ট্রাম্পের শুল্কের প্রভাব নিয়ে সতর্ক করছেন বড় মার্কিন কোম্পানির শীর্ষ নির্বাহীরা
Published: 25th, April 2025 GMT
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের প্রভাবে পণ্যের দাম বাড়বে। এতে কোম্পানির মুনাফা কমে যাবে। তার প্রভাবে অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। শুধু তা–ই নয়, মন্দা বৃদ্ধির শঙ্কাও তৈরি হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সুপরিচিত কোম্পানির নির্বাহীরা এভাবেই নিজেদের কোম্পানি ও বৃহত্তর অর্থনীতিতে পাল্টা শুল্কের প্রভাব সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। প্রযুক্তি কোম্পানি ইন্টেল, জুতার ব্র্যান্ড স্কেচার্স, ভোগ্যপণ্য বিক্রেতা প্রক্টর অ্যান্ড গ্যাম্বল (পিঅ্যান্ডজি) ইতিমধ্যে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে তাদের মুনাফার পূর্বাভাস কমিয়ে দিয়েছে। তার প্রভাবে কোন কোন কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে।
বাণিজ্য–ঘাটতি কমাতে যুক্তরাষ্ট্রের যেসব দেশ থেকে পণ্য আমদানি করে সেসব দেশের ওপর ২ এপ্রিল ন্যূনতম ১০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক বা রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ আরোপ করেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ৫৭ দেশের ওপর বিভিন্ন হারে বাড়তি পাল্টা শুল্ক বসানো হয়। ৯ এপ্রিল পাল্টা শুল্ক কার্যকরের দিন অনেকটা ‘ইউটার্ন’ করে তা তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন প্রেসিডেন্ট। যদিও সব দেশের ওপর ন্যূনতম ১০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কার্যকর করা হয়।
উচ্চ হারে পাল্টা শুল্ক আরোপের মাধ্যমে মূল বাণিজ্য অংশীদার দেশগুলোকে আলোচনার টেবিলে আনতে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের চেষ্টা করছেন। যদিও বাণিজ্য–ঘাটতি কমাতে এখন পর্যন্ত কোনো দেশের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির পর্যায়ে যেতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র। যদিও দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে দেশটির বাণিজ্য চুক্তির আলোচনায় অগ্রগতির লক্ষণ দেখা গেছে।
বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে এক আলোচনায় ইন্টেলের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা (সিএফও) ডেভিড জিনসনার বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও তার বাইরে নমনীয় বাণিজ্যনীতি ও নিয়ন্ত্রণের ঝুঁকি অর্থনীতিতে শ্লথগতি এবং মন্দা বৃদ্ধির সম্ভাবনা তৈরি করেছে।
ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক কোম্পানি ইন্টেল ইতিমধ্যে হতাশাজনক মুনাফা ও রাজস্ব পূর্বাভাস ঘোষণা করেছে। প্রতিষ্ঠানটির সিএফও ডেভিড জিনসনার বলেন, ‘আমরা অবশ্যই খরচ বৃদ্ধি দেখতে পাব।’ তাঁর এই মন্তব্যের পর ইন্টেলের শেয়ারের দাম ৫ শতাংশের বেশি কমেছে।
শুধু প্রযুক্তি কোম্পানি নয়, জুতার ব্র্যান্ড স্কেচার্সও বিনিয়োগকারীদের হতাশাজনক তথ্য দিয়েছে। তারা তাদের বার্ষিক মুনাফা ও রাজস্বের পূর্বাভাস প্রত্যাহার করেছে। এতে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম কমেছে।
স্কেচার্সের প্রধান পরিচালক কর্মকর্তা (সিইও) ডেভিড ওয়েনবার্গ বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতি খুব দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে যুক্তিসংগত ব্যবসায়িক সাফল্যের পরিকল্পনা করা সম্ভব নয়।’ প্রতিদ্বন্দ্বী জুতার ব্র্যান্ড নাইকি, অ্যাডিডাস ও পুমার মতো স্কেচার্স এশিয়ার কারখানায়, বিশেষ করে চীনে তাদের পণ্য তৈরি করে।
প্রক্টর অ্যান্ড গ্যাম্বলের (পিঅ্যান্ডজি), এরিয়েল, হেড অ্যান্ড শোল্ডার্স ও জিলেটের মতো সুপরিচিত কোম্পানি জানিয়েছে, চীনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আনা উপকরণের অতিরিক্ত খরচ মেটাতে তারা দাম পরিবর্তন বা বৃদ্ধির কথা ভাবছে। তারা আরও বলছে, এই বছর তাদের পণ্যের বিক্রি পূর্বাভাসের চেয়ে কম পরিমাণে বাড়বে।
পাল্টা শুল্কের প্রভাব কমানোর জন্য প্রতিটি সুযোগ খোঁজার কথা বললেও পিঅ্যান্ডজির আর্থিক প্রধান আন্দ্রে শুল্টেন বলেন, কিছু পণ্যের ভোক্তা বা খুচরা মূল্যনির্ধারণে সমন্বয় করা হবে; অর্থাৎ দাম বাড়বে।
এদিকে গতকাল ওয়াশিংটন ডিসিতে যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার বাণিজ্য কর্মকর্তাদের মধ্যে শুল্ক কমানোর আলোচনা ইতিবাচক হয়েছে। মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেন, উভয় পক্ষের বৈঠক ‘খুব সফল’ হয়েছে।
বৈঠকের পর সাংবাদিকদের স্কট বেসেন্ট বলেন, ‘আমরা হয়তো আমার ধারণার চেয়ে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছি। আগামী সপ্তাহের প্রথম দিকে আমরা প্রযুক্তিগত শর্তাবলি নিয়ে কথা বলব।’ অন্যদিকে দক্ষিণ কোরিয়ার শিল্পমন্ত্রী আহন ডুক-গিউনও আশাবাদের জানিয়ে বলেন, তাঁরা ‘জুলাই প্যাকেজ’ ঘোষণা কাজ করছেন।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের ওপর ৯০ দিনের স্থগিতাদেশ আগামী ৪ জুলাই শেষ হবে। ট্রাম্প বলেছেন, শুল্ক ঘোষণার পর থেকে ৭০টির বেশি দেশ আলোচনা শুরু করার জন্য যোগাযোগ করেছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
দাদন ফাঁসে ‘দাসের’ জীবনে শ্রমিক
২০ বছর ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের চাতালে কাজ করেন ছোবহান মিয়া। এখন আছেন উপজেলার আলমনগরের ছিদ্দিক অটো রাইস মিলে। ওই চাতালে যোগ দেওয়ার সময় মালিকের কাছে দাদন হিসেবে টাকা নেন। এখন এই পরিমাণ দুই লাখ টাকার ওপর। এই টাকার জন্য স্ত্রী খায়রুন বেগমকেও (৩৫) খাটতে হয় ছোবহানের সঙ্গে।
ছিদ্দিক অটো রাইস মিলে ২০ বছর খেটেও দাদনের টাকা শোধ হয়নি ছোবহানের (৪৭)। আগে এখানেই কাজ করতেন তাঁর বাবা হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার শিবপুর গ্রামের আফসর মিয়া। তিনি মারা গেছেন কয়েক বছর আগে। বছর দুয়েক আগে ছোবহানের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন মা জাহানারা বেগমও। মা, তিন সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে ছিদ্দিক অটো রাইস মিলের পাশে গড়ে তোলা খুপরি ঘরেই থাকেন ছোবহান। মায়ের নামেও নেওয়া হয়েছে দাদন।
ছোবহানের মতো জীবনের গল্প আশুগঞ্জের দেড়শ চাতালে কর্মরত আট হাজারের বেশি শ্রমিকের। তাদের এক-তৃতীয়াংশই পুরুষ। যাদের নেই কোনো সরকারি-বেসরকারি মজুরি কাঠামো। প্রতি বাংলা বছরের শুরুতে তারা চাতাল মালিকের কাছে থেকে ‘দাদন’ নিয়ে কাজ করেন। তবে কাজ না করলে মজুরি মেলে না তাদের।
শ্রমিকরা জানান, প্রতি চাতালে গড়ে ৪০-৫০ জন নারী-পুরুষ শ্রমিক সপরিবারে কাজ করেন। পুরুষরা সপরিবারে কাজের কথা বলেই দাদন নেন। ধানের মাঠ বা বস্তা হিসেবে নির্ধারিত হয় তাদের মজুরি। সাধারণত একটি চাতালে ৬০০-৭০০ মণ ধান শুকানো যায়। মাঠ হিসেবে মজুরির জন্য শ্রমিকদের ভেজা ধান গাড়ি থেকে নামানো, সেদ্ধ করা, শুকানো, চাল তৈরির পর গাড়িতে উঠানো পর্যন্ত দায়িত্ব নিতে হয়। সাধারণত আবহাওয়া ভালো থাকলে এই কাজ সম্পন্ন হতে তিন-চার দিন লেগে যায়। বৃষ্টি থাকলে লেগে যায় ৮-১০ দিন পর্যন্ত। এ কাজ শেষ করা হলে পুরুষ শ্রমিকরা মজুরি হিসাবে ৩০০-৪০০ টাকা ও নারী শ্রমিকরা ৫০-৬০ টাকা পান। এ ছাড়া খোরাকি বাবদ সব শ্রমিককে প্রতি ১০০ মণ ধানে দেওয়া হয় ২৫ কেজি চাল।
বস্তা হিসেবে মজুরির জন্য সেদ্ধ চালের চাতালে প্রতি বস্তা ধান ও চালে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শ্রমিকরা পান ২৮ টাকা, আতপ চালের চাতালে মেলে ২২ টাকা। শ্রমিকরা জানান, কোনোভাবেই পুরুষ শ্রমিকের তিন-চার দিনের মজুরি ৩০০-৪০০ টাকার বেশি হয় না। দৈনিক গড় মজুরি সীমাবদ্ধ থাকে ১০০-১৫০ টাকায়।
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সর্ববৃহৎ চাল উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে আশুগঞ্জের পরিচিতি রয়েছে। এক সময় এখানে চাতালের সংখ্যা ছিল চার শতাধিক। এসব চাতালে কাজ করতেন ২৫-৩০ হাজার শ্রমিক। ২০১৪-১৫ সালের দিকে এ উপজেলায় অটো ড্রায়ার কারখানা বাড়তে শুরু করে। এসব কারখানার দাপটে চাতাল কমতে কমতে টিকে আছে দেড়শর মতো।
ছিদ্দিক অটো রাইস মিলের অপর শ্রমিক কামালের (৩৮) জন্ম আশুগঞ্জেই। তাঁর বাড়ি কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলার নূরপুরে। চাতাল মালিকের কাছে কামালের দাদন দুই লাখ টাকার বেশি। এখানেই খুপরিতে স্ত্রী জেসমিন ও পাঁচ নাবালক ছেলেকে নিয়ে থাকেন। জেসমিন তাঁর সঙ্গে চাতালে শ্রম দেন। দাদন কীভাবে শোধ করবেন– এমন প্রশ্নের উত্তর ভাগ্যের হাতে সঁপে দেন কামাল। চাতালকেই নিজের ঘরবাড়ির মতো ভাবেন। তাই ঋণ নিয়ে চিন্তাই করবেন না। কামাল বলেন, ‘যেখানেই যাই, কাজ করতেই হবে। আল্লাহর রহমত হলে ও চাতাল মালিকের দয়া হলেই সেই ঋণ কোনোদিন শোধ করা সম্ভব।’
মৌখিক চুক্তিতে নামমাত্র মজুরিতে এই শ্রমিকরা ‘স্বেচ্ছাবন্দি’ হিসেবে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করছেন বছরের পর বছর। কবে এ দশা থেকে মুক্তি মিলবে– তা অজানা তাদের। শ্রমিকরা জানান, যে টাকা আয় হয়, এদিয়ে কোনোমতে সংসার চলে। তাই সঞ্চয় করে দাদন পরিশোধের কোনো টাকাই হাতে থাকে না। চালের উৎপাদন বন্ধ থাকলে মজুরিও পান না। কারও অসুখ-বিসুখ হলে যে টাকার দরকার, তার জন্যও হাত পাততে হয় চাতাল মালিকের কাছে। তখন ‘ভাংতি’ নেওয়া টাকা পরে দাদনের অঙ্কে যোগ হয়। এতে দিনে দিনে তাদের মাথায় বোঝা আরও বাড়তে থাকে। সেই ঋণ শোধ করাও হয় না, মজুরি বাড়ানোর দাবিও তুলতে পারেন না।
ফারুক ‘সর্দারের’ গল্প
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার লক্ষ্মীগঞ্জ গ্রামের মো. মন্নাস মিয়ার ছেলে ফারুক মিয়া (৪৮)। বাবার কোনো জমিজিরাত ছিল না। খুব শৈশবেই এলাকায় শ্রম বিক্রি শুরু করেন। আনুমানিক ১৭ বছর আগে সামসুন্নাহারকে বিয়ে করেন। কিছুদিনের মধ্যেই সংসারের অভাব বেড়ে যায়। এক ভায়রা ভাইয়ের পরামর্শে আশুগঞ্জের এক চাতালে কাজ শুরু করেন। শুরুতে দাদন নেননি। পরে সংসারের প্রয়োজনে প্রথম দফায় ১০ হাজার টাকা নেন। দাদন বাড়তে বাড়তে এখন তাঁর মাথায় তিন লাখ টাকার বোঝা।
আলমনগরের ছিদ্দিক অটো রাইস মিলে ফারুক এখন কর্মরত সর্দার হিসেবে। বিয়ের কয়েক বছর পর স্ত্রীকেও নিয়ে আসেন। তিনিও একই চাতালের কর্মী। ছোট দুই সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে ১৬ ফুট দীর্ঘ ও ১০-১২ ফুট চওড়া খুপরিতে থাকেন ফারুক। বড় দুই ছেলে থাকে একই আকারের অন্য কক্ষে। একই চাতালের কর্মী আরও ১৫টি পরিবার একই চাতালের খুপরিতে থাকে। তাদের ব্যবহারের জন্য শৌচাগারের সংখ্যা মাত্র দুটি। খাবার পানির জন্য আছে দুটি নলকূপ। এই খুপরিতে সংযুক্ত বিদ্যুৎ বিল বহন করেন চাতাল মালিক।
১৫ বছরের মতো এই চাতালে কর্মরত ফারুকের ভাষ্য, দাদন বাড়ার জন্য নিজের সাংসারিক প্রয়োজনের পাশাপাশি দায় রয়েছে পালিয়ে যাওয়া কিছু শ্রমিকেরও। এসব শ্রমিকের দাদনের অঙ্কও তাঁর হিসাবে যোগ হয়েছে।
সর্দারের ওপর কেন পালিয়ে যাওয়া শ্রমিকের দাদন চেপে বসে, সে বিষয়ে কথা হয় ব্যবসায়ী মো. মহিউদ্দিন মোল্লার সঙ্গে। তিনি আগে চাতাল পরিচালনা করতেন। এখন যৌথভাবে পরিচালনা করছেন এগ্রো ফুড নামের ড্রায়ার মিল। মহিউদ্দিন মোল্লা বলেন, চাতালের মালিকরা নিজের প্রয়োজনেই শ্রমিক খোঁজেন। তখন সর্দারের মাধ্যমে কাজে আসেন পুরুষরা। তাদের পরিবারে ৩ থেকে ৪ বা ৪ থেকে ৫ জন সদস্য থাকেন। চুক্তি অনুযায়ী, দাদনের টাকা দেওয়া হয় সর্দারের মাধ্যমে। আগে কোনো লিখিত চুক্তিপত্র হতো না। এখনও জাতীয় পরিচয়পত্র রেখে তা দেখভাল করেন সর্দার। কোনো শ্রমিক পালিয়ে গেলে, দায়ভারও তাঁর ওপর বর্তায়।
জানা গেছে, দাদনের অঙ্কটি সীমাবদ্ধ থাকে মালিক ও সর্দারের মধ্যেই। শ্রমিকের সঙ্গে লিখিত চুক্তি না হলেও সর্দারের সঙ্গে অনেক ক্ষেত্রে লিখিত চুক্তি হয়। কোনো শ্রমিক হাতবদল বা কর্মক্ষেত্র পরিবর্তন করলে যে চাতাল মালিক তাঁকে নেবেন, তিনি ওই শ্রমিকের টাকা দিয়ে দেন। অনেক ক্ষেত্রে আগের চেয়েও বেশি টাকা নেন শ্রমিকরা। এ ঝুঁকির জন্য সর্দাররা দাদনের টাকা থেকেও কমিশন নেন।
চাতাল মিল শ্রমিক ইউনিয়নের উপদেষ্টা আব্বাস সরদার, সভাপতি মো. হরমুজ আলী ও সাধারণ সম্পাদক মো. আল আমিনের কথায় শ্রমিকের অসহায়ত্বের কারণ উঠে আসে। তারা বলেন, অধিকাংশ শ্রমিকের পায়ের নিচে মাটি নেই। অথচ গড়ে প্রতি শ্রমিকের মাথার ওপর দেড়-দুই লাখ টাকা দাদন। মজুরি যে তারা পান, তা দিয়ে সংসারই চলে না। তাই দাদন পরিশোধ করতে পারেন না। এটি দুই পক্ষের জন্যই ক্ষতিকর।
আশুগঞ্জ উপজেলা চাতাল মালিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হেলাল সিকদারও বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি বলেন, দাদন মালিকের জন্যও বোঝা। প্রতি মালিককে দাদনের জন্য বাড়তি বিনিয়োগ করতে হয় ২৫-৩০ লাখ টাকা। এ জন্য ব্যাংকে যেমন সুদ গুনতে হয়, তেমনি শ্রমিক পালিয়ে গেলেও ক্ষতির মুখেও পড়তে হয়। দাদন না নিলে শ্রমিকের মজুরি কিছুটা হলেও বাড়ানো সম্ভব।
আশুগঞ্জ সরকারি শ্রমকল্যাণ কেন্দ্রের জনসংখ্যা পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. নাঈম আহমেদের ভাষ্য, চাতাল শ্রমিকরা চিকিৎসা ও প্রশিক্ষণের জন্য এখানে আসেন। কিন্তু কখনও তারা ঋণ নিয়ে কথা বলেননি।