শ্রমিকের অধিকার প্রতিষ্ঠিত না হলে রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়
Published: 28th, April 2025 GMT
রাষ্ট্র শ্রমিককে মর্যাদার দৃষ্টিতে না দেখলে তাদের কোনো অধিকারই প্রতিষ্ঠিত হবে না। শোভন কাজ, নিরাপদ কর্মপরিবেশ কিংবা পেশাগত স্বাস্থ্য নিরাপত্তা– এসব অধিকার আইন এবং নীতিমালার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকে যাবে। অথচ শ্রমিকের নিরাপত্তা তাঁর অধিকার, এটা দরকষাকষির বিষয় নয়। শ্রমিকের অধিকার প্রতিষ্ঠিত না হলে উৎপাদন কমে, রপ্তানি কমে। পরিণামে রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
পেশাগত স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা সম্মেলনে গতকাল সোমবার এমন পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন বক্তারা। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সহযোগিতায় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর (ডিআইএফই) এ আয়োজন করে। রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শ্রম উপদেষ্টা ড.
শ্রম উপদেষ্টা বলেন, ৫০ বছর ধরে শ্রম খাতে যেসব সংস্কার, উন্নয়ন কাজ করা হয়নি, সেগুলোর জন্য এখন চাপ তৈরি হয়েছে। সাত মাস ধরে এ খাতের অনেক সমস্যা মোকাবিলা করতে হচ্ছে। সম্প্রতি বিভিন্ন পোশাক কারখানায় শ্রম অসন্তোষ প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, শ্রম খাতে সংকট হলে কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। ত্রিপক্ষীয় কমিটি কিংবা অন্যান্য বিভাগ– সংকটকালে সব পক্ষকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। উপদেষ্টা বলেন, ‘শ্রম আইন মানা না হলে সরকারি টেন্ডারেও অংশ নেওয়া যাবে না। গতকাল বিএটি বাংলাদেশের কিছু লোক এসেছিল, যাদের ২০১৯ সালে ছাঁটাই করা হয়েছিল। আমি বিএটিকে বলেছি, আপনারা হয় আইন মেনে চলেন, না-হয় এ দেশ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে চলে যান। বাধ্য হয়ে এমন শক্ত কথা বলতে হয়েছে।’
আলোচনায় শ্রম সচিব বলেন, মানুষ নির্বিঘ্নে তার কর্মক্ষেত্রে যাবে, অথচ কাজের জায়গাগুলোকে যেন মৃত্যুকূপ বানিয়ে রাখা হয়েছে। শ্রম সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদনে যেসব সুপারিশ দিয়েছে, তার প্রতিটি বিষয় নিয়ে কাজ হবে।
সম্মেলনে পেশাগত স্বাস্থ্য নিরাপত্তা বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডিআইএফইর যুগ্ম মহাপরিদর্শক মো. মতিউর রহমান এবং সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেইনিং বিভাগের পরিচালক হাসনাত এম আলমগীর।
মতিউর রহমান বলেন, ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের ঘটনার পরেও প্রায় প্রতিবছরই কমবেশি বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে। পেশাগত নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিতে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় এবং তাদের তদারকি কার্যক্রম আরও বাড়ানো প্রয়োজন।
সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেইনিং বিভাগের পরিচালক হাসনাত এম আলমগীর বলেন, পেশাগত ক্ষেত্রে অসুস্থতার বিষয়টি উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। শ্রমিকরা ঠিক সময়ে বেতন না পেলে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যে বিরূপ প্রভাব পড়ে।
শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন বলেন, পেশাগত নিরাপত্তা মানুষের মৌলিক অধিকার, এটা দরকষাকষির বিষয় না। এটি যতদিন না ঠিক হবে ততদিন শিল্পও টেকসই হবে না।
ডিআইএফইর মহাপরিদর্শক মো. ইমরুল মহসিন বলেন, দ্বন্দ্ব নিরসনে মালিক, শ্রমিক ও সরকার– প্রত্যেকের মাঝে এক ধরনের প্রতিপক্ষ মনোভাব কাজ করে। এই সুযোগে গরম তাওয়ায় কীভাবে রুটি ভেজে খাওয়া যায়, অনেকে সেই চেষ্টা করে।
প্যানেল আলোচনায় বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান ও শ্রমবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সদস্য তাসলিমা আখতার বলেন, শ্রমিকের অধিকার প্রতিষ্ঠিত না হলে উৎপাদন কমে, রপ্তানি কমে। পরিণামে রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন
চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।
লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।
চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।
লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।
প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।
লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।
লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’
তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?