সম্প্রতি রাজধানীর খিলগাঁওয়ে আপন কফি হাউসে একজন নারীকে সেখানকার কর্মীরা প্রকাশ্যে মারধর করে। এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং এটি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয়। এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়; বর্তমানে নারীরা প্রকাশ্যে ও জনসমক্ষে বিভিন্নভাবে হেনস্তার শিকার হচ্ছেন। কপালে টিপ পরা থেকে শুরু করে পরিধেয় পোশাকসহ নানাবিধ বিষয়ে পদে পদে অপদস্থ হওয়ার ঘটনা প্রতিদিনই পত্রিকার পাতায় উঠে আসছে। বিষয়গুলো নিয়ে কিছুদিন সরগরম থাকলেও পরে অন্যসব ঘটনার নিচে চাপা পড়ে যায়।
‘গায়ে হাত তোলার অধিকার কারও নেই’
জেড আই খান পান্না
চেয়ারপারসন, আইন ও সালিশ কেন্দ্র
আমরা যতই নারী স্বাধীনতার কথা বলি না কেন, নারীরা বিভিন্নভাবে আক্রান্ত হচ্ছেন। রাজনীতি কিংবা ধর্ম– যেভাবেই হোক, এখানে লক্ষ্যবস্তু নারী। আমি আমার মাকে ঘোমটা পরতে দেখেছি; কিন্তু হিজাব পরতে দেখিনি। আমার মেয়েদের দেখি, হিজাব পরে। এখনকার নতুন প্রজন্মের কাছে হিজাব একটি চল হিসেবে এসেছে। এটি খারাপ না; কিন্তু তারা ধর্ম-কর্ম, নামাজ-রোজা করে কিনা জানি না। ধর্ষণের সংখ্যাও বেড়ে গেছে অনেক। আসলে কি এই পোশাকই কারণ, নাকি মনস্তাত্ত্বিক কারণ রয়েছে? পুরুষের মনস্তাত্ত্বিক কারণ পরিবর্তনের চেষ্টা না করে নারীর পোশাক ও চালচলনের দিকে লক্ষ্য করার কোনো যৌক্তিকতা আমি দেখি না। অন্যদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারীকে যে হেনস্তা করা হচ্ছে, সেখানে নারীকে দমে না গিয়ে জোরালোভাবে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও রাস্তায় নামা উচিত।
আপন কফি হাউসে যে ঘটনা ঘটেছে, সেখানে তারা একটা ব্যাখ্যাও দিয়েছে যে, মেয়েটি নাকি মানসিক বিকারগ্রস্ত– টাকা চেয়েছে ও থুথু দিয়েছে। এখন কথা হলো– যদি এমন কিছু ঘটে থাকে, তাহলে তাকে পুলিশে সোপর্দ করতে হবে; কিন্তু গায়ে হাত তোলার অধিকার কারও নেই। এটি অন্যায়। আমরা তো ঘটনা ঘটার পরে প্রতিকার করি। আগে থেকে প্রতিরোধ কিংবা প্রতিকারের চেষ্টা করি না। আমরা ঘটনা ঘটার পর প্রতিক্রিয়ায় যাই। মেয়েটি যদি মানসিক বিকারগ্রস্ত হতো, তাহলে তো সে আরও কয়েকটি দোকানে যেত বলে আমার মনে হয়। ওখানে তো আরও দোকান ছিল আশপাশে।
সবশেষে আমি বলব, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার ওপর জোর দিতে হবে। মেয়েদের স্কুলে বাধ্যতামূলকভাবে জুডো-কারাতের প্রশিক্ষণ দেওয়া দরকার। এতে নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস বাড়বে এবং নিজেদের রক্ষা করতে পারবে। ঘরে ও বাইরে নির্যাতনের সংখ্যা কমে আসবে।
‘নারীর জায়গা ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়’
খুশী কবির
সমন্বয়ক, নিজেরা করি
আমি মনে করি, এ ধরনের উগ্রবাদী চিন্তা আমাদের দেশে আগেও ছিল। কখনও তারা শক্তিশালীভাবে প্রকাশ্যে এসেছে, কখনও তাদের কণ্ঠস্বর ক্ষীণ ছিল। যদিও ধর্ষণ ও হত্যা হয়েছে আগেও; এটি নতুন কিছু নয়। তবে প্রকাশ্যে নারীর গায়ে হাত তোলাটা নতুন। জনসমক্ষে নারীর ওপর এ ধরনের মারধর আগে কমই দেখা গেছে। এখন যেভাবে অহরহ এসব ঘটনা ঘটছে, বিষয়টা স্বাভাবিকের কাতারে চলে আসছে প্রায়।
নারীর টিপ পরা নিয়েও যা হচ্ছে, এটিও উগ্র সাম্প্রদায়িক চিন্তার মানসিকতা। এমনকি ছায়ানটের সন্জীদা আপার শেষ শ্রদ্ধার্ঘ্য নিয়েও অশোভন কথাবার্তা হয়েছে। এটি একটা গোষ্ঠী করবেই। সেটিকে পাত্তা না দিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। কারণ, ছেড়ে দিলে তাদের হাতে নিয়ন্ত্রণ চলে যাবে। তারা তখন মগজধোলাই করার চেষ্টা করবে। নারীকে এ জায়গা ছেড়ে দেওয়া কোনোক্রমেই উচিত নয়; বরং ওরা যা বলে,
তার পাল্টা যুক্তি দেওয়া উচিত। নয়তো প্রগতিশীল ও উদার মানসিকতার মানুষদের জায়গা থাকবে না।
যা ঘটেছে এটা খুব বড় সতর্কবার্তা আমাদের দেশের জন্য। খুব ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে দেশে। এজন্য সরকারকে খুব স্পষ্টভাবে তাদের কার্যক্রমের মাধ্যমে এসব কর্মকাণ্ড রোধ করতে হবে। আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়াকে গ্রহণ করা হবে না কোনোভাবেই– এর বিরুদ্ধে সরকার ও দায়িত্বশীলদের স্পষ্টবার্তা থাকতে হবে। যারা এগুলো করে, তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। নয়তো দেশের অবস্থা আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমাদের ৫০ ভাগ নারী। আমরা যেভাবে গড়ে উঠেছি, সেভাবে গড়ে উঠতে চাই। কেউ একটা মত, পথ বা ধর্মের বিশ্বাসী হতে পারেন। তবে আমার চলাফেরার ওপর হস্তক্ষেপ করার কোনো অধিকার নেই আরেকজনের। এটা সরকারের খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। v
lগ্রন্থনা: দ্রোহী তারা
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের পর প্রথমবারের মতো জনসমক্ষে খামেনি
ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের সাম্প্রতিক সংঘাত শুরুর পর এই প্রথমবারের মতো জনসমক্ষে এসেছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। গতকাল শনিবার তেহরানে ইমাম খোমেইনি মসজিদে পবিত্র আশুরা উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তাঁকে দেখা গেছে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত ভিডিওতে দেখা যায়, খামেনি মসজিদে আসা ব্যক্তিদের অভ্যর্থনা জানাচ্ছেন। তিনি শীর্ষ ধর্মীয় নেতা মাহমুদ কারিমিকে ইরানি দেশাত্মবোধক গান ‘ও ইরান’ গাইতে উদ্বুদ্ধ করছিলেন।
সম্প্রতি ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সংঘাত চলাকালে তাঁকে একটি রেকর্ড করা ভিডিও বার্তায় সর্বশেষ দেখা গিয়েছিল। তখন গুঞ্জন উঠেছিল, তিনি বাংকারে আত্মগোপনে আছেন। ওই সংঘাতে ইরানের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা ও পরমাণুবিজ্ঞানী নিহত হন।
গত ১৩ জুন ইসরায়েল হঠাৎ করে ইরানের পরমাণু ও সেনাঘাঁটিতে হামলা করে। এরপর ইরানও পাল্টাহামলা চালায় ইসরায়েলের দিকে। ২২ জুন ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানোর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রও সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। ১২৫টি সামরিক বিমান ব্যবহার করে তারা ফোর্দো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহান পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়। এ সংঘাত ১২ দিন ধরে চলেছে। ইরানের বিচার বিভাগ জানিয়েছে, ১২ দিনের এই সংঘাতে ৯ শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন।
আরও পড়ুনখামেনিকে একহাত নিলেন ট্রাম্প, ইরানে আবারও হামলার হুমকি২৮ জুন ২০২৫গতকাল খামেনির প্রকাশ্যে আসার বিষয়টি ছিল ইরানি সংবাদমাধ্যমের প্রধান খবর। তাঁর অনুসারীরা টেলিভিশনে তাঁকে দেখে আনন্দ প্রকাশ করছেন—এমন দৃশ্যও দেখা গেছে।
এর আগে ২৬ জুন প্রচারিত এক রেকর্ড করা ভাষণে খামেনি বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আহ্বান সত্ত্বেও ইরান ইসরায়েলের কাছে আত্মসমর্পণ করবে না।
আরও পড়ুন সহযোগিতা স্থগিত করার পর ইরান ছাড়লেন আইএইএর পরিদর্শকেরা১৮ ঘণ্টা আগে