Prothomalo:
2025-08-01@21:07:56 GMT

এনজিওর নিবন্ধন সহজ হলো

Published: 22nd, April 2025 GMT

নতুন বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) অনুমোদনের প্রক্রিয়া সহজ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এনজিও অনুমোদনের সময় চার ভাগের এক ভাগ কমিয়ে আনা হয়েছে। অন্যদিকে প্রকল্প অনুমোদনও সহজ করা হয়েছে। প্রকল্প অনুমোদনে এত দিন কোনো সময়সীমা ছিল না, এখন তা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের অর্থ ছাড়ের সময়ও কমিয়ে আনা হয়েছে।

নতুন এনজিও অনুমোদনে এখন থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে ৪৫ দিনের মধ্যে নিজেদের মতামত দিতে হবে। না দিলে এ দুটি বিভাগের কোনো আপত্তি নেই বলে ধরে নেওয়া হবে। এ ছাড়া নতুন কোনো এনজিও খোলার প্রস্তাব তদন্ত করবে সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা। গত ৩ মার্চ জারি করা এনজিও–বিষয়ক ব্যুরোর নতুন একটি পরিপত্রে এ কথা বলা হয়েছে।

নতুন পরিপত্রে বলা হয়েছে, এখন থেকে একটি গোয়েন্দা সংস্থাকে দিয়ে এনজিওর প্রস্তাব তদন্ত করতে হবে। এর মাধ্যমে হয়রানি কমে আসবে বলে মনে করছেন এনজিও–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

এর আগে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ২০২১ সালের জারি করা পরিপত্রে নতুন এনজিও অনুমোদন দেওয়ার ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে নিজেদের মতামত দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। ওই পরিপত্র অনুযায়ী, এনজিওর প্রস্তাব তদন্ত করত দুটি গোয়েন্দা সংস্থা।

এনজিও–বিষয়ক ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, এনজিওর প্রস্তাব এত দিন তদন্ত করত পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) ও জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই)। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অভিযোগ, তদন্তের নামে সংস্থা দুটি এনজিওর কর্মকর্তাদের হয়রানি করত। নতুন পরিপত্রে বলা হয়েছে, এখন থেকে একটি গোয়েন্দা সংস্থাকে দিয়ে এনজিওর প্রস্তাব তদন্ত করতে হবে। এর মাধ্যমে হয়রানি কমে আসবে বলে মনে করছেন এনজিও–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

গোয়েন্দা সংস্থা তাদের প্রতিবেদনে কী উল্লেখ করবে, সেটি নির্দেশিকায় স্পষ্ট করা হয়েছে। বলা হয়েছে, গোয়েন্দা সংস্থা তাদের প্রতিবেদনে তিনটি বিষয় বিবেচনায় নেবে—এক.

রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা; দুই, সামাজিক নিরাপত্তা; তিন. অন্যান্য বিষয়, যার মধ্যে থাকবে আয়কর সনদ ও বেতন–ভাতা।

এদিকে এনজিও অনুমোদনে সময় কমিয়ে আনার পাশাপাশি প্রকল্প অনুমোদনেও সময় কমানো হয়েছে। নতুন পরিপত্রে বলা হয়েছে, যেকোনো প্রকল্প প্রস্তাব এনজিও ব্যুরোতে জমা হওয়ার পর থেকে চূড়ান্ত অনুমোদন ৪৫ দিনের মধ্যে শেষ করতে হবে। আগের পরিপত্রে প্রকল্প অনুমোদনে কোনো সময়সীমা বেঁধে দেওয়া ছিল না।

এনজিও ব্যুরোর পরিচালক (নিবন্ধন ও নিরীক্ষা) নাজমুল হোসাইন গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, নতুন পরিপত্র জারির ফলে এনজিওগুলোর নিবন্ধনের সময় কমে আসবে। নিবন্ধনের প্রক্রিয়া সহজ হবে। মানুষের হয়রানি কমবে। তিনি আরও বলেন, বৈদেশিক অনুদান আইন, ২০১৬ সংশোধনের কাজ চলছে। পরিপত্রের নতুন বিষয়গুলো আইনে যুক্ত করা হবে। আইনটি পাস হলে তা মেনে চলার বাধ্যবাধকতা থাকবে।

আমাদের আরেকটি দীর্ঘদিনের দাবি আছে, যেটি এখনো পূরণ হয়নি। বৈদেশিক অনুদান আইন, ২০১৬-এর ১৪ নম্বর ধারাটি বাতিল করতে হবে। বিগত সরকার আইনে এই ধারা যুক্ত করেছে এনজিও-সংশ্লিষ্টদের হয়রানি করার জন্য, বাক্‌স্বাধীনতা হরণের জন্য। ইফতেখারুজ্জামান, নির্বাহী পরিচালক, টিআইবি

এদিকে এনজিও ব্যুরো নতুন পরিপত্র জারির পর গত ১৯ মার্চ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আলাদা একটি নির্দেশিকা (গাইডলাইন) জারি করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কোনো এনজিওর নিবন্ধনের প্রস্তাব তদন্ত করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি গোয়েন্দা সংস্থাকে পাঠাবে। গোয়েন্দা সংস্থা ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে।

গোয়েন্দা সংস্থা তাদের প্রতিবেদনে কী উল্লেখ করবে, সেটি নির্দেশিকায় স্পষ্ট করা হয়েছে। বলা হয়েছে, গোয়েন্দা সংস্থা তাদের প্রতিবেদনে তিনটি বিষয় বিবেচনায় নেবে—এক. রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা; দুই, সামাজিক নিরাপত্তা; তিন. অন্যান্য বিষয়, যার মধ্যে থাকবে আয়কর সনদ ও বেতন–ভাতা। ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে প্রতিবেদন পাওয়া না গেলে ধরে নেওয়া হবে এ বিষয়ে তাদের আপত্তি নেই।

নির্দেশিকায় বলা হয়, গোয়েন্দা সংস্থা তাদের তদন্তের সময় রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট মতামত দিতে পারবে। তবে অন্য বিষয়ে পাওয়া তথ্য পর্যবেক্ষণ আকারে উল্লেখ করতে হবে। তদন্ত প্রতিবেদনে কোনো সিদ্ধান্তসূচক মন্তব্য থাকতে পারবে না এবং এনজিওর বিষয়ে নেতিবাচক মতামত দেওয়ার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করতে হবে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশিকায় আরও বলা হয়, এনজিওর প্রস্তাবিত নির্বাহী কমিটির সদস্যদের রাজনৈতিক পরিচয় খোঁজা যাবে না। দেখতে হবে, সমাজসেবা ও জনকল্যাণমূলক কাজে তাঁদের সম্পৃক্ততা আছে কি না।

নির্দেশিকায় বলা হয়, দেশি–বিদেশি এনজিওতে কর্মরত বিদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তা ছাড়পত্রের আবেদন এনজিও–বিষয়ক ব্যুরো থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যাওয়ার তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্তের জন্য একটি গোয়েন্দা সংস্থাকে দিতে হবে। ওই গোয়েন্দা সংস্থাকে ২১ কার্যদিবসের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠাতে হবে। এ প্রতিবেদনে কোনো সিদ্ধান্তসূচক মন্তব্য করা যাবে না।

এদিকে নতুন পরিপত্রে বলা হয়, পাঁচ বছরের বেশি মেয়াদি কোনো প্রকল্প থাকলে, গুরুত্ব বিবেচনায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় বা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সম্মতি সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। আগে এই ধারা ছিল না।

নতুন পরিপত্রকে স্বাগত জানিয়ে বিদ্যমান বৈদেশিক অনুদান আইন, ২০১৬–এর ১৪ নম্বর ধারাটি বাতিলের দাবি জানিয়েছেন এনজিও–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁরা বলছেন, এই ধারা মানুষের বাক্‌স্বাধীনতার বিরুদ্ধে। ১৪ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, কোনো এনজিও বা ব্যক্তি সংবিধান ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বিদ্বেষমূলক ও অশালীন কোনো মন্তব্য করলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।

নতুন পরিপত্রের ব্যাপারে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, এনজিও–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল এনজিও নিবন্ধন, প্রকল্প অনুমোদন ও অর্থে সময় কমিয়ে আনা। কারণ, নিবন্ধন অনুমোদন ও অর্থ ছাড় করা নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও গোয়েন্দা সংস্থা এনজিওগুলোকে হয়রানি করত। গোয়েন্দা সংস্থার ক্ষমতা ছিল অবারিত। নতুন পরিপত্র জারির কারণে এই হয়রানির সুযোগ কমেছে।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের আরেকটি দীর্ঘদিনের দাবি আছে, যেটি এখনো পূরণ হয়নি। বৈদেশিক অনুদান আইন, ২০১৬–এর ১৪ নম্বর ধারাটি বাতিল করতে হবে। বিগত সরকার আইনে এই ধারা যুক্ত করেছে এনজিও–সংশ্লিষ্টদের হয়রানি করার জন্য, বাক্‌স্বাধীনতা হরণের জন্য।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন এনজ ও র হয়র ন এনজ ও ব মত মত দ সময় কম র জন য উল ল খ এই ধ র র সময় সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

কাজের আনন্দই জীবনের সার্থকতা

জন্মদিনের অনুষ্ঠান নয়, তবে অনানুষ্ঠানিক আয়োজনটি ছিল সে উপলক্ষেই। আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষাবিদ ও সুবক্তা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের জন্মদিন ছিল গত ২৫ জুলাই। তাঁর অগণিত অনুরাগীরা চেয়েছিলেন তাঁকে নিয়ে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে মিলিত হতে। উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের যে হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে গেছে, তারপর আর জন্মদিনের অনুষ্ঠান করতে কিছুতেই সম্মত হননি তিনি।

শুক্রবার সন্ধ্যায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ষষ্ঠতলায় কেন্দ্রের প্রাক্তনী ও তাঁর কিছু ঘনিষ্ঠজন আলাপচারিতার এক ঘরোয়া আয়োজন করেছিলেন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে নিয়ে। সেখানে তিনি বললেন, কাজের মধ্য দিয়ে জীবনে যে আনন্দ পেয়েছেন, সেটিই জীবনের সার্থকতা। এই আনন্দই তাঁকে অনুপ্রাণিত করে, শক্তি জোগায়।

এ আয়োজনে অংশগ্রহণকারীরা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেছেন। তিনি তাঁর চিরপরিচিত সরস অথচ বুদ্ধিদীপ্ত গভীর তাৎপর্যময় কথায় উত্তর দিয়েছেন। কবিতা, সাহিত্য, শিল্প থেকে শিক্ষা, ইতিহাস, দর্শন, ধর্ম, রাজনীতি, অর্থনীতি, সংগঠন, প্রেম–ভালোবাসা—সবকিছু উঠে আসে প্রশ্নোত্তরভিত্তিক কথোপকথনে। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল থেকে শুরু করে বিশ্বসাহিত্যের বহু কালজয়ী লেখকের রচনা থেকে প্রচুর উদ্ধৃতি দিয়েছেন তিনি। এক অন্তরঙ্গ প্রাণবন্ত আবহ বিরাজমান ছিল সন্ধ্যা থেকে অনেকটা রাত অবধি এই আয়োজনে।

আবৃত্তিশিল্পী জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় শুরুতেই আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের একটি কবিতা আবৃত্তি করে জানতে চান, তিনি কবিতার চর্চা করেননি কেন? জবাবে তিনি বলেন, কবি শামসুর রাহমান একবার তাঁকে বলেছিলেন, তাঁর মধ্যে কবিত্বের ঘাটতি আছে। তাঁর নিজেরও সে রকম মনে হয়েছে। তারপর সাহিত্য পত্রিকা কণ্ঠস্বর প্রকাশ ও অনেক রকম কাজ করতে গিয়ে আর কবিতা লেখা হয়ে ওঠেনি।

অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য প্রশ্ন করেন, এখন একটা কঠিন সময় যাচ্ছে। তরুণ প্রজন্মকে কীভাবে দেখেন, কী আশা করেন তাদের কাছে?

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘তরুণেরা কী হবে, তা তরুণদের ওপরে নির্ভর করে না। সেটা নির্ভর করে আমরা তাদের কী বানাতে চাই, তার ওপর। দেখতে হবে তরুণদের গড়ার মতো আমাদের ক্ষমতা কতটা আছে। অর্থাৎ শিক্ষক কেমন হবে, তার ওপরে নির্ভর করে তাঁর ছাত্র কেমন হবে। সক্রেটিস শিক্ষক ছিলেন বলে ছাত্র প্লেটো হয়েছেন। প্লেটোর শিক্ষা পেয়ে ছাত্র অ্যারিস্টটল হতে পেরেছেন। বড়দের যদি বড়ত্ব না থাকে, তবে ছোটরা বড় হতে পারে না। দুর্ভাগ্য যে আমরা বড়রা তাদের সামনে আদর্শ দাঁড় করাতে পারিনি। ফলে এখন বড়দেরই ছোটদের পেছনে দাঁড়াতে হচ্ছে।’

ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্‌ফুজ আনাম জানতে চান, তিনি এত বিচিত্র ধরনের এত বিপুল কাজ করেছেন। এই প্রাণশক্তি পান কেমন করে?

উত্তর দিতে গিয়ে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘শক্তি আসে আনন্দ থেকে। কাজ করতে পারাটাই আনন্দের। আর সব সময় আশাবাদী থাকি। আশা কখনো শেষ হয় না। আশা শেষ মানে আমি শেষ।’

আলাপচারিতায় আরও অংশ নেন দুদক চেয়ারম্যান এম এ মোমেন, ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ, চিকিৎসক আমজাদ হোসেন, অভিনয়শিল্পী খায়রুল আলম সবুজ, কথাশিল্পী আনিসুল হক, ছড়াকার আমিরুল ইসলাম, উপস্থাপক আবদুন নূর তুষার, অভিনয়শিল্পী আফসানা মিমি, মশিউর রহমান, আলী নকী প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রাক্তনী খাদিজা রহমান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ