রাষ্ট্র শ্রমিককে মর্যাদার দৃষ্টিতে না দেখলে তাদের কোনো অধিকারই প্রতিষ্ঠিত হবে না। শোভন কাজ, নিরাপদ কর্মপরিবেশ কিংবা পেশাগত স্বাস্থ্য নিরাপত্তা– এসব অধিকার আইন এবং নীতিমালার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকে যাবে। অথচ শ্রমিকের নিরাপত্তা তাঁর অধিকার, এটা দরকষাকষির বিষয় নয়। শ্রমিকের অধিকার প্রতিষ্ঠিত না হলে উৎপাদন কমে, রপ্তানি কমে। পরিণামে রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়। 
পেশাগত স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা সম্মেলনে গতকাল সোমবার এমন পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন বক্তারা। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সহযোগিতায় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর (ডিআইএফই) এ আয়োজন করে। রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শ্রম উপদেষ্টা ড.

এম সাখাওয়াত হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এএইচএম সফিকুজ্জামান ও আইএলওর কান্ট্রি ডিরেক্টর টুমো পোটিয়াইনেন। 

শ্রম উপদেষ্টা বলেন, ৫০ বছর ধরে শ্রম খাতে যেসব সংস্কার, উন্নয়ন কাজ করা হয়নি, সেগুলোর জন্য এখন চাপ তৈরি হয়েছে। সাত মাস ধরে এ খাতের অনেক সমস্যা মোকাবিলা করতে হচ্ছে। সম্প্রতি বিভিন্ন পোশাক কারখানায় শ্রম অসন্তোষ প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, শ্রম খাতে সংকট হলে কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। ত্রিপক্ষীয় কমিটি কিংবা অন্যান্য বিভাগ– সংকটকালে সব পক্ষকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। উপদেষ্টা বলেন, ‘শ্রম আইন মানা না হলে সরকারি টেন্ডারেও অংশ নেওয়া যাবে না। গতকাল বিএটি বাংলাদেশের কিছু লোক এসেছিল, যাদের ২০১৯ সালে ছাঁটাই করা হয়েছিল। আমি বিএটিকে বলেছি, আপনারা হয় আইন মেনে চলেন, না-হয় এ দেশ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে চলে যান। বাধ্য হয়ে এমন শক্ত কথা বলতে হয়েছে।’ 
আলোচনায় শ্রম সচিব বলেন, মানুষ নির্বিঘ্নে তার কর্মক্ষেত্রে যাবে, অথচ কাজের জায়গাগুলোকে যেন মৃত্যুকূপ বানিয়ে রাখা হয়েছে। শ্রম সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদনে যেসব সুপারিশ দিয়েছে, তার প্রতিটি বিষয় নিয়ে কাজ হবে। 

সম্মেলনে পেশাগত স্বাস্থ্য নিরাপত্তা বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডিআইএফইর যুগ্ম মহাপরিদর্শক মো. মতিউর রহমান এবং সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেইনিং বিভাগের পরিচালক হাসনাত এম আলমগীর।
মতিউর রহমান বলেন, ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের ঘটনার পরেও প্রায় প্রতিবছরই কমবেশি বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে। পেশাগত নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিতে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় এবং তাদের তদারকি কার্যক্রম আরও বাড়ানো প্রয়োজন।

সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেইনিং বিভাগের পরিচালক হাসনাত এম আলমগীর বলেন, পেশাগত ক্ষেত্রে অসুস্থতার বিষয়টি উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। শ্রমিকরা ঠিক সময়ে বেতন না পেলে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যে বিরূপ প্রভাব পড়ে। 
শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন বলেন, পেশাগত নিরাপত্তা মানুষের মৌলিক অধিকার, এটা দরকষাকষির বিষয় না। এটি যতদিন না ঠিক হবে ততদিন শিল্পও টেকসই হবে না। 
ডিআইএফইর মহাপরিদর্শক মো. ইমরুল মহসিন বলেন, দ্বন্দ্ব নিরসনে মালিক, শ্রমিক ও সরকার– প্রত্যেকের মাঝে এক ধরনের প্রতিপক্ষ মনোভাব কাজ করে। এই সুযোগে গরম তাওয়ায় কীভাবে রুটি ভেজে খাওয়া যায়, অনেকে সেই চেষ্টা করে। 
প্যানেল আলোচনায় বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান ও শ্রমবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সদস্য তাসলিমা আখতার বলেন, শ্রমিকের অধিকার প্রতিষ্ঠিত না হলে উৎপাদন কমে, রপ্তানি কমে। পরিণামে রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উপদ ষ ট প শ গত

এছাড়াও পড়ুন:

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইসরায়েলের হামলা

রবিবার বিকেল থেকে ইরানজুড়ে নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সামরিক স্থাপনার পাশাপাশি ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

রবিবার রাতে ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইদ খাতিবজাদেহ ইসরায়েলি হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে তিনি জানান, রবিবার রাজধানী তেহরানে ইসরায়েলি হামলায় ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খবর তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলুর।

এক্স-পোস্টে সাইদ বলেছেন, “ইসরায়েলের অপরাধী শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবনে ইচ্ছাকৃত এবং নির্মম হামলা চালিয়েছে।”

আরো পড়ুন:

ইসরায়েলের নতুন হামলায় ইরানের আইআরজিসির গোয়েন্দা প্রধান নিহত

ইসরায়েলে ৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান, তেল আবিব ও হাইফাতে সরাসরি আঘাত

উপ-মন্ত্রী আরো বলেন, “এই হামলায় বেশ কয়েকজন বেসামরিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন, আমার বেশ কয়েকজন সহকর্মীও আহত হয়েছেন, যাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।”

সাইদ বলেন, “এটি আরো একটি স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠীর চলমান ও নিয়মতান্ত্রিক আগ্রাসন অভিযানের অংশ।”

এর আগে শনিবার ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা তেহরানের অস্ত্র উৎপাদন ক্ষমতা ধ্বংস করার লক্ষ্যে ইরানের আইআরজিসি ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে রবিবার নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে।

বিবৃতিতে  বলা হয়, এই হামলায় ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি), গার্ডস কুদস ফোর্স এবং ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর অবকাঠামো লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আরো জানিয়েছে, ইরানজুড়ে অসংখ্য অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রে হামলা চালানো হয়েছে। 

ইরানি বার্তাসংস্থা তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই হামলায় আইআরজিসিরি গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি এবং তার সহকারী হাসান মোহাকিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া মোহসেন বাঘারি নামে আইআরজিসির আরো একজন জেনারেল নিহত হয়েছেন। এর প্রতিশোধ নিতে রবিবার রাতে ইসরায়েলে ৫০টি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও শতাধিক ড্রোন ছুড়েছে ইরান।

ইসরায়েলের ফায়ার ও রেসকিউ সার্ভিসের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, উত্তর ইসরায়েলে দুটি এবং হাইফায় একটি আবাসিক ভবনে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হানার খবর পেয়েছে তারা।

ইসরায়েলি জাতীয় জরুরি সেবা সংস্থা জানিয়েছে, হাইফায় ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে সাতজন আহত হয়েছেন। এছাড়া কিরিয়াত গাটের কাছে দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি শহরে একজন আহত হয়েছেন।

এ ঘটনায় ইসরায়েলি সেনাপ্রধান ইয়াল জামির ইরানের ওপর আক্রমণ আরো তীব্র করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একটি বিবৃতি জারি করে ইসরায়েরি সেনাপ্রধান বলেছেন, “আমরা আমাদের অভিযান তীব্রতর করে যাব এবং এটি করে, আগামী বছরগুলোতে আমাদের নিরাপত্তা জোরদার করব। আমরা জানতাম এর একটি মূল্য দিতে হবে এবং এটিই বোঝায় যে, আমরা কেন এখনই পদক্ষেপ নিয়েছি, তা অনেক দেরি হওয়ার আগেই।”

ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে ইসরায়েলি হামলায় ২২৪ জন নিহত এবং ৯০০ জন আহত হয়েছেন।

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ১৩ জন নিহত এবং ৩৭০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ