ছয় দফা দাবিতে আগামীকাল রোববার সারা দেশে মহাসমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে কারিগরি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ। সব কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে এ সমাবেশ হবে।

আজ শনিবার সকালে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সামনে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। মানববন্ধন শেষে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের মূল ফটকের নামফলক লাল কাপড়ে ঢেকে দেন আন্দোলনকারীরা। আজকে তাঁদের কর্মসূচি ছিল ‘রাইজ ইন রেড’।

আজকের কর্মসূচি পালনকালে আন্দোলনকারীরা ‘মামা থেকে মাস্টার, মামাবাড়ির আবদার’, ‘এক হও এক হও, পলিটেকনিক এক হও’, ‘ষড়যন্ত্রের কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘কুমিল্লায় হামলা কেন, প্রশাসন জবাব দাও’ এমন বিভিন্ন স্লোগান দেন।

কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি মাসফিক ইসলাম মানববন্ধনে বলেন, আগামীকাল মহাসমাবেশের মাধ্যমে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা ছয় দফা দাবি বাস্তবায়নে চূড়ান্ত সময়সীমা ঘোষণা করবেন।

উল্লেখ্য, পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবির মধ্যে প্রথমটি হলো, জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের ৩০ শতাংশ পদোন্নতি কোটা বাতিল করতে হবে। এ ছাড়া জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের পদোন্নতির রায় বাতিল, ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের পদবি পরিবর্তন, মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের চাকরিচ্যুত, ২০২১ সালে নিয়োগপ্রাপ্ত ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের নিয়োগ বাতিল এবং সেই বিতর্কিত নিয়োগবিধি অবিলম্বে সংশোধন করতে হবে।

আজকের মানববন্ধনে মাসফিক ইসলাম বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে থেকে বলা হয়েছিল বৈঠকে উপদেষ্টা, সচিব থাকবেন। কিন্তু সেরকম কিছু হয়নি। শুধু দাবিদাওয়ার পক্ষে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে আর কোনো বৈঠক নয়, রাজপথে কঠোর থেকে কঠোরতর কর্মসূচি চলমান থাকবে।

এদিকে একই দাবিতে বেলা দেড়টা থেকে দুইটার মধ্যে আগারগাঁও মেট্রোস্টেশন মোড়ে রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ করেন ঢাকা মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাঁরা বিভিন্ন স্লোগান দেন।

গত বুধবার ছয় দফা দাবিতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা সড়ক, মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। সড়ক আটকে রাখায় তীব্র যানজটে পড়ে দিনভর ভোগান্তি পোহাতে হয় সাধারণ মানুষকে। পরে তাঁরা সারা দেশে বৃহস্পতিবার ‘রেল ব্লকেড’ বা রেলপথ অবরোধ করার ঘোষণা দেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালে আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, দুপুরে শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে তাঁদের বৈঠক আছে। বৈঠকের আগপর্যন্ত রেল ব্লকেড কর্মসূচি শিথিল থাকবে।

বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক থাকায় শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরার (সি আর আবরার) দুপুর পর্যন্ত মন্ত্রণালয়ে ছিলেন না। কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব খ ম কবিরুল ইসলামও ঢাকার বাইরে ছিলেন। এ অবস্থায় অতিরিক্ত সচিব (কারিগরি অনুবিভাগ) রেহানা ইয়াছমিনের সঙ্গে বৈঠক করে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধিদল। দুপুর ১২টার দিকে বৈঠক শুরু হয়ে শেষ হয় বেলা ৩টার দিকে।

এই আলোচনায় শিক্ষার্থীরা সন্তুষ্ট হননি। এ অবস্থায় তাঁরা আন্দোলনের কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। সেই ঘোষণার অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় দেশের সব পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে মশালমিছিল করেন তাঁরা। গতকাল শুক্রবার দেশের সব পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা জুমার নামাজের পর একযোগে মাথায় কাফনের কাপড় বেঁধে বিক্ষোভ মিছিল করেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপদ ষ ট

এছাড়াও পড়ুন:

আওয়ামী লীগ আমলে গুমের শিকার তিন ছাত্রদল নেতার সন্ধান চেয়ে মানববন্ধন

বিশ্ব মানবাধিকার দিবসে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ‘গুমের শিকার’ হওয়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন ছাত্রদল নেতার সন্ধান চেয়ে মানববন্ধন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল। কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে অংশ নিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নেতারাও।

আজ বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে এ কর্মসূচি পালিত হয়। মানববন্ধনে ছাত্রদল ও শিক্ষকনেতারা মাজহারুল ইসলাম রাসেল, আসাদুজ্জামান রানা ও আল আমিনের সন্ধান দাবি করেন। একই সঙ্গে তাঁরা ‘গুমের শিকার’ সব নেতা-কর্মী ও নাগরিককে ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান। এ ছাড়া কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনগুলোর নির্যাতন, হামলা ও হত্যার ঘটনায় বিচার বিভাগের কার্যকর পদক্ষেপ দাবি করেন বক্তারা।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদের (জকসু) ছাত্রদল–সমর্থিত প্যানেলের জিএস প্রার্থী খাদিজাতুল কোবরা বলেন, ‘আজ ১০ ডিসেম্বর বিশ্ব মানবাধিকার দিবস। বিগত ফ্যাসিস্ট আমলে অনেকে গুমের শিকার হয়েছেন। কতজনের বিচার চাইব আমরা?’

খাদিজাতুল কোবরা আরও বলেন, ‘একটি স্বাধীন দেশে আমরা আমাদের ভাইদের সন্ধানে দাঁড়িয়েছি। আমরা এমন একটি দেশ চাই, যেখানে কেউ গুম হবে না, সবাই ন্যায্য বিচার পাবে।’

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট আমলে অনেক বিএনপি নেতা গুম ও খুনের শিকার হয়েছেন। অনেক শিক্ষার্থী ছাত্রলীগের হাতে হামলার শিকার হয়েছে। আমাদের অনেক ভাই গুম হয়েছে, অনেককে ফিরে পেয়েছি। কিন্তু আমাদের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের তিন ভাইকে এখনো আমরা খুঁজে পাইনি।’

মেহেদী হাসান বলেন, ‘বিগত ১৭ বছর আমরা মৃত্যুর সামনে দাঁড়িয়ে লড়াই করেছি। প্রশাসনের যারা গুম ও খুনের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিচার চাই। যারা হয়রানির শিকার তাদের সহমর্মিতা জানাচ্ছি। সামনের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল কাজ করবে।’

মানববন্ধনে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. রইছ উদ্‌দীন বলেন, ‘বিগত ফ্যাসিবাদী আমলে গুম ও খুন একটি নৈমিত্তিক শব্দ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। জুলাইয়ের পর আমরা এখনো অনেকের সন্ধান পাইনি। আমাদের ক্যাম্পাসের ৩ ছাত্রদল নেতাসহ আরও অনেকে গুমের তালিকায় রয়েছে।’

রইছ উদ্‌দীন প্রশ্ন রাখেন, ‘১০ ডিসেম্বর আসে, আর আমরা মানববন্ধন করে তাদের সন্ধান চাই, স্মরণ করি, আবার পরদিন ভুলে যাই। তাদের পরিবারের এখন কী অবস্থা, আমরা কি তা জানি?’

এ সময় রইছ উদ্‌দীন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে একটি তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানান।

শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা গুম হয়েছে, সব ক্যাম্পাসে তদন্ত কমিটি হয়েছে। দুঃখজনক বিষয়, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়নি। আমি এই দিনে আহ্বান জানাচ্ছি, এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যারা গুম হয়েছে, তাদের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হোক।’

মানববন্ধনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পদচারী–সেতু নির্মাণের দাবিতে গাজীপুরে মানববন্ধন ও মহাসড়ক অবরোধ
  • শিবচরে শিশু ধর্ষণে অভিযুক্ত যুবকের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন
  • রংপুরে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁর স্ত্রীকে হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন
  • আওয়ামী লীগ আমলে গুমের শিকার তিন ছাত্রদল নেতার সন্ধান চেয়ে মানববন্ধন