হবিগঞ্জ শহরের টাউন মডেল স্কুল পুকুরকে আগের রূপে ফিরিয়ে আনার কাজ শুরু
Published: 3rd, May 2025 GMT
হবিগঞ্জ শহরের টাউন মডেল স্কুল পুকুরকে আগের রূপে ফিরিয়ে দিতে খননকাজ শুরু করেছে হবিগঞ্জ পৌরসভা। পুকুরটিতে মার্কেট নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়ার পর এলাকাবাসীর বাধা এবং হাইকোর্টের রুল জারির পরিপ্রেক্ষিতে তারা এই কাজ শুরু করেছে।
হবিগঞ্জ শহরের শায়েস্তানগর এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কার্যালয়ের সামনে টাউন মডেল স্কুল পুকুরটি অবস্থিত। সাঁতার কাটা, গোসলসহ আশপাশের মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় পানির চাহিদা পূরণ হতো প্রায় ৭৫ শতক আয়তনের শহরের ঐতিহ্যবাহী এ পুকুর থেকেই।
আজ শনিবার সরেজমিন দেখা যায়, মাটি কাটার যন্ত্র দিয়ে পুকুরের খননকাজ চলছে। পুকুর পুনরুদ্ধারের খননকাজ শুরু হওয়ায় এলাকাবাসীও বেশ খুশি। খননকাজ দেখতে সেখানে অনেকেই এসেছিলেন।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ময়লা–আবর্জনা ফেলে পুকুরটি ভরাট করা হচ্ছিল। পাশাপাশি হবিগঞ্জ পৌরসভা এ পুকুরে অননুমোদিতভাবে একটি বহুতল মার্কেট নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। এর প্রতিবাদে শহরের অধিবাসী ও পরিবেশবাদীরা মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি পালন করেন। একপর্যায়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) সম্প্রতি হাইকোর্টে হাইকোর্টে একটি মামলা করে। গত ২৭ জানুয়ারি বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বিভাগের দ্বৈত বেঞ্চ রুল জারি করেন। পাশাপাশি আদালত পুকুর দুটি ভরাটের এবং সেখানে সব ধরনের নির্মাণকাজের ওপর মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। এরপর পৌরসভা দুটি পুকুরের মধ্যে হবিগঞ্জ টাউন মডেল স্কুল পুকুরটির খনন কাজ শুরু করে।
বেলার সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়ক শাহ সাহেদা আখতার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ রুল জারির পাশাপাশি আদালত পুকুর দুটি ভরাটের এবং সেখানে সব ধরনের নির্মাণকাজ এর ওপর মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। আমরা এ আদেশের বিপরীতে টাউন মডেল স্কুল পুকুরটি খনন করতে দেখতে পেলেও অপর (চন্দ্রনাথ) পুকুর পুনরুদ্ধারে দৃশ্যমান কোনো কাজ এখনো দেখতে পাচ্ছি না। আশা করছি জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর এ বিষয়ে দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণ করবে।’
হবিগঞ্জ পৌরসভার প্রধান নির্বাহী জাবেদ ইকবাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী শহরের টাউন মডেল স্কুল পুকুরটি খনন কাজ শুরু করেছি। চন্দ্রনাথের বিষয়ে সময় প্রার্থনা করা হয়েছে।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
চবির বিশেষ ভোজের টোকেনে অনাবাসিক শিক্ষার্থীরা ‘অতিথি’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) বিভিন্ন আবাসিক হলে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উদযাপন উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা ও বিশেষ ভোজের আয়োজন করা হয়েছে। এতে আবাসিকদের শিক্ষার্থী বলা হচ্ছে এবং অনাবাসিকদের অতিথি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়া, আবাসিকদের জন্য টাকার পরিমাণ কম ধরলেও অনাবাসিকদের জন্য বেশি ধরা হয়েছে। এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষার্থীরা।
জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ ফরহাদ হোসেন হলে উন্নত ভোজের টোকেন আবাসিকদের জন্য ১০০ টাকা ধরা হয়েছে। অপরদিকে, অতিথিদের জন্য ধরা হয়েছে ১৭০ টাকা; এই অতিথিরা হলেন হলের অনাবাসিক শিক্ষার্থী। শামসুন নাহার হলে আবাসিকদের জন্য ৮০ টাকা, অনাবাসিকদের জন্য ১৭০ টাকা। মিল পদ্ধতি চালু থাকা আমানত হলে আবাসিকদের জন্য ফ্রি হলেও অনাবাসিকদের জন্য ৭০ টাকা। তবে সোহরাওয়ার্দী হলে আবাসিক-অনাবাসিক সবার জন্যই ১৫৫ টাকা ধরা হয়েছে।
আরো পড়ুন:
এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দিল শাবিপ্রবি প্রশাসন
চবিতে বিপ্লবী ছাত্র ঐক্যের আত্মপ্রকাশ
এদিকে, বিজয়-২৪ হলের প্রথম বিজ্ঞপ্তিতে আবাসিক-অনাবাসিক সবার জন্য ৮০ টাকা উল্লেখ করলেও দ্বিতীয় বিজ্ঞপ্তিতে অনাবাসিকদের জন্য ১৭০ টাকা ধরা হয়েছে। এভাবে অন্যান্য হলগুলোতেও একই অবস্থার কথা জানা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী জারিফ মাহমুদ বলেন, “৫ আগস্টের ফিস্ট নিয়ে হলে হলে বিশেষ খাবারের আয়োজন করছে, সেখানে আবাসিক-অনাবাসিক আলাদা করেছে। আমার প্রশ্ন হলো, প্রশাসনদের ছাত্র বা সন্তান কি শুধু আবাসিকরা? আমরা যারা অনাবাসিক, তারা কি বিশ্ববিদ্যালয়ে উড়ে এসেছি?”
তিনি প্রশাসনকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “আপনারা আমাদের হলে সিট দিতে পারেননি, এটা আপনাদের ব্যর্থতা। এই আবাসিক-অনাবাসিক পরিচয় বন্ধ করুন। আয়োজন করলে সবার জন্য সমান করে আয়োজন করুন। আর সেটা না পারলে আয়োজন বন্ধ করুন।”
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী নাঈম শাহ ফেসবুকে লেখেন, “কোনো একটা বিশেষ দিন এলেই দেখা যায়, হল প্রশাসনগুলোর আবাসিক শিক্ষার্থীদের বিশেষ করে দাঁড় করানোর ভণ্ডামি। ৫ তারিখে আয়োজনকে ঘিরে তারা আবার সেই অতিথি টার্ম সামনে নিয়ে আসছে। ফরহাদ হলে অনুষ্ঠান শেষে বিশেষ ভোজের আয়োজনের টোকেন আবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য ১০০ টাকা এবং অতিথিদের জন্য ১৭০ টাকা। বাকি হলগুলোতে বোধহয় তাই করেছে। কিন্তু এই অতিথিগুলোও তো বিশ্ববিদ্যালয়েরই শিক্ষার্থী।”
তিনি বলেন, “বাহির থেকে যে কয়েকজন শিক্ষার্থী আসবে, তাদের থেকে ৭০ টাকা করে বেশি না নিলে তো হল প্রশাসন দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে না। আর আপনাদের যদি সামর্থ্য নাই থাকে, কাউকেই খাওয়ায়েন না। কিন্তু ৫ আগস্টের দিনকে কেন্দ্র করে করা অনুষ্ঠানে প্রিভিলেজড-আনপ্রিভিলেজড বিষয়টা জিইয়ে রাখাটা নিতান্ত নোংরামি লাগছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এটা নিয়ে ভাবা উচিত।”
এ বিষয়ে শহিদ মো. ফরহাদ হোসেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মান্নান বলেন, “এ সিদ্ধান্তটি শুধু ফরহাদ হলের জন্য নয়, অন্যান্য হলেও এ সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে। মূলত উন্নত ভোজের আয়োজনটি আবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য করা হয়েছে। তারপরেও কোনো অনাবাসিক শিক্ষার্থী বা কারো বন্ধুবান্ধব অংশ নিতে চাইলে পারবে। সেক্ষেত্রে তাদের জন্য টাকা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যেহেতু তাদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে কোনো বরাদ্দ দেওয়া হয়নি।”
বিশ্ববিদ্যালয়ে সব হল প্রাধ্যক্ষের উপস্থিতিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
ঢাকা/মিজান/মেহেদী