রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ‘ভেঙে পড়া’ পুলিশি ব্যবস্থা ‘পুনরুদ্ধারে’ নানা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে শুরু হলো পুলিশ সপ্তাহ। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পুলিশ সপ্তাহ উদ্বোধন করেছেন। 

মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) সকাল ১০টায় রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের মধ্যদিয়ে পুলিশ সপ্তাহ-২০২৫ শুরু হয়। এবার মূল আয়োজন থাকছে তিন দিন।

গত বছরের ৫ অগাস্ট ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর দেশজুড়ে পুলিশি স্থাপনায় হামলা ও জনতার ক্ষোভের মুখে একরকম ভেঙে পড়েছিল পুলিশি ব্যবস্থা। আন্দোলনে পুলিশের ‘নৃশংস হওয়ার’ পেছনে কর্মকর্তাদের দায় দিয়ে ‘বিক্ষুব্ধ’ হয়ে উঠেছিলেন সদস্যরাও।

এমন প্রেক্ষাপটের পর পুলিশি ব্যবস্থা ‘কার্যকরে প্রয়াসের’ কথা জানিয়েছেন দায়িত্বরতরা। সংস্কার নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও নানান দাবি-দাওয়ার মুখে শুরু হলো এবারের পুলিশ সপ্তাহ। এবার আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারের দায়িত্বরতদের কাছে স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন, ক্ষতিপূরণ ভাতা, স্বতন্ত্র সাইবার ইউনিট গঠনসহ বেশকিছু দাবির কথা তুলে ধরা হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।

অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা মনোনীত পুলিশ সদস্যদের পদক প্রদান দেবেন। এরপর পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির (পুনাক) স্টল উদ্বোধন ও পরিদর্শন করবেন। দুপুরের পর প্রধান উপদেষ্টার ‘নির্দেশনার আলোকে প্রণীত’ কর্মপরিকল্পনার উপর ওয়ার্কশপ থাকবে।

দ্বিতীয় দিন সকাল থেকে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট কর্তৃক ‘প্রেজেন্টেশন’ এবং সন্ধ্যায় পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা ও সচিবদের সম্মেলন।

তৃতীয় দিনের শুরুতে আইজি’জ ব্যাজ প্রদান ও ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে আইজিপির সম্মেলন। এরপর প্রথমবারের মতো নাগরিকদের সাথে মতবিনিময় সভা থাকছে।

বিকেলে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন ও পুলিশ অফিসার্স মেসের বার্ষিক সাধারণ সভা এবং সন্ধ্যায় অবসরপ্রাপ্ত ও কর্মরত পুলিশ অফিসারদের পুনর্মিলনী।

চতুর্থদিন শুধু পুনাক সমাবেশ ও আনন্দমেলা এবং পুনাক স্টলের পুরস্কার বিতরণীর মাধ্যমে শেষ হবে এবারের পুলিশ সপ্তাহ।

এবারের পুলিশ সপ্তাহে সাহসিকতা ও সেবার জন্য মোট ৬২ জন পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্য পদক পাচ্ছেন। এর মধ্যে বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) পাচ্ছেন ২৮ জন আর রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম) পাচ্ছেন ৩৪ জন। তবে আন্দোলনের সময় প্রাণ হারানো কোনো পুলিশ সদস্যকে পদক দেওয়া হয়নি।

সংখ্যার দিক দিয়ে এবার পদক প্রাপ্তদের সংখ্যা গত বছরগুলোর তুলনায় অনেক কম। বছরজুড়ে ভালো কাজ, গুরুত্বপূর্ণ মামলার রহস্য উদঘাটন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, দক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, সততা ও শৃঙ্খলামূলক আচরণ, সাহসকিতাপূর্ণ কাজের জন্য চারটি ক্যাটাগরিতে (বাংলাদেশ পুলিশ পদক- বিপিএম সাহসিকতা ও সেবা এবং প্রেসিডেন্ট পুলিশ পদক- পিপিএম সাহসিকতা ও সেবা) পদক দেওয়া হয়। বিগত বছরগুলোতে শতাধিক, এমনকি ২০১৯ সালে রেকর্ড সংখ্যক ৩৪৯ জন পুলিশ সদস্যকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়।

প্রশংসনীয় ও ভালো কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পুলিশের ২৬৮ কর্মকর্তা ও সদস্য পাচ্ছেন ‘পুলিশ ফোর্স এক্সেমপ্ল্যারি গুড সার্ভিস ব্যাজ’। পুলিশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এ পুরস্কার এবারের পুলিশ সপ্তাহের অনুষ্ঠানের তৃতীয় দিন প্রদান করবেন আইজিপি। গত বছর এই ব্যাজ পেয়েছিলেন ৪৮৮ কর্মকর্তা ও সদস্য।

পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত আছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলমসহ বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

ঢাকা/মাকসুদ/ইভা 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প ল শ কর মকর ত প ল শ পদক সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

শুল্ক হ্রাসে আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই, আরো কমাতে আলোচনার পরামর্শ

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক হ্রাসে আত্মতুষ্টির কোনো সুযোগ নেই মন্তব্য করে শুল্ক আরো কমাতে আলোচনার পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদ হাসান খান।

তিনি বলেন,“বাংলাদেশ থেকে পণ্য রপ্তানির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক হ্রাসে আত্মতুষ্টির কোনো সুযোগ নেই। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ নির্বাহী আদেশে স্পষ্ট বলেছে, বেশকিছু দেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বা নিরাপত্তা চুক্তি আলোচনা এখনো চলমান রয়েছে, যেগুলো সম্পাদিত হলে এসব দেশের শুল্ক আরো কমতে পারে। তাই বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক হ্রাস আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে।”

শনিবার (২ আগস্ট) রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ সভাকক্ষে বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান এসব কথা বলেন।

আরো পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্রে বারে গুলিতে নিহত ৪, সন্দেহভাজন পলাতক

৩০ বছরের হিমায়িত ভ্রুণ থেকে জন্ম নিলো জীবিত শিশু

তিনি বলেন, “প্রথমেই আমি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি, তারা একটি ভারসাম্যপূর্ণ শুল্ক কাঠামো ঘোষণা করেছে। যেটি বিগত প্রায় ৪ মাস যাবৎ আমাদের আমাদের উদ্বেগের কারণ ছিল। বাংলাদেশ থেকে অতিরিক্ত আমদানি শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ পুননির্ধারণ করা হয়েছে। যা আমাদের প্রধান পোশাক রপ্তানিকারী প্রতিযোগীদের তুলনায় সমান বা কাছাকাছি এবং কিছু প্রধান প্রতিযোগী যেমন চীন (৩০ শতাংশ) ও ভারতের (২৫ শতাংশ) তুলনায় কম।”

বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, “আমরা অত্যন্ত কৃতজ্ঞতার সাথে বলতে চাই আমাদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, বিশেষ করে বাণিজ্য উপদেষ্টা, নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও তাদের টিম এই কঠিন আলোচনার সময় যেভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তা প্রশংসনীয়। তাদের প্রচেষ্টাতেই বাংলাদেশ একটি বিপর্যয় এড়াতে পেরেছে।”

মাহমুদ হাসান খান বলেন, “এই ফলাফল একদিনে আসেনি, যাত্রাটি ছিল অনেক চ্যালেঞ্জের।২ এপ্রিল যখন যুক্তরাষ্ট্র ‘লিবারেশন ডে ট্যারিফ’ নামে নতুন শুল্ক ঘোষণা করল, তখন বাংলাদেশের ওপর ৩৭ শতাংশ ধার্য করা হয়। তখন ভারতের ওপর ২৬ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়া ৩২ শতাংশ ও পাকিস্তানের ওপর ৩০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হলো। এটা আমাদের রপ্তানি বাণিজ্যের জন্য একটি বড় হুমকি হিসেবে আবির্ভূত হয়। কারণ এত বড় শুল্ক ব্যবধানে বাজার ধরে রাখা সম্ভব নয়। আমাদের মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ২০ শতাংশ আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে, আর দেশটিতে আমাদের মোট রপ্তানির ৮৭ শতাংশ হয় তৈরি পোশাক পণ্য।”

বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, “গোপনীয়তা রক্ষা চুক্তির কারণে বেসরকারি খাত এই আলোচনায় সরাসরি সম্পৃক্ত ছিল না। তাই রপ্তানিকারক ও ক্রেতাদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছিল, ‘কী হতে যাচ্ছে?’ আমরা সত্যিই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলাম। যখন দেখলাম ২ জুলাই ভিয়েতনামের ওপর শুল্ক ৪৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশে নামিয়ে আনা হলো। আর প্রায় তিন মাস নেগোশিয়েশনের পর ৭ জুলাই আমাদের ওপর শুল্ক মাত্র ২ শতাংশ কমিয়ে ৩৫ শতাংশ করা হলো, তবে পুনরায় আলোচনার জন্য ৩১ জুলাই পর্যন্ত সময় পাওয়া যায়। এরই মধ্যে পরবর্তী ২ সপ্তাহে ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনও ১৯ শতাংশ হারে সমঝোতায় পৌঁছায়।”

তিনি বলেন, “আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি আলোচনায় সম্পৃক্ত হতে। সব রকম তথ্য-বিশ্লেষণ দিয়ে সরকারকে সহায়তা করতে। আমরা চেষ্টা করেছি যেন বিষয়টিকে সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ গুরত্ব দেওয়া হয়। এছাড়া আমরা বিজিএমইএর পক্ষ থেকে সম্ভাব্য সবার সাথে যোগাযোগ করেছি। এমনকি আমরা ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস ও অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গেও বৈঠক করেছি।”

মাহমুদ হাসান খান বলেন, “বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যে ২০ শতাংশ শুল্ক অবধারিতভাবে আমাদের পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়াবে। যেখানে শিল্পগুলো আগে থেকেই ঊর্ধ্বমুখী উৎপাদন ব্যয়ের সঙ্গে তাল মেলাতে প্রাণান্তকরভাবে যুদ্ধ করছে। এক্ষেত্রে সরকারকেও এগিয়ে আসতে হবে। বিশেষ করে ছোট ও মাঝারি কারখানাগুলো যাতে করে ব্যবসা থেকে ছিটকে না পড়ে, তা সরকারকে নজরদারিতে রাখতে হবে। আমরা একান্তভাবে আশা করি, শিল্প ও দেশের স্বার্থে সরকারের সকল নীতি সহায়তা চলমান থাকবে।” 
“এনবিআরসহ সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরের দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে, বিশেষ করে কাস্টমস সংক্রান্ত নীতিগুলো শিল্পবান্ধব হবে, চট্টগ্রাম বন্দরের দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে এবং শিল্প নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ পাবে।”

তিনি বলেন, “মার্কিন রপ্তানির প্রায় ৭৫ শতাংশ হচ্ছে আমাদের তুলাভিত্তিক পোশাক। শুল্ক সংক্রান্ত নির্বাহী আদেশে বলা আছে, যদি নূন্যতম ২০ শতাংশ আমেরিকার কাঁচামাল (যেমন আমেরিকার তুলা) ব্যবহার করা হয়, তাহলে আমেরিকার কাঁচামালের মূল্যের ওপর এই অতিরিক্ত ২০ শতাংশ শুল্ক প্রযোজ্য হবে না। অর্থাৎ আমেরিকার কাঁচামাল ব্যবহার করলে আমরা বাড়তি কিছু শুল্ক ছাড় পাব।”

ঢাকা/নাজমুল/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ