উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের পদত্যাগে খুশি কুয়েট শিক্ষার্থীরা, ২ মাস পর শান্ত ক্যাম্পাস
Published: 24th, April 2025 GMT
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদ এবং উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ শরীফুল আলম পদত্যাগ করায় খুশি শিক্ষার্থীরা। তাদের পদত্যাগে আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় ক্যাম্পাসে বিজয় মিছিল করবেন তারা।
এদিকে উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের পদত্যাগের ঘটনায় প্রায় ২ মাস উত্তাল থাকার পর কুয়েট ক্যাম্পাস এখন পুরোপুরি শান্ত।
কুয়েটর শিক্ষার্থী মোহন ও রাহাত বলেন, ভবিষ্যতে এই ২ পদে যাদেরকে নিয়োগ দেওয়া হবে তারা যেন শিক্ষার্থীবান্ধব হন। ক্যাম্পাসকে তারা যেন ছাত্র রাজনীতি মুক্ত রাখেন।
কুয়েটের ছাত্র কল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড.
এ দিকে অপসারণের সিদ্ধান্তকে পক্ষপাতমূলক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন অপসারিত উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ শরীফুল আলম। তিনি বলেন, ‘গত ৪ ডিসেম্বর যোগদানের পর থেকে উপাচার্য আমাকে কোনো প্রশাসনিক ও আর্থিক কাজে সহযোগিতা করেননি। উপরন্তু বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট কর্তৃক উপ-উপাচার্যের সীমিত আকারে প্রশাসনিক ও আর্থিক কাজ করার যে নীতিমালা ছিল তা গত ১১ জানুয়ারি সিন্ডিকেট সভার মাধ্যমে বাতিল করা হয়। ফলশ্রুতিতে গত ৪ মাসে প্রশাসনিক কার্যাদি এবং আর্থিক বিলে স্বাক্ষর করতে না দিয়ে আমাকে বঞ্চিত করা হয়েছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য পদটি একটি অলংকারিক পদে পরিণত করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বাস্তবতা হলো আমি নিজে এখনও আমার অপরাধ সম্পর্কে জানি না এবং আমাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগও দেওয়া হয়নি, যা খুবই দুঃখজনক ও অনভিপ্রেত।’
এ দিকে গত বুধবার কুয়েট শিক্ষক সমিতি সংবাদ সম্মেলন করে চাপের মুখে উপাচার্যকে অপসারণ করা হলে তা মেনে না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল। উপাচার্যকে অপসারণ করার পর সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আজ দুপুর ১২টায় প্রশাসনিক ভবনের সম্মেলন কক্ষে সভার আয়োজন করে শিক্ষক সমিতি।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. সাহিদুল ইসলাম বলেন, সভা শেষে তারা তাদের মতামত তুলে ধরবেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক য় ট উপ চ র য পদত য গ উপ উপ চ র য পদত য গ অপস র
এছাড়াও পড়ুন:
চিনি-লবণের অনুপম পাঠ
চিনি আর লবণ– দুটিই সাদা ও ঝকঝকে। বাহ্যিক দৃষ্টিতে এক হলেও তাদের স্বাদ সম্পূর্ণ ভিন্ন। এই সরল অথচ গভীর সত্যটি আমাদের চারপাশের সমাজের প্রতিচ্ছবি। আজ যখন মানুষ শুভাকাঙ্ক্ষীর মুখোশ পরে এগিয়ে আসে, আমরা বুঝতে পারি না– কে চিনি, কে লবণ। এই বিভ্রমের মধ্য দিয়েই প্রবাহিত হচ্ছে বিশ্বাস ও অবিশ্বাসের চিরন্তন দ্বন্দ্ব। তার ফলে সমাজে জন্ম নিচ্ছে ভাঙন, ক্ষয় ও ব্যথার করুণ কাব্য।
শুভাকাঙ্ক্ষী সেজে প্রতারণার ছায়া আজ সমাজের অলিগলিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কখনও বন্ধুত্বের আবরণে, কখনও আত্মীয়তার মোড়কে, আবার কখনও নির্ভরতার চাদরে ঢাকা পড়ে থাকা বিশ্বাসঘাতকতা আমাদের বারবার আহত করে। রাজনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষাঙ্গন বা পারিবারিক জীবন– বিশ্বাসের অবক্ষয়ের নির্মম চিত্র আজ সর্বত্র বিদ্যমান। সবচেয়ে আপন বলে যার হাত ধরেছি, সেই হাত কখন যে ছুরি হয়ে ফিরে আসে– বলা দুষ্কর।
সম্প্রতি রাজধানীর উপকণ্ঠে ঘটে যাওয়া এক ঘটনা আমাদের ব্যথিত করেছে। বৃদ্ধ মা তাঁর তিন সন্তানকে অকুণ্ঠ বিশ্বাস করে সব সম্পত্তি লিখে দেন। সন্তানরা কথা দিয়েছিল– শেষ দিন পর্যন্ত মায়ের পাশে থাকবে। কিন্তু দলিলের কালি শুকানোর আগেই মাকে উঠিয়ে দেওয়া হয় বৃদ্ধাশ্রমে। মায়ের চোখের জল তখন ছিল মূল্যহীন; সম্পদের নেশাই ছিল মূল।
অন্যদিকে দীর্ঘদিনের ‘বিশ্বস্ত’ বন্ধু ব্যবসার আড়ালে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে অদৃশ্য হয়েছে রাতের অন্ধকারে। এসব গল্প আজ প্রতিটি নগর-পল্লীর অলিগলিতে ছড়িয়ে পড়েছে। সম্পর্কের পবিত্রতা আজ যেন লোভ ও মুনাফার কাছে নতজানু।
বিশ্বাসভঙ্গের যন্ত্রণা কোনো দাগের মতো নয়, যা সময়ের সঙ্গে মুছে যায়। বরং এটি মনে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে। একজনের আঘাত শুধু তার নিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না; ছড়িয়ে পড়ে সমাজজুড়ে। গড়ে ওঠে এক অবিশ্বাসের দেয়াল, যেখানে একে অপরকে সন্দেহের চোখে দেখা হয়। সম্পর্কের উষ্ণতা ক্রমে ঠান্ডা হতে হতে বরফে পরিণত হয়, যা গলাতে লাগে যুগের পর যুগ।
ভোগবাদী সভ্যতা মানুষকে করে তুলেছে আত্মকেন্দ্রিক। মূল্যবোধের অবক্ষয়, নৈতিকতার সংকট এবং তাৎক্ষণিক লাভের মোহে সম্পর্কও আজ মুনাফার মাপে মাপা হয়। বন্ধুত্ব, আত্মীয়তা, প্রেম– সবকিছু যেন পরিণত হয়েছে একেকটি চুক্তিতে। ‘কে কতটা কাজে লাগবে’– এই প্রশ্নই আজ সম্পর্কের মানদণ্ড। তবে সব আলো নিভে যায়নি। অন্ধকার যত গভীর হোক, এক টুকরো মোমবাতি গোটা ঘর আলোকিত করতে পারে। এই সংকটময় সময়ে আমাদের প্রয়োজন আত্মসমালোচনা ও মূল্যবোধের পুনর্জাগরণ। ব্যক্তিগতভাবে সতর্ক হতে হবে। কাউকে অন্ধভাবে বিশ্বাস না করে, যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আবেগের তাড়নায় নয়, বিবেকের আলোয় বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। পারিবারিক শিক্ষাকে মজবুত করতে হবে। শিশুর মনে শৈশব থেকেই সততা, বিশ্বস্ততা ও মানবিকতার বীজ বপন করতে হবে। পরিবারই হচ্ছে ব্যক্তিত্ব গঠনের মূল কেন্দ্র। তা ছাড়া রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। প্রতারণা ও বিশ্বাসভঙ্গের ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে, যাতে সমাজে ন্যায়বোধ প্রতিষ্ঠা পায়। পাশাপাশি গণমাধ্যম ও সামাজিক সংগঠনগুলোকে নৈতিক চেতনা জাগিয়ে তোলার ক্ষেত্রে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে হবে। তবু এই অন্ধকারে কিছু আলোকবর্তিকা রয়েছেন, যারা এখনও বিশ্বাসের মানদণ্ডে অবিচল। যাদের জীবন শুধু নিজের জন্য নয়, অপরের কল্যাণে নিবেদিত। সংকটে পাশে দাঁড়ানো, নিঃস্বার্থ ভালোবাসা বিলানো– এটাই তাদের ধর্ম। এরা প্রমাণ করে– বিশ্বাস এখনও বিলুপ্ত হয়নি পুরোপুরি। শুধু খুঁজে নিতে জানতে হবে।
পরিশেষে, চিনি ও লবণের বাহ্যিক সাদার ভ্রম নয়, আসল স্বাদ বোঝার সক্ষমতা অর্জন করাই আজ সময়ের দাবি। মানুষকে তার কার্যকলাপের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করতে হবে; বাহ্যিক মোহের ফাঁদে পা না দিয়ে। অন্ধবিশ্বাস নয়– সচেতন, বিবেকবান বিশ্বাসের ওপর দাঁড়িয়ে গড়ে তুলতে হবে সম্পর্কের ভিত।
মুহাম্মদ ইমাদুল হক প্রিন্স: ডেপুটি রেজিস্ট্রার, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়