দেশের আবহাওয়া বৈরী অঞ্চল চুয়াডাঙ্গা জেলার উপর দিয়ে আজও মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ ও ভ্যাপসা গরমে জনজীবনে নেমে এসেছে দূর্বিষহ পরিস্থিতি। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না। মানুষের পাশাপাশি এই তাপদাহে কষ্টে প্রাণীকুল। পুড়ছে ফসলের মাঠ। 

শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) জেলার ১ম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সকাল ৯টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে ৩১ দশমিক ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর পর বেলা ১২ টা ও বেলা ৩টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হবে। এছাড়া গত ২৩ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৩৯.

৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ২৪ এপ্রিল ৩৭.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। 

আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের সিনিয়র পর্যবেক্ষক রকিবুল হাসান জানান, আজ (শুক্রবার) সকাল ৬টায় দিনের শুরুতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩১ দশমিক ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। 

তিনি বলেন, “ভৌগোলিক দিক থেকে চুয়াডাঙ্গা উষ্ণ অঞ্চল। এখানে গরমের সময় যেমন গরম বেশি ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়, তেমনি শীতের সময় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।”  

কৃষিবিদদের মন্তব্য, তাপে চিটা হতে পারে নাবী বোরো ধানে। এছাড়া অন্যান্য ফসল এবং আম ও লিচুর ক্ষতি হতে পারে। এসময় ফসলের জমিতে ঘন ঘন সেচ দেওয়া ও আম লিচুর গাছে পানি স্প্রের পরামর্শ দিচ্ছেন। হাসপাতালে বেড়েছে গরমজনিত ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। চিকিৎসক এই তাপপ্রবাহে বাসিপচা খাবার ও পানীয়জল গ্রহণে সাবধানতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন। 

ঢাকা/মামুন/টিপু

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র কর ড কর স লস য় স

এছাড়াও পড়ুন:

পরাবাস্তবতার আবেদন কি ফুরিয়েছে

অবচেতনের মানচিত্র ধরে এক অন্তহীন অভিযাত্রা কবি–সাহিত্যিকেরা যুগ যুগ ধরে করে আসছেন। সাহিত্যের দীর্ঘ যাত্রাপথে এমন কিছু বাঁক আসে, যা তার গতিপথকে চিরতরে বদলে দেয়। পরাবাস্তবতা বা সুররিয়ালিজম ছিল এমনই এক যুগান্তকারী আন্দোলন, যা কেবল শিল্পের আঙ্গিক নয়; বরং শিল্পীর বিশ্ববীক্ষা এবং আত্মবীক্ষণকে সম্পূর্ণ নতুন এক দর্শন দান করেছিল। এটি ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ। এর মূল লক্ষ্য ছিল মানব মনের সেই গভীরে প্রবেশ করা, যেখানে যুক্তির আলো পৌঁছায় না; সেই অবচেতনের অন্ধকার মহাসাগর থেকে তুলে আনা বিস্মৃত স্বপ্ন, অবদমিত ইচ্ছা আর আদিম প্রবৃত্তির মণি–মুক্তা। পরাবাস্তবতা তাই কেবল একটি শিল্পরীতি নয়, এটি চেতনার শৃঙ্খলমুক্তির এক দুঃসাহসী ইশতেহার।

১৯২৪ সালে ফরাসি কবি ও লেখক আঁদ্রে ব্রেটন তাঁর ‘পরাবাস্তবতার প্রথম ইশতেহার’ (ম্যানিফেস্টো অব সুররিয়ালিজম) প্রকাশের মাধ্যমে এই আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন। ব্রেটনের সংজ্ঞায়, পরাবাস্তবতা হলো, ‘বিশুদ্ধ মানসিক স্বয়ংক্রিয়তা, যার মাধ্যমে মুখ বা লেখনী দিয়ে অথবা অন্য যেকোনো উপায়ে চিন্তার আসল কার্যকারিতাকে প্রকাশ করার ইচ্ছা পোষণ করা হয়। এটি যুক্তির সমস্ত নিয়ন্ত্রণ থেকে এবং সকল প্রকার নান্দনিক ও নৈতিক উদ্দেশ্য থেকে বিযুক্ত চিন্তার এক শ্রুতলিখন।’

এই দর্শনের প্রধান পাথেয় ছিল ভিয়েনার মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েডের যুগান্তকারী মনঃসমীক্ষণ তত্ত্ব। ফ্রয়েড দেখিয়েছিলেন যে মানুষের সচেতন মনের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক বিশাল অবচেতন জগৎ, যা তার আচরণ, স্বপ্ন ও ব্যক্তিত্বকে নিয়ন্ত্রণ করে। পরাবাস্তববাদীরা ফ্রয়েডের এই তত্ত্বকে লুফে নিয়েছিলেন। তাঁদের কাছে শিল্পসৃষ্টির উদ্দেশ্যই ছিল যুক্তির সেন্সরশিপকে ফাঁকি দিয়ে অবচেতন মনের এই লুকানো জগৎকে উন্মোচিত করা। তাঁরা চেয়েছিলেন, স্বপ্ন ও বাস্তবতাকে একীভূত করে এক ‘পরম বাস্তবতা’ বা ‘সুররিয়ালিটি’ তৈরি করতে।

পরাবাস্তবতা ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ।

পরাবাস্তবতার পদযাত্রা প্যারিসের শৈল্পিক পরিমণ্ডল থেকে শুরু হলেও এর ঢেউ খুব দ্রুতই বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। আঁদ্রে ব্রেটন ছিলেন এই আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা, কিন্তু তাঁর ছত্রচ্ছায়ায় সমবেত হয়েছিলেন বহু প্রতিভাবান স্রষ্টা, যাঁরা নিজ নিজ ভাষায় ও সংস্কৃতিতে পরাবাস্তবতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন।

আঁদ্রে ব্রেটন (জন্ম: ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৬—মৃত্যু: ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৬৬)

সম্পর্কিত নিবন্ধ