কাশ্মীর ইস্যুতে ট্রাম্পের সহায়তা চাইলেন পাক-কূটনীতিক
Published: 1st, May 2025 GMT
পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে চলমান উত্তেজনা প্রশমনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সহায়তা চেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত রিজওয়ান সাঈদ শেখ। বুধবার নিউজউইককে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ আহ্বান জানান তিনি।
গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হন। ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দোষারোপ করলেও, এর পক্ষে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি। অন্যদিকে, পাকিস্তানের সামরিক ও বেসামরিক নেতৃত্ব এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছে।
ট্রাম্পের কথা উল্লেখ করে নিউজউইককে রিজওয়ান সাঈদ শেখ বলেন, এই মুহূর্তে বিশ্বে শান্তির পক্ষে অবস্থান নেওয়া একজন প্রেসিডেন্টের কাছে কাশ্মীর ইস্যুর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কিছু হতে পারে না।
তিনি বলেন, এখানে কেবল দুই প্রতিবেশী দেশ নয়, বরং পরমাণু শক্তিধর দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধের শঙ্কা রয়েছে।
রিজওয়ান সাঈদ বলেন, পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে উদ্ভূত সংকট নিরসনে ট্রাম্প প্রশাসনের উচিত একটি দীর্ঘস্থায়ী ও কার্যকর শান্তি উদ্যোগ নেওয়া, যেন ভবিষ্যতে এই উত্তেজনা বারবার ফিরে না আসে। তিনি কাশ্মীর সমস্যাকে ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার মূল কারণ বলে উল্লেখ করেন।
রাষ্ট্রদূত বলেন, যতক্ষণ না এটি চূড়ান্ত নিষ্পতি না হয় এবং নির্ধারিত সমাধানের নির্দেশ না দেওয়া হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত এই সমস্যাগুলো চলতেই থাকবে।
তিনি আরও বলেন, এ কারণেই আমরা যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যদের এই পরিস্থিতিতে ভূমিকা রাখার এবং সংঘাত নিরসনের অংশটি সক্রিয় করার ওপর জোর দিচ্ছি।
রাষ্ট্রদূত বলেন, দীর্ঘদিনের এই বিরোধ নিষ্পত্তি হলে দক্ষিণ এশিয়ার জনগণ শান্তিতে বসবাস করতে পারবে।
রিজওয়ান সাঈদ আরও বলেন, আমরা যুদ্ধ করতে চাই না। কিন্তু আমরা মর্যাদার সঙ্গে শান্তি চাই। এটি আমাদের অর্থনৈতিক এজেন্ডার সঙ্গে খাপ খায় ও আমাদের জাতিসত্তার সঙ্গেও মানানসই। যদি এটি চাপিয়ে দেওয়া হয়, তবে আমরা অসম্মানের সঙ্গে বেঁচে থাকার চেয়ে সম্মানের সঙ্গে মরতে পছন্দ করব।
একইদিন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও পাকিস্তান ও ভারতের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এ সময় ভারতকে ‘দায়িত্বশীল আচরণ’ করতে যুক্তরাষ্ট্রের চাপ সৃষ্টির অনুরোধ জানান।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেন, রুবিও উভয় দেশকে সরাসরি যোগাযোগ পুনরায় শুরু করে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। সূত্র: ডন
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র ন স ঈদ র জওয
এছাড়াও পড়ুন:
খুলনায় এক মাসে ১৩ লাশ উদ্ধার, বাড়ছে উদ্বেগ
বাড়িতে ঝগড়া চলছিল বড় ভাই ও ভাবির। ছোট ভাই এসে ঝগড়া থামানোর চেষ্টা করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বড় ভাই ছোট ভাইয়ের মাথায় শাবল দিয়ে আঘাত করেন। মাটিতে লুটিয়ে পড়লে ধারালো বঁটি দিয়ে ছোট ভাইকে হত্যা করেন। পরে বড় ভাই শহিদুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি এখন কারাগারে। ঘটনাটি ঘটেছে গত ৩০ মে, খুলনার কয়রা উপজেলার বাগালী ইউনিয়নের উলা গ্রামে।
এর আগে ২৭ মে কয়রার ইসলামপুর গ্রামের কয়রা নদীর চর থেকে শিকলে বাঁধা অবস্থায় আবদুল মজিদ (৬২) নামের এক বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ছাড়া ৮ জুন কয়রার কাছারিবাড়ি বাজার-সংলগ্ন পুকুর থেকে নমিতা (৪০) নামের এক নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়।
১০ জুন কয়রা সদরের গোবরা সড়কে এক ভ্যানচালকের সঙ্গে এক মোটরসাইকেলচালকের কথা-কাটাকাটিকে কেন্দ্র করে দুই গ্রামের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে আহত হন অন্তত ১৫ জন। ঘটনায় ১২ জনকে আসামি করে থানায় মামলাও হয়েছে। এ ছাড়া কথা-কাটাকাটির জেরে কয়রার পল্লীমঙ্গল গ্রামে গত তিন দিনে কয়েক দফা মারামারি, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
অসন্তোষ-দ্বন্দ্বের জেরে কয়রা উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় হত্যা–সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। ১০ মে থেকে ৯ জুন পর্যন্ত এক মাসে খুলনার ১০টি থানা এলাকায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনাসহ ১৩টি লাশ উদ্ধার হয়েছে। এ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে।
কয়রা কপোতাক্ষ মহাবিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষক বিদেশ রঞ্জন মৃধা বলেন, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উপাদান কমে যাওয়ায় মানুষ অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে। মূল্যবোধ ও ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্ব ও ভালোবাসা কমে যাচ্ছে। এতে খুনখারাবি বাড়ছে। একসময় সমাজের একজনের ভালোতে সবাই আনন্দ পেতেন। নেতিবাচক দিকগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করতেন। এখন সেই ব্যবস্থা উঠেই গেছে বলা যায়। পাশাপাশি রাজনৈতিক আধিপত্যের লড়াইয়ে প্রভাববলয় সৃষ্টি করতেও সহিংসতার ঘটনা ঘটছে।
৩ জুন খুলনা শহরে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে সবুজ হাওলাদার (৩০) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়। ৪ জুন খুলনা সদর থানার মতিয়াখালী খালের মধ্যে আটকে ছিল এক নারীর মরদেহ। পরে পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। ওই নারীর পরিচয় না পেয়ে বেওয়ারিশ হিসেবে আঞ্জুমান মুফিদুলে দাফন করা হয়। গত ৯ জুন বিকেলে রূপসা উপজেলার আঠারোবেকী নদীতে পাওয়া যায় অজ্ঞাতনামা যুবকের মরদেহ। মরদেহের শ্বাসনালিতে গভীর ক্ষতচিহ্ন ছিল। রূপসা নৌ পুলিশের ওসি আবুল খায়ের বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, এটি একটি হত্যাকাণ্ড।
এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে রহস্য উদ্ঘাটন ও অপরাধী শনাক্তে দীর্ঘসূত্রতার কারণেই অপরাধ বেড়ে চলেছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ মানবাধিকার ব্যুরোর কয়রা উপজেলা শাখার সভাপতি তরিকুল ইসলাম। তাঁর ভাষ্য, প্রতিটি ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত শেষে দোষীদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারলে অপরাধপ্রবণতা কমে আসবে। আইনি প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতার কারণে অপরাধ বেড়ে চলেছে।
কয়রা উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুলী বিশ্বাস বলেন, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনায় এলাকার মানুষের মধ্যে উৎকণ্ঠা বাড়ছে, এটা ঠিক। তবে প্রতিটি ঘটনায় পুলিশও তাৎক্ষণিকভাবে আইনি ব্যবস্থা নিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। যে বিষয়গুলো পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সামাজিক ভ্রাতৃত্ববোধের মধ্য দিয়ে সমাধান করা যায়, সেখানে খুনাখুনি, অস্থিরতা, মামলা-হামলার মধ্য দিয়ে একধরনের বিভীষিকাময় পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে; যা সবার জন্যই অকল্যাণকর ও ভয়ানক।