বাংলাদেশ ম্যাচ জেতে বোলিংয়ে, আর পরাজয় লেখা হয় ব্যাটিং ব্যর্থতায়। অনেক বছর ধরেই বোলিংনির্ভর দল বাংলাদেশ। বোলিং ইউনিট প্রতিপক্ষকে কম রানে অলআউট করলে ব্যাটাররা আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলে ম্যাচ জেতান। তেমনি বোলারদের উজ্জীবিত করতে ভালো ব্যাটিং করাও জরুরি। বাংলাদেশ এই জায়গাতেই দুর্বল। টেস্ট, ওয়ানডে, টি২০– কোথাও ব্যাটিংটা ভালো হচ্ছে না। টেস্টের ব্যাটিং যে একটু বেশিই অধারাবাহিক, সেটা বোঝা যায় পরিসংখ্যান দেখলে। শেষ ১৮ ইনিংসের ৯টিতেই ২০০ রান করতে পারেননি শান্তরা। সিলেট টেস্টে গতকাল জিম্বাবুয়ের কাছে ১৯১ রানে অলআউট হওয়ায় সংখ্যাটি দশে উন্নীত হলো। 

ব্যাটিংয়ের কেন এ হাল– জানতে চাওয়া হলে জাতীয় দলের সিনিয়র সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন জানান, টেকটিক্যাল তথা কৌশলগত দুর্বলতার কারণে ইনিংসগুলো বড় করতে পারছেন না ব্যাটাররা। ক্রিকেটাররা এখান থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছেন বলে জানান তিনি। যদিও মুশফিকুর রহিমদের এই চেষ্টার পরও কাটছে না ব্যাটিং ব্যর্থতা।

দেশ-বিদেশে ভালো করার পরিকল্পনা থেকে স্পোর্টিং উইকেটে খেলছে বাংলাদেশ। সে জন্য জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চলমান সিলেট টেস্টের উইকেটে ঘাসের ছোঁয়া রাখা হয়েছে। নিজেদের কন্ডিশনে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বড় ইনিংস আশা করা হচ্ছিল। অথচ নিজেদের ভুলে ব্যর্থ হয় ব্যাটিং। কোচ সালাউদ্দিনের মতে, ‘টেকনিক্যালি আমরা কিছু ভুল করেছি। হঠাৎ করে বাজে শট খেলেছি। যখনই কামব্যাক করছি, তখনই একটা সেট ব্যাটার আউট হয়ে গেছে। পুরোটাই আসলে মানসিক ব্যপার। আমি মনে করি ব্যাটারদের হয়তো রুটিন বা প্রক্রিয়া ভালো হয়নি। প্রতিটি বল কীভাবে মোকাবিলা করতে হবে, সেই প্রক্রিয়ায় ওরা থাকেনি।’ 

এই রুটিন নিয়ে ব্যাটারদের সঙ্গে দ্রুত কাজ করতে চান সালাউদ্দিন, ‘এখানে আমাদের দ্রুত কাজ করতে হবে। প্রতিটি বল মোকাবিলা করার আগে যেভাবে আমাদের রুটিন ওয়ার্ক করার কথা, সেটা করতে হবে। অন্য ফরম্যাটে আপনি একবারই সুযোগ পাবেন। টেস্ট ক্রিকেটে আপনাকে দ্বিতীয় সুযোগ দেয়। সেখানে ভালো করাটা অনেক বেশি জরুরি।’ 

ওপেনিং জুটিতে অনেক দিন ধরেই ভুগছে বাংলাদেশ। সাদমান ইসলাম এক ম্যাচে ভালো করলে পরের ম্যাচে ফ্লপ। বিকল্প না থাকায় বাধ্য হয়েই খেলাতে হচ্ছে মাহমুদুল হাসান জয়কে। মিডলঅর্ডারে মুশফিকুর রহিমের ফিফটি নেই ১১ ইনিংসে। নাজমুল হোসেন শান্ত, মুমিনুল হক সেট হয়ে ইনিংস বড়  করতে পারছেন না। গতকাল যেমন ১২৮ বলে ৬৬ রানের জুটি গড়ে আউট হলেন দলকে বিপদে ফেলে। 

কোচ সালাউদ্দিনের চোখেও ব্যাটিং ব্যর্থতার মূল কারণ সেট ব্যাটারদের উইকেট ছুড়ে দেওয়া, ‘শান্ত ও মুমিনুল সেট হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ভুল শট খেলে আউট হয়েছে। ভালো বোলারের বিরুদ্ধে তারা কঠিন সময় কাটিয়ে উঠেছিল। শান্তর শটটা মারার বল ছিল না। সেটা সে নিজেও স্বীকার করেছে। মিরাজকে এ লেভেলে আরও ভালো করতে হলে শর্ট বলে উন্নতি করতে হবে। নয়তো ওকে প্রতিপক্ষরা ওই জায়গাতেই বারবার অ্যাটাক করবে। মুশফিকও ভুল শটে আউট হয়েছে।’ 

এই ব্যাটিং বিপর্যয়ের পর বোলিংটাও ভালো হয়নি। ফলে ব্যর্থতায় শেষ হয়েছে প্রথম দিন। সালাউদ্দিনের বিশ্বাস আজই ঘুরে দাঁড়াবেন শান্তরা। পেছন থেকেই ফিরবেন প্রবল শক্তি নিয়ে।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

ইরান যে তিন কারণে পারমাণবিক অস্ত্র বানাবে না

বিশ্বরাজনীতিতে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি একটি বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত ইস্যু। পশ্চিমা শক্তিগুলো, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল, বহু বছর ধরে অভিযোগ করে আসছে, ইরান নাকি গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে চাইছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) বা যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আজ পর্যন্ত এমন কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি, যা এ দাবিকে প্রতিষ্ঠিত করে। অন্যদিকে ইরান শুরু থেকেই বলে আসছে যে তাদের পরমাণু কর্মসূচি সম্পূর্ণরূপে শান্তিপূর্ণ ও বেসামরিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত।

প্রশ্ন হলো, যদি ইরান সত্যিই পারমাণবিক অস্ত্র বানাতে চাইত, তাহলে গত দুই দশকে তা তৈরি করেনি কেন? আর যদি তা না-ই চায়, তাহলে উচ্চমাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ চালিয়ে যাচ্ছে কেন? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পেতে হলে ইরানের ধর্মীয় অবস্থান, কৌশলগত চিন্তা, রাজনৈতিক বাস্তবতা এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতির দ্বিচারিতা একত্রে বিশ্লেষণ করতে হবে।

আরও পড়ুনইরান এবার বড় যুদ্ধের জন্য যেভাবে প্রস্তুত হবে০৬ জুলাই ২০২৫ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞা ও নৈতিক অবস্থান

২০০৩ সালে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি একটি ঐতিহাসিক ফতোয়া জারি করেন। সেখানে স্পষ্টভাবে বলা হয়, ‘পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি, মজুত কিংবা ব্যবহার ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ হারাম।’ এ সিদ্ধান্ত শুধুই ধর্মীয় নয়, বরং একটি নৈতিক অবস্থানও, যেখানে নিরীহ মানুষ হত্যাকে ইসলাম কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছে। পারমাণবিক বোমা শুধু সামরিক লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করে না, বরং শহর, জনপদ ও লাখ লাখ নিরীহ মানুষের প্রাণ হরণ করে। ইসলামের যুদ্ধনীতিতে বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।

ইরান মনে করে, পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার শুধু মানবতার বিরুদ্ধে নয়, পরিবেশ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বিরুদ্ধে চরম অন্যায়। হিরোশিমা-নাগাসাকির দৃষ্টান্ত এ বিষয়ে যথেষ্ট প্রমাণ দেয়।

কৌশলগত ও সামরিক বাস্তবতা

অনেকের ধারণা, পারমাণবিক অস্ত্র থাকলেই একটি দেশ নিরাপদ থাকে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। পাকিস্তান ১৯৯৮ সালে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করলেও ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখে আফগানিস্তানে মার্কিন অভিযানে অংশ নিতে বাধ্য হয়। উত্তর কোরিয়া পারমাণবিক অস্ত্রধারী হওয়া সত্ত্বেও আন্তর্জাতিকভাবে একঘরে। এমনকি রাশিয়া, যাদের বিশ্বের সর্বোচ্চ পারমাণবিক অস্ত্র মজুত রয়েছে, ইউক্রেন যুদ্ধে ন্যাটোর সঙ্গে কৌশলগতভাবে চাপে পড়েছে। ইসরায়েলও অঘোষিত পারমাণবিক অস্ত্রধারী হওয়া সত্ত্বেও ইরানের ‘অপারেশন ট্রু প্রমিজ’-এ বড় ধরনের সামরিক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে।

এ বাস্তবতা ইরানকে বুঝিয়ে দিয়েছে, পারমাণবিক অস্ত্র নয়, কার্যকর প্রতিরোধক্ষমতা ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতিই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে। তাই তারা শক্তিশালী ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, চালকবিহীন বিমান বা ড্রোন এবং কৌশলগত অস্ত্র নির্মাণে জোর দিয়েছে।

সামরিক মহড়া চলাকালে ইরানের দক্ষিণাঞ্চলের অজ্ঞাত স্থান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে। ২০২৪ সালের ১৯ জানুয়ারি ছবিটি প্রকাশ করে ইরান

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কৌশলগত নেতৃত্ব বিকাশে জোর সেনাপ্রধানের
  • জিম্বাবুয়েকে চোখ রাঙাচ্ছে ইনিংস হার
  • ইরান যে তিন কারণে পারমাণবিক অস্ত্র বানাবে না