সারাদেশে ২৩ মে বিক্ষোভ করবে হেফাজত ইসলাম
Published: 3rd, May 2025 GMT
চার দাবি আদায়ে দুটি কর্মসূচি ঘোষণা করে মহাসমাবেশ শেষ করেছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। নারীর ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় আগামী তিন মাসের মধ্যে বিভাগীয় সম্মেলন এবং ২৩ মে বাদ জুমা চার দফা দাবিতে দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবে সংগঠনটি।
আজ শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশে দুই কর্মসূচি ঘোষণা করেন হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব সাজিদুর রহমান।
এর আগে আজ সকালে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিলসহ চার দফা দাবিতে মহাসমাবেশ শুরু করে হেফাজতে ইসলাম। সকাল ৯টায় সমাবেশ শুরু হয়ে শেষ হয় দুপুর সোয়া ১টায়। এতে সভাপতিত্বে করছেন হেফাজতের আমির মাওলানা শাহ্ মুহিব্বুল্লাহ্ বাবুনগরী। সমাবেশে দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেমরা বক্তব্য দেন।
হেফাজতে ইসলামের দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন, আজকের মহাসমাবেশের মুখ্য দাবি মূলত চারটি। এর মধ্যে প্রধান দাবি হচ্ছে, অনতিবিলম্বে হেফাজত নেতাদের নামে থাকা সব মামলা প্রত্যাহার। সংগঠনটির হিসাবমতে, সারা দেশে হেফাজত নেতাদের নামে প্রায় ৩০০টি মামলা রয়েছে। এ ছাড়া ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে হত্যাকাণ্ড, ২০২১ সালের মার্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফর ঘিরে হত্যাকাণ্ড, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচার। এরপর যথাক্রমে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিল, সংবিধানের প্রস্তাবনায় আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনর্বহাল করা, ফিলিস্তিন ও ভারতে মুসলিম গণহত্যা ও নিপীড়ন বন্ধের দাবিগুলো থাকবে।
এদিকে মহাসমাবেশ থেকে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধসহ ১২ দফা দাবি জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম।
দাবিগুলো হলো-
১.
২. সংবিধানের মূলনীতিতে আল্লাহর ওপরে পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনঃস্থাপন করতে হবে। ধর্মপ্রাণ গণমানুষের ঈমান ও আমল রক্ষার্থে বহুত্ববাদ নামক আত্মঘাতী ধারণা থেকে সরকারকে সরে আসতে হবে। এছাড়া লিঙ্গ পরিচয়, লিঙ্গ বৈচিত্র্য, লিঙ্গ সমতা, তৃতীয় লিঙ্গ বা থার্ড জেন্ডার ইত্যাদি শব্দের মারপ্যাঁচে, কাউকে বাদ দিয়ে নয়; এমন ধোঁয়াশাপূর্ণ স্লোগানের অন্তরালে এবং অসাম্প্রদায়িক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শব্দের আড়ালে এলজিবিটি ও ট্রান্সজেন্ডারবাদের স্বীকৃতি ও অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে সমাজবিধ্বংসী ধর্মবিরুদ্ধ সমকামীবান্ধব সমাজ প্রতিষ্ঠার পাঁয়তারা বন্ধ করতে হবে।
৩. শাপলা চত্বর ও জুলাই গণহত্যার বিচারে গতি আনতে ট্রাইব্যুনালে সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি করতে হবে। জাতীয় নির্বাচনের আগেই শেখ হাসিনা ও তার চিহ্নিত দোসরদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
৪. গণহত্যাকারী ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী দল হিসেবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করব বিচার নিশ্চিত করতে হবে। বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তাদের কার্যক্রম ও তৎপরতা নিষিদ্ধ করতে হবে।
৫. আল্লাহ ও তার রাসুল (সা.) এর নামে কটূক্তিকারী ও বিষোদ্গার বন্ধে কঠোর আইন করতে হবে। গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে ধর্মীয় অবমাননা সংক্রান্ত শাস্তির আইনি ধারাগুলো বাদ দেওয়ার সুপারিশ বাতিল করতে হবে। এ ব্যাপারে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না।
৬. চট্টগ্রামে উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের হাতে শহীদ সাইফুল ইসলাম হত্যার উসকানিদাতা চিন্ময় দাসের জামিন প্রত্যাহারপূর্বক তার দৃষ্টান্তমূলক বিচার করতে হবে।
৭. ফ্যাসিস্ট হাসিনার শাসনামলে সারাদেশে প্রতিবাদী আলেম-ওলামা ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও ইসলামমনা তরুণদের বিরুদ্ধে হওয়া মিথ্যে ও বানোয়াট সব মামলা অতিসত্ত্বর প্রত্যাহার বা নিষ্পত্তি করতে হবে অন্তর্বর্তী সরকারকে। সেই সঙ্গে জঙ্গি নাটক বা জঙ্গি কার্ড খেলে বাংলাদেশকে ইসলামপন্থি ও আলেম-ওলামাদের গত ১৫ বছর যারা নির্যাতন চালিয়েছিল; তাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
৮. গাজার মুসলমানদের ওপর অবৈধ রাষ্ট্র ইসরায়েলের চলমান গণহত্যা ও ভারতে সংখ্যালঘু মুসলিম নির্যাতনের প্রতিবাদে আমাদের গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী এই সরকারকে কূটনৈতিকভাবে আরও উচ্চকণ্ঠ হতে হবে এবং দেশের সর্বস্তরের জনতাকে ইসরায়েলি ভারতীয় পণ্য বয়কট করতে হবে।
৯. ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশ। শিক্ষার প্রাথমিক পর্যায়ে থেকে উচ্চ পর্যায় পর্যন্ত সবপর্যায়ে ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করতে হবে।
১০. রাখাইনকে মানবিক করিডর প্রদানে সরকারের সম্মত হওয়া সম্পূর্ণরূপে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। আমাদের ভৌগোলিক নিরাপত্তার স্বার্থে এ অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত থেকে সরকারকে অবশ্যই অনতিবিলম্বে ফিরে আসতে হবে।
১১. চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চলে ভিনদেশি মিশনারি অপতৎপরতা ও দৌরাত্ম্য বন্ধে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে বাংলাদেশে ভৌগোলিক ও খণ্ডতায় ও নিরাপত্তাসংকট কমাতে আলেম সমাজের দাওয়াতি কার্যক্রমকে আরও নিরাপদ ও সুযোগ করে দিতে হবে। সেখানে সামরিক নিরাপত্তাব্যবস্থা আরও বৃদ্ধি করা ছাড়াও পাহাড়ি ও নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে সামাজিক ও রাজনৈতিক সমঝোতা ও স্থিতিশীলতা বিনির্মাণে রাষ্ট্রীয় তৎপরতা আরও বাড়াতে হবে।
১২. কাদিয়ানীদের বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয়ভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। সাধারণ মুসলমানদের ঈমান আকিদা রক্ষার্থে কাদিয়ানীদের অপতৎপরতা বন্ধ করতে হবে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তুরস্কের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জ
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুসহ ৩৭ ইসরায়েলি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ‘গাজায় গণহত্যার’ অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে তুরস্ক।
শনিবার (৮ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।
আরো পড়ুন:
আরো ৩ ইসরায়েলি জিম্মির মরদেহ ফেরত দিল হামাস
যুদ্ধবিরতির মধ্যেও গাজায় হামলা, ৭৫ শতাংশ ত্রাণ প্রবেশে বাধা
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার (৭ নভেম্বর) ইস্তাম্বুলের প্রসিকিউটরের কার্যালয় থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এই খবর জানানো হয়।
এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির তালিকায় মোট ৩৭ জন সন্দেহভাজন রয়েছেন। যদিও ইস্তাম্বুলের প্রসিকিউটরের কার্যালয়ের বিবৃতিতে পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করা হয়নি, তবে উল্লেখযোগ্যদের মধ্যে রয়েছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ, জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন গভির এবং সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইয়াল জামির।
তুরস্ক ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীসহ ৩৭ শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ‘গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ’ করার অভিযোগ এনেছে, যা ইসরায়েল ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনের গাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ‘পরিকল্পিতভাবে’ চালিয়েছে।
এদিকে, ইসরায়েল তুরস্কের এই পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছে। ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদিওন সার এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, “এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগানের ‘রাজনৈতিক প্রচারণার অংশ বা পিআর কৌশল’।
তিনি বলেন, “ইসরায়েল অত্যাচারী এরদোগানের সর্বশেষ জনসংযোগ স্টান্টকে ঘৃণার সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করছে।”
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস তুরস্কের পদক্ষেপকে ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে। হামাস এক বিবৃতিতে “এটিকে তুর্কি জনগণ এবং তাদের নেতাদের আন্তরিক অবস্থানের (প্রশংসনীয়) পদক্ষেপ বলে অভিহিত করেছে, যারা ন্যায়বিচার, মানবতা এবং ভ্রাতৃত্বের মূল্যবোধের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যা তাদেরকে আমাদের নিপীড়িত ফিলিস্তিনি জনগণের সাথে আবদ্ধ করে।”
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) নেতানিয়াহু এবং সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গাজায় ‘যুদ্ধাপরাধ’-এর অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করার প্রায় এক বছর পর তুরস্কের এই ঘোষণা এসেছে।
গত বছর আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এনে দক্ষিণ আফ্রিকার মামলায় তুরস্কও যোগ দিয়েছে।
গাজায় ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের যুদ্ধে কমপক্ষে ৬৮ হাজার ৮৭৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ লাখ ৭০ হাজার ৬৭৯ জন আহত হয়েছে।
ঢাকা/ফিরোজ