‘পছন্দ হোক আর না হোক, লবণ মাখিয়ে সমালোচনা গ্রহণ করি’
Published: 24th, April 2025 GMT
ভারতের দক্ষিণী সিনেমার তারকা অভিনেত্রী তামান্না ভাটিয়া। শরীরি সৌন্দর্য কিংবা নাচের হিল্লোল— নানাভাবে দর্শকদের মুগ্ধ করেছেন। কখনো কাজের জন্য কখনো ব্যক্তিগত কারণে সমালোচিত হয়েছেন। কিছুদিন আগে বিজয় ভার্মার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ভাঙার পর তাকে নিয়ে আলোচনা কম হয়নি।
ট্রল কিংবা সমালোচনা কীভাবে গ্রহণ করেন তামান্না ভাটিয়া? ফিল্মফেয়ারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন ‘বাহুবলি’ তারকা।
তামান্না ভাটিয়া বলেন, “কোনটা গঠনমূলক সমালোচনা, তা আমি এই জার্নি থেকে শিখেছি। কারণ এটা সবসময়ই থাকে। এমনকি কিছু মতামতও নিশ্চিতভাবে গ্রহণ করি, এটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন নয়। আমি বলতে পারি, এটা ট্রল নাকি উপকারী কিছু। এটি পছন্দ হোক আর না হোক, এক চিমটি লবণ মাখিয়ে তা গ্রহণ করি।”
তামান্না অভিনীত সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা ‘ওডেলা টু’। গত ১৭ এপ্রিল মুক্তি পেয়েছে অশোক তেজা নির্মিত এই সিনেমা। মুক্তির পর দর্শক-সমালোচকদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। টাইমস অব ইন্ডিয়া পাঁচে আড়াই রেটিং দিয়েছে।
গত বছর বক্স অফিস কাঁপানো অন্যতম বলিউড সিনেমা ‘স্ত্রী টু’। বিশ্বব্যাপী সিনেমাটি আয় করে ৮৫৭ কোটি রুপির বেশি। বক্স অফিস ছাড়াও এ সিনেমার ‘আজ কি রাত’ শিরোনামের আইটেম গান দর্শক হৃদয়ে ঝড় তুলেছিল। এতে পারফর্ম করেন তামান্না ভাটিয়া। তার সঙ্গী ছিলেন পঙ্কজ ত্রিপাঠি ও রাজকুমার রাও। ইউটিউবে মুক্তির পর বৈশ্বিকভাবে ট্রেন্ডিংয়ের দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল। এ গানে ‘মিল্কি বিউটি’ তামান্নার নাচে বুঁদ হয়েছিলেন তার ভক্ত-অনুরাগীরা। মুক্তির পর এতদিন কেটে গেলেও এখনো দর্শকদের মোহ কাটেনি।
এরই মধ্যে ‘রেইড টু’ সিনেমার ‘নাশা’ শিরোনামের আইটেম গানে কোমর দুলিয়েছেন তামান্না। কিছু দিন আগে টি-সিরিজের ইউটিউব চ্যানেলে গানটি মুক্তির পর সাড়া ফেলে। এ গানে পারফর্ম করেও প্রশংসা কুড়াচ্ছেন এই অভিনেত্রী। অজয় দেবগনকে নিয়ে পরিচালক রাজ কুমার গুপ্তা নির্মাণ করছেন ‘রেইড টু’। সবকিছু ঠিক থাকলে ১ মে মুক্তি পাবে সিনেমাটি।
বর্তমানে তামান্নার হাতে হিন্দি ভাষার তিনটি সিনেমার কাজ রয়েছে। এগুলো হলো— রেঞ্জার, নো এন্ট্রি ম্যায়নে এন্ট্রি। তাছাড়া রাকেশ মারিয়ার বায়োপিকে অভিনয় করছেন এই অভিনেত্রী।
ঢাকা/শান্ত
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম ক ত র পর
এছাড়াও পড়ুন:
এই অদম্য মেয়েদের আমরা হারিয়ে যেতে দিতে পারি না
অবহেলিত মেয়েরা কঠিন একটি কাজ সম্পন্ন করেছেন। অনেকের কাছে এখনো অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে। অসাধ্য এক অর্জনকে বাস্তবের জমিনে নামিয়ে এনেছেন আমাদের বাঘিনীরা। সাফ পর্যায় জয় করে নারীদের ফুটবলকে এশীয় পর্যায়ে নিয়ে গেলেন। বিশ্বকাপও খেলে ফিরতে পারেন এই অদম্য বাঘিনীরা।
এখন বলাই যায়, নারী ফুটবলের বিশ্ব পর্যায়ে কড়া নাড়ছেন আমাদের মেয়েরা। ফুটবলকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন তাঁরা। শুধু ফুটবলই নয়, আমাদের নারী জাগরণের নতুন দিশা হতে পারে মেয়েদের এই সাফল্য। এই মেয়েরা সারা দেশের মেয়েদের জন্য উদাহরণ। নারী অধিকার, নারী ক্ষমতায়নের নতুন দিনের আলোকবর্তিকা আমাদের নারী ফুটবল দল।
ফুটবলে মেয়েদের এই সাফল্যের পেছনে আছে দীর্ঘদিনের লড়াই-সংগ্রামের ইতিহাস। সফলতা খুব সহজে আসেনি। নানা প্রতিবন্ধকতা পার করে কঠিন এক সংগ্রামের ফসল মেয়েদের আজকের এই অর্জন। ঠাকুরগাঁওয়ের প্রত্যন্ত পল্লি থেকে কোহাটি কিষ্ক, কলসিন্দুরের মারিয়া মান্দা, শামসুন্নাহার, তহুরা খাতুন, সানজিদা আক্তার বা রাঙামাটির দুর্গম গ্রাম মগছড়ি থেকে ঋতুপর্ণা চাকমাদের আজকের এই পর্যায়ে আসার ইতিহাসটা আমরা কমবেশি সবাই জানি।
এই পথচলায় সামাজিক বিধিনিষেধ ছিল। ছিল আর্থিক টানাপোড়েন, অনিশ্চয়তা। জীবনের এমন কোনো সংকট নেই, যা তাঁদের সামনে আসেনি। কিন্তু হিমালয়সম সেই বাধাকে সাহসিকতার সঙ্গে পেছনে ঠেলে আজকে তাঁরা এশীয় পর্যায়ে নিজেদের উন্নীত করেছেন।
তাঁদের অর্জনের তুলনায় রাষ্ট্র দিতে পেরেছে খুবই কম। বলতে গেলে, তাঁরা পেটেভাতে দেশের জন্য খেলে দিচ্ছেন। যেন খেলার বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি চলছে কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির আদলে। যৎসামান্য যে বেতন দেওয়া হয়, সেটাও অনিয়মিত। যেকোনো সাফল্যের পর যখন মেয়েদের কাছে শুনতে চাওয়া হয়, ‘আপনারা কী চান?’ উত্তরে মেয়েরা জানান, ‘নিয়মিত বেতনটা চাই। আর বেতনটা বাড়ালে আরও ভালো হয়।’ ২০২৫ সালে এসে এটা মেনে নেওয়া কঠিন।
দেশে মেয়েদের নিয়মিত লিগ হয় না। অন্য কোনো টুর্নামেন্টও হয় না নিয়মিত। নিয়মিত খেলার জন্য আমাদের মেয়েদের ভুটান লিগে খেলতে যেতে হয়। কেবল আবাসিক ক্যাম্পের প্রশিক্ষণ ও কিছু প্রস্তুতিমূলক ম্যাচ খেলেই মেয়েদের আন্তর্জাতিক পর্যায়ের প্রতিযোগিতামূলক খেলায় নামতে হয়। সেই সব খেলায় তাঁরা নিয়মিত লিগ খেলা দলগুলোকে বলে-কয়ে হারাচ্ছে।
আমাদের খেলাধুলাকে রাজধানীকেন্দ্রিক না রেখে প্রান্তিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। শুধু নারী ফুটবল নয়, সব ধরনের খেলাধুলার আয়োজন করতে হবে তৃণমূল থেকে। তবেই নতুন নতুন প্রতিভাবান খেলোয়াড় বেরিয়ে আসবে। ঢাকাকেন্দ্রিক খেলার কুফল কী হতে পারে, তার বড় উদাহরণ আমাদের ছেলেদের ফুটবল। সারা দেশে নিয়মিত প্রতিযোগিতামূলক লিগ না হওয়ার কারণে নতুন নতুন ফুটবলার বেরিয়ে আসছেন না।কী পরিমাণ প্রতিভার অধিকারী হলে ন্যূনতম সুবিধা না পেয়েও এ পর্যায়ে সাফল্য অর্জন করা যায়, তা এককথায় অবিশ্বাস্য। ভারত ও নেপালে নিয়মিত মেয়েদের খেলা হয়, লিগ হয়। আর আমরা তাদের এখন নিয়মিতই হারাই। এখন সাফের বাইরের দলগুলোকেও আমরা হারাতে শুরু করেছি।
এই মেয়েদের প্রচেষ্টা ও সাহস নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। প্রচণ্ড রকম ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে তাঁরা খেলতে নামেন। ভয়হীন ফুটবল খেলেন। সব থেকে বড় কথা, খেলার যেকোনো ধরনের ট্যাকটিকসের সঙ্গেই তাঁরা দ্রুত মানিয়ে নিতে পারেন। আগে আমাদের মেয়েরা কিছুটা রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলতেন। রক্ষণ সামলে প্রতি-আক্রমণে যেতেন। এবার এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে মেয়েরা পুরো খেলার ধরন বদলে ফেলেছেন।
আমাদের মেয়েরা এবার হাই প্রেসিং ফুটবল খেলেছেন। এই দল আগের থেকে দ্রুতগতিসম্পন্ন ফুটবল খেলে। বল পায়ে রাখতে পারে। তাদের বল ডিস্ট্রিবিউশন আগের থেকে অনেক উন্নত হয়েছে। পাসিংও ভালো। পজিশন সেন্স চমৎকার। বিশেষ করে বল হারালে দ্রুত নিজেরা অবস্থান নিতে পারে।
এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে পুরো টুর্নামেন্টজুড়ে হাই লাইন ডিফেন্স করে গেছে দুর্দান্তভাবে। আর বাহরাইনের সঙ্গে শামসুন্নাহার জুনিয়র যেভাবে গতি সঞ্চার করে ডিফেন্স থেকে বেরিয়ে ওয়ান টু ওয়ানে গোলরক্ষককে পরাজিত করলেন ঠান্ডা মাথায়, তা আমাদের পুরুষ দলের স্ট্রাইকার বা উইঙ্গাররাও করতে পারেন না। নিয়মিত খেলার মধ্যে না থাকা একটি দলের কাছে এর বেশি আশা করা উচিত নয়। কিন্তু তাঁরা আমাদের সেই আশাকে ছাড়িয়ে গেছেন। তাঁরা পরিস্থিতি বুঝে মাঠে খেলাটা তৈরি করতে পারেন।
মেয়েদের এই লড়াইকে ধরে রাখতে হবে। তাঁদের প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। সিরাত জাহান স্বপ্না বা আঁখি খাতুনের মতো খেলোয়াড়দের আর্থিক অনিশ্চয়তার কারণে ফুটবল থেকে হারিয়ে যেতে দেওয়া যাবে না। মেয়েদের প্রতিযোগিতামূলক লিগ নিয়মিত আয়োজন করতে হবে। এর পাশাপাশি জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে লিগের আয়োজন করতে হবে।
‘সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে এই মেয়েরা আমাদের ফুটবল নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবেন।’