রোনালদোর ছেলেটি কার—মায়ের পরিচয় আজও রহস্যে ঘেরা
Published: 22nd, April 2025 GMT
১০০০ গোল? নাকি ২০২৬ বিশ্বকাপে খেলা? ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর অপেক্ষাটা কিসের? বয়স তো চল্লিশ পেরিয়ে গেল! উত্তর খুঁজতে গিয়ে চুল-দাড়ি পেকে গেল অনেকের। আর সেটা জানে নাকি একটা বাচ্চা ছেলে, আগামী জুনে যে পনেরো ছোঁবে।
ঝামেলা হলো, সে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর বড় ছেলে। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো জুনিয়র। বাবার ব্যক্তিগত ইচ্ছা কী সে হয়তো জানে না, তবে এটা জানে, বাবা একটু সময় দেবেই। এর মধ্যেই তাকে তৈরি হয়ে উঠতে হবে। অর্থাৎ বাবার অবসর নেওয়ার এখনো দেরি আছে। ঠিক কতটা, সেটা সে হয়তো জানে না, আন্দাজ করতে পারে। দুই বছর?
ষোলো-সতেরোর ভেতর সে মূল দলে চলে এলেই বাবার অপেক্ষার অবসান। বাবা কেন বুট তুলে রাখে না, সেটা জুনিয়রের তাই ভালোই জানা। আসল কথা হলো, অবসর নেওয়ার আগে তার বাবা তার সঙ্গে খেলতে চান। গত মাসেই কথাটা বলেছেন ফরাসি সংবাদমাধ্যম ‘ক্যানাল১১’কে, ‘আমি এটা চাই। এমন না যে এটার জন্য রাতে ঘুম হয় না, কিন্তু হলে ভালো হতো।’
জুনিয়র জানে, ফুটবলের তাবৎ উঁচু উঁচু স্বপ্ন ধরাশায়ী করলেও এই স্বপ্ন তার বাবা চাইলেই পূরণ করতে পারবেন না। বাবা তো আর আল নাসর অনূর্ধ্ব-১৫ দলের সঙ্গে মাঠে নামতে পারবেন না! যা করার তাকেই করতে হবে। আগামী এক-দুই বছরের মধ্যে উঠে আসতে হবে আল নাসরের মূল দলে। সর্বোচ্চ ৩ বছর? তখন হয়তো সম্ভব।
আরও পড়ুনরোনালদোর ছেলের জন্য পাঁচ দেশের দরজা খোলা ২৮ মার্চ ২০২৫এর মধ্যে আসল কাজটা করতে হবে তাকে। বাবা সেটাও সেই ফরাসি সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘দেখা যাক। ব্যাপারটা আমার চেয়ে তার (জুনিয়র) ওপর বেশি নির্ভর করছে।’
বাবার জায়গা থেকে দেখলে জুনিয়রের কাঁধে অনেক দায়িত্ব। কিন্তু বাবা আগেই বলে দিয়েছেন সবাইকে, ক্রিসের ‘যেটা ভালো লাগে করবে। আমি হবো গর্বিত বাবা।’
ফুটবলটা যে তার ভালো লাগে না, তা নয়। অবশ্যই ভালো লাগে। আর লোকেও বলে, বাপ কা বেটা; খেলার ধরন ও ধার দেখে। ২০১৯ সালে সংবাদমাধ্যমে বের হয়েছিল, জুভেন্টাসের বয়সভিত্তিক দলের হয়ে ২৮ ম্যাচে ৫৮ গোল করেছে। আসলে বাবার খেলার জায়গাগুলোই জুনিয়রের ফুটবল পাঠশালা। রিয়াল মাদ্রিদ, জুভেন্টাস ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের একাডেমি পেরিয়ে এখন আল নাসরের বয়সভিত্তিক দলে। গত বছর অনূর্ধ্ব-১৩ দলকে সৌদি প্রিমিয়ার লিগ জিতিয়ে এখন অনূর্ধ্ব-১৫ দলে বাবার মতোই ৭ নম্বর জার্সির খেলোয়াড়।
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ও তাঁর বড় ছেলে ক্রিস্টিয়ানো জুনিয়র.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
রেকর্ড ভাঙা দামে রিয়াল মাদ্রিদে আর্জেন্টিনার ১৭ বছরের ‘মাস্তান’
বয়স মাত্র ১৭। কিন্তু এরই মধ্যে তাঁর পেছনে ইউরোপের বড় বড় ক্লাবগুলোর লাইন লেগেছে, এই খবর আগেই বেরিয়েছিল। নতুন খবর হচ্ছে, অন্য সব ক্লাবকে পেছনে ফেলে শেষ পর্যন্ত ১৭ বছর বয়সী সেই আর্জেন্টাইনকে কিনে নিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। ও হ্যাঁ, নামটাই তো বলা হয়নি সেই বিস্ময়বালকের—ফ্রাঙ্কো মাস্তানতুয়োনো!
আর্জেন্টিনার ক্লাব রিভার প্লেটের কাছ থেকে তাঁকে কিনে নেওয়ার খবরটা আজ রিয়াল মাদ্রিদই দিয়েছে তাদের ওয়েব সাইটে। মাস্তানতুয়োনোর আগে রিয়াল মাদ্রিদে নাম লেখানো সর্বশেষ আর্জেন্টাইন ছিলেন আনহেল দি মারিয়া (২০১০ সালে)।
কে এই ফ্রাঙ্কো মাস্তানতুয়োনোমাস্তানতুয়োনোর জন্ম বুয়েনস এইরেসের আজুল শহরে। শৈশবে অবশ্য ফুটবল ও টেনিস দুটোতেই আগ্রহ ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত আর্জেন্টাইনদের সবচেয়ে বড় আবেগ ফুটবলকেই বেছে নেন। ২০১১ সালে রিভার দি আজুলের বয়সভিত্তিক দলের হয়ে মাস্তানতুয়োনোর প্রাতিষ্ঠানিক ফুটবল-যাত্রা শুরু। ২০১৮ সাল পর্যন্ত সেখানেই ছিলেন।
এরপর ক্লাব সিমেন্টোতে এক বছর থেকে তিনি চলে যান আর্জেন্টিনার সেরা ক্লাবগুলোর একটি রিভার প্লেটে। ২০১৯ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত ক্লাবটির বয়সভিত্তিক দলে খেলেন। গত বছরই ক্লাবের মূল দলে অভিষেক হয় তাঁর।
এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে রিভার প্লেটের ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সী গোলদাতা হিসেবে রেকর্ড গড়ে চলে আসেন সবার নজরে। রিভার প্লেটের হয়ে জেতেন আর্জেন্টাইন সুপার কাপ। শুধু তাই নয়, গত ৬ জুন চিলির বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে মাত্র ১৭ বছর ৯ মাস ২২ দিন বয়সে আর্জেন্টিনার হয়ে অভিষেক হয় তাঁর। আর্জেন্টিনার হয়ে অফিশিয়াল ম্যাচ খেলা সর্ব কনিষ্ঠ খেলোয়াড়ও এখন মাস্তানতুয়োনোই!
কেমন খেলোয়াড় মাস্তানতুয়োনোচিলির বিপক্ষে সেদিন ম্যাচের ৮৪ মিনিটে থিয়াগো আলমাদার বদলি হিসেবে মাঠে নামেন মাস্তানতুয়োনো। বাকি সময়ে তিনি বল স্পর্শ করেন ৮বার, ৩টি পাস দিয়েছেন, তিনটি-ই ছিল সফল। তবে আর্জেন্টিনার বাইরে বেশির ভাগ ফুটবলপ্রেমীর কাছে মাস্তানতুয়োনো এখনো অচেনা এক নাম। অনেকেই তাকে ‘নেক্সট মেসি’ বলছেন, আবার কারও কারও চোখে তাঁর খেলার সঙ্গে কলম্বিয়ার হামেস রদ্রিগেজের মিল আছে।
অনেকে বলছেন, ছেলেটার বাঁ পা খুব ভালো কিন্তু গতি কম। বিশুদ্ধ উইঙ্গার নন, বরং একজন ‘নম্বর ১০’। অ্যাটাকিং মিডফিল্ডে খেলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। মাঝমাঠ থেকে খেলা গড়ে তোলেন। বলের ওপর তার নিয়ন্ত্রণ, ছোট জায়গায় ঘুরে যাওয়া আর দূর থেকে শুটিং দক্ষতা তাকে অন্যদের চেয়ে আলাদা করে দেয়।
ট্রান্সফার ফি: আর্জেন্টিনার ইতিহাসে সবচেয়ে দামি
রিয়াল মাদ্রিদ এই চুক্তিতে টাকার অঙ্কটা জানায়নি। কিন্তু রিভার প্লেট ঠিকই জানিয়ে দিয়েছে। তাদের বিবৃতি অনুযায়ী, এই চুক্তিটা ৬ কোটি ৩২ লাখ ইউরোর! এর মধ্যে ৪ কোটি ৫০ লাখ ইউরো সরাসরি রিভার প্লেটের পকেটে যাচ্ছে, যেটা আসলে মাস্তানতুয়োনোর রিলিজ ক্লজই ছিল। বাকি টাকা বিভিন্ন ধরনের কর, ফুটবলার অ্যাসোসিয়েশন, এএফএ ফান্ড এবং অন্যান্য ফি হিসেবে খরচ হচ্ছে।
ট্রান্সফার ফির হিসাবে আর্জেন্টিনা থেকে দলবদল করা ফুটবলারদের মধ্যে মাস্তানতুয়োনোই সবচেয়ে দামি! রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে ২০৩১ সাল পর্যন্ত ছয় বছরের চুক্তি মাস্তানতুয়োনোর। শোনা যাচ্ছে, প্রতি বছর তার নেট বেতন হবে প্রায় ৩৫ লাখ ইউরো! আর তাকে দলে ধরে রাখতে রিয়াল মাদ্রিদ তার রিলিজ ক্লজ রেখেছে ১০০ কোটি ইউরো!
কবে মাঠে দেখা যাবে তাঁকেমাস্তানতুয়োনো আগামী আগস্টে ১৮ বছর বয়স হলে তারপর রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেবেন। তবে তার আগে ক্লাব বিশ্বকাপে রিভার প্লেটের জার্সিতেই তাকে দেখা যাবে। কেন এত টাকা দিয়ে রিয়াল মাদ্রিদ তাকে কিনেছে, সেটা বোঝার জন্য নিশ্চয়ই ক্লাব বিশ্বকাপে তার ওপর চোখ রাখবেন রিয়াল সমর্থকেরা।