শ্রমজীবী নারী সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও অবহেলিত
Published: 26th, April 2025 GMT
নারী হওয়ার কারণে মজুরি বৈষম্য, কাজের নিরাপত্তাহীনতার সমস্যাসহ বিশেষভাবে যৌন হয়রানির বিষয়টি যুক্ত হয়।
বাংলাদেশে শ্রমজীবী নারীর অনুপাত দিন দিন বেড়ে চলেছে। এর দুটি বড় কারণের মধ্যে একটি হচ্ছে– একজন ব্যক্তির আয় দিয়ে একটি পরিবার চলবে– এমন অবস্থা বর্তমান সময়ে নেই। এর ফলে ওই পরিবারের নারী সদস্যকে আয়-রোজগারের পথ খুঁজতে হচ্ছে। খুঁজতে গিয়ে এ সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ যারা শ্রমজীবী, তাদের যে কাজের সুযোগ থাকে, পোশাক খাত এর মধ্যে অন্যতম।
গার্মেন্টস প্রাতিষ্ঠানিক খাত। এ ছাড়া অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবেও অনেক ধরনের কাজ রয়েছে। এর মধ্যে মুদি দোকান, মাটি কাটা, গৃহকর্মী থেকে শুরু করে নানা ধরনের কাজ হতে পারে। কোনোটাই স্থায়ী নয়। এগুলোর কোনো নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা ও নিরাপত্তা নেই। কাজ করতে হয় খুব নাজুক ও অনিশ্চিত অবস্থায়। তবুও জীবিকার তাগিদে এসব কাজ নারীকে করতে হয়। দ্বিতীয় কারণ হলো, অনেক পরিবার ভেঙে যায়। স্বামী কোনো দায়িত্ব গ্রহণ করে না। বিয়ে করে ছেড়ে দেয়; চলে যায় কিংবা স্বামী থাকা সত্ত্বেও কোনো দায়িত্ব নেয় না সংসার ও সন্তানের। তখন নারীকে বাধ্য হয়ে কাজে নামতে হয়। আবার আত্মসম্মানবোধ ও পরিচয়ের তাগিদ থেকেও একজন নারী নিজের একটি কর্মজীবন তৈরি করেন।
এসব কারণে আমাদের দেশে নারী শ্রমিকের সংখ্যা অনেক বেশি; যা সরকারি হিসাবে যথাযথভাবে উঠে আসে না। শ্রমিক হিসেবে তাঁর স্বীকৃতিও এখন পর্যন্ত পরিষ্কারভাবে আসে না। না আসার ফলে বাংলাদেশে তাদের আয়-রোজগারের নির্দিষ্টতার কোনো বিধিমালা নেই।
ঈদের আগে গার্মেন্ট শ্রমিকরা তাদের বকেয়া মজুরি পরিশোধের দাবিতে আন্দোলন করেছে। গত কয়েক মাসে বারকয়েক দেখা গেছে, তারা বকেয়া পরিশোধের জন্য রাস্তায় এসেছে। এটি হলো প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সব থেকে সংগঠিত শ্রমিকদের অবস্থান। সেখানে নারীরা তাদের মজুরি বাকি, অসম্মানজনক অবস্থাসহ সব দাবি জানাচ্ছে।
সরকারে পরিবর্তন এলেও, এ ক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকা ও দৃষ্টিভঙ্গির কোনো পরিবর্তন আসেনি। ফলে প্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিকের ক্ষেত্রে এটি একটি বড় সমস্যা। অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিকের ক্ষেত্রে নিরাপত্তাহীনতার জায়গা আরও বেশি। যেদিন কাজ করবেন, সেদিন তাঁর আয় হবে। যদি তাঁর কোনো অসুখ-বিসুখ হয়, সন্তানের দায়িত্ব নেওয়া ও তাঁর কোনো সমস্যা হলে সেদিন কাজে যেতে পারেন না নারী। কাজ না করলে তাঁর সেদিনের আয়ও নেই। আয় না হলে তাঁর প্রাত্যহিক ও আনুষঙ্গিক ব্যয়ের কোনো পথ থাকে না। ফলে শ্রমজীবী নারীরা আমাদের দেশে সংখ্যার দিক থেকে গরিষ্ঠ হলেও তারা সবচেয়ে বেশি অবহেলিত। তাদের কোনো মতামত ও কর্মকাণ্ডের ফলে কোনো আশাব্যঞ্জক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় না। সরকার পরিবর্তনের পরও তেমন কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি। নারীরা আরও বেশি বঞ্চিত ও নিরাপত্তাহীনতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। নারী হওয়ার কারণে মজুরি বৈষম্য, কাজের নিরাপত্তাহীনতার সমস্যাসহ বিশেষভাবে যৌন হয়রানির বিষয়টি যুক্ত হয়। গত বছরখানেকের পত্রিকা ঘেঁটে দেখা যাবে, শ্রমজীবী নারী ধর্ষিত, খুন ও নিগৃহীত হওয়ার খবর ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। সরকারের কাছেও এর সঠিক কোনো হিসাব নাই। যেসব শ্রমজীবী নারী ধর্ষণ ও খুনের শিকার হয়েছেন, তাদের বেশির ভাগ কর্মক্ষেত্রে যাওয়া-আসার পথে কিংবা নিজ বাড়িতে।
এ পরিস্থিতিগুলো মোকাবিলা করে শ্রমজীবী নারী টিকে আছেন। তাদের টিকে থাকার মধ্য দিয়ে পরবর্তী প্রজন্মের অস্তিত্ব টিকে থাকা নির্ভর করে। এটি নারী জীবনের একটা যুদ্ধ; যার মধ্য দিয়ে নারী তাঁর জীবন অতিবাহিত করেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: শ রমজ ব শ রমজ ব সরক র অবস থ সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
স্কিন ব্যাংকে পর্যাপ্ত ত্বক থাকলে ৪০ শতাংশের বেশি দগ্ধ রোগীকেও বাঁচানো যায়
রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তে হতাহত হওয়ার ঘটনার পর দেশের একমাত্র স্কিন ব্যাংকের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে এ ব্যাংকের অবস্থান। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মাইলস্টোনের ঘটনার পর অনেকেই স্কিন (চামড়া বা ত্বক) দান করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করে ইনস্টিটিউটে যোগাযোগ করছেন। স্কিন ব্যাংকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্বক থাকলে ৪০ শতাংশের বেশি পুড়ে যাওয়া রোগীকেও বাঁচানো সম্ভব।
২১ জুলাই দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। গত সোমবার রাত ১০টায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ৩৪ জন মারা গেছে। আর সোমবার বিকেল পর্যন্ত বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি ৪৫ জন। তাদের মধ্যে বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি ৩৩ জন।
দেশে স্কিন ব্যাংকের যাত্রা শুরুর পর দান করা ত্বক ব্যবহার করে ১০ জন দগ্ধ রোগীর চিকিৎসা করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৯ জনই বেঁচে গেছেন। শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা থাকায় একজন মারা গেছেন।জীবিত ব্যক্তির শরীর থেকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় সংগ্রহ করা ত্বক মারাত্মকভাবে দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া যে কেউ চাইলে মরণোত্তর ত্বক দান করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে দাতার মৃত্যুর পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মরদেহ থেকে ত্বক সংগ্রহ করা হয়। পরে সেই ত্বক দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়।
ওজন কমানোসহ কিছু প্লাস্টিক সার্জারির পর বেঁচে যাওয়া ত্বক সংরক্ষণ করার মধ্য দিয়ে দেশের একমাত্র স্কিন ব্যাংকটি যাত্রা শুরু করে। আগে এ ধরনের অস্ত্রোপচারের পর বাড়তি ত্বক ফেলে দেওয়া হতো।
স্কিন ব্যাংকের সমন্বয়কারী ও জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মাহবুব হাসান প্রথম আলোকে বলেন, মাইলস্টোনের ঘটনার পর ত্বকদানের বিষয়ে মানুষের মধ্যে আগ্রহ বেড়েছে; বিশেষত অনেক নারী আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। এখন পর্যন্ত শতাধিক মানুষ এ বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করে যোগাযোগ করেছেন।
তবে সমস্যা হলো, আগ্রহী ব্যক্তিদের বেশির ভাগ চাইছেন, মাইলস্টোনের ঘটনায় দগ্ধ শিক্ষার্থীদের শরীরে যাতে তাঁদের দান করা ত্বক ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এটা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয় যে প্রক্রিয়া শেষে কার দান করা ত্বক কার শরীরে ব্যবহার করা হবে। এ ছাড়া ত্বক দান করার ক্ষেত্রে স্ক্রিনিংসহ পুরো প্রক্রিয়া শুনে অনেকে আর আগ্রহ দেখাননি। এখন পর্যন্ত যাঁরা যোগাযোগ করেছেন, তাঁদের মধ্যে ১৫ থেকে ১৬ জন ত্বক দান করতে চেয়েছেন বলে জানান চিকিৎসক মাহবুব হাসান।
ভবিষ্যতে দগ্ধ রোগীর চিকিৎসায় ত্বক সংরক্ষণ করে রাখতে হয়। ত্বক সংগ্রহের পর বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তরল নাইট্রোজেনে ডুবিয়ে মাইনাস ৯০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়। তাহলে সেই ত্বক পাঁচ বছর পর্যন্ত ভালো থাকে।মাহবুব হাসান, জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক।৩ জুলাই মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত হয় পঞ্চম আন্তর্জাতিক দগ্ধ ও আঘাতপ্রাপ্তদের সম্মেলন। এই সম্মেলনে ‘এস্টাবলিশমেন্ট অব ফার্স্ট স্কিন ব্যাংক ইন বাংলাদেশ: দ্য ওয়ে অব ওভার কামিং দ্য চ্যালেঞ্জেস’ শিরোনামের বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মাহবুব হাসান। প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়, দেশে স্কিন ব্যাংকের যাত্রা শুরুর পর দান করা ত্বক ব্যবহার করে ১০ জন দগ্ধ রোগীর চিকিৎসা করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৯ জনই বেঁচে গেছেন। আর শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা থাকায় একজন মারা গেছেন।
আপাতত রেজিস্ট্রেশন ও স্ক্রিনিংদেশের একমাত্র স্কিন ব্যাংক উদ্বোধন করা হয় গত ৯ জানুয়ারি। তবে গত ২০ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু হয়। ব্যাংকটিতে কারিগরি সহায়তা দিয়েছে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতাল। বর্তমানে এই ব্যাংকে দুজন চিকিৎসক ও একজন নার্স দায়িত্ব পালন করছেন।
স্কিন ব্যাংক যাত্রা শুরুর পর মোট ১৪ হাজার ৫০০ সেন্টিমিটার স্কয়ার ত্বক সংরক্ষণ করা হয়েছিল। মাইলস্টোনের ঘটনার আগপর্যন্ত ৯ হাজার সেন্টিমিটার স্কয়ার ত্বক ব্যাংকে ছিল। মাইলস্টোনের ঘটনায় দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসায় গত রোববার পর্যন্ত এ ব্যাংক থেকে সাড়ে ৩ হাজার সেন্টিমিটার স্কয়ার ত্বক ব্যবহার করা হয়েছে।
স্কিন ব্যাংক যাত্রা শুরুর পর মোট ১৪ হাজার ৫০০ সেন্টিমিটার স্কয়ার ত্বক সংরক্ষণ করা হয়েছিল। মাইলস্টোনের ঘটনার আগপর্যন্ত ৯ হাজার সেন্টিমিটার স্কয়ার ত্বক ছিল। মাইলস্টোনের ঘটনায় দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসায় গত রোববার পর্যন্ত এ ব্যাংক থেকে সাড়ে তিন হাজার সেন্টিমিটার স্কয়ার ত্বক ব্যবহার করা হয়েছে।মাইলস্টোনের ঘটনার পর ত্বকদানের বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ আলোচনা হচ্ছে। ত্বকদানের আহ্বান জানিয়ে অনেকেই পোস্ট দিচ্ছেন। তবে কিছু কিছু ভুল তথ্যও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছে।
আরও পড়ুনস্কিন ব্যাংক চালু হলো বাংলাদেশে, দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসায় নতুন দিগন্ত২৫ জুলাই ২০২৫মাইলস্টোনের ঘটনার পর জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের পরিচালক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, অনেকেই ত্বক দান করতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। তবে স্কিন ব্যাংকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্বক সংরক্ষিত আছে।
এ বিষয়ে চিকিৎসক মাহবুব হাসান বলেন, এ মুহূর্তে ত্বকদানে আগ্রহী ব্যক্তিদের রেজিস্ট্রেশন আর স্ক্রিনিং করে রাখার বিষয়ে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে, যাতে জরুরি প্রয়োজনে তাঁদের কাছ থেকে ত্বক সংগ্রহ করা যায়।
সংগ্রহ করা ত্বক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তরল নাইট্রোজেনে ডুবিয়ে মাইনাস ৯০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখলে পাঁচ বছর পর্যন্ত ভালো থাকে