ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবস মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) সূচকের পতনের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। এ নিয়ে টানা সাত কার্যদিবস পুঁজিবাজারে সূচকে পতন ঘটল।

এদিন ডিএসইতে আগের কার্যদিবসের চেয়ে টাকার পরিমাণে লেনদেন কিছুটা কমলেও সিএসইতে বেড়েছে। দিনশেষে উভয় পুঁজিবাজারে লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার এবং মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটের দাম কমেছে।

এদিকে, পুঁজিবাজারে ধারাবাহিক দরপতনের ফলে পুঁজি হারিয়ে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। গত বছরের জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর একটি গতিশীল পুঁজিবাজারের প্রত্যাশায় ফের সক্রিয় হন বিনিয়োগকারীরা। তবে, দীর্ঘ আট মাসেও তা দৃশ্যমান না হওয়া বিনিয়োগকারীরা ক্ষুব্ধ। এমন পরিস্থিতির প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দিয়েছে বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ইনভেস্টর অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএমআইএ)। আগামীকাল বুধবার (২৩ এপ্রিল) দুপুর আড়াইটার দিকে ঢাকায় বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনে সামনে বিক্ষোভ মিছিল করবেন ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা।

ডিএসই ও সিএসই সূত্র জানিয়েছে, দিনশেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ১৮.

২৭ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ২৬ পয়েন্টে। ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৪.৬৭ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১২১ পয়েন্টে এবং ডিএস৩০ সূচক ৩.৫২ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৮৫৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

ডিএসইতে মোট ৪০১টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে ১১৯টি কোম্পানির, কমেছে ২১৪টির এবং অপরিবর্তিত আছে ৬৮টির।

এদিন ডিএসইতে মোট ৩৪০ কোটি ২৮ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৩৫৯ কোটি ৪ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট।

অন্যদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সিএসসিএক্স সূচক আগের দিনের চেয়ে ৩০.১৭ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৮ হাজার ৫৯১ পয়েন্টে। সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৫৪.০২ পয়েন্ট কমে ১৪ হাজার ৮১ পয়েন্টে, শরিয়াহ সূচক ০.৯৪ পয়েন্ট কমে ৯১৬ পয়েন্টে এবং সিএসই ৩০ সূচক ২৯.৯২ পয়েন্ট কমে ১১ হাজার ৮০০ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

সিএসইতে মোট ২২১টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে ৬৫টি কোম্পানির, কমেছে ১২৪টির এবং অপরিবর্তিত আছে ৩২টির।

সিএসইতে ৬ কোটি ৭ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট।

ঢাকা/এনটি/রফিক

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ল খ ট ক র শ য় র ও ইউন ট স এসই ড এসই

এছাড়াও পড়ুন:

শেয়ারবাজারে লেনদেন-খরা কাটছে না, হতাশ বিনিয়োগকারীরা

ঈদের ১০ দিনের ছুটির পর লেনদেন শুরুর প্রথম দিনেই বিনিয়োগকারীদের আশাবাদী করতে পারেনি দেশের শেয়ারবাজার। দীর্ঘ ছুটির পর আজ রোববার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় দরপতনে। যদিও দিন শেষে সূচক ও লেনদেন কিছুটা বেড়েছে। তবে তা বিনিয়োগকারীদের আশাবাদী হওয়ার মতো নয়। উল্টো ভালো মৌল ভিত্তির কিছু শেয়ারের দরপতন বিনিয়োগকারীদের আরও বেশি দুশ্চিন্তায় ফেলেছে।

ঢাকার বাজারে রোববার লেনদেন হওয়া ৩৯২ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৭৯টিরই দরপতন হয়েছে, দাম বেড়েছে ১৪৫টির আর অপরিবর্তিত ছিল ৬৮টির দাম। লেনদেন হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর দামের উত্থান–পতনের প্রভাবে দিন শেষে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৫ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৭২৪ পয়েন্টে। আর লেনদেনের পরিমাণ ছিল ২৬৩ কোটি টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে ৩৯ কোটি টাকা বেশি।

বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, শেয়ারবাজারের লেনদেন বর্তমানে যে পর্যায়ে নেমেছে, তাতে বাজারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী কারও জন্যই তা আশান্বিত হওয়ার মতো না। এই লেনদেনে অনেক প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর পরিচালন খরচ তোলায় দুঃসাধ্য হয়ে গেছে। ফলে অনেক ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংক মাস শেষে বাজার থেকে পরিচালন খরচ তুলতেই হিমশিম খাচ্ছে। একইভাবে লেনদেন থেকে স্টক এক্সচেঞ্জগুলো যে কমিশন আয় করে তা দিয়ে স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালন খরচ উঠছে না।

সংশ্লিষ্টরা আরও বলেন, বাজেটকে সামনে রেখে বিনিয়োগকারীরা কিছুটা আশান্বিত হয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ঘোষিত বাজেটে সরাসরি বিনিয়োগকারীদের জন্য কোনো সুখবর ছিল না। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বাজার নিয়ে হতাশা আরও বেড়েছে। এ অবস্থায় নতুন করে বাজারে কোনো বিনিয়োগকারী তো আসছেনই না, উল্টো বিদ্যমান বিনিয়োগকারীরাও সুযোগ পেলে লোকসানে শেয়ার বিক্রি করে বাজার ছাড়ছেন। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে বাজার দীর্ঘ মন্দার কবলে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।

ব্রোকারেজ হাউস লঙ্কাবাংলা সিকিউরিটিজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকার বাজারে আজ রোববার সূচকের পতনে যেসব কোম্পানি বড় ভূমিকা রেখেছে তার মধ্যে ছিল ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ, ইসলামী ব্যাংক, গ্রামীণফোন, বেক্সিমকো ফার্মা, বিএসআরএম লিমিটেড, আইএফআইসি ব্যাংক, রেনাটা, ওরিয়ন ইনফিউশন, ইউনাইটেড পাওয়ার ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক। এসব কোম্পানির শেয়ারের দরপতনে আজ ডিএসইএক্স সূচকটি ৭ পয়েন্ট কমেছে। তার বিপরীতে সূচকের উত্থানে বড় ভূমিকা রেখেছে ব্র্যাক ব্যাংক, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, স্কয়ার ফার্মা, লাভেলো আইসক্রিম, সিটি ব্যাংক, এসিআই, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, আল–আরাফাহ্‌ ইসলামী ব্যাংক ও বীকন ফার্মা। এসব কোম্পানির শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধিতে ডিএসইএক্স সূচকটি ১৮ পয়েন্টের বেশি বেড়েছে।

লঙ্কাবাংলা সিকিউরিটিজের এই প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, একদিকে ভালো মৌল ভিত্তির কিছু কোম্পানির শেয়ারের দরপতনে সূচক কমেছে, অন্যদিকে কিছু ভালো কোম্পানির শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধি সেই পতনকে রোধ করেছে। এই কারণে দিন শেষে সূচকটি ইতিবাচক ধারায় ছিল।

ঢাকার বাজারে আজ লেনদেনের এক–পঞ্চমাংশ বা প্রায় ২০ শতাংশই ছিল খাদ্য খাতের দখলে। এ খাতের লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর সম্মিলিত লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৫২ কোটি টাকা। যার প্রায় অর্ধেকই আবার একটি কোম্পানির, সেটি লাভেলো আইসক্রিম। রোববার ঢাকার বাজারে লেনদেনের শীর্ষে ছিল কোম্পানিটি। দিন শেষে ২৫ কোটি টাকার শেয়ারের হাতবদল হয়। মূলত লাভেলো আইসক্রিমের লেনদেনের ওপর ভিত্তি করেই এদিন খাদ্য খাত লেনদেনের শীর্ষে জায়গা করে নেয়। খাতভিত্তিক লেনদেনের দিক থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবস্থানে ছিল ব্যাংক খাত। এই খাতের কোম্পানিগুলোর সম্মিলিত লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৩৪ কোটি টাকা। ব্যাংক খাতকে এদিন লেনদেনের দ্বিতীয় অবস্থানে রাখার পেছনে বড় ভূমিকা ছিল ব্র্যাক ব্যাংকের। ঢাকার বাজারে আজ রোববার ব্র্যাকের ব্যাংকের ১৫ কোটি টাকার শেয়ারের হাতবদল হয়। সেই হিসাবে ব্যাংক খাতের সম্মিলিত লেনদেনের প্রায় অর্ধেকই ছিল ব্যাংকটির একক লেনদেন।

বাজারের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে শীর্ষস্থানীয় এক ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ নির্বাহী প্রথম আলোকে বলেন, বাজারে এখন নতুন করে কোনো আশা দেখছেন না সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। এ কারণে প্রতিদিনই কোনো না কোনো বিনিয়োগকারী বাজার ছেড়ে যাচ্ছেন। বাজেটকে ঘিরে বিনিয়োগকারীদের যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, সেটি পূরণ না হওয়ায় হতাশা আরও বেড়েছে। যার প্রভাব বাজারে পড়ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শেয়ারবাজারে লেনদেন-খরা কাটছে না, হতাশ বিনিয়োগকারীরা