ফাহমিদা নবী। নন্দিত কণ্ঠশিল্পী ও সুরকার। সম্প্রতি আজব রেকর্ড থেকে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর একক গান ‘না হয় শুধু এতটুকুই হোক’। নতুন এ আয়োজন, বর্তমান ব্যস্ততা এবং অন্যান্য প্রসঙ্গ নিয়ে কথা হয় তাঁর সঙ্গে...
 
অনেকে বলছেন, ‘না হয় শুধু এতটুকুই হোক’ গানটি মেলেডি সুরের হলেও আপনার আগের সব আয়োজন থেকে কিছুটা আলাদা। তাদের এই কথার সঙ্গে কী আপনি একমত?

দ্বিমত পোষণ করার কোনো কারণ নেই। কারণ সুরকার জয় শাহরিয়ার এ গান যখন শোনায়, তখনই মনে হয়েছে এর সুর একটু আলাদা ধরনের। মেলোডি গান যারা পছন্দ করেন, তাদের হৃদয় স্পর্শ করার মতো ম্যাজিক্যাল কিছু এতে আছে। তানবীর সাজিবের লেখা এর গীতিকথাও একটু আলাদা ধরনের, যা গানের শিরোনাম থেকেই অনুমান করা যায়। তাই আনন্দ নিয়েই গানটি গেয়েছি।   

বাংলাঢোল স্টুডিওর অ্যাকুস্টিক টেলস অনুষ্ঠানে গাওয়া ‘দিনলিপি’ গানটিও প্রকাশিত হলো। এই আয়োজনে শ্রোতার প্রতিক্রিয়া কী?

  সবার কথা জানি না, তবে যারা অনাপ্লাগড ভার্সনের গান পছন্দ করেন, তাদের অনেকের কাছে অ্যাকুস্টিক টেলসের ‘দিনলিপি’ গানটি ভালো লেগেছে। অ্যাকুস্টিক বাদ্যযন্ত্রের সঙ্গে গাওয়া যে কোনো গানই একটু অন্যরকম শোনায়, যার আলাদা শ্রোতা আছে।  

গত কয়েক বছরে বেশ কিছু গানের সুর করে শ্রোতার প্রশংসা কুড়িয়েছেন। এ বছর আপনার সুরের কোনো গান কি প্রকাশ পাবে?

নিশ্চিত করে এখনই কিছু বলা কঠিন। তার পরও সম্ভাবনা যে একেবারে নেই, তা নয়। সুর করা এখন অনেকটা নেশায় পরিণত হয়েছে। কয়েক বছর আগেও ভাবিনি, এই কাজটি নিয়মিত করব। যখনই কারও লেখা গানের কথা ভালো লেগে যাচ্ছে, তখনই তাতে সুর বসানোর চেষ্টা করছি। এখন মনে হয়, সুরকার হিসেবে থেমে থাকার আর সুযোগ নেই। গান যেমন গাইতে হবে, তেমনি সৃষ্টি করতে হবে নতুন সুর। কিছু গানের সুর করে রেখেছি, দেখা যাক এ বছর সেগুলো প্রকাশ করা যায় কিনা। 

কণ্ঠশিল্পী হিসেবে যেমন মেলোডি গান প্রাধান্য দিয়ে আসছেন, সুরকার হিসেবেও কী একই চিন্তাধারা নিয়ে কাজ করেন? 

মেলোডি সুরের আবেদন চিরকালই ছিল। হয়তো সে কারণেই আমার কণ্ঠে শ্রোতারা সবসময় এ ধরনের গানই শুনতে চান। তাই যখন কোনো গানের সুর করি, তখন মেলোডিকেই প্রাধান্য দেই। অন্য শিল্পী গাইলেও সেখানে যেন আমার কাজের ছাপ থাকে, সে দিকে লক্ষ রাখি। 

সংগীত প্রযোজক হিসেবে আপনার ভাবনা জানতে চাই, আপনার চ্যানেলে কোন ধরনের গান তুলে ধরতে চান? 

গান যদি শ্রুতিমধুর হয়, তাহলে সেটি কোন ঘরনার তা নিয়ে ভাবতে চাই না। সংগীত প্রযোজক হিসেবে এ বিষয়টা প্রাধান্য দিচ্ছি। কারণ সুরের বাইরে গিয়ে কাজ করা কখনই সমর্থন করি না। নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল থাকা মানে কাজের অবাধ স্বাধীনতা। কিন্তু অবাধ স্বাধীনতা পেলেও কখনও স্রোতে গা ভাসাব না। শিল্পী, সুরকার, প্রযোজক– প্রতিটি পরিচয়েই ভালো কাজকে প্রাধান্য দিতে চাই। এর চেয়ে বড় কথা হলো আমি বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য নিয়ে নিজের চ্যানেল চালু করা কিংবা গানের প্রযোজনা শুরু করিনি। ভিউর দৌড়ে অংশ না নিয়ে ভালো কাজই শ্রোতার কাছে তুলে ধরতে চাই। শিল্পী, সংগীতায়োজকরা তারকাদের কাজই বেছে নেবে, বিষয়টা এমনও নয়। শিল্পী হিসেবে যেমন, তেমনই প্রযোজক হিসেবে তরুণ শিল্পীদের পাশে আছি সবসময়। 

গানের প্রকাশনা ধরে রাখলেও স্টেজ শোতে অনুপস্থিতি চোখে পড়ে। এ নিয়ে কখনও ভাবেন?  

এটি সত্যি যে অন্য শিল্পীদের চেয়ে আমাকে স্টেজে কম দেখা যায়। অনুষ্ঠান আয়োজকদের কারণেই এটা হয়েছে। বেশির ভাগ আয়োজকই চান, এমনভাবে অনুষ্ঠান সাজাতে যেখানে দর্শকরা হৈ-হুল্লোড়ে মেতে উঠতে পারেন। সেসব অনুষ্ঠানে শিল্পীদের যে ধরনের গান গাইতে হয়, সে ধরনের গান আমার গাওয়া হয়ে ওঠে না।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ধরন র গ ন অন ষ ঠ ন স র কর আপন র

এছাড়াও পড়ুন:

সবাই আমাকে ভার্সেটাইল অভিনেতা বলেন, কিন্তু কাজ দেয় না: রুদ্রনীল

ভারতীয় বাংলা সিনেমার দাপুটে অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ। রুপালি পর্দার অনেক কাজ দিয়ে নিজেকে বহুবার প্রমাণ করেছেন। ভারতের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল বিজেপিতে যোগ দেওয়ার কারণে টলিউড ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন, কর্মহীন হয়ে পড়েছেন রুদ্রনীল ঘোষ। এর আগে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে কাজও চেয়েছিলেন এই অভিনেতা।

কয়েক দিন আগে টাইমস অব ইন্ডিয়াকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন রুদ্রনীল ঘোষ। এ আলাপচারিতায় জানতে চাওয়া হয়, ইন্ডাস্ট্রিতে আপনাকে ‘ভার্সেটাইল’ অভিনেতা বলা হয়। তবু অনেক অভিনেতা আরো বেশি জনপ্রিয়তা উপভোগ করেন। কেবল তাই নয় অনেক বেশি কাজও পান। ৫২ বছর বয়সে, এটা কি আপনাকে হতাশ করে, নাকি ২৫ বছরের অভিজ্ঞতা আপনাকে সবকিছু স্বাভাবিকভাবে নিতে শিখিয়েছে?

আরো পড়ুন:

আমার যদি কিছু হয়, তার দায়িত্ব পশ্চিমবঙ্গ সরকার নেবে, প্রশ্ন শ্রীলেখার

শাকিবের নায়িকা হতে ইধিকার ৩৮ লাখ টাকা পারিশ্রমিক দাবি?

এ প্রশ্নের জবাবে রুদ্রনীল ঘোষ বলেন, “একসময় আমার ঈর্ষা হতো এবং নিজের সক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ করতাম। কিন্তু সময়ের সঙ্গে উপলদ্ধি করেছি, জনপ্রিয়তা সবসময় পারফরম্যান্সের প্রতিফলন নয়। কাউকে যদি ‘সুপার’ অভিনেতা বলা হয়, কিন্তু তিনি দর্শক টানতে না পারেন, তাহলে সেটাই সব বলে দেয়। আগে খারাপ লাগত, যখন মিডিয়া এমন অভিনেতাদের পেছনে ছুটত এবং আমাদের মতো মানুষদের উপেক্ষা করত। কিন্তু এখন আর সেটা ভাবি না। অনেকে আছেন যারা প্রকাশ্যে আমার সঙ্গে কথা বলেন না। কিন্তু পরে ফোন করে নিজেদের গল্প শোনান। জীবন, তথাকথিত বন্ধুত্ব এই ইন্ডাস্ট্রিতে এমনই।”

অভিনয়শিল্পীদের ‘মেগাস্টার’, ‘সুপারস্টার’, ‘টলি কুইন’ ইত্যাদি উপাধিতে ডাকা হয়, এ নিয়ে আপনার মতামত কী? জবাবে রুদ্রনীল ঘোষ বলেন, “আমি শুধু এটুকুই বলব—দর্শক নির্বোধ নন। আসল বিষয় হলো—গল্প এবং অভিনয়। ট্যাগ বা তকমা দিয়ে তাদের চিরকাল বোকা বানানো যায় না। গুণগতমান সবসময় প্রচারের চেয়ে বেশি কথা বলে। ধরুন, শিশুদের জন্য একটি হেলথ ড্রিংক তৈরি করা হলো, যার নাম ‘অশিম’। বিক্রি না হওয়ায় সেটিকে হঠাৎ ‘মহা অশিম’ নামে বাজারে আনা হলো। কিন্তু সেই পানীয় কেবল তখনই টিকবে, যখন এটি সত্যিই শিশুদের উপকারে আসবে। এটাই আমি বোঝাতে চাচ্ছি।”

২০১৬ সালে রাজনীতিতে যোগ দেন। তারপর থেকে শোনা যাচ্ছে, ইন্ডাস্ট্রিতে আপনাকে উপেক্ষা করা হয়েছে। বলা হয়, কিছু পরিচালক আপনাকে কাস্ট করতে চান না। কারণ কাস্ট করলে তাদের সিনেমা নন্দন বা অনুরূপ স্থানে না দেখানোর ভয় রয়েছে। এই পরিস্থিতি কীভাবে সামলেছেন? উত্তরে রুদ্রনীল ঘোষ বলেন, “২০২০ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে আমি বছরে মাত্র ১০–১৫ দিন কাজ করেছি। বেঁচে থাকার জন্য আমাকে নিজের গাড়ি ও বাড়ি বিক্রি করতে হয়েছে। বন্ধু-বান্ধব ও শুভাকাঙ্ক্ষীরাও আমাকে কাজ দিতে পারেননি।”

খানিকটা ব্যাখ্যা করে রুদ্রনীল ঘোষ বলেন, “পাঁচ বছর ধরে, প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে, স্নান করে, বাড়িতেই বসে থাকতে হয়। অথচ অভিনয়ই ছিল আমার জীবন, আর হঠাৎ সেটা থেমে গেল। কিন্তু আমি টিকে আছি; বাঁচার প্রবৃত্তিই আমাকে এগিয়ে নিয়েছে। রাজনীতিতে যোগ দেওয়া নিয়ে আমার কোনো অনুতাপ নেই। কিন্তু যারা বন্ধুত্বকে কৌশল হিসেবে ব্যবহার করেছেন, তাদের নিয়ে দুঃখ আছে।”

“অভিনয় আমার ভালোবাসা আর রাজনীতি দায়িত্ব—দুটোই সমাজ পরিবর্তনের ক্ষমতা রাখে। আমি ছাত্র রাজনীতির অংশ হয়ে বড় হয়েছি। আমি বিশ্বাস করি, রাজনীতি কোনো কলঙ্ক নয়, বরং এক ধরনের কর্তব্য।” বলেন রুদ্রনীল।

শোনা যাচ্ছে, আপনি সৃজিত মুখার্জির পরের সিনেমায় অভিনয় করতে যাচ্ছেন? এ বিষয়ে রুদ্রনীল ঘোষ বলেন, “আশার কথা, আমি সৃজিতের পরবর্তী সিনেমার অংশ। মজার একটি চরিত্রের জন্য সে আমাকে প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু আমি এটা করিনি। কারণ আমার আগের কিছু কমিটমেন্ট ছিল। সৃজিত একমাত্র ব্যক্তি যার সিনেমার অংশ হলেও কে কী বলল তা সে তোয়াক্কা করে না।”    

পরিচালক রাজ চক্রবর্তী প্রসঙ্গে রুদ্রনীল ঘোষ বলেন, “রাজ কেন আমাকে ‘কাঠমান্ডু’ (২০১৫) সিনেমার পর আর কাস্ট করেননি, সেটা একমাত্র রাজই বলতে পারবে। আমরা তো একসময় স্ট্রাগল করেছি, সেই সময়ে রুমমেট ছিলাম, একই প্লেটে খেতাম, কারণ দুই প্লেট ভাত কেনার টাকাও ছিল না। আমার কাছে সবচেয়ে কঠিন বিষয় হলো, আমার সেই বন্ধুরা, যারা একসময় আমাকে ভালোবাসত, তারাই এখন আমাকে কাজ দিতে পারে না।”

এর আগেও রুদ্রনীল ঘোষ টলিউডে ‘একঘরে’ হয়ে থাকার অভিযোগ তুলেছিলেন, এমনকী তাকে কাজ দিচ্ছেন না প্রযোজকরা—এমন অভিযোগও করেছিলেন। তবে বারবার সেই দাবি উড়িয়ে দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল। বিজেপির সঙ্গে যুক্ত বহু কলাকুশলী টলিউডে কাজ করছেন, সেখানে রাজনৈতিক দল বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি বলে দাবি তৃণমূলের।

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সবাই আমাকে ভার্সেটাইল অভিনেতা বলেন, কিন্তু কাজ দেয় না: রুদ্রনীল