মুসলিমদের পবিত্র ভূমি মদিনা শহরকে কটাক্ষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক কিশোরের পোস্টকে কেন্দ্র করে রংপুরের তারাগঞ্জে প্রায় দেড় ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন উত্তেজিত জনতা।

মঙ্গলবার বেলা সাড়ে তিনটায় রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের বামনদীঘি এলাকায় অবরোধ করে তাঁরা ওই কিশোরের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানান।

পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সম্প্রতি উপজেলার হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়নের সনাতন ধর্মাবলম্বী এক কিশোর ফেসবুকে মদিনাকে কটাক্ষ করে একটি ভিডিও পোস্ট করে। পরে ভিডিওটির স্ক্রিনশট ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে আজ দুপুরে হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়ন পরিষদে বিক্ষোভ করেন বিক্ষুব্ধ জনতা। এরপর বেলা সাড়ে তিনটার দিকে রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের বামনদীঘি এলাকায় অবরোধ করে তাঁরা ওই কিশোরের গ্রেপ্তারের দাবি জানান। এতে মহাসড়কের দুই পাশে যানজট দেখা দেয়। পরে বিকেল পাঁচটার দিকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ঘটনাস্থলে গিয়ে বিক্ষোভকারীদের বুঝিয়ে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

বিক্ষোভকারীদের দাবি, সকাল থেকে প্রশাসনকে বললেও ওই কিশোরকে গ্রেপ্তারে কোনো ভূমিকা রাখছে না। তাকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

স্থানীয় ইকরচালী ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের পবিত্র মদিনাকে নিয়ে এক হিন্দু ছেলে কটাক্ষ করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছে। তার শাস্তির দাবিতে বামনদীঘি এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করে আন্দোলন হয়। খবর পেয়ে ইউপি সদস্যদের নিয়ে সেখানে গিয়ে উপস্থিত জনতাকে বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে নিই। এখন গাড়ি চলাচল করছে।’

তারাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবেল রানা বলেন, ‘ঘটনাটি শোনার পর আমি ডিসি স্যারের সঙ্গে কথা বলেছি। ওই কিশোরকে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশকে বলেছি।’

তারাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম বলেন, সকালে হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে বিক্ষুব্ধ জনতাকে বুঝিয়েছেন। ওই কিশোর বাড়িতে নেই। তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ওই ক শ র ফ সব ক

এছাড়াও পড়ুন:

ব্যাংকে ঋণ হিসাবের চেয়ে ৫ গুণ বেড়েছে আমানত হিসাব

দেশের ব্যাংক খাতে গ্রাহকের আমানত হিসাব যেভাবে বাড়ছে, ঋণ হিসাব সেভাবে বাড়ছে না। আবার ঋণের গতিও কমে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের অক্টোবর–ডিসেম্বর প্রান্তিকের তুলনায় এ বছরের জানুয়ারি–মার্চে ব্যাংকগুলোয় গ্রাহকের ঋণ হিসাব যেখানে বেড়েছে ৫ লাখ ১৫ হাজার ৪২১টি, সেখানে আমানত হিসাব বেড়েছে তার প্রায় পাঁচ গুণ তথা ২৪ লাখ ৫৯ হাজার ২৮৯টি।

দেশের ব্যাংকগুলোতে ঋণ হিসাবের চেয়ে আমানত হিসাব ১২ গুণ বেশি। হিসাবপ্রতি মাথাপিছু যে আমানত রয়েছে, হিসাবপ্রতি ঋণ আছে তার চেয়ে ১১ গুণ বেশি। ব্যাংক খাতের আমানত ও ঋণ হিসাবসংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে এই তথ্য পাওয়া গেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোতে গত জানুয়ারি-মার্চ ৩ মাসে প্রতি কর্মদিবসে গড়ে ২৭ হাজার ৩২৫টি নতুন গ্রাহক হিসাব খোলা হয়েছে। তাতে মার্চের শেষে দেশের ৬১টি ব্যাংকের ১১ হাজার ৩৬২টি শাখায় মোট গ্রাহক হিসাব দাঁড়ায় ১৬ কোটি ৫৭ লাখ ৬ হাজার ৮২১টি। গত বছরের ডিসেম্বরে এই সংখ্যা ছিল ১৬ কোটি ৩২ লাখ ৪৭ হাজার ৫৩২। অর্থাৎ ৩ মাসে গ্রাহক হিসাব বেড়েছে ২৪ লাখ ৫৯ হাজার ২৮৯টি।

অন্যদিকে মার্চের শেষে ব্যাংকগুলোতে গ্রাহকের মোট ঋণ হিসাব ছিল ১ কোটি ৩৪ লাখ ৪৩ হাজার ২৩১টি। গত ডিসেম্বর শেষে গ্রাহকের ঋণ হিসাবের সংখ্যা ছিল ১ কোটি ২৯ লাখ ২৭ হাজার ৮১০। এর মানে ৩ মাসে ঋণ হিসাব বেড়েছে ৫ লাখ ১৫ হাজার ৪২১টি।

ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, অর্থনীতিতে মন্দাভাবের কারণে উদ্যোক্তারা নতুন প্রকল্প নেওয়া কমিয়েছেন। ব্যবসায়ীদের নতুন ব্যবসা শুরুর হারও কমেছে। ঋণের চাহিদা কমার ফলে ঋণ হিসাব খোলা কমেছে। বেসরকারি ব্যাংকগুলোয় তো ঋণের প্রবৃদ্ধি টানা ছয় মাস ধরে ৮ শতাংশের নিচে রয়েছে। 

উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে ঋণ হিসাবধারীর সংখ্যা। ১৬ কোটি আমানতকারীর বিপরীতে সোয়া ১ কোটি হিসাবে সব ঋণ পুঞ্জীভূত হয়েছে। অর্থাৎ অধিকসংখ্যক মানুষ ব্যাংকে নানা অঙ্কের অর্থ জমা করছেন। সে তুলনায় অল্পসংখ্যক মানুষের হাতে সব ঋণ পুঞ্জীভূত হচ্ছে।  খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, গবেষণা পরিচালক, সিপিডি

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, মার্চের শেষে ব্যাংক খাতে মোট আমানতের পরিমাণ ছিল ১৯ লাখ ২৩ হাজার ৫০৫ কোটি টাকা, যা ডিসেম্বরে ছিল ১৮ লাখ ৮৩ হাজার ৭১১ কোটি টাকা। সেই হিসাবে ৩ মাসে আমানত বেড়েছে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা। তাতে মার্চের শেষে ব্যাংকে গ্রাহকের মাথাপিছু আমানতের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ১ লাখ ১৬ হাজার ৭৯ টাকা, যা ডিসেম্বরে ছিল ১ লাখ ১৫ হাজার ৩৯০ টাকা। অর্থাৎ ৩ মাসে গ্রাহকের মাথাপিছু আমানত বেড়েছে ৬৮৯ টাকা।

একইভাবে মার্চে ব্যাংকে গ্রাহকদের মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ ৭৩ হাজার ৯৬৩ টাকা। গত বছরের ডিসেম্বরে যা ছিল ১৩ লাখ ১ হাজার ৭৫০ টাকা। ৩ মাসে মাথাপিছু ঋণ কমেছে ২৭ হাজার ৭৮৭ টাকা করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে, মার্চের শেষে ব্যাংক খাতে মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ১৭ লাখ ১২ হাজার ৬১৮ কোটি টাকা, যা গত বছরের ডিসেম্বরে ছিল ১৬ লাখ ৮২ হাজার ৮৭৮ কোটি টাকা। ৩ মাসে ঋণ বেড়েছে ২৯ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা। এই সময়ে গ্রাহকের ঋণ হিসাব বেড়েছে ৫ লাখের বেশি। 

জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে ১৬ কোটি আমানত হিসাবের যে তথ্য উঠে এসেছে, সেখানে এক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে থাকা অনেক হিসাব গণনা করা হয়েছে। যদি এক ব্যক্তির এক হিসাবের বিবেচনায় গ্রাহকের মাথাপিছু আমানতের হিসাব করা হয়, তাহলে মাথাপিছু আমানতের পরিমাণ বাড়বে। তবে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে ঋণ হিসাবধারীর সংখ্যা। ১৬ কোটি আমানতকারীর বিপরীতে সোয়া ১ কোটি হিসাবে সব ঋণ পুঞ্জীভূত হয়েছে। অর্থাৎ অধিকসংখ্যক মানুষ ব্যাংকে নানা অঙ্কের অর্থ জমা করছেন। সে তুলনায় অল্পসংখ্যক মানুষের হাতে সব ঋণ পুঞ্জীভূত হচ্ছে। আবার ঋণের বড় অংশ শহরকেন্দ্রিক। ঋণ বিতরণের পুরো ব্যবস্থাতেই চরম বৈষম্যের কারণে এমন হয়েছে। 

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, দেশের ব্যাংক খাতে ঋণ বেশি শহরাঞ্চলে। মার্চ নাগাদ শহরাঞ্চলে বিতরণ করা মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ১৫ লাখ ৭৫ হাজার ৮৯৮ কোটি টাকা। একই সময়ে গ্রামপর্যায়ে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৩৬ হাজার ৭২১ কোটি টাকা। 

ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দেশের শিল্পকারখানা থেকে শুরু করে বড় বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সবই শহরকেন্দ্রিক। এ কারণে গ্রামের চেয়ে শহরাঞ্চলে ঋণের পরিমাণ বেশি। এ ছাড়া দেশের সরকারি–বেসরকারি ব্যাংকের শাখা কার্যক্রমও অনেকটা শহরকেন্দ্রিক। এসব কারণে ব্যাংকঋণ অনেকটা শহরকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। একইভাবে ব্যাংক খাতের আমানতের বড় অংশই শহরাঞ্চলের। মার্চের শেষে দেশের ব্যাংক খাতের মোট আমানতের মধ্যে ১৬ লাখ ২২ হাজার ১৫৭ কোটি টাকা ছিল শহরকেন্দ্রিক। একই সময়ে গ্রামপর্যায় থেকে সংগ্রহ করা আমানতের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ১ হাজার ৩৪৭ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বরে ব্যাংকে শহরকেন্দ্রিক আমানতের পরিমাণ ছিল ১৫ লাখ ৯১ হাজার ২৮৯ কোটি টাকা। তখন গ্রামকেন্দ্রিক আমানত ছিল ২ লাখ ৯২ হাজার ৪২২ কোটি টাকা।

সিপিডির গবেষণা পরিচালক গোলাম মোয়াজ্জেম আরও বলেন, ‘দেশে নানা সমস্যার মধ্যেও মানুষের মাথাপিছু আয় বাড়ছে। তবে যে হারে আয় বাড়ছে, সেই তুলনায় আমানত বাড়ছে না। আমাদের এক গবেষণায় দেখেছি, দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি এখনো ব্যাংকব্যবস্থার বাইরে রয়েছেন। তার বড় কারণ বেশির ভাগ মানুষকে আমরা এখনো ব্যাংকব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত করতে পারছি না।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ব্যাংকে ঋণ হিসাবের চেয়ে ৫ গুণ বেড়েছে আমানত হিসাব