রাঙামাটির কাউখালীতে পিকআপ ভ্যান ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার সংঘর্ষে ছয়জন নিহত হয়েছেন। গতকাল শনিবার উপজেলার বেতবুনিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পাড়া এলাকায় রাঙামাটি-চট্টগ্রাম মহাসড়কে এই দুর্ঘটনা ঘটে। এদিকে মুন্সীগঞ্জে পৃথক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে তিনজনের। পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় মাইক্রোবাসের চাপায় এক শিশু নিহত হয়েছে।

রাঙামাটিতে নিহতরা হলেন– চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার কাজীপাড়ার সোয়ার আলীর ছেলে তৈয়ব অলী (৪৫), একই উপজেলার সুলতানপুরের সিরাজুল হকের ছেলে জয়নাল আবদিন (৬০), অটোরিকশাচালক সীতাকুণ্ড উপজেলার ভাটিয়ারীর ইজাজুল (২৫), হাটহাজারী উপজেলার মিরহাটের মাহাবুবুর রহমান বাচ্চু (৫৫), রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার বেতবুনিয়া ইউনিয়নের তালুকদার পাড়ার আব্দুর রহিমের স্ত্রী নুরুনাহার বেগম (৪০) ও একই ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ডাবুয়া এলাকার মংসিপ্রু মারমার স্ত্রী মিনু মারমা (৩৫)।

জানা গেছে, গতকাল বেতবুনিয়া ইউনিয়নের চায়েরী বাজারের সাপ্তাহিক হাট ছিল। বাজার শেষে রাউজান অভিমুখী অটোরিকশায় বাড়ি ফিরছিলেন পাঁচ যাত্রী। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বেতবুনিয়ার চেয়ারম্যান পাড়া এলাকায় পিকআপ ভ্যানের সঙ্গে অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে চালকসহ চারজন ঘটনাস্থলে প্রাণ হারান। অন্য দু’জন হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যান। 
নিহত নুরুনাহারের স্বামী আব্দুর রহিম জানান, ছয় মাসের শিশু নুরীকে ঘুম পাড়িয়ে বেতবুনিয়ার চায়েরী বাজারে নিত্যপণ্য কিনতে গিয়েছিলেন নুরুনাহার। বাজার শেষে স্টেশন থেকে অটোরিকশায় বাড়ি ফিরছিলেন। পথে কাঠবোঝাই পিকআপের সঙ্গে অটোরিকশার সংঘর্ষে তাঁর প্রাণ যায়। ছোট নুরী এখন তার মাকে খুঁজছে আর কাঁদছে। 
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহেদুল ইসলাম জানান, মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে। দুর্ঘটনাকবলিত পিকআপ ও অটোরিকশা জব্দ করা হয়েছে। পিকআপচালক ঘটনার পর থেকে পলাতক। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন।

এদিকে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর ও সিরাজদীখানে শুক্রবার রাতে ও শনিবার সকালে পৃথক মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছেন। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন চারজন। নিহতরা হলেন পায়েল ব্যাপারী (২৪), আলিমুর রহমান (২৭) ও ইউসুফ খান (৫২)।
শ্রীনগর ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা দেওয়ান আজাদ হোসেন জানান, শুক্রবার রাত ৩টার দিকে শ্রীনগরের হাসাড়ায় একটি ট্রাক পেছন থেকে মোটরসাইকেলে ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলেই নিহত হন রংপুরের বাসিন্দা আলিমুর। এ সময় আহত হয় তাঁর সঙ্গী আবদুর রহমান (১৭)। তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়েছে। এর আগে শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে শ্রীনগরের সমষপুর এলাকায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় পথচারী পায়েল ব্যাপারী নিহত হন। এতে আহত হন দু’জন।
শনিবার সকাল ৯টার দিকে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের সিরাজদীখানের নিমতলা রেলস্টেশনের সামনে বাসের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী ইউসুফ নিহত হন। তিনি ফরিদপুরের সালথার বাউশখালী গ্রামের বেদন খানের ছেলে।

পটুয়াখালীর কলাপাড়া-কুয়াকাটা মহাসড়কের পাখিমারা পানি জাদুঘরের সামনে পর্যটকবাহী মাইক্রোবাসের চাপায় ইব্রাহিম জাবের নামে সাত বছরের শিশু নিহত হয়েছে। গতকাল দুপুরে এ দুর্ঘটনা ঘটে। সে কুয়াকাটা-সংলগ্ন হুইছেনপাড়া গ্রামের আফজাল হাওলাদারের ছেলে। জাবের কয়েক দিন আগে নীলগঞ্জ ইউনিয়নের আমিরাবাদ গ্রামে নানাবাড়িতে বেড়াতে আসে।
(তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট অফিস ও প্রতিনিধি)
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সড়ক দ র ঘটন উপজ ল র দ র ঘটন শ র নগর স ঘর ষ ঘটন য় প কআপ

এছাড়াও পড়ুন:

শিক্ষক পদায়নে নীতিমালা লঙ্ঘন কোথাও বাড়তি, কোথাও ঘাটতি

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নতুন নিয়োগ পাওয়া শিক্ষক পদায়নে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ৪০ শিক্ষার্থীর বিপরীতে একজন করে শিক্ষক পদায়নের কথা থাকলেও অনেক বিদ্যালয়ে তা মানা হয়নি। কোনো বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী অনুপাতে শিক্ষক কম, কোনো প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী অনুপাতে শিক্ষক বেশি। শিক্ষক সংকটে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে অনেক প্রতিষ্ঠানে। এমন চিত্র বাঞ্ছারামপুর উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে।

অভিযোগ রয়েছে, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী বিদ্যালয়ভিত্তিক চাহিদা নির্ণয়, সরেজমিন পরিদর্শন এবং স্বচ্ছ তালিকা প্রণয়ন করার কথা থাকলেও কোনো নিয়ম মানা হয়নি বাঞ্ছারামপুরে প্রাথমিকের শিক্ষক পদায়নে। নিজস্ব পছন্দ, ব্যক্তিগত লাভ ও রাজনৈতিক চাপের কাছে জলাঞ্জলি দিয়েছেন নীতিমালা। অনেক নারী শিক্ষককে ২৩ কিলোমিটার দূরের বিদ্যালয়ে পদায়ন করা হয়েছে, যা যাতায়াত ও নিরাপত্তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। পুরুষ শিক্ষকের ক্ষেত্রে নীতিমালায় দূরবর্তী এলাকায় পদায়নের নির্দেশনা থাকলেও বাস্তবে দেখা গেছে, কয়েকজন শিক্ষককে নিজের এলাকায় পদায়ন করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ১৩৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৮৪৫ জন সহকারী শিক্ষকের পদের বিপরীতে ফাঁকা ছিল ১১২টি। এসব শূন্য পদ পূরণ করতে গত ১৩ মার্চ নতুন নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের বিভিন্ন বিদ্যালয় পদায়ন করা হয়। একাধিক শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ৯টি বিদ্যালয়ে। একাধিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট না থাকার পরও নতুন শিক্ষক দেওয়া হয়েছে। ২৮টি বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষকের পদ ফাঁকা থাকলেও কোনো নতুন শিক্ষক পদায়ন করা হয়নি। নতুন নিয়োগ পাওয়া ৫২ শিক্ষকের মধ্যে ১৯ জনকে প্রতিস্থাপন সাপেক্ষে বদলি হওয়াদের স্থলে পদায়ন করা হয়েছে। ৯টি বিদ্যালয়ে পদায়ন করা হয়েছে ২৭ জনকে।

তাতুয়াকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী রয়েছে ১৬৬ জন। প্রধান শিক্ষকসহ সাতটি শিক্ষকের পদ রয়েছে। চারটি শূন্য পদের বিপরীতে চারজনকে পদায়ন করা হয়েছে। এখানে শিক্ষার্থী অনুপাতে শিক্ষক সংখ্যা অতিরিক্ত। উলুকান্দি উত্তর সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৯২ জন। এখানে প্রধান শিক্ষকসহ শিক্ষকের সাতটি পদে কর্মরত ছিলেন পাঁচজন। শিক্ষার্থী অনুপাতে পর্যাপ্ত শিক্ষক থাকার পরও নতুন একজনকে পদায়ন করা হয়েছে।

অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বিদ্যালয় দুটি। এর মধ্যে কালাইনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রাথমিকে ২৪৯ ও মাধ্যমিকে ১১৭ জন। এখানে প্রধান শিক্ষকসহ কর্মরত ছিলেন ১০ জন। নতুন করে একজনকে পদায়ন করা হয়েছে। অথচ আগামী বছর থেকে এই বিদ্যালয়ের নিম্ন মাধ্যমিকের কার্যক্রম থাকবে না। চরশিবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাথমিকে ৫১০ জন ও নিম্ন মাধ্যমিকে ২৯৮ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। প্রধান শিক্ষকসহ ১৩টি শিক্ষকের পদ রয়েছে। এর মধ্যে সহকারী শিক্ষকের পাঁচটি শূন্য পদে পাঁচজনকে পদায়ন করা হয়েছে। আগামী বছর থেকে এই বিদ্যালয়ের নিম্ন মাধ্যমিকের কার্যক্রমও বন্ধ হয়ে যাবে।

ডোমরাকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৬৪ জন। প্রধান শিক্ষকসহ এখানে কর্মরত ছিলেন ছয়জন। শিক্ষক সংকট না থাকার পরও আরও একজনকে পদায়ন করা হয়েছে। চরমানিকপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩০৩ জন। এখানে কর্মরত ছিলেন পাঁচ শিক্ষক। প্রধান শিক্ষকসহ পাঁচটি পদ শূন্য থাকলেও নতুন করে মাত্র একজন সহকারী শিক্ষক দেওয়া হয়েছে। শিক্ষক সংকটে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে।

দরিয়া দৌলত দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৮৮। প্রধান শিক্ষকসহ এখানে কর্মরত ছিলেন আটজন। শিক্ষক সংকট না থাকার পরও নতুন করে একজনকে পদায়ন করা হয়েছে। শান্তিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৩২। এখানে কর্মরত ছিলেন চারজন। প্রধান শিক্ষকসহ দুটি পদ শূন্য। এখানে একজনকে পদায়ন করা হয়েছে, তাও আবার প্রতিস্থাপনকৃত বদলি হয়ে থাকা শিক্ষককে ছাড় করার জন্য। বর্তমানে দুটি পদ শূন্য।

দড়িকান্দি পশ্চিম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৩৭। কর্মরত রয়েছেন ছয়জন শিক্ষক। প্রধান শিক্ষকসহ দুটি পদ শূন্য থাকলেও একজনকেও পদায়ন করা হয়নি। শেখেরকান্দি সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৮০। প্রধান শিক্ষকসহ কর্মরত রয়েছেন ছয়জন। একটি পদ শূন্য থাকলেও কাউকে পদায়ন করা হয়নি। পাঠামারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা ২০৮। প্রধান শিক্ষকসহ কর্মরত ছিলেন তিনজন। তিনটি শূন্য পদের বিপরীতে একজনকে পদায়ন করা হয়েছে।

উপজেলায় মেধা তালিকা প্রথম স্থান অধিকার করা জুয়েল রানাকে পদায়ন করা হয়েছে নিজ গ্রাম মরিচাকান্দি থেকে ২২ কিলোমিটার দূরের পাঠামারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। পাহারিয়াকান্দি গ্রামের জান্নাতুল ফেরদৌসকে পদায়ন করা হয়েছে নিজ গ্রাম থেকে ২৩ কিলোমিটার দূরের তাতুয়াকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। অগ্রাধিকার তালিকা প্রণয় না করে ইচ্ছেমতো পদায়ন করায় শিক্ষকরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

সদ্য নিয়োগ পাওয়া সহকারী শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘আমার বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব ২৩ কিলোমিটার। যাতায়াতে অনেক কষ্ট হয়। কাছাকাছি পদায়ন করলে অনেক ভালো হতো, কারণ আসা-যাওয়ায় শারীরিক, মানসিক ও অর্থনৈতিক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।’

সহকারী শিক্ষক জুয়েল মিয়া জানান, তিনি মেধা তালিকায় প্রথম হয়েছেন। ভেবেছিলেন কাছাকাছি কোনো বিদ্যালয়ে পদায়ন করা হবে, কিন্তু দেওয়া হয়েছে গ্রাম থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার দূরে।

নগরীরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন পদায়ন হওয়া শিক্ষক শাহ আলী বলেন, ‘নতুন মাত্র চাকরি পেয়েছি, তারপরও আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে প্রধান শিক্ষক হিসেবে। আমি কাজের কিছুই বুঝি না। বিদ্যালয়ে মাত্র তিনজন শিক্ষক। অফিসের কাজ নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করতে গেলে পাঠদান ব্যাহত হয়।’

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল আজিজ জানান, তারা তালিকা পাঠিয়েছিলেন, সেই হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে। শিক্ষক সংকট রয়েছে এমন বিদ্যালয়ে শিক্ষক পদায়ন না করে থাকলে তাঁর কিছু বলার নেই, কারণ পদায়ন করেছে ডিপিও অফিস।

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শামসুর রহমানের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, নীতিমালা অনুসরণ করেই শিক্ষক পদায়ন করা হয়েছে। শিক্ষক সংকটের বিষয়টি তাঁর জানা নেই। খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনে অন্য জায়গা থেকে শিক্ষক দিয়ে তা পূরণ করা হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শিক্ষক পদায়নে নীতিমালা লঙ্ঘন কোথাও বাড়তি, কোথাও ঘাটতি
  • শরীয়তপুরের পালং মডেল থানার পরিদর্শক ‘আত্মগোপনে’
  • সিলেটে টিলা কাটার অভিযোগে বিএনপি নেতা, ইউপি সদস্যসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা