স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার বাবা মো. বিল্লাল হোসেনের ঠিকাদারি লাইসেন্স অবশেষে বাতিল করা হয়েছে। 

বৃহস্পতিবার সকালে বিল্লাল হোসেনের আবেদনের প্রেক্ষিতে কুমিল্লার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সীমিত দরপত্র পদ্ধতিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়া ওই লাইসেন্সটি তাৎক্ষনিকভাবে বাতিল করে। 

সমকালকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবদুল মতিন। তিনি বলেন, ‘গত ১৬ মার্চ তার কার্যালয় থেকে মেসার্স ইসরাত এন্টারপ্রাইজ নামে লাইসেন্সটি ইস্যু করা হয়। তবে এখনও এ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে জেলার কোনো এলজিইডির কার্যালয়ে দরপত্রে অংশ নেওয়া হয়নি।’ 

প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবদুল মতিন বলেন, ‘সব বিধি মেনেই তিনি (বিল্লাল হোসেন) ঠিকাদারি লাইসেন্স পেয়েছিলেন। আজ বাতিলের আবেদন করায় বিধি মোতাবেক লাইসেন্সটি বাতিল করে কার্যালয়ে সংরক্ষণ করা হয়েছে।’

সমকালের হাতে আসা ওই লাইসেন্সটিতে দেখা যায়, ট্রেড লাইসেন্স, আয়কর সনদ, ভ্যাট রেজি.

সহ যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর গত ১০ মার্চ এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলীর অনুমোদনের প্রেক্ষিতে কুমিল্লার জেলার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে মেসার্স ইসরাত এন্টারপ্রাইজ (ওই লাইসেন্স) অনুমোদন লাভ করে। গত ১৬ মার্চ ৫ হাজার ৯০০ টাকার ব্যাংক চালান দেওয়ার পরই ওই দিন নির্বাহী প্রকৌশলী লাইসেন্সে স্বাক্ষর করেন। এতে ঠিকানা দেওয়া হয়েছে মুরাদনগর উপজেলার আকবপুর গ্রাম। এর মেয়াদ উল্লেখ আছে চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত। মো. বিল্লাল হোসেন স্থানীয় আকবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে কর্মরত আছেন। আর দুই বছর পর তার চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার কথা। 

এর আগে গত বুধবার (২৩ এপ্রিল) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার অনুসন্ধানী সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী জুলকারনাইন সায়ের নিজের ভেরিফায়েড আইডিতে এক পোস্টে ওই লাইসেন্সের একটি ছবি সংযুক্ত করে পোস্ট দেন। এরই মধ্যে ফেসবুকসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিষয়টি ভাইরাল হয়ে পড়লে এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠে। 

এদিকে আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টার পর নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে বাবার ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়ে পোস্ট দিয়েছেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিনি লিখেছেন ‘আমার বাবা একজন স্কুলশিক্ষক। আকুবপুর ইয়াকুব আলী ভুঁইয়া পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। স্থানীয় একজন ঠিকাদার কাজ পাওয়ার সুবিধার্থে বাবার পরিচয় ব্যবহার করার জন্য বাবাকে লাইসেন্স করার পরামর্শ দেন। বাবাও তার কথায় জেলা নির্বাহী ইঞ্জিনিয়ার থেকে একটি ঠিকাদারি লাইসেন্স করেন। রাষ্ট্রের যে কোনো ব্যক্তি ব্যবসা করার উদ্দেশ্যে যেকোনো লাইসেন্স করতেই পারে। তবে আমি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বরত থাকা অবস্থায় বাবার ঠিকাদারি ব্যবসায় জড়ানো স্পষ্টভাবেই কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট। বিষয়টি বোঝানোর পর আজ বাবার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে লাইসেন্সটি বাতিল করা হয়েছে। উল্লেখ্য, মধ্যবর্তী সময়ে উক্ত লাইসেন্স ব্যবহার করে কোন কাজের জন্য আবেদন করা হয়নি।’

ঠিকাদারি লাইসেন্স নেওয়ার বিষয়ে বুধবার দুপুরে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার বাবা বিল্লাল হোসেন সমকালকে বলেন, দেশে এর আগেও সব মন্ত্রী এমপির স্বজনরাও তো ঠিকাদারি লাইসেন্স করে কাজ করেছে। তবে ছেলেকে (আসিফ) না জানিয়ে লাইসেন্স করাটা ভুল হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে এমন সমালোচনা হবে চিন্তা করিনি। এ নিয়ে আমি সত্যি বিব্রত। আজ সকালে ঢাকার বাসায় এলজিইডির লোকজন এসেছিলেন, আমি লাইসেন্সটি বাতিলের আবেদনে সাইন (স্বাক্ষর) করে দিয়েছি। এরই মধ্যে লাইসেন্সটি বাতিল করা হয়েছে বলেও জানতে পেরেছি। এ নিয়ে আর কোনো বিতর্ক থাকার কথা নয়।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উপদ ষ ট ব ত ল কর উপদ ষ ট ব ষয়ট

এছাড়াও পড়ুন:

করোনা বাড়ায় এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে বিকল্প চিন্তা

উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষা আগামী ২৬ জুন শুরু হচ্ছে। ১১টি শিক্ষা বোর্ড এরই মধ্যে প্রস্তুতি শেষ করেছে। প্রশ্ন ও উত্তরপত্র উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছেছে। কিন্তু মহামারি করোনা সংক্রমণ বাড়ায় পরীক্ষা শুরুর সময় নিয়ে বিকল্প চিন্তা করছে শিক্ষা বোর্ড। এর সঙ্গে ডেঙ্গু পরিস্থিতিকেও আমলে নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ভাবছে সংশ্লিষ্টরা।

গত কিছুদিন ধরে আবারো করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) তথ্যমতে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৩ জুন পর্যন্ত সারা দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২৬০ জন। তাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে তিন জনের। অন্যদিকে একই সময়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, সারা দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৫ হাজার ৫৭০; মারা গেছেন ২৮ জন।

শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো করোনাবিষয়ক সর্বশেষ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩৯ জনকে পরীক্ষা করে ৭ জনের শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে। এ নিয়ে মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৫১ হাজার ৮০৭ জন।

গত কয়েক দিনে ডেঙ্গুর পাশাপাশি করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সূত্র জানায়, পরীক্ষার যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি এমন থাকলেও পরীক্ষা যথানিয়মে ও নির্ধারিত সময়ে শুরু করা হবে। সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ জন্য অনানুষ্ঠানিকভাবে একাধিক বিকল্পও ভেবে রাখা হচ্ছে।

২৬ জুন সারা দেশের ৯ হাজার ৩১৪ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১২ লাখ ৫১ হাজার ১১১ জন উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমান পরীক্ষায় বসতে যাচ্ছে। পরীক্ষা হবে ২ হাজার ৭৯৭ কেন্দ্রে। তত্ত্বীয় পরীক্ষা শেষ হবে ১০ আগস্ট। এরপর ব্যবহারিক পরীক্ষা ১১ থেকে ২১ আগস্ট পর্যন্ত চলবে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক সভায় দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকরা জানিয়েছেন, করোনা ও ডেঙ্গু সংক্রমণ নিয়ে শঙ্কা থাকলেও তারা নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষা শুরু করবেন। উচ্চ মাধ্যমিকে বিষয় বেশি থাকায় পরীক্ষা নিতে সময় লাগে। নির্ধারিত সূচির বাইরে গিয়ে পরীক্ষার ক্ষেত্রে আপাতত কোনো বিকল্প হাতে নেই। এ জন্য পরীক্ষা শুরু করার পর অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

তবে এখনই অটোপাস সংক্রান্ত কিছু কোনোভাবেই ভাবছে না পরীক্ষাসংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, অভিভাবকরাও অটোপাসের বিষয়ে আগ্রহী নয়। আর, করোনা সংক্রমণ ক্রমবর্ধমান হলেও পরীক্ষা সম্পন্ন করার বিষয়েই ভাবছেন সংশ্লিষ্টরা।

২০২০ সালের মার্চে দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের পর ১৮ মার্চ থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চলমান ছুটি দফায় দফায় বাড়ানো হয়। করোনার কারণে স্কুল-কলেজ খুলতে না পারায় ২০২০ সালে জেএসসি, এসএসসি এবং এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অটোপাস দেওয়া হয়। জেএসসির ২৫ শতাংশ ও এসএসসির ৭৫ শতাংশ ফলের ভিত্তিতে এইচএসসি অটোপাসের ফল প্রকাশ করা হয়। তবে এ ফল প্রকাশে মান বণ্টন, আইন সংশোধনসহ অনেক সিদ্ধান্ত নিতে হয় সরকারকে।

আন্তঃশিক্ষা বোর্ড পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কমিটির সভাপতি এবং ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দার বলেন, “এটি সত্যি, ডেঙ্গু এবং করোনা নিয়ে আমরা দুশ্চিন্তায় রয়েছি। অভিভাবকরাও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে নানা শঙ্কার কথা জানাচ্ছেন। তবে আমাদের হাতে পরীক্ষা শুরু করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।”

অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু বলেন, “আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গু ও করোনার ঝুঁকি মোকাবিলার জন্য পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেই। এই অবস্থায় রবিবার থেকে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় খুলছে। তাই শঙ্কা বাড়ছে। তবে আমরা আশা করি, সরকার সকল বিষয় আমলে নিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে।”

ঢাকা/হাসান/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ