‘ভালো বই পড়া মানে গত শতাব্দীর সেরা মানুষদের সাথে কথা বলা’– প্রায় সাড়ে তিনশ বছর আগে কথাটি বলেছিলেন ফরাসি দার্শনিক র্যনে দেকার্ত। প্রযুক্তির দাপটে সময় বদলেছে, বদলেছে জীবনধারা। এখন সবই হাতের মুঠোয়, কিন্তু বইয়ের প্রতি আগ্রহ যেন কমেই চলেছে– বিশেষত তরুণদের মাঝে।
রাজবাড়ীর প্রবীণ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিরা মনে করেন, তরুণ প্রজন্মের বইবিমুখতার অন্যতম কারণ মোবাইল ফোন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসক্তি। অথচ নিজেকে সমৃদ্ধ করার ক্ষেত্রে বইয়ের কোনো বিকল্প নেই।
একসময় বিকেল হলেই পাঠকের ভিড়ে মুখর থাকত শতবর্ষী রাজবাড়ী পাবলিক লাইব্রেরি। গত সোমবার সন্ধ্যায় এ লাইব্রেরিতে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকজন পাঠক আছেন। সবাই পত্রিকা পড়ছেন। লাইব্রেরিয়ান বদিউল আলম বুলবুল জানান, এ লাইব্রেরির আজীবন সদস্য ১০৫ জন, সাধারণ সদস্য ১৩৫ জন। এমন একটা সময় ছিল যখন প্রতিদিন লাইব্রেরির সদস্যরা বই লেনদেন করত। ২০১৮ সালের পর থেকে তা আর হচ্ছে না।
রাজবাড়ী সরকারি গণগ্রন্থাগারে গিয়ে দেখা যায় প্রায় ৪০ জন পাঠক। তারা মূলত পত্রিকা, একাডেমিক বই বা চাকরির জন্য সহায়ক বই পড়ছেন, তথ্য সংগ্রহ করে নোট নিচ্ছেন। মাত্র একজনকে দেখা গেল উপন্যাস পড়তে।
গণগ্রন্থাগারের রিডিং হল অ্যাসিস্ট্যান্ট মো.
রাজবাড়ী সরকারি কলেজের লাইব্রেরিতে গিয়ে কথা হয় বুক শর্টার নুরুন্নাহারের সঙ্গে। জানালেন, তাদের লাইব্রেরিতে বইয়ের সংখ্যা ২১ হাজার ২৫৬। একাডেমিক বইয়ের সংখ্যাই বেশি। সাহিত্যের বই আছে দুই হাজারের মতো। প্রতিদিন গড়ে একশ ছাত্রছাত্রী আসে মূলত একাডেমিক বই পড়তে। গল্প-উপন্যাসের পাঠক শতকরা দুই-তিনজন হতে পারে।
বই বেচাকেনা কমেছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও। রাজবাড়ী শহরের শামীম লাইব্রেরির স্বত্বাধিকারী সৈয়দ মোকাদ্দেস আলী সাগর বলেন, পাঁচ বছর ধরে গল্প-উপন্যাসের বেচাকেনা একবারেই কম। আগে যেমন স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েরা বই কিনত, এখন সেভাবে কেনে না। অনেকেই ইন্টারনেট থেকে বই সংগ্রহ করে নিচ্ছেন।
বই পড়া নিয়ে তরুণ প্রজন্মের ভাবনা কী– এমন প্রশ্নে রাজবাড়ী সরকারি কলেজের ছাত্রী নাবিলা রহমান বলে, পাঠ্যবইয়ের বাইরে অন্য বই খুব একটা পড়া হয় না। কিন্তু সে এটা বোঝে যে, নিজেকে সমৃদ্ধ করতে বই পড়া খুব জরুরি।
বই চর্চা কেন জরুরি– এ প্রসঙ্গে রাজবাড়ী জেলার সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সাবেক জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সৈয়দ সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বইয়ের মাধ্যমে আমরা অতীত জানি, বর্তমান ধরে রাখি, সুদূরের পরিকল্পনা করি।
আরেক প্রবীণ ব্যক্তিত্ব দেবাহুতি চক্রবর্তীর মতে, মাদকাসক্তি ও মোবাইল ফোন আসক্তি তরুণদের বই থেকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে। অথচ বই-ই সুকোমল বৃত্তি, মানবিকতা, যুক্তিবোধ ও বিজ্ঞানমনস্কতা বিকাশের প্রধানতম মাধ্যম।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ
সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়।
গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।
টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন।
এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’
সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।