এক বছরের ব্যবধানে ন্যাশনাল ব্যাংকের লোকসান ২০৯ কোটি টাকা বা প্রায় ১৪ শতাংশ বেড়েছে। গত বছর শেষে বেসরকারি খাতের প্রথম প্রজন্মের ব্যাংকটি ১ হাজার ৭০৬ কোটি টাকা লোকসান করেছে। বিপুল পরিমাণ লোকসানের কারণে গত বছরও ব্যাংকটি শেয়ারধারীদের কোনো লভ্যাংশ দিতে পারেনি। গত বুধবার ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় গত বছরের আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদন করা হয়। তাতে লোকসানের এই চিত্র বেরিয়ে এসেছে।

বুধবার পর্ষদ সভায় আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদনের পর শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি হিসেবে আজ রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) মাধ্যমে লোকসানের তথ্য বিনিয়োগকারীদের জানানো হয়। ব্যাংকটির আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, তিন বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে লোকসান করছে ব্যাংকটি। এর মধ্যে সর্বোচ্চ লোকসান করেছিল ২০২২ সালে। ওই বছর ব্যাংকটি ৩ হাজার ২৬১ কোটি টাকা লোকসান করেছিল, যা ছিল দেশের ইতিহাসে কোনো ব্যাংকের একক সর্বোচ্চ লোকসান। ২০০২ সালের রেকর্ড লোকসানের পর থেকে আর লাভের মুখ দেখেনি ঋণ কেলেঙ্কারিতে জর্জরিত ব্যাংকটি।

দেশের আর্থিক খাতের অতি সমালোচিত সিকদার পরিবার ও এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে নানা আর্থিক অনিয়মের পর গত ৫ আগস্ট দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ব্যাংকটির পর্ষদ ভেঙে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে গঠন করা হয় নতুন পর্ষদ। সেই হিসাবে গত বছরের অর্ধেকটা সময় ব্যাংকটি পরিচালিত হয়েছে পুরোনো পর্ষদের হাতে, আর প্রায় অর্ধেকটা সময় পরিচালিত হয় নবগঠিত পর্ষদের মাধ্যমে। এরপর বছর শেষে বড় ধরনের লোকসানের চিত্র উঠে আসে।

২০২৩ সালে ন্যাশনাল ব্যাংকের লোকসানের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৪৯৭ কোটি টাকা। সেই হিসাবে ১ বছরের ব্যবধানে লোকসান বেড়েছে ২০৯ কোটি টাকা বা প্রায় ১৪ শতাংশ। ব্যাংকটি ডিএসই ও সিএসইর ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের জানিয়েছে, গত বছর ব্যাংকটি ঋণের বিপরীতে কোনো সুদ আয় হিসাবে নিতে পারেনি। কারণ, ব্যাংকটির বিপুল পরিমাণ ঋণখেলাপি হয়ে গেছে। এসব ঋণের বড় অংশই এখন অনাদায়ী। এ ছাড়া ব্যাংকটি চরম তারল্যসংকটেও ভুগছে। এ কারণে বাড়তি সুদে আমানত সংগ্রহ করতে হচ্ছে। যার ফলে আমানতের সুদ বাবদও বেশি অর্থ খরচ হয়েছে। সব মিলিয়ে বছরটি শেষ হয়েছে বড় ধরনের পরিচালন লোকসানে।

বিপুল লোকসানের কারণে গত বছরও ব্যাংকটি শেয়ারধারীদের কোনো লভ্যাংশ না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ২০২০ সালের পর থেকে ব্যাংকটি বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ দিতে পারছে না। এ কারণে শেয়ারবাজারে এটি এখন দুর্বল মানের কোম্পানি হিসেবে ‘জেড’ শ্রেণিভুক্ত। ১৯৮৪ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া এই ব্যাংকের শেয়ারের বড় অংশই রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে। সর্বশেষ গত মার্চের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকটির মোট শেয়ারের ৪৫ শতাংশেরই বেশি রয়েছে ব্যক্তিশ্রেণির সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে প্রায় ৩৯ শতাংশ শেয়ার। আর উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাতে রয়েছে প্রায় ১৬ শতাংশ শেয়ার। ফলে ব্যাংকটির বিপুল লোকসান ও লভ্যাংশ না দেওয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। একইভাবে আমানতকারীরাও ক্ষতির মুখে পড়েছেন। কারণ, অনেক আমানতকারী ব্যাংকটিতে টাকা রেখে সেই টাকা এখন ফেরত পাচ্ছেন না।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গত বছর ন র পর পর চ ল আর থ ক বছর র

এছাড়াও পড়ুন:

বিএসএফের গুলিতে নিহত যুবকের লাশ হস্তান্তর

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর সীমান্তের ওপারে বিএসএফের গুলিতে নিহত শান্ত (২০) নামে এক বাংলাদেশি যুবকের লাশ হস্তান্তর করেছে বিএসএফ।

শনিবার (১৩‌ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় উপজেলার জামালপুর সীমান্ত পিলার ১৫২/৭ এস মেইন পিলারের নিকট কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে ভারতের নিউ উদয় ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যরা লাশ হস্তান্তর করেন।

শান্ত উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর গ্রামের শিপন আলীর ছেলে।

বিজিবি ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গত ৫ ডিসেম্বর রাতে শান্ত ১০-১২ জন সহযোগী নিয়ে জামালপুর সীমান্ত দিয়ে ভারতের প্রায় ৫০০ গজ অভ্যন্তরে প্রবেশ করেন। এ সময় ভারতের নিউ উদয় বিএসএফ ক্যাম্পের টহল সদস্যরা গুলি ছুঁড়লে শান্ত গুলিবিদ্ধ হন। পালিয়ে যান সঙ্গে থাকা সদস্যরা। আহতাবস্থায় শান্তকে উদ্ধার করে নিজ ক্যাম্পে নিয়ে যায় বিএসএফ। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এ বিষয়ে বিজিবি-বিএসএফের মধ্যে দুই দফা পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পরে শনিবার বিকেলে তার লাশ হস্তান্তর করা হয়।

বিজিবি-৪৭ ব্যাটালিয়নের সহকারী পরিচালক (এডি) মো. জাকিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘শনিবার সন্ধ্যায় বিএসএফের পক্ষ থেকে শান্তর লাশ হস্তান্তর করা হ‌য়ে‌ছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।’’

ঢাকা/কাঞ্চন/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ