তিন দশক ধরে কৃষিকাজ করে সংসার পরিচালনা করে আসছেন বাগেরহাটের শরণখোলার হাবিবুর রহমান খান। পঞ্চাশোর্ধ্ব এই চাষি সাধারণত চাষ করেন বাঙ্গি। তাঁর বাড়ি উপজেলার খোন্তাকাটা ইউনিয়নের দক্ষিণ আমড়াগাছিয়ায়। নিজ এলাকায় দুই একর জমি রয়েছে হাবিবুরের। প্রায় এক কিলোমিটার দূর দিয়ে বয়ে চলা বুরিয়ার খালের পানিতেই এতদিন জমির সেচকাজ পরিচালনা করতেন। ধীরে ধীরে ভরাট হয়ে যাওয়া খালটি এখন স্থানীয় লোকজন যে যেভাবে পেরেছে, দখল করেছে। সামান্য পানি থাকায় সেচের অন্য উপায় খুঁজতে হয় হাবিবুরকে। তাঁকে জমির প্রায় এক কিলোমিটার দূরের পুকুর থেকে কলস-বালতি ভরে আনতে হচ্ছে। এভাবেই বাঙ্গির চারা বাঁচানোর চেষ্টা করছেন তিনি। 
শরণখোলা উপজেলার ধানসাগর, খোন্তাকাটা, রায়েন্দা, সাউথখালী– এই চারটি ইউনিয়নেই ফসলি জমির চিত্র অনেকটা একই। উপজেলার খালগুলো শুকাতে শুরু করায় পর্যায়ক্রমে ভরাট হয়েছে। এই সুযোগে লোকজন দখল করে নিয়েছে নিজ নিজ জমির পাশের খালের জমিও। ফলে সেচ নিয়ে হাজারো কৃষকের দুশ্চিন্তা বাড়ছে। পানির অভাবে জমি শুকিয়ে ফেটে যাচ্ছে, নষ্ট হচ্ছে বীজ। কেউ কেউ অনেক দূর থেকে বালতিভর্তি পানি টেনে, কেউ মোটরের মাধ্যমে পানি তুলে পাইপে করে দিচ্ছেন জমিতে। এতে বেড়ে গেছে উৎপাদন খরচ, হতাশা জেঁকে বসেছে কৃষকের মনে। 
দক্ষিণ আমড়াগাছিয়ায় হাবিবুর রহমান খানের জমির পাশ দিয়ে গেছে বুরিয়ার খাল। সপ্তাহখানেক আগে তাঁকে পাওয়া যায় একটি ধানক্ষেতের পাশে নিজের ৬৬ শতক আয়তনের বাঙ্গি ক্ষেতে পানি ঢালতে। প্রতিটি চারার গোড়ায় বালতি থেকে মগ দিয়ে পানি দিচ্ছিলেন হাবিবুর। পাঁচ সদস্যের পরিবারের সব খরচই চাষের ওপর নির্ভর করে। ফসল বাঁচাতে তিনি প্রতিদিন ফজরের নামাজ শেষে পানি টানা শুরু করেন। হাবিবুর রহমান বলেন, দিনে অন্তত ৫০০ বালতি পানি টানতে হয়। তাও গাছ বাঁচাতে পারছি না। এখন যে অবস্থা খরচই উঠবে না। সামনের দিনগুলো কষ্টে কাটবে। এসব কথা বলে আক্ষেপ করতে করতে বাড়ির পথ ধরেন তিনি। 
কৃষিকাজ করেই চার সদস্যের পরিবার চালাতে হয় শরণখোলা গ্রামের শাহীন শেখকে। জমির অদূরে বয়ে যাওয়া হরিণটানা খালে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় কৃষিকাজে বেগ পেতে হচ্ছে তাঁকেও। শাহীন জানান, মোটরের মাধ্যমে পানি সংগ্রহ করে ৮০০ থেকে ১ হাজার দীর্ঘ ফুট পাইপ দিয়ে বোরো ধানক্ষেতে সেচ দিতে হচ্ছে। ফলে উৎপাদন খরচও অনেক বেড়ে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে কোনো কৃষকই বাঁচতে পারবেন না।
কিছুদিন আগেই জলাবদ্ধতায় জমির আমন ধান নষ্ট হয়েছে খোন্তাকাটা ইউনিয়নের দক্ষিণ খোন্তাকাটা গ্রামের জাফর মুন্সির। এখন তারা পড়েছেন পানি সংকটে। জাফর মুন্সি বলেন, ‘আমতলির খালে পানি না থাকায় আমরা ফসল চাষ করতে পারিনি। খুবই কষ্টে আছি। সামনের দিনগুলোতে যে কি খাব, কীভাবে জীবন বাঁচাব, সেই চিন্তায় আছি।’
কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার চারটি ইউনিয়নে অন্তত ১১টি খাল খনন করা জরুরি। এগুলোর মধ্যে জিমতলার খাল ১ দশমিক ০৬ কিলোমিটার, হরিণঘাটা খাল ১ দশমিক ২৬, আমতলির খাল ৩, বরইতলার খাল ২ দশমিক ৫, রতিয়ার খাল ৬, নলবুনিয়ার খাল ১ দশমিক ৫, মালসার খাল দশমিক ৬, পরীর খাল ১ দশমিক ১৬, গাজীপাড়া খাল ১ দশমিক ৪, জানের খাল ১ দশমিক ৬ ও গাজীর ব্রিজের খাল ২ দশমিক ৫ কিলোমিটার খননে ঊর্ধ্বতন মহলে সুপারিশ করেছে দপ্তরটি।
উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো.

আবুল হাসানের দাবি, কৃষি অফিস থেকে তারা কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দিচ্ছেন। পানির অভাবে চাষাবাদে বেগ পেতে হচ্ছে। বোরো ধান আবাদের জন্যও অনেক দূর থেকে মোটর বা পাম্পের সাহায্যে পানি আনতে হচ্ছে। এতে খরচও বাড়ছে।
বিষয়টি নিয়ে কৃষি কর্মকর্তা আবুল হাসান আরও বলেন, ‘আমরা কয়েকটি খালের তালিকা করেছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এসব খাল খনন হলে এই অঞ্চলের কৃষি যেমন সমৃদ্ধ হবে, তেমনি অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন কৃষক। 
দ্রুত খনন না হলে কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতির 
শিকার হবেন।’

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র খ ল ১ দশম ক উপজ ল র

এছাড়াও পড়ুন:

সুন্দরবনের নতুন পর্যটন স্পট ‘আলী বান্দা’

পূর্ব সুন্দরবনের নিসর্গঘেরা অভয়ারণ্যে গড়ে তোলা হয়েছে নতুন পর্যটন কেন্দ্র ‘আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার’। সবুজ ম্যানগ্রোভ বনের বুক চিরে, নদীর নোনাজলে ভেসে, প্রকৃতির নীরব সৌন্দর্যে ঘেরা এই কেন্দ্রটি চলতি নভেম্বর মাস থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভ্রমণ করতে পারবেন পর্যটকরা।

পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের আওতাধীন আলী বান্দা এরইমধ্যে ভ্রমণপিপাসুদের দৃষ্টি কেড়েছে। শরণখোলা রেঞ্জ অফিস থেকে ট্রলারযোগে মাত্র ৪০ মিনিটের নৌপথ পেরিয়ে পৌঁছানো যায় সেখানে। 

যাত্রাপথে চোখে পড়ে বনের গভীর সবুজ গাছগাছালি, ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে যাওয়া পাখি, কচুরিপানায় ঢাকা জলাশয় এবং সুন্দরী-গেওয়া গাছের সারি যা পর্যটকদের মোহিত করে।

বন বিভাগ জানিয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টারের অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু হয়। এখানে তৈরি হয়েছে ছয়তলা ভবনের সমান উচ্চতার একটি ওয়াচ টাওয়ার, যেখান থেকে সুন্দরবনের বিস্তৃত সবুজাভ দৃশ্য চোখে ধরা পড়ে। 

রয়েছে দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ ফুট ট্রেইল (ওয়াকওয়ে)। পথের দুই পাশে ঘন বনের মাঝে হাঁটলে দেখা যায় প্রকৃতির আসল রূপ। এছাড়া রয়েছে মিষ্টি পানির পুকুর, হরিণ রাখার সেড, জেটি, বিশ্রামাগার, সুভেনিয়ার শপ এবং পর্যটকদের নিরাপত্তায় বনরক্ষী ও স্থানীয় গাইডের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান।

ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আলীবান্দা বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোর মানুষের জন্য সবচেয়ে সহজগম্য স্পট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কম সময় ও কম ঝুঁকিতে সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে এখানে। স্থানীয় পর্যটকরা এরইমধ্যে আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা শাহিন বলেন, “আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার চালু হলে স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে স্থানীয় গাইড, নৌযানচালক, হোটেল ব্যবসায়ী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কর্মসংস্থান বাড়বে। পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব পর্যটনের মাধ্যমে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সচেতনতা বাড়বে।”

তবে পর্যটনকেন্দ্রে প্রবেশ ফি নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। আলীবান্দায় প্রবেশের ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৪৫ টাকা।

শরণখোলা ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল বয়াতী বলেন, ‘‘আলীবান্দায় প্রবেশ ফি ৩৪৫ টাকা, অথচ একই বনের করমজল পর্যটন পয়েন্টে ফি মাত্র ৪৬ টাকা। অনেকেই আলীবান্দায় যেতে আগ্রহী, কিন্তু ফি বেশি হওয়ায় নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।’’

পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “আলীবান্দা এখন প্রায় প্রস্তুত। চলতি মাসেই এখানে হরিণ আনা হবে। বর্তমানে পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে স্পটটি। যেহেতু এটি ২০১৭ সালে ঘোষণা করা অভয়ারণ্য এলাকার অন্তর্ভুক্ত, তাই সাধারণ বনাঞ্চলের তুলনায় কিছু বিধিনিষেধ ও প্রবেশ ফি বেশি রাখা হয়েছে। তবে পর্যটকদের দাবির বিষয়টি আমরা সরকারের কাছে জানাব।’’

ঢাকা/শহিদুল/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুন্দরবনের নতুন পর্যটন স্পট ‘আলী বান্দা’