টসে জিতে ব্যাটিং নিয়ে বেশ আত্মবিশ্বাস নিয়ে প্রথম ইনিংসের সূচনা করে জিম্বাবুয়ে। বাংলাদেশের বোলাররা সেভাবে কিছুই করতে পারছিলেন না দুই ওপেনার বেন কারান এবং ব্রায়ান বেনেটের কাছে। এরই মাঝে একটি সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। যদিও সেটা কাজে লাগাতে পারেনি তারা। ৮ম ওভারে মেহেদী হাসান মিরাজের গুড ল্যান্থের ডেলিভারি ডিফেন্ড করতে চেয়েছিলেন বেন কারেন। এজ হয়ে স্লিপে চলে যায় বল। সেখানে থাকা ফিল্ডার সাদমান সহজ ক্যাচ তালুবন্দি করতে ব্যর্থ হলেন। ১১ রানে জীবন পান কারেন।

বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছে ১১তম ওভার পর্যন্ত। টেস্ট অভিষেকে বেনেটকে ফিরিয়ে উইকেটের দেখা পান তানজিম হাসান সাকিব। তার কোয়ার্টার লেংথের ডেলিভারিটি স্কয়ার ড্রাইভ করতে চেয়েছিলেন বেনেট, যদিও পায়ের কোনো মুভমেন্ট ছিল না। ৪১ রানে প্রথম উইকেট হারাল জিম্বাবুয়ে, বেনেট ফিরলেন ২১ রানে। ১৩ ওভারে জিম্বাবুয়ের রান ১ উইকেটে ৪২। ক্রিজে বেন কারানের সঙ্গী নিক ওয়েলচ।

পিএসএল খেলতে পাকিস্তান যাওয়ায় এই টেস্টে নেই নাহিদ রানা। তার জায়গায় টেস্ট অভিষেক হচ্ছে পেসার তানজিম সাকিবের। দেশের হয়ে ১০ ওয়ানডে ও ১৮ টি-টোয়েন্টি খেললেও তানজিম এবারই প্রথম মাঠে নামছেন টেস্ট খেলার জন্য। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১৬ ম্যাচে ২৫ উইকেট আছে তার।

সিলেট টেস্টের একাদশ থেকে বাদ পড়েছেন মাহমুদুল হাসান ও খালেদ আহমেদ। প্রায় তিন বছর পর বাংলাদেশের টেস্ট একাদশে জায়গা পেয়েছেন এনামুল হক বিজয়। সর্বশেষ ২০২২ সালের জুনে গ্রস আইল্যান্ডে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট খেলেছিলেন ডানহাতি ব্যাটার। ঘরোয়া ক্রিকেটে দারুণ ফর্ম বিবেচনায় তাকে দলে নেওয়া হয়। অফ স্পিনার নাঈম হাসানকেও রাখা হয়েছে। তাকে নিয়ে একাদশে স্পিনার তিনজন। 

এদিকে সিরিজ জেতার লক্ষ্যে একাদশে দুটি পরিবর্তন এনেছে জিম্বাবুয়ে। আগের ম্যাচে উইকেটের পেছনে একাধিক সহজ ক্যাচ ছেড়ে দেওয়া নিয়াশা মায়াভোকে বাদ দিয়েছে তারা। জায়গা হয়নি পেস অলরাউন্ডার ভিক্টর নিয়াউচির।

এর আগে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রথম টেস্টে ৩ উইকেটে হেরে গেছে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে ১৯১ রানে অলআউট হওয়ার দ্বিতীয় ইনিংসে সম্ভাবনা তৈরি করেও জিম্বাবুয়েকে বড় লক্ষ্য দিতে পারেনি স্বাগতিকরা। ১৭৪ রানের লক্ষ্য দিয়ে ৭ উইকেট তুলে নিলেও জিম্বাবুয়ে ম্যাচ জিতে নেয় ৩ উইকেট হাতে রেখে।

বাংলাদেশ একাদশ: সাদমান ইসলাম, এনামুল হক, মুমিনুল হক, নাজমুল হোসেন, মেহেদী হাসান মিরাজ, মুশফিকুর রহিম, জাকের আলি, তাইজুল ইসলাম, নাঈম হাসান, তানজিম হাসান, হাসান মাহমুদ।

জিম্বাবুয়ে একাদশ: ক্রেইগ আরভিন (অধিনায়ক), ব্রায়ান বেনেট, বেন কারান, ওয়েসলি মাধেভেরে, ওয়েলিংটন মাসাকাদজা, ভিনসেন্ট মাসেকেসা, ব্লেসিং মুজারাবানি, রিচার্ড এনগারাভা, টাফাডজোয়া সিগা, নিকোলাস ওয়েলচ, শন উইলিয়ামস।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উইক ট প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

বৈষম্য কেন? আদিবাসী নারী শ্রমিকরা পাই না সমান মজুরি

‘‘সাম্যের গান গাই-
আমার চক্ষে পুরুষ-রমণী কোনো ভেদাভেদ নাই।
বিশ্বের যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’’

কাজী নজরুল ইসলাম ‘নারী’ কবিতায় নারী-পুরুষের সমান অধিকারের কথা বলেছেন। কিন্তু, এ বৈষম্য সমাজের সর্বস্তরে এখনো রয়ে গেছে। দিনাজপুরের হাকিমপুরে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী নারী শ্রমিকেরা। পুরুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেও সমান মজুরি পাচ্ছেন না তারা।

হাকিমপুর উপজেলার বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পাড়া ঘুরে জানা যায়, বছরে আমন এবং ইরি মৌসুমে ধানের চারা রোপণ, ক্ষেত নিড়ানিসহ ধান কাটা-মাড়াইয়ের কাজ করেন নারী শ্রমিকেরা। পুরুষের পাশাপাশি সমান তালে এসব কাজ করেন তারা। এ কাজে পুরুষ শ্রমিকেরা ৫০০ টাকা দৈনিক মজুরি পেলেও নারী শ্রমিকেরা পান ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। শুধু ধানের মৌসুমেই নয়, অন্যান্য ফসলের ক্ষেতে কাজ করলেও তারা পুরুষের সমান মজুরি পান না। এই বৈষম্য দূর হলে আরেকটু স্বচ্ছল জীবনযাপন করা যেত বলে তারা মনে করেন।

হাকিমপুর পৌর এলাকা চন্ডিপুর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পাড়ার নারী শ্রমিক লক্ষ্মী হাসদা ও শান্তি সরেন বলেন, ‘‘আমরা বছরে দুই সিজন ধানের চারা রোপণসহ কাটা-মাড়াই করি। সকাল ৮ থেকে বিকেল ৫ পর্যন্ত কাজ করি। কিন্তু মজুরি কম পাই। পুরুষরা ৫০০ টাকা পেলে আমরা পাই সাড়ে ৩০০ টাকা। এটা কেমন নিয়ম?’’

অপর নারী শ্রমিক সুরুজ মনি হেম্ব্রন বলেন, ‘‘এখন তো হামরা তেমন কাম পাই না। আলু ও সরিষার মাঠে এখন মুসলমান বেটি ছোলরা কাম করে। আগে আমরাই করতাম, এখন অনেক কাম কমে গেছে। এরপর আবার পুরুষ মানুষের চেয়ে হামাক হাজিরাও কম দেয়। হারা (আমি) চলবো কি করে?’’

একই প্রশ্ন করেন হিলির তালতলার রানী হেম্ব্রন ও বিউটি হেম্ব্রন। শ্যামলী হাড্ডি বলেন, ‘‘এই বৈষম্যের কারণে আমরা স্বাবলম্বী হতে পারছি না। বৈষম্য দূর হলে আরেকটু ভালো করে চলতে পারতাম।’’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাকিমপুর উপজেলার ১ নাম্বার খট্রা-মাধবপাড়া ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান ছদরুল শামীম স্বপন বলেন, ‘‘আমরা জানি, নারী-পুরুষ সমান অধিকারী। কিন্তু, সমাজে নারী শ্রমিকেরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। তারা সঠিক মজুরি পায় না। আমি শ্রমিক ফেডারেশনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বলব- আপনারা এই বৈষম্য দূর করুন। নারীর ন্যায্য মজুরির ব্যবস্থা করুন।’’

খট্রা-মাধবপাড়া ইউনিয়ন শ্রমিক দলের সভাপতি শাহানুর আলম শাহিন বলেন, ‘‘আমাদের এই অঞ্চলে অনেক আদিবাসী নারী শ্রমিক আছেন, যারা বৈষম্যের শিকার। আমি গৃহস্থ এবং কৃষকদের বলতে চাই, আপনারা বৈষম্য না করে নারী-পুরুষ শ্রমিকদের সমান মজুরি দেবেন।’’

ঢাকা/তারা

সম্পর্কিত নিবন্ধ