এপ্রিল মাসকে ‘অ্যাডিনোমায়োসিস সচেতনতা মাস’ হিসেবে পালন করা হয়। এ মাসে বিশ্বজুড়ে মানুষকে অ্যাডিনোমায়োসিস নামক নারীদের বিশেষ এক গাইনোকোলজিক্যাল সমস্যার ব্যাপারে সচেতন করার জন্য প্রচারণা চালানো হয়।

অ্যাডিনোমায়োসিস কী

অ্যাডিনোমায়োসিস হলে জরায়ুর ভেতরের স্তরের (এন্ডোমেট্রিয়াম) কোষগুলো জরায়ুর পেশিতে (মায়োমেট্রিয়াম) অস্বাভাবিকভাবে প্রবেশ করে। এর ফলে জরায়ুর দেয়াল মোটা হয়ে যেতে পারে এবং হতে পারে মাসিকের সময় তীব্র ব্যথা ও ভারী রক্তপাত।

লক্ষণ

মাসিকের সময় তীব্র ব্যথা।

ভারী বা অনিয়মিত রক্তপাত।

তলপেটে চাপ বা ভারী অনুভব।

যৌনমিলনের সময় ব্যথা।

ঝুঁকি

অ্যাডিনোমায়োসিসের কিছু ঝুঁকি রয়েছে, যেমন:

বয়স: সাধারণত ৪০ থেকে ৫০ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে এটি বেশি দেখা যায়।

জরায়ুসম্পর্কিত পূর্ববর্তী অস্ত্রোপচার: সিজারিয়ান সেকশন করার পর ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।

চিকিৎসাপদ্ধতি

চিকিৎসাপদ্ধতি রোগীর উপসর্গ ও পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে

অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ওষুধ: ইবুপ্রোফেন মাসিকের ব্যথা ও অতিরিক্ত রক্তপাত নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

হরমোনাল চিকিৎসা: ইস্ট্রোজেন-প্রোজেস্টেরন কমবাইন্ড পিল, প্যাচ বা ভ্যাজাইনাল রিং অতিরিক্ত রক্তপাত ও ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। প্রোজেস্টিন-অনলি কনট্রাসেপটিভ যেমন আইইউডি বা কন্টিনিউয়াস পিল মাসিক বন্ধ করে দেওয়ার মাধ্যমে উপসর্গ কমাতে সাহায্য করে।

হিস্টেরেকটমি: যদি অন্যান্য চিকিৎসায় উপসর্গ নিয়ন্ত্রণ না হয়, তবে জরায়ু অপসারণ করা হয়, যা একমাত্র নিশ্চিত চিকিৎসাপদ্ধতি।

উপশম

গরম স্নান বা হিটিং প্যাড ব্যবহার: পেটের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।

ব্যথানাশক বা অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ওষুধ: ব্যথা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও পর্যাপ্ত বিশ্রাম: শরীরের সামগ্রিক সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।

সচেতনতার গুরুত্ব

অনেক নারী এ সমস্যার মুখোমুখি হলেও ঠিক বুঝতে পারেন না কেন হচ্ছে বা গুরুত্ব দেন না। সময়মতো সঠিক চিকিৎসা না পেলে অ্যাডিনোমায়োসিস জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করতে পারে। তাই সচেতনতা বাড়ানো, সঠিক তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া এবং সমর্থন তৈরি করাই এই মাসের মূল লক্ষ্য।

ডা.

শারমিন আব্বাসি, স্ত্রীরোগ, প্রসূতি ও বন্ধ্যত্ববিশেষজ্ঞ 

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স হ য য কর

এছাড়াও পড়ুন:

প্রায়ই গলা ব্যথায় ভুগছেন? কারণ ও প্রতিরোধের উপায় জেনে নিন

শীতের শুরুতে তাপমাত্রা কমে যাওয়া এবং বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ কমে যায়। কেউ কেউতো এই ঋতুতে প্রায়ই গলা ব্যথায় ভুগতে থাকেন। কারণ এই সময় ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ সহজে ছড়িয়ে পড়ে। গলার স্নায়ু ও টিস্যুতে জ্বালা, খসখসে ভাব এবং ব্যথার মতো উপসর্গ দেখা দেয়। গলা ব্যথা ছোট একটি সমস্যা মনে হলেও, এটি কথা বলা, খাওয়া-দাওয়া, এমনকি ঘুমের ওপরও বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। তাই শীতকালে এই ধরনের অস্বস্তি সম্পর্কে সচেতন হওয়া জরুরি। বিভিন্ন কারণে গলা ব্যথা হয়। 

ভাইরাসজনিত সংক্রমণ
সাধারণ সর্দি, ইনফ্লুয়েঞ্জা (ফ্লু) এবং কোভিড-১৯ সবচেয়ে বেশি গলা ব্যথার কারণ হয়ে থাকে। এসব ভাইরাস গলার ভেতরের টিস্যুকে আক্রান্ত করে ব্যথা, জ্বালাপোড়া বা খসখসে ভাব তৈরি করে।

আরো পড়ুন:

পেটে ভর দিয়ে ঘুমানোর প্রভাব 

শীতকালে কত সময় ধরে গোসল করা ভালো

ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ
স্ট্রেপ থ্রোট নামের এক ধরনের ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ তীব্র গলা ব্যথার জন্য দায়ী। এতে গলায় প্রচণ্ড ব্যথা, জ্বর এবং লালচে ভাব দেখা যায়।

অ্যালার্জি
ধুলোবালি, পোলেন, পশুর লোম ইত্যাদির প্রতি অ্যালার্জি থাকলে নাক ও গলা দিয়ে শ্লেষ্মা ঝরা বাড়ে, যা গলা ব্যথার কারণ হতে পারে।

শুষ্ক বাতাস
শীতকালে বাতাসে আর্দ্রতা কমে যায় এবং ঘরের ভেতরে হিটার ব্যবহারের কারণে পরিবেশ আরও শুষ্ক হয়। এতে গলার টিস্যু শুকিয়ে গিয়ে জ্বালা ও অস্বস্তি সৃষ্টি হয়।

ধূমপান
ধোঁয়ার রাসায়নিক উপাদান গলার ভেতরের অংশকে উত্তেজিত করে। এতে গলা শুকিয়ে যায় এবং ব্যথা বাড়ে।

অ্যাসিড রিফ্লাক্স
পেটের এসিড গলার দিকে উঠে আসলে সেখানকার টিস্যুতে জ্বালা ধরায় এবং ব্যথা হয়।

গলা ব্যথার সাধারণ উপসর্গ

গলায় ব্যথা বা খসখসে অনুভূতি গিলতে সমস্যা বা গলায় চাপ অনুভব গলা বা চোয়ালের গ্রন্থি ফুলে যাওয়া মুখের ভেতর লালভাব বা প্রদাহ স্বর ভাঙ্গা, কর্কশ বা দুর্বল হয়ে যাওয়া কখনো কখনো হালকা জ্বর, কাশি বা নাক বন্ধ হওয়া

গলা ব্যথা প্রতিরোধে কার্যকর উপায়

নিয়মিত হাত ধোওয়া
২০ সেকেন্ড ধরে সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধুলে সংক্রমণের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে। বাইরে থেকে এসে, খাওয়ার আগে, টয়লেট ব্যবহারের পরে হাত ধোওয়া অত্যন্ত জরুরি।

প্রচুর পানি ও গরম পানীয় পান
শীতকালে শরীর সহজে পানিশূন্য হয়ে যায়। পর্যাপ্ত পানি, স্যুপ বা গরম পানীয় পান করলে গলা আর্দ্র থাকে এবং ব্যথা কম হয়।

হিউমিডিফায়ার ব্যবহার
ঘরের বাতাসে আর্দ্রতা বাড়ালে গলার শুষ্কতা কমে যায়। বিশেষ করে ঘুমের সময় হিউমিডিফায়ার ব্যবহার খুব উপকারী।

জ্বালামূলক উপাদান থেকে দূরে থাকা
ধোঁয়া, কড়া গন্ধের ক্লিনার, স্প্রে, ধুলোবালি এগুলো গলা উত্তেজিত করে। এগুলো যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা উচিত।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো
ভিটামিন সি ও ডি সমৃদ্ধ খাবার, নিয়মিত ব্যায়াম ও পর্যাপ্ত ঘুম শরীরকে সংক্রমণ থেকে বাঁচাতে সাহায্য করে।

গলা ব্যথা উপশমে ঘরোয়া কার্যকর উপায়

লবণ-পানির গার্গল: গরম পানিতে অল্প লবণ মিশিয়ে দিনে কয়েকবার গার্গল করলে গলার ফোলা কমে এবং ব্যথা হ্রাস পায়।

মধু: এক চামচ মধু গলার ভেতরকে নরম করে এবং আরাম দেয়। তবে এক বছরের নিচের শিশুদের কখনো মধু দেওয়া যাবে না।

হার্বাল চা: ক্যামোমাইল, আদা বা লাইকোরিস রুট চা গলার প্রদাহ কমায় এবং শরীরকে আর্দ্র রাখে।

লজেন্স বা হার্ড ক্যান্ডি: এগুলো লালা নিঃসরণ বাড়ায়, যা গলা আর্দ্র রাখতে সাহায্য করে।

সাধারণত গলা ব্যথা কয়েক দিনের মধ্যে সেরে যায়। তবে নিচের অবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ জরুরি—

•  গলা ব্যথা ৭ দিনের বেশি স্থায়ী হলে
•  উচ্চতাপমাত্রার জ্বর, শ্বাস নিতে সমস্যা বা তীব্র ব্যথা থাকলে
•  গিলতে খুব বেশি কষ্ট হলে
•  গলায় সাদা দাগ বা পুঁজ দেখা দিলে

সূত্র: ফ্যামিলি কেয়ার সেন্টার

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রায়ই গলা ব্যথায় ভুগছেন? কারণ ও প্রতিরোধের উপায় জেনে নিন