হাসপাতালের আঙিনায় পাওয়া গেল ‘প্রিম্যাচিউর’ নবজাতকের লাশ
Published: 24th, April 2025 GMT
কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আঙিনা থেকে একটি নবজাতকের রক্তমাখা মরদেহ পাওয়া গেছে। পুলিশ বলছে, নবজাতকটি ‘প্রিম্যাচিউর’। ধারণা করা হচ্ছে, হাসপাতালে কর্মরত কোনো নার্স বা কারও মাধ্যমে কেউ গর্ভপাত করে নবজাতকটিকে হাসপাতালের বারান্দার গ্রিল দিয়ে নিচে ফেলে দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে হাসপাতালের প্রহরী মজিবুর রহমান হাসপাতালের দেয়াল ঘেঁষে নবজাতকটিকে পড়ে থাকতে দেখে কর্তৃপক্ষকে জানান। খবর পেয়ে চান্দিনা থানা-পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে মরদেহ মাটিতে পুঁতে দেওয়ার পরামর্শ দেন। এ ঘটনায় থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন চান্দিনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.
ওসি জাবেদ উল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সকালে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। ধারণা করা হচ্ছে, ‘প্রিম্যাচিউর’ অবস্থায় নবজাতকটি গর্ভপাত করা। এ জন্য মরদেহ থানায় আনা হয়নি। এ ঘটনায় থানায় জিডি করা হয়েছে। হাসপাতালের সিসিটিভি ক্যামেরা নষ্ট থাকায় কে বা কারা নবজাতকটিকে ফেলেছে, নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রত্যক্ষদর্শী মজিবুর রহমান জানান, তিনি রাতে হাসপাতাল পাহারা দেন। সকালে ডিউটি শেষে বারান্দা দিয়ে বের হওয়ার সময় গ্রিলের ফাঁক দিয়ে রক্তমাখা নবজাতকের মরদেহ দেখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানান। পরে তিনি বাসায় চলে যান। হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতাকর্মী পূর্ণিমা বলেন, ‘আরএমও (আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা) স্যার আমাকে নির্দেশ দিলে আমি নবজাতকটিকে একটি কার্টনে ভরে নিয়ে আসি।’
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা বিষয়টি পুলিশকে জানালে তারা হাসপাতালে এসে সবকিছুর খোঁজখবর নেয়। শিশুটি মাতৃগর্ভে অনুমান ৩০ সপ্তাহ পূর্ণ হলেও ভূমিষ্ঠ হওয়ার পূর্ণতা পায়নি। তাই পুলিশ সদ্যোজাত শিশুটির মরদেহ থানায় না নিয়ে আমাদের মাটিচাপা দেওয়ার পরামর্শ দিলে দুপুরে আমরা হাসপাতালের বাগানে মাটিচাপা দিয়েছি।’
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আরিফুর রহমান বলেন, ঘটনার পর তিনি খোঁজ নিয়ে দেখেছেন, এ ধরনের কোনো রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়নি। ধারণা করা যাচ্ছে, বাইরের কোনো ঘটনার পর হাসপাতালের আঙিনায় প্রিম্যাচিউর নবজাতকটি কেউ ফেলে গেছেন। তবে তাঁরা ঘটনাটি তদন্ত করে দেখছেন। হাসপাতালের কেউ জড়িত থাকলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন
টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।
এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।
গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।
প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।