাক দেবেন তাঁরা।
মামলার বাদী নিহত ব্যক্তির চাচি পারুল আক্তার বলেন, ‘রাকিবরে এতগুলো মানুষের সামনে কুপাইয়া মাইরা ফালাইলো। কেউ বাঁচাতে এগিয়ে আসলো না। যারা খুন করছে, তারা রাকিবের পূর্বশত্রু। আবুল কালাম সরদারের নির্দেশে তার লোকজন এই খুন করেছে। পুলিশ এ ঘটনায় কোনো আসামি এখন অবধি গ্রেপ্তার করে নাই। আসামিগো গ্রেপ্তার চাই, ফাঁসি চাই।’
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিবচর উপজেলার শিরুয়াইল ইউনিয়নের চরশ্যামাইল গ্রামের আবুল কালাম সরদারের লোকজনের সঙ্গে নিহত রাকিব মাদবরের লোকজনের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গত ৬ মে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে প্রতিপক্ষের হামলায় আবুল কালাম সরদারের ছেলে ইবনে সামাদ নিহত হন। ইবনে সামাদ হত্যা মামলার আসামি রাকিব সম্প্রতি জামিন নিয়ে জেল থেকে বের হয়ে এলাকায় আসেন। রোববার রাত আটটার দিকে শিবচর পৌর বাজারের একটি সড়কে দাঁড়িয়ে ছিলেন রাকিব। এ সময় ৪ থেকে ৫ জনের একটি দল ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁর ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। হাসপাতালে নেওয়ার পথে রাকিবের মৃত্যু হয়।
শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিবুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, প্রকাশ্যে হত্যার ঘটনায় ২২ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। নিহত ব্যক্তির স্বজন ও স্থানীয় লোকজন মানববন্ধন করে এ ঘটনার প্রতিবাদ ও বিচার দাবি করেছেন। আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
আরও পড়ুনশিবচরে হত্যা মামলায় জামিনে থাকা আসামিকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫