উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালের প্রথম লেগে ইন্টার মিলানের সঙ্গে ৩-৩ গোলে ড্র করেছে বার্সেলোনা। ফিরতি লেগের আগে কিছুটা দুশ্চিন্তায় ছিল দলটি। কারণ, ইনজুরিতে পড়েছেন তাদের অন্যতম নির্ভরযোগ্য ডিফেন্ডার জুলেস কুন্ডে। তবে সেই দুশ্চিন্তার মাঝে আশার আলো দেখিয়েছেন বার্সা কোচ হান্সি ফ্লিক।

দীর্ঘদিন পর দলের নিয়মিত গোলরক্ষক মার্ক-আন্দ্রে টার স্টেগান ফিরছেন মাঠে। হাঁটুর ইনজুরির কারণে গত সেপ্টেম্বর থেকে বাইরে থাকা এই জার্মান গোলরক্ষক লা লিগায় রিয়াল ভায়াদোলিদের বিপক্ষে ম্যাচে খেলবেন বলে জানিয়েছেন ফ্লিক। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি চ্যাম্পিয়নস লিগে ইন্টারের বিপক্ষেও মাঠে নামবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

কোচ ফ্লিক বলেন, “মার্ক ফিরছে। সে খুব ভালো অবস্থায় আছে। অনুশীলনে তার পারফরম্যান্স দারুণ। এখন আমাদের দ্বিতীয় লেগের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।”

আরো পড়ুন:

রোনালদোর দল লা লিগা থেকে অবনমিত

বার্সার সঙ্গে পয়েন্টের ব্যবধান কমাল রিয়াল

এদিকে বার্সা কিছুটা ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দল সাজাবে ভায়াদোলিদের বিপক্ষে ম্যাচে। তবে প্রতিপক্ষ দ্বিতীয় বিভাগে নেমে গেলেও, ম্যাচটি হালকাভাবে নিচ্ছেন না ফ্লিক। তিনি বলেন, “লা লিগা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিরোপা। এটা সত্যিকারের পরিশ্রমের ফল। ভায়াদোলিদ এখনো লা লিগার দল। তাদের যথাযথ সম্মান জানিয়ে আমরা মনোযোগ ধরে রাখছি। এমন ম্যাচেই লিগ শিরোপা হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে।”

এই মুহূর্তে বার্সেলোনা লা লিগার পয়েন্ট টেবিলে শীর্ষে রয়েছে, রিয়াল মাদ্রিদের চেয়ে চার পয়েন্ট এগিয়ে। আগামী রোববার ( ১১ মে) এল ক্লাসিকো। তার আগে পাঁচ ম্যাচ বাকি থাকায় ফ্লিক শিরোপা দৌড়ে সামান্য ভুলেরও সুযোগ রাখতে চান না।

তবে কিছু ইনজুরি সমস্যা এখনও বার্সার চিন্তার কারণ। আলেহান্দ্রো বালদে, রবার্ট লেভানডভস্কি ও মার্ক কাসাদো এখনও মাঠে ফিরতে পারেননি। তবে তারা ইন্টারের বিপক্ষে ফিরতি লেগে খেলার জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

ঢাকা/আমিনুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ টবল ইন ট র

এছাড়াও পড়ুন:

চিনি-লবণের অনুপম পাঠ

চিনি আর লবণ– দুটিই সাদা ও ঝকঝকে। বাহ্যিক দৃষ্টিতে এক হলেও তাদের স্বাদ সম্পূর্ণ ভিন্ন। এই সরল অথচ গভীর সত্যটি আমাদের চারপাশের সমাজের প্রতিচ্ছবি। আজ যখন মানুষ শুভাকাঙ্ক্ষীর মুখোশ পরে এগিয়ে আসে, আমরা বুঝতে পারি না– কে চিনি, কে লবণ। এই বিভ্রমের মধ্য দিয়েই প্রবাহিত হচ্ছে বিশ্বাস ও অবিশ্বাসের চিরন্তন দ্বন্দ্ব। তার ফলে সমাজে জন্ম নিচ্ছে ভাঙন, ক্ষয় ও ব্যথার করুণ কাব্য।

শুভাকাঙ্ক্ষী সেজে প্রতারণার ছায়া আজ সমাজের অলিগলিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কখনও বন্ধুত্বের আবরণে, কখনও আত্মীয়তার মোড়কে, আবার কখনও নির্ভরতার চাদরে ঢাকা পড়ে থাকা বিশ্বাসঘাতকতা আমাদের বারবার আহত করে। রাজনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষাঙ্গন বা পারিবারিক জীবন– বিশ্বাসের অবক্ষয়ের নির্মম চিত্র আজ সর্বত্র বিদ্যমান। সবচেয়ে আপন বলে যার হাত ধরেছি, সেই হাত কখন যে ছুরি হয়ে ফিরে আসে– বলা দুষ্কর।

সম্প্রতি রাজধানীর উপকণ্ঠে ঘটে যাওয়া এক ঘটনা আমাদের ব্যথিত করেছে। বৃদ্ধ মা তাঁর তিন সন্তানকে অকুণ্ঠ বিশ্বাস করে সব সম্পত্তি লিখে দেন। সন্তানরা কথা দিয়েছিল– শেষ দিন পর্যন্ত মায়ের পাশে থাকবে। কিন্তু দলিলের কালি শুকানোর আগেই মাকে উঠিয়ে দেওয়া হয় বৃদ্ধাশ্রমে। মায়ের চোখের জল তখন ছিল মূল্যহীন; সম্পদের নেশাই ছিল মূল।

অন্যদিকে দীর্ঘদিনের ‘বিশ্বস্ত’ বন্ধু ব্যবসার আড়ালে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে অদৃশ্য হয়েছে রাতের অন্ধকারে। এসব গল্প আজ প্রতিটি নগর-পল্লীর অলিগলিতে ছড়িয়ে পড়েছে। সম্পর্কের পবিত্রতা আজ যেন লোভ ও মুনাফার কাছে নতজানু।

বিশ্বাসভঙ্গের যন্ত্রণা কোনো দাগের মতো নয়, যা সময়ের সঙ্গে মুছে যায়। বরং এটি মনে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে। একজনের আঘাত শুধু তার নিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না; ছড়িয়ে পড়ে সমাজজুড়ে। গড়ে ওঠে এক অবিশ্বাসের দেয়াল, যেখানে একে অপরকে সন্দেহের চোখে দেখা হয়। সম্পর্কের উষ্ণতা ক্রমে ঠান্ডা হতে হতে বরফে পরিণত হয়, যা গলাতে লাগে যুগের পর যুগ।

ভোগবাদী সভ্যতা মানুষকে করে তুলেছে আত্মকেন্দ্রিক। মূল্যবোধের অবক্ষয়, নৈতিকতার সংকট এবং তাৎক্ষণিক লাভের মোহে সম্পর্কও আজ মুনাফার মাপে মাপা হয়। বন্ধুত্ব, আত্মীয়তা, প্রেম– সবকিছু যেন পরিণত হয়েছে একেকটি চুক্তিতে। ‘কে কতটা কাজে লাগবে’– এই প্রশ্নই আজ সম্পর্কের মানদণ্ড। তবে সব আলো নিভে যায়নি। অন্ধকার যত গভীর হোক, এক টুকরো মোমবাতি গোটা ঘর আলোকিত করতে পারে। এই সংকটময় সময়ে আমাদের প্রয়োজন আত্মসমালোচনা ও মূল্যবোধের পুনর্জাগরণ। ব্যক্তিগতভাবে সতর্ক হতে হবে। কাউকে অন্ধভাবে বিশ্বাস না করে, যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আবেগের তাড়নায় নয়, বিবেকের আলোয় বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। পারিবারিক শিক্ষাকে মজবুত করতে হবে। শিশুর মনে শৈশব থেকেই সততা, বিশ্বস্ততা ও মানবিকতার বীজ বপন করতে হবে। পরিবারই হচ্ছে ব্যক্তিত্ব গঠনের মূল কেন্দ্র। তা ছাড়া রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। প্রতারণা ও বিশ্বাসভঙ্গের ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে, যাতে সমাজে ন্যায়বোধ প্রতিষ্ঠা পায়। পাশাপাশি গণমাধ্যম ও সামাজিক সংগঠনগুলোকে নৈতিক চেতনা জাগিয়ে তোলার ক্ষেত্রে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে হবে। তবু এই অন্ধকারে কিছু আলোকবর্তিকা রয়েছেন, যারা এখনও বিশ্বাসের মানদণ্ডে অবিচল। যাদের জীবন শুধু নিজের জন্য নয়, অপরের কল্যাণে নিবেদিত। সংকটে পাশে দাঁড়ানো, নিঃস্বার্থ ভালোবাসা বিলানো– এটাই তাদের ধর্ম। এরা প্রমাণ করে– বিশ্বাস এখনও বিলুপ্ত হয়নি পুরোপুরি। শুধু খুঁজে নিতে জানতে হবে।

পরিশেষে, চিনি ও লবণের বাহ্যিক সাদার ভ্রম নয়, আসল স্বাদ বোঝার সক্ষমতা অর্জন করাই আজ সময়ের দাবি। মানুষকে তার কার্যকলাপের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করতে হবে; বাহ্যিক মোহের ফাঁদে পা না দিয়ে। অন্ধবিশ্বাস নয়– সচেতন, বিবেকবান বিশ্বাসের ওপর দাঁড়িয়ে গড়ে তুলতে হবে সম্পর্কের ভিত।

মুহাম্মদ ইমাদুল হক প্রিন্স: ডেপুটি রেজিস্ট্রার, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বোরো ধানে নামছে চালের দর উত্তাপ সবজির বাজারে
  • সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা: বৈশ্বিক হুমকি ও স্থানীয় সংস্কার
  • বোরো ধানে নামছে চালের দর, উত্তাপ সবজির বাজারে
  • পাঁচ কোটির ক্লাবে জংলি, প্রযোজক জানালেন ব্লকবাস্টারের অপেক্ষায়
  • তালপাতার পাখা: প্রয়োজন কমেছে, আবেদন কমেনি
  • র‍্যাংকিংয়ে মিরাজ-জাকেরদের অগ্রগতি
  • চিনি-লবণের অনুপম পাঠ
  • বিদ্যালয়ের ১৮টি গাছ বিক্রি করলেন প্রধান শিক্ষক 
  • কর্ণাটকে ক্রিকেট খেলার সময় বচসা, যুবককে পিটিয়ে হত্যা