গত বছর ১,৭০৬ কোটি টাকা লোকসান ন্যাশনাল ব্যাংকের
Published: 4th, May 2025 GMT
এক বছরের ব্যবধানে ন্যাশনাল ব্যাংকের লোকসান ২০৯ কোটি টাকা বা প্রায় ১৪ শতাংশ বেড়েছে। গত বছর শেষে বেসরকারি খাতের প্রথম প্রজন্মের ব্যাংকটি ১ হাজার ৭০৬ কোটি টাকা লোকসান করেছে। বিপুল পরিমাণ লোকসানের কারণে গত বছরও ব্যাংকটি শেয়ারধারীদের কোনো লভ্যাংশ দিতে পারেনি। গত বুধবার ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় গত বছরের আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদন করা হয়। তাতে লোকসানের এই চিত্র বেরিয়ে এসেছে।
বুধবার পর্ষদ সভায় আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদনের পর শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি হিসেবে আজ রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) মাধ্যমে লোকসানের তথ্য বিনিয়োগকারীদের জানানো হয়। ব্যাংকটির আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, তিন বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে লোকসান করছে ব্যাংকটি। এর মধ্যে সর্বোচ্চ লোকসান করেছিল ২০২২ সালে। ওই বছর ব্যাংকটি ৩ হাজার ২৬১ কোটি টাকা লোকসান করেছিল, যা ছিল দেশের ইতিহাসে কোনো ব্যাংকের একক সর্বোচ্চ লোকসান। ২০০২ সালের রেকর্ড লোকসানের পর থেকে আর লাভের মুখ দেখেনি ঋণ কেলেঙ্কারিতে জর্জরিত ব্যাংকটি।
দেশের আর্থিক খাতের অতি সমালোচিত সিকদার পরিবার ও এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে নানা আর্থিক অনিয়মের পর গত ৫ আগস্ট দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ব্যাংকটির পর্ষদ ভেঙে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে গঠন করা হয় নতুন পর্ষদ। সেই হিসাবে গত বছরের অর্ধেকটা সময় ব্যাংকটি পরিচালিত হয়েছে পুরোনো পর্ষদের হাতে, আর প্রায় অর্ধেকটা সময় পরিচালিত হয় নবগঠিত পর্ষদের মাধ্যমে। এরপর বছর শেষে বড় ধরনের লোকসানের চিত্র উঠে আসে।
২০২৩ সালে ন্যাশনাল ব্যাংকের লোকসানের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৪৯৭ কোটি টাকা। সেই হিসাবে ১ বছরের ব্যবধানে লোকসান বেড়েছে ২০৯ কোটি টাকা বা প্রায় ১৪ শতাংশ। ব্যাংকটি ডিএসই ও সিএসইর ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের জানিয়েছে, গত বছর ব্যাংকটি ঋণের বিপরীতে কোনো সুদ আয় হিসাবে নিতে পারেনি। কারণ, ব্যাংকটির বিপুল পরিমাণ ঋণখেলাপি হয়ে গেছে। এসব ঋণের বড় অংশই এখন অনাদায়ী। এ ছাড়া ব্যাংকটি চরম তারল্যসংকটেও ভুগছে। এ কারণে বাড়তি সুদে আমানত সংগ্রহ করতে হচ্ছে। যার ফলে আমানতের সুদ বাবদও বেশি অর্থ খরচ হয়েছে। সব মিলিয়ে বছরটি শেষ হয়েছে বড় ধরনের পরিচালন লোকসানে।
বিপুল লোকসানের কারণে গত বছরও ব্যাংকটি শেয়ারধারীদের কোনো লভ্যাংশ না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ২০২০ সালের পর থেকে ব্যাংকটি বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ দিতে পারছে না। এ কারণে শেয়ারবাজারে এটি এখন দুর্বল মানের কোম্পানি হিসেবে ‘জেড’ শ্রেণিভুক্ত। ১৯৮৪ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া এই ব্যাংকের শেয়ারের বড় অংশই রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে। সর্বশেষ গত মার্চের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকটির মোট শেয়ারের ৪৫ শতাংশেরই বেশি রয়েছে ব্যক্তিশ্রেণির সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে প্রায় ৩৯ শতাংশ শেয়ার। আর উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাতে রয়েছে প্রায় ১৬ শতাংশ শেয়ার। ফলে ব্যাংকটির বিপুল লোকসান ও লভ্যাংশ না দেওয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। একইভাবে আমানতকারীরাও ক্ষতির মুখে পড়েছেন। কারণ, অনেক আমানতকারী ব্যাংকটিতে টাকা রেখে সেই টাকা এখন ফেরত পাচ্ছেন না।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গত বছর ন র পর পর চ ল আর থ ক বছর র
এছাড়াও পড়ুন:
প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমানোর বিপক্ষে বিএনপিসহ ৬ দল পক্ষে জামায়াত-এনসিপি
সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমাতে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের পক্ষপাতী নয় বিএনপিসহ ছয়টি দল। বিএনপির প্রস্তাব– বিদ্যমান নিয়োগ আইনগুলো সংস্কার করা হোক। জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপিসহ অন্যান্য দল এ কাউন্সিল গঠনের পক্ষে। ঐকমত্যে এনসিসি গঠন সম্ভব না হলে গণভোট চায় জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন। প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা না কমালে জুলাই সনদে সই না করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে এনসিপি।
গতকাল বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফা সংলাপের তৃতীয় দিনে ৩০ রাজনৈতিক দল এবং জোট সংস্কার আলোচনায় অংশ নেয়। এনসিসি ছাড়াও রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে মত দেয় দলগুলো।
গত ১৩ জুন লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিএনপির ভরপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের যৌথ বিবৃতির প্রতিবাদে আগের দিন সংলাপ বর্জন করা জামায়াত গতকাল আলোচনার টেবিলে ফেরে। তবে জামায়াতকে বেশি কথা বলার সুযোগ দেওয়ার প্রতিবাদে ওয়াকআউট করে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি এবং গণফোরাম। ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরা ১০ মিনিটের মাথায় তাদের ফিরিয়ে আনেন।
সংলাপে উত্তপ্ত বাদানুবাদ হলেও মধ্যহ্ন বিরতিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের এবং এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম পরস্পর হাত ধরে হাসিমুখে সংবাদমাধ্যমে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান; কুশল বিনিময় করেন।
সংলাপে সভাপতিত্ব করা ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ সাংবাদিকদের বলেন, অধিকাংশ দল মনে করে, এনসিসি হওয়া উচিত। কিছু দলের আপত্তি রয়েছে। তারা চাইলে বিকল্প প্রস্তাব দিতে পারেন। আজ (গতকাল) খানিক অগ্রগতি হয়েছে।
এনসিসির কোনো জবাবদিহি থাকবে না– বিএনপির এ অভিযোগের জবাবে আলী রীয়াজ বলেন, প্রধান বিচারপতি ছাড়া এনসিসির বাকি সদস্যরা নির্বাচিত। তাদের নির্বাচকমণ্ডলীর কাছেই জবাবদিহি রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা হ্রাসে পক্ষে-বিপক্ষে মত
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), মানবাধিকার কমিশন এবং প্রস্তাবিত স্থানীয় সরকার কমিশনকে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের সুপারিশ করেছে সংবিধান সংস্কার কমিশন। এই পাঁচ প্রতিষ্ঠান ছাড়াও অ্যাটর্নি জেনারেল এবং প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান পদে এনসিসির মাধ্যমে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছিল। পৃথক আইনে এতদিন নিয়োগ হলেও সংবিধানের ৪৮(৩) অনুচ্ছেদের কারণে আদতে প্রধানমন্ত্রীই এসব নিয়োগ দিয়ে থাকেন।
সরকারপ্রধানের এই ক্ষমতা কমাতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, প্রধান বিচারপতি, সংসদের উভয় কক্ষের স্পিকার, দুই বিরোধীদলীয় ডেপুটি স্পিকার এবং সরকারি ও প্রধান বিরোধী দলের বাইরে থেকে একজন নির্বাচিত এমপি নিয়ে এনসিসি গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। ৯ সদস্যের এই কাউন্সিল সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দেবে বলে প্রস্তাব করেছে।
বিএনপি শুরু থেকেই এনসিসি গঠনের বিরোধী। গতকালের সংলাপ শেষে সালাহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, এনসিসি গঠনে নির্বাহী বিভাগের (সরকার) ক্ষমতা কমে যাবে। জবাবদিহি নেই, এমন কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রতি গণতান্ত্রিক দল হিসেবে বিএনপি সমর্থন জানাতে পারে না। এনসিসিকে সাংবিধানিকভাবে অনেক ক্ষমতা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু তাদের জবাবদিহি নেই। যদি কারও কর্তৃত্ব থাকে, তবে জবাবদিহিও থাকতে হবে।
২০২২ সালের জুলাইয়ে নির্বাচন কমিশন গঠনে করা আইনের সমালোচক ছিল বিএনপি। প্রধানমন্ত্রীর নিয়োগ করা নির্বাচন কমিশনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে কিনা প্রশ্নে সালাহউদ্দিন বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা থাকলে অতীতের নির্বাচনগুলো এভাবে হতো না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে পূর্ণ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যদি নির্বাচন কমিশনকে প্রকৃতভাবে, স্বাধীনভাবে, আইনিভাবে কার্যকর করতে দিই, তাহলে নির্বাহী বিভাগ ও সংসদ স্বৈরাচার হবে না।
এনসিসি নিয়ে পুনর্মূল্যায়ন করবেন কিনা– এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিকল্প কোনো প্রস্তাব যদি আসে দলীয়ভাবে আলোচনা করব। তা নিয়ে আমাদের আবার চিন্তা করতে হবে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রভাবমুক্ত করতে বিদ্যমান নিয়োগ আইনগুলোকে শক্তিশালী করতে চায় তার দল। যেসব আইন আছে, বিএনপি সেগুলোর সমালোচক। আইন শক্তিশালী করার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছ নিয়োগ সম্ভব। প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা হ্রাসে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ভারসাম্য তৈরি করা হবে। আগামী সংসদে সংবিধান পরিবর্তনের মাধ্যমে তা করা হবে।
সিপিবি, বাসদ, গণফোরাম, এলডিপি, ১২ দলীয় জোটও এনসিসি গঠনের বিরোধিতা করেছে। যদিও সিপিবি বলছে, তারা সাংবিধানিক নিয়োগ প্রধানমন্ত্রীর প্রভাবমুক্ত করার বিষয়ে নীতিগতভাবে একমত। দলটির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেছেন, এখন প্রয়োজন সুষ্ঠু নির্বাচন।
বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গী ১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র ও বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, এই মুহূর্তে এনসিসি গঠনের জন্য সময়ক্ষেপণ করা অপ্রয়োজনীয়।
জামায়াত, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন, এবি পার্টি, গণঅধিকার, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, খেলাফত মজলিস, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলনসহ বাকিগুলো এনসিসি গঠনের পক্ষে থাকলেও ভিন্নমত রয়েছে। জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন এনসিসিতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতিকে চায় না। এনসিপির প্রস্তাব, প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধানদের নিয়োগের ক্ষমতা সরকার তথা প্রধানমন্ত্রীর কাছেই থাকুক। জামায়াতও তাই চায়। দলটির অবস্থান অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগের ক্ষমতাও সরকারের কাছে থাকুক। শুধু সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ করা হবে এনসিসির মাধ্যমে।
জামায়াতের ডা. তাহের বলেন, ক্ষমতার ভারসাম্যের জন্য এসসিসি প্রয়োজন। তিন-চতুর্থাংশ দল এনসিসি গঠনের পক্ষে। ৩০ দলই কোনো প্রস্তাবের বিষয়ে একমত হবে না। তাই যেসব বিষয়ে ভিন্নমত থাকবে, সেগুলো বাস্তবায়নে গণভোট চায় জামায়াত।
এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, যারা এনসিসি গঠনের বিপক্ষে, তারা মূলত ফ্যাসিবাদী কাঠামোয় থেকে যেতে চান। কিছু দল প্রথমধাপে সংস্কারে এনসিসির পক্ষে ছিল। আজ তারা অবস্থান বদল করেছেন। কেন করেছেন ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। যারা এনসিসি চায় না, তাদের কাছেও বিকল্প প্রস্তাব নেই। আজকের দিনটি হতাশার। প্রতিরক্ষা বাহিনী সরকারের কাছে রাখাসহ অন্য বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। কিন্তু এনসিসি গঠন মৌলিক সংস্কারের অংশ। এনসিসি গঠন না হলে গণঅভ্যুত্থান ও সংস্কার কমিশন ব্যর্থ হবে। তাহলে জুলাই সনদে থাকবে না এনসিপি।
নাহিদ ইসলাম বলেন, ইসি, দুদক, মানবাধিকার কমিশন বিগত সময়ে দলীয়করণ হয়েছে। বিরোধী দলমত দমনে ও ভোটাধিকার হরণেও তারা ভূমিকা রেখেছে। এখনও আশা করছি, এসব প্রতিষ্ঠানে নিরপেক্ষ নিয়োগের জন্য ঐকমত্য হবে।
ঐকমত্য না হলে এনসিসির বিষয়ে গণভোটের আহ্বান জানান ইসলামী আন্দোলনের মুখপাত্র গাজী আতাউর রহমান। তিনি বলেন, যারা দেশের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে অনাগ্রহী, তারাই এনসিসি গঠনের বিরুদ্ধে। আলোচনা শেষে এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, আমরা এনসিসি চাই।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে পক্ষে-বিপক্ষে
দলীয় অনুগত ব্যক্তি যাতে রাষ্ট্রপতি হতে না পারেন– সে জন্য কমিশন প্রস্তাব করেছে ৬৪ জেলা এবং ১২ সিটি করপোরেশনও হবে ‘ইলেকটোরাল কলেজ’। এ পদ্ধতিতে জেলার সব প্রতিনিধি রাষ্ট্রপতি ভোট দেবেন। প্রতিটি জেলার ভোটের সংখ্যা হবে।
এই পদ্ধতিতে নির্বাচনেও বিরোধিতা করেছে বিএনপি। একই অবস্থান এলডিপি, সিপিবি, বাসদ, গণফোরাম, ১২ দলীয় জোটের। সালাহউদ্দিন বলেছেন, বিএনপি বিদ্যমান পদ্ধতিতে নির্বাচন চায়। সংসদ দ্বিকক্ষের হলে উভয় কক্ষের সদস্যরা রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট দেবেন। আওয়ামী লীগ আমলে গঠিত জেলা পরিষদে নির্বাচন দূষিত হয়েছে। কমিশন বলছে, স্থানীয় সরকারের ৭০ হাজার সদস্য, চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, মেয়র রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ভোটার হবেন। পাকিস্তান আমলে এ রকম বেসিক ডেমোক্রেসি ছিল। বিএনপি তাতে ফিরতে চায় না।
জামায়াতের নায়েবে আমির বলেছেন, তারা ইলেকটোরাল কলেজের ধারণার বিরোধী নয়। তবে ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যদের ভোটার করার পক্ষে নয়। সর্বনিম্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা ভোটার হতে পারেন। দলীয় সরকারের অধীনে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না। তাই ইলেকটোরাল কলেজ করতে হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হতে হবে।
বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে নাহিদ ইসলাম বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট আমলে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন কমিশন ও দুর্নীতি দমন কমিশন নিয়ে ব্যাপক বিরোধিতা দেখিয়েছিল এবং ভবিষ্যতে তারা ক্ষমতায় গেলে এ বিষয়গুলো সংস্কার করবে বলে প্রস্তাবনা রেখেছিল। এখন তা দেখা যাচ্ছে না।
জামায়াতের ফেরা, সিপিবির ওয়াক আউট
গত ১৩ জুন লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তারেক রহমানের বৈঠকের প্রতিবাদে মঙ্গলবারের সংলাপ বয়কট করা জামায়াত গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আসে। দলটি অভিযোগ করে, যৌথ বিবৃতির মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
সংলাপের মধ্যাহ্ন বিরতিতে ডা. তাহের জানান, মঙ্গলবার দুপুরে প্রধান উপদেষ্টা টেলিফোন করেছিলেন জামায়াত আমির শফিকুর রহমানকে। প্রধান উপদেষ্টা জামায়াতের আমিরকে সরকারের নিরপেক্ষতার বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন।
জামায়াতের নায়েবে আমির বলেন, প্রধান উপদেষ্টা আমাদের অবস্থান অনুধাবন করতে পেরেছেন। তিনি আশ্বস্ত করেছেন, সরকার কোনো বিশেষ দল বা গোষ্ঠীর প্রতি ঝুঁকে নেই। আগামীতে এসব ব্যাপারে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনে যত্নবান হবেন।
নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে অনিশ্চয়তা নেই– স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর এ বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছে জামায়াত। ডা. তাহের বলেন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কী সেটাই তিনি বোঝেন না।
নগর ভবন তালাবদ্ধ করে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের আন্দোলনের প্রতি ইঙ্গিত করে জামায়াতের নায়েবে আমির বলেছেন, যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এক মাসেও একটি ভবনের তালা খুলতে পারেন না, তিনি কী করে ৩০০ সংসদীয় আসনের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করবেন।
প্রধান উপদেষ্টা জামায়াতকে ফোন করার মাধ্যমে নিরপেক্ষতা হারিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক ড. মিজানুর রহমান। সংলাপে জামায়াতকে বেশি কথা বলতে দেওয়া হয়– অভিযোগে ওয়াক আউট করেন সিপিবি ও গণফোরাম।
রুহিন হোসেন প্রিন্স সভাকক্ষ থেকে ছেড়ে নিচতলায় এসে বলেন, এখানে বৈষম্য হচ্ছে, জামায়াতের তিনজনকে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। আমাদের একজন বক্তব্য দিলেও বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে।
পরে ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার এসে ওয়াক আউট করা নেতাদের বৈঠকে ফিরিয়ে নেন।