ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতিগুলোর বিস্ময়কর বিষয় হলো, মানুষ এখনো এসব নীতি দেখে বিস্মিত হচ্ছেন। ট্রাম্প যখনই বৈশ্বিক উদারপন্থী ব্যবস্থার একটি ভিতে আঘাত হানছেন, তখনই খবরের শিরোনামে অভিঘাত ও হতাশা ফুটে উঠছে। সেটা ইউক্রেনের ভূখণ্ডে রাশিয়ার দাবির প্রতি ট্রাম্পের সমর্থন জানানো বা গ্রিনল্যান্ডকে বলপূর্বক যুক্তরাষ্ট্রের অংশ হিসেবে যুক্ত করার অভিলাষই হোক, কিংবা তাঁর নিজের ইচ্ছেমতো শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়ে আর্থিক দুনিয়া টালমাটাল করে দেওয়া হোক। তারপরও তাঁর নীতিগুলো এতটাই সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং দুনিয়া সম্পর্কে তাঁর দর্শন এতটা স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত যে এই পর্যায়ে কেবল স্বেচ্ছায় আত্মপ্রবঞ্চক হওয়া কোনো ব্যক্তি বিস্মিত হতে পারেন।

২.

উদারপন্থী ব্যবস্থার সমর্থকেরা বিশ্বকে দেখে থাকেন এমন একটি পারস্পরিক সহযোগিতার বন্ধনে, যেখানে সবাই লাভবান হন। তাঁরা বিশ্বাস করেন যে সংঘাত অনিবার্য নয়; কারণ, সহযোগিতা থেকে সবাই উপকার পান। এই বিশ্বাসের গভীর দার্শনিক শিকড় রয়েছে। উদারপন্থীরা যুক্তি দেন যে সব মানুষ কিছু অভিন্ন অভিজ্ঞতা ও স্বার্থ দ্বারা তাড়িত, যা সর্বজনীন মূল্যবোধ, বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান ও আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তি রচনা করেছে। 

উদাহরণস্বরূপ, সব মানুষই রোগবালাইকে অপছন্দ করেন আর তাই সংক্রামক ব্যাধির বিস্তার রোধ করা তাঁদের সবার অভিন্ন স্বার্থ। সে কারণেই চিকিৎসাবিষয়ক জ্ঞান বিনিময়, মহামারি দূরীকরণে বৈশ্বিক প্রয়াস এবং এসব কাজের সমন্বয় করার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতো প্রতিষ্ঠান স্থাপনের মধ্য দিয়ে সব দেশই উপকার পেতে পারে। একইভাবে উদারপন্থীরা যখন বিভিন্ন দেশের মধ্যে চিন্তাভাবনা, পণ্য ও মানুষের প্রবাহের দিকে দৃকপাত করেন, তখন তাঁরা একে অনিবার্য প্রতিযোগিতা ও শোষণের বদলে পারস্পরিক উপকারের সম্ভাবনা হিসেবে দেখে থাকেন।

■ ট্রাম্পের দৃষ্টিতে দুনিয়ার প্রতিটি লেনদেনে হার-জিত আছে। তাই এই বিশ্ব হলো এমন একটি খেলার ময়দান, যেখানে এক পক্ষ জিতবে, আরেক পক্ষ হারবে। ■ ট্রাম্পীয় বিশ্বদর্শনে ন্যায়বিচার, নৈতিকতা ও আন্তর্জাতিক আইন অপ্রাসঙ্গিক; বরং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একমাত্র বিবেচ্য হলো শক্তি বা ক্ষমতা, যেখানে দুর্বলেরা সবলদের কাছে আত্মসমর্পণ করবে।

এসবের বিপরীতে ট্রাম্পের দৃষ্টিতে দুনিয়ার প্রতিটি লেনদেনে হার-জিত আছে। তাই এই বিশ্ব হলো এমন একটি খেলার ময়দান, যেখানে এক পক্ষ জিতবে, আরেক পক্ষ হারবে; কিন্তু কোনোভাবেই সবাই লাভবান হবে না। সে কারণেই চিন্তাভাবনা, পণ্য ও মানুষের আদান–প্রদান মজ্জাগতভাবেই সন্দেহজনক বিষয়। 

ট্রাম্পের দুনিয়ায় আন্তর্জাতিক চুক্তি, প্রতিষ্ঠান ও আইন আর কিছুই নয়, কেবল কিছু দেশকে দুর্বল ও বাকিদের সবল করার এক কৌশলমাত্র; অথবা সম্ভবত সব দেশকে দুর্বল বানিয়ে শুধু একদল দুষ্ট অথচ অভিজাত বৈশ্বিক নাগরিককে (কসমোপলিটন এলিট) সুবিধা দেওয়ার চক্রান্ত।

তাহলে ট্রাম্পের কাছে পছন্দনীয় বিকল্প কী? তিনি যদি বিশ্বকে তাঁর নিজের পছন্দমতো পুনর্গঠন করতে পারতেন, তাহলে তা কী রকম দাঁড়াত?

৩.

ট্রাম্পের আদর্শ দুনিয়া হলো অনেকগুলো ‘রক্ষণদুর্গের এক সমারোহ’, যেখানে বিভিন্ন দেশ একে অপরের থেকে আলাদা থাকবে আর্থিক, সামরিক ও সাংস্কৃতিক তো বটেই, এমনকি সত্যিকারের ইট-পাথরের প্রাচীর দ্বারা। এখানে পারস্পরিক সহযোগিতা থেকে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা তিরোহিত; বরং ট্রাম্প ও তাঁর মনোভাবাপন্ন জনতুষ্টিবাদীদের যুক্তি হলো, এহেন দুর্গ-প্রাচীর দেশগুলোকে অধিকতর শান্তি ও স্থিতিশীলতা এনে দেবে।

অবশ্যই এ চিন্তাচেতনায় গুরুত্বপূর্ণ একটিবিষয় অনুপস্থিত থেকে যাচ্ছে। হাজার হাজার বছরের ইতিহাস আমাদের এটা শিখিয়েছে যে প্রতিটি দুর্গই সম্ভবত সবার চেয়ে একটু বেশি নিরাপত্তা, সমৃদ্ধি ও ভূসীমা চাইবে নিজের জন্য এবং তা তার প্রতিবেশীর মূল্যে। মানে প্রতিবেশীকেই ছাড় দিতে হবে। সর্বজনীন মূল্যবোধ, বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান ও আন্তর্জাতিক আইনের অনুপস্থিতিতে কীভাবে এসব প্রতিদ্বন্দ্বী দুর্গগুলো তাদের মধ্যকার বিরোধ নিষ্পত্তি করবে?

ট্রাম্পের কাছে অবশ্য সহজ সমাধান আছে: সংঘাত এড়াতে দুর্বলদের উচিত হবে সবলদের সব দাবি মেনে নেওয়া। এ রকম মতবাদ অনুসারে, দুর্বলেরা যখন বাস্তবতা মেনে নিতে অস্বীকার করে, তখনই সংঘাত দেখা দেয়। এ কারণেই যুদ্ধ বাধার জন্য সব সময় দুর্বলেরাই দায়ী।

ট্রাম্প যখন রাশিয়ার আগ্রাসনের জন্য ইউক্রেনকে দায়ী করলেন, তখন অনেকেই বুঝতে পারছিলেন না যে কীভাবে তিনি এ রকম ভ্রান্ত মনোভাব পোষণ করেন। কেউ কেউ ভেবেছিলেন যে তিনি রুশ প্রচার-প্রচারণায় বিভ্রান্ত হয়েছেন। কিন্তু এর সহজতর ব্যাখ্যা আছে। 

ট্রাম্পীয় বিশ্বদর্শনে ন্যায়বিচার, নৈতিকতা ও আন্তর্জাতিক আইন অপ্রাসঙ্গিক; বরং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একমাত্র বিবেচ্য হলো শক্তি বা ক্ষমতা। যেহেতু ইউক্রেন রাশিয়ার চেয়ে দুর্বল, সেহেতু তার আত্মসমর্পণ করা উচিত। ট্রাম্পীয় বিবেচনায় শান্তি মানে সমর্পণ আর ইউক্রেন যেহেতু আত্মসমর্পণ করতে অস্বীকার করেছে, তাই এই যুদ্ধ বেধেছে এবং এটাও তারই দোষ।

এই একই যুক্তিতে ট্রাম্প গ্রিনল্যান্ডকে যুক্তরাষ্ট্রের অংশ হিসেবে যুক্ত করতে চান। ট্রাম্পীয় যুক্তি হলো, যদি দুর্বল ডেনমার্ক অধিকতর শক্তিশালী যুক্তরাষ্ট্রর কাছে গ্রিনল্যান্ডকে ছেড়ে না দেয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের উচিত হবে অভিযান চালিয়ে শক্তি দিয়ে গ্রিনল্যান্ড দখল করে নেওয়া আর এ জন্য সংঘটিত যেকোনো সহিংসতা ও রক্তপাতের জন্য এককভাবে দায়ী হবে ডেনমার্ক।

৪.

প্রতিদ্বন্দ্বী দুর্গগুলো বাস্তবতা মেনে ও সমঝোতা করে সংঘাত এড়াতে পারে বলে যে ট্রাম্পীয় ধারণা দাঁড় করানো হয়েছে, এর তিনটি বিশাল সমস্যা রয়েছে।

প্রথমত, দুর্গের সমাহারে গড়া একটি দুনিয়ায় সবাই কম হুমকির মুখে থাকবে এবং প্রতিটি দেশ শান্তিপূর্ণভাবে নিজ ঐতিহ্য ও অর্থনীতির উন্নতিতে মনোযোগী হতে পারবে—এই প্রতিশ্রুতির মিথ্যা দিকটা ওই ধারণা থেকে খোলামেলাভাবে প্রকাশ পায়। বস্তুত দুর্বল ‘দুর্গগুলো’ শিগগিরই দেখতে পাবে যে তাদের শক্তিশালী প্রতিবেশী দুর্গগুলো তাদের গিলতে শুরু করেছে। এর মধ্য দিয়ে জাতীয় দুর্গগুলো পরিণত হবে বিস্তৃত বহুজাতিক সাম্রাজ্যে।

ট্রাম্প নিজে তাঁর সাম্রাজ্যবাদী পরিকল্পনা নিয়ে খুব পরিষ্কার। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ভূখণ্ড ও ধনসম্পদ রক্ষার জন্য সীমানাপ্রাচীর গড়তে চান, আবার একসময়ের মিত্ররাসহ অন্যান্য দেশের ভূখণ্ড ও সম্পদের দিকে লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকাচ্ছেন। ডেনমার্কের উদাহরণ আবার টানতে হয়। 

দশকের পর দশক দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বিশ্বস্ত মিত্র ছিল। ৯/১১ হামলার পর ডেনমার্ক স্বপ্রণোদিত হয়ে ন্যাটো চুক্তির বাধ্যবাধকতা পূরণ করেছে। আফগানিস্তানে ন্যাটোর ৪৪ জন সেনা প্রাণ হারিয়েছেন, যা মাথাপিছু সৈন্য প্রাণহানিতে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে বেশি। অথচ ট্রাম্প ‘ধন্যবাদ’ দেওয়ার প্রয়োজনটুকু বোধ করেননি; বরং তাঁর প্রত্যাশা যে ডেনমার্ক তার সাম্রাজ্যবাদী বাসনার কাছে সমর্পিত হবে। স্পষ্টতই তিনি মিত্রর চেয়ে অনুচর চান।

দ্বিতীয় সমস্যা হলো, কোনো ‘দুর্গ’ই যেহেতু দুর্বল হলে টিকতে পারবে না, সেহেতু তারা সবাই সামরিকভাবে শক্তিশালী হওয়ার জন্য প্রচণ্ড চাপের মুখে থাকবে। তাই অর্থনৈতিক উন্নতি ও কল্যাণ কার্যক্রম থেকে সম্পদ সরিয়ে সামরিক খাতে আনা হবে। এভাবে অস্ত্রের প্রতিযোগিতা সবারই সমৃদ্ধি কমিয়ে দেবে। কিন্তু কেউই অধিকতর নিরাপদ বোধ করবে না।

তৃতীয়ত, ট্রাম্পীয় ভাবনা এটা প্রত্যাশা করে যে দুর্বলেরা সবলদের কাছে আত্মসমর্পণ করবে। কিন্তু তুলনামূলকভাবে কারা সবল বা শক্তিশালী, তা নির্ধারণের মাপকাঠি স্পষ্ট নয়। যদি দেশগুলো হিসাব-নিকাশে ভুল করে, যেমনটা প্রায়ই ইতিহাসে দেখা যায়! 

১৯৬৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চিত ছিল যে তারা উত্তর ভিয়েতনামের তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী। তাই যথেষ্ট চাপ প্রয়োগ করলেই হ্যানয়ের সরকার সমঝোতায় আসবে। উত্তর ভিয়েতনাম তো যুক্তরাষ্ট্রের শ্রেষ্ঠত্ব মেনে নেয়নি; বরং বিরাট এক ঝুঁকিপূর্ণ বাজি ধরে এবং যুদ্ধে জয়লাভ করে। তাহলে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে আগে থেকে জানবে যে আসলে সে নিজেই দুর্বল?

একইভাবে ১৯১৪ সালে জার্মানি ও রাশিয়া—উভয়েই বড়দিনের আগেই যুদ্ধে জয়লাভ করার ব্যাপারে প্রত্যয়ী ছিল। অথচ তাদের হিসাবে গড়বড় ছিল। যে কারও ধারণার চেয়ে বেশি সময় নিয়ে যুদ্ধ চলেছে এবং অনেক অজানা বাঁকবদল হয়েছে। ১৯১৭ সালে পরাজিত জারসাম্রাজ্য নিমজ্জিত হয়ে গিয়েছিল রুশ বিপ্লবে। কিন্তু জার্মানির বিজয় হাতছাড়া হয়ে যায় যুক্তরাষ্ট্রের অপ্রত্যাশিত হস্তক্ষেপে। তাহলে কি জার্মানির উচিত ছিল ১৯১৪ সালেই সমঝোতা চুক্তি করে ফেলা, নাকি রুশ জারের উচিত ছিল বাস্তবতা মেনে নিয়ে জার্মানির দাবির কাছে নতিস্বীকার করা?

বর্তমান চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধে কার উচিত হবে কাণ্ডজ্ঞানের পরিচয় দেওয়া ও আগাম আত্মসমর্পণ করা? আপনি হয়তো বলবেন যে বিশ্বকে একদলের লাভ, অন্য দলের লোকসান—এভাবে না দেখে বরং সব দেশ পরস্পরের সমৃদ্ধির জন্য একযোগে কাজ করা হলে ভালো হয়। তাহলে তো আপনি ট্রাম্পীয় দর্শনের মৌলিক ভিত্তিকেই প্রত্যাখ্যান করছেন।

৫.

ট্রাম্পীয় দর্শন অভিনব কোনো কিছু নয়; বরং উদারনৈতিক বিশ্বব্যবস্থা গড়ে ওঠার আগে হাজার হাজার বছর ধরে এ ধারণার প্রাধান্যই বজায় ছিল। ট্রাম্পের সূত্র বারবার পরীক্ষিত হয়েছে, বারবার প্রয়োগের চেষ্টা হয়েছে। তাতে সাম্রাজ্য গঠন ও যুদ্ধের এক অশেষ চক্র ছাড়া আর কোনো ফায়দা হয়নি।

এর চেয়ে খারাপ কথা হলো, একুশ শতকে উল্লিখিত ‘দুর্গগুলো’কে শুধু অতীতের মতো যুদ্ধের হুমকি মোকাবিলা করতে হবে, তা–ই নয়; বরং জলবায়ু পরিবর্তন ও অতিবুদ্ধিমান কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) মতো নতুন চ্যালেঞ্জের সামনে পড়তে হবে। একটি শক্তিশালী আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ছাড়া এসব বৈশ্বিক সমস্যা সামাল দেওয়ার কোনো উপায় নেই। ট্রাম্পের কাছে যেহেতু জলবায়ু পরিবর্তন বা নিয়ন্ত্রণহীন এআইয়ের সমস্যা বিষয়ে কোনো কার্যকর সমাধান নেই, সেহেতু তাঁর কৌশল হলো, সোজা এসবের অস্তিত্ব অস্বীকার করা।

২০১৬ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথমবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই উদারনৈতিক বিশ্বব্যবস্থার স্থিতিশীলতা নিয়ে উদ্বেগ বাড়তে শুরু করে। প্রায় এক দশকের দ্বিধা ও অনিশ্চয়তা কাটিয়ে আমরা এখন উদারনৈতিক ব্যবস্থা–পরবর্তী বৈশ্বিক অব্যবস্থার একটি পরিষ্কার চিত্র পাচ্ছি। বিশ্ব একটি সহযোগিতামূলক বেষ্টনী, এই উদারনৈতিক দর্শন প্রতিস্থাপিত হয়েছে দুনিয়া ‘রক্ষণদুর্গের এক সমারোহ’, এ চিন্তাধারার মাধ্যমে। 

আমাদের সবার চারপাশে এটা বিস্তৃত হচ্ছে—দেয়াল বাড়ছে, অপসারণীয় সেতু উঠছে। যদি এই ধারা অব্যাহত থাকে, তাহলে স্বল্প মেয়াদে বাণিজ্যযুদ্ধ বাধবে, অস্ত্রের প্রতিযোগিতা জোরদার হবে এবং সাম্রাজ্য সম্প্রসারণ বিস্তৃত হবে। চূড়ান্ত ফল দাঁড়াবে বিশ্বযুদ্ধ, প্রতিবেশগত বিপর্যয় আর নিয়ন্ত্রণহীন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।

আমরা হয়তো এসব দেখে প্রচণ্ড মর্মাহত ও ক্ষুব্ধ হব এবং আমাদের সাধ্যমতো এটা ঠেকানোর চেষ্টা করব। কিন্তু এ থেকে বিস্মিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই, কোনো দোহাই নেই। 

যাঁরা ট্রাম্পের দর্শনের সপক্ষে অবস্থান নিতে চান, তাঁদের একটা প্রশ্নের জবাব দিতে হবে: কোনো সর্বজনীন মূল্যবোধ বা অবশ্যপালনীয় আন্তর্জাতিক আইনকানুন ছাড়া কীভাবে প্রতিযোগী জাতীয় দুর্গগুলো তাদের অর্থনৈতিক ও ভৌগোলিক বিরোধের নিরসন ঘটাবে?

(ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসে প্রকাশিত)

ইউভাল নোয়াহ হারারি ইসরায়েলি ইতিহাসবিদ, গবেষক ও লেখক

বাংলায় অনুবাদ করেছেন আসজাদুল কিবরিয়া

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ব ক র কর ব যবস থ র দ র বল র সহয গ ত ইউক র ন দ র সব র জন য সমস য হওয় র সমর প

এছাড়াও পড়ুন:

শাহরুখের ব্যাপারে সাবধান করলেন জুহি চাওলা

বলিউড বাদশা শাহরুখ খান। অভিনয় গুণে কোটি কোটি ভক্তের হৃদয়ে দোলা দিয়েছেন তিনি। দীর্ঘ অভিনয় ক্যারিয়ারে যশ-খ্যাতি যেমন পেয়েছেন, তেমনি আয় করেছেন মোটা অঙ্কের অর্থও। রবিবার (২ নভেম্বর) ৬০ বছর পূর্ণ করে একষট্টিতে পা দেবেন এই তারকা।  

অভিনয় ক্যারিয়ারে অনেক নায়িকার সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন শাহরুখ খান। তাদের মধ্যে অন্যতম জুহি চাওলা। ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’, ‘রামজানে’, ‘ডর’, ‘ইয়েস বস’, ‘ডুপ্লিকেট’সহ আরো কিছু জনপ্রিয় সিনেমা উপহার দিয়েছেন এই জুটি। একসঙ্গে অভিনয় ছাড়াও, এই দুই তারকা বাস্তব জীবনে খুবই ভালো বন্ধু। কেবল তাই নয়, ব্যবসায়ীক অংশীদারও তারা। 

আরো পড়ুন:

শাহরুখের অজানা এই সাত তথ্য জানেন?

পাকিস্তানের সন্ত্রাসী তালিকায় সালমান খান কেন?

বন্ধু শাহরুখের জন্মদিন উপলক্ষে হিন্দুস্তান টাইমসের সঙ্গে কথা বলেছেন জুহি। এ আলাপচারিতায় স্মৃতিচারণ তো করেছেনই, পাশাপাশি শাহরুখের বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছেন এই অভিনেত্রী।  

শাহরুখের সঙ্গে প্রথম পরিচয়ের বিষয়ে জুহি চাওলা বলেন, “আমি যখন প্রথম ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’ সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হই, তখন সহপ্রযোজক বিবেক ভাসওয়ানি আমাকে বলেছিলেন, ‘আমার নায়ক দেখতে আমির খানের মতো।’ আমি শাহরুখকে দেখে ভীষণ অবাক হয়েছিলাম। দেখি, শাহরুখের চুল চোখের ওপরে নেমে এসেছে। আর সে একেবারেই আমার কল্পনার সেই ‘চকলেট বয়’ নয়! যখন কাজ শুরু করি, তখন বুঝতে পারি, সে একদম নতুন অভিনেতাদের মতো নয়, সে পরিশ্রমী, দিনে তিন শিফটে কাজ করছে।” 

একটি ঘটনা বর্ণনা করে জুহি চাওলা বলেন, “আমার মনে আছে, ‘ইয়েস বস’ সিনেমার শুটিংয়ের সময়, কোনো দৃশ্য ঠিকমতো লেখা না থাকলে পরিচালক আজিজজি (আজিজ মির্জা) বলতেন, ‘শাহরুখ আসুক, সব ঠিক হয়ে যাবে।’ রোমান্স আর মজার মিশেলে থাকা দৃশ্যগুলো আমাদের সবচেয়ে ভালো ছিল। সেই সূত্রেই আমরা অনেকগুলো সিনেমায় একসঙ্গে কাজ করেছি।” 

শাহরুখের পাশে অবস্থান করলে সাবধান থাকার কথার কথা বলেছেন জুহি। হাসতে হাসতে এ অভিনেত্রী বলেন, “শাহরুখের আশেপাশে থাকলে সাবধানে থাকবেন। কারণ সে কথা দিয়ে আপনাকে যেকোনো কিছু করাতে রাজি করিয়ে ফেলতে পারে। ওর কথাবলার ভঙ্গি এমন যে, আপনি ‘না’ বলতেই পারবে না। আমি ‘ডুপ্লিকেট’ সিনেমা করতে চাইছিলাম না, কারণ সেখানে আমার তেমন কিছু করার ছিল না। আমরা তখন আরেকটি সিনেমার শুটিং করছিলাম, আর শাহরুখ আমাকে সিঁড়িতে বসিয়ে দুই ঘণ্টা বোঝায় এবং আমি সিনেমাটিতে চুক্তিবদ্ধ হই। সে আপনাকে যেকোনো কিছু করতে রাজি করাতে পারে, তাই সাবধানে থাকবেন।” 

শাহরুখ খানের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিষয়ে জুহি চাওলা বলেন, “অফস্ক্রিনে আমাদের সম্পর্কেও উত্থান-পতন রয়েছে। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা কোনো না কোনোভাবে আমাদের যুক্ত রেখেছেন, এমনকি আইপিএলের মাধ্যমেও। আমাদের বন্ধন কোনো পরিকল্পনার ফল নয়, এটা একেবারেই ভাগ্যের ব্যাপার।” 

শাহরুখ খানের সঙ্গে আইপিএল দল কলকাতা নাইট রাইডার্সের (কেকেআর) সহ-মালিক জুহি ও তার স্বামী জয় মেহতা। এই দলের পেছনে জুহি বিনিয়োগ করেছেন ৬২৯ কোটি রুপি। বর্তমানে এই দলটির মূল্য আছে ৯ হাজার ১৩৯ কোটি রুপি। শাহরুখ খানের সঙ্গে ‘রেড চিলিস গ্রুপ’ প্রতিষ্ঠা করেন জুহি। 

১৯৬৫ সালে ২ নভেম্বর ভারতের নয়াদিল্লিতে এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন শাহরুখ খান। তার শৈশবের প্রথম পাঁচ বছর কেটেছে ম্যাঙ্গালুরুতে। শাহরুখের দাদা ইফতিখার আহমেদ স্থানীয় পোর্টের প্রধান ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। যার কারণে সেখানে বসবাস করেন তারা। শাহরুখের বাবার নাম তাজ মোহাম্মদ খান, মা লতিফ ফাতিমা। 

দিল্লির হংসরাজ কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন শাহরুখ খান। তারপর জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়াতে গণযোগাযোগ বিষয়ে মাস্টার্সে ভর্তি হন। কিন্তু অভিনয় জীবন শুরু করার কারণে পড়াশোনা ছেড়ে দেন তিনি। তবে বলিউডে ক্যারিয়ার শুরুর দিকে দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা-তে ভর্তি হন এই শিল্পী। 

১৯৯২ সালে ‘দিওয়ানা’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে পা রাখেন শাহরুখ খান। রোমান্টিক ঘরানার এ সিনেমায় অভিনয় করে নজর কাড়েন তিনি। সিনেমাটিতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের কারণে সেরা নবাগত অভিনেতা হিসেবে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ। 

একই বছর ‘চমৎকার’, ‘দিল আসনা হে’ ও ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’ সিনেমায় অভিনয় করেন শাহরুখ। তার পরের বছর ‘ডর’ ও ‘বাজিগর’ সিনেমায় অভিনয় করে নিজের জাত চেনান শাহরুখ। তার অভিনয়ের জাদুতে মুগ্ধ হন কোটি ভক্ত; পৌঁছে যান সাফল্যের চূড়ায়। তার অভিনয়ের খ্যাতি আরো বাড়তে থাকে যশরাজ ফিল্মসের সিনেমায় ধারাবাহিকভাবে অভিনয় করে। একের পর এক হিট সিনেমা দিয়ে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে অবস্থান করেন শাহরুখ। যদিও তার এই সফলতার জার্নির গল্প মোটেও সহজ ছিল। আর সে গল্প সবারই জানা। 

অভিনয় ক্যারিয়ারে অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছেন শাহরুখ খান। তার মধ্যে মোট পনেরোবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেছেন তিনি। এর মধ্যে আটবার সেরা অভিনেতা হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। হিন্দি সিনেমায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০০২ সালে তাকে পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত করে ভারত সরকার। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি গ্রহণ করেছেন মোট পাঁচবার। তবে শাহরুখ খানের ৩৩ বছরের অভিনয় ক্যারিয়ারে অধরা ছিল জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। চলতি বছর ‘জওয়ান’ সিনেমার জন্য সেরা অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ।

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ