যুক্তরাষ্ট্রে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো থেকে বহু কর্মী ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা
Published: 4th, May 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির (সিআইএ) ১ হাজার ২০০ কর্মী কমানোর পরিকল্পনা করেছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। এ ছাড়া অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থা থেকেও বহু কর্মী ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা হচ্ছে। সিআইএর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে ঢেলে সাজানোর লক্ষ্যে এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। শুক্রবার ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। গোয়েন্দা সংস্থা থেকে এই ছাঁটাই প্রক্রিয়ার বিষয়টি কংগ্রেস সদস্যদের জানানো হয়েছে। কয়েক বছর ধরে এই প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করা হবে। সরকার বলছে, মূলত নতুন নিয়োগ কমিয়ে পদ কমানো হবে, কর্মী ছাঁটায়ের মাধ্যমে নয়।
কর্মী কমানোর ব্যাপারে জানতে সিআইএর এক মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করে ওয়াশিংটন পোস্ট। তবে তিনি নির্দিষ্ট কোনো তথ্য দেননি। তিনি বলেন, সিআইএর পরিচালক জন র্যাটক্লিফ এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে চলেছেন। প্রশাসনের জাতীয় নিরাপত্তা অগ্রাধিকারের প্রতি সিআইএ যাতে দ্রুত সাড়া দিতে পারে, তা নিশ্চিত করতে কাজ করছেন পরিচালক। ওই মুখপাত্র বলেন, এই পদক্ষেপগুলো সিআইএকে নতুন শক্তিতে উজ্জীবিত করবে। উদীয়মান নেতৃত্ব সৃষ্টির সুযোগ তৈরি হবে। সিআইএর লক্ষ্য পূরণ ও সংস্থাটির কার্যক্রম শক্তিশালী করতে সামগ্রিক কৌশলের অংশ হিসেবে এই প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এই প্রক্রিয়ার মধ্যে কয়েকশ লোক অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন, যারা ইতোমধ্যেই অবসর গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
জানুয়ারিতে সিআইএর পরিচালক হিসেবে জন র্যাটক্লিফকে নিয়োগ দেন ট্রাম্প। ওই সময় তিনি গণমাধ্যমে বলেন, তাঁর নেতৃত্বে সংস্থাটি অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ ও বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণ তৈরি করে তথ্য আদান-প্রদানে ভূমিকা রাখবে। তিনি এও বলেছিলেন, রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত কোনো পক্ষপাতমূলক আচরণ যাতে সিআইএর ওপর প্রভাব না ফেলতে পারে, সেদিকে তিনি দৃষ্টি দেবেন।
জন র্যাটক্লিফের বক্তব্য ছিল, ‘পরিস্থিতি যতই কঠিন বা প্রতিকূল হোক না কেন, আমরা বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করব। প্রেসিডেন্টের নির্দেশনায় গোপন অভিযান পরিচালনা করব। অন্যরা যা করতে পারে না, আমরা তা করে দেখাব।’
ট্রাম্পের সরকারি সংস্থাগুলোর আকার ছোট করার নীতির অংশ হিসেবে অনেক কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হবে বলে গত মার্চ মাসে ইঙ্গিত দিয়েছিল সিআইএ। সংস্থাটির এক মুখপাত্র বলেছিলেন, আচরণগত সমস্যাযুক্ত বা গোয়েন্দা কাজের জন্য অনুপযুক্ত বলে বিবেচিত কর্মকর্তাদের ছাঁটাই করা হবে। তিনি উল্লেখ করেন, সবাই এই চাকরির চাপ সামলাতে পারে না। গত ফেব্রুয়ারিতে সিআইএর কিছু কর্মচারীকে স্বেচ্ছায় অবসরে যাওয়ার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছিল।
দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট জানায়, ট্রাম্প প্রশাসন এর আগে ১৯ গোয়েন্দা কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু আদালত সেই প্রচেষ্টা আটকে দেন। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, গোয়েন্দা সংস্থায় পরিবর্তন বিশ্বব্যাপী মার্কিন গুপ্তচরবৃত্তিতে জটিলতা আনবে।
এপ্রিল মাসে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স সিকিউরিটি সেন্টার সতর্ক করেছিল, চীন-রাশিয়াসহ অন্যান্য বিদেশি গোয়েন্দারা যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থায় অস্থিরতার সুযোগ কাজে লাগাতে পারে। গোয়েন্দা সার্ভিসে অসন্তুষ্ট সদস্য বা সাবেক সদস্যকে টার্গেট করে তারা কাজ করছে। প্রশাসনের সরকারি চাকরিতে কর্মী ছাঁটাইয়ের প্রেক্ষিতে ট্রাম্প প্রশাসনে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, তা কাজে লাগাতে পারে বিদেশি গোয়েন্দারা।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র স আইএর
এছাড়াও পড়ুন:
নীরবতা ভেঙে হঠাৎ রাজনীতিকে ‘না’ বলে দিলেন শমসের মুবিন চৌধুরী
বছর দুয়েক আগেও দেশে ব্যাপক আলোচিত-সমালোচিত ও ‘দলছুট’ হিসেবে পরিচিত সাবেক কূটনীতিক শমসের মুবিন চৌধুরীর রাজনৈতিক অবসরের হঠাৎ ঘোষণা ছড়িয়ে পড়েছে রবিবার রাতে।
২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচন ঘিরে দেশ যখন টালমাটাল তার কয়েক মাস আগে নামকাওয়াস্তে দল ‘তৃণমূল বিএনপি’র নেতৃত্বে আসেন শমসের মুবিন, যার পদ ছিল চেয়ারপার্সন।
আরো পড়ুন:
‘আমার বিরুদ্ধে পরিকল্পিত অপপ্রচার চালানো হচ্ছে’
একটি দল বেহেস্তের টিকিট দেখিয়ে ভোট চাচ্ছে: আমান উল্লাহ
এই দলের মহাসচিবের দায়িত্বে ছিলেন বিএনপির নারায়ণগঞ্জের আরেকজন আলোচিত নেতা তৈমূর আলম খন্দকার। রবিবার (১৬ নভেম্বর) রাতে তৈমূর আলমের কাছে চিঠি দিয়ে রাজনীতিকে বিদায় বলে দিয়েছেন শমসের মুবিন।
শমসের মুবিন ও তৈমূর খন্দকারের নেতৃত্বাধীন ‘তৃণমূল বিএনপি’ ডামি দল হিসেবে আখ্যা পায়। তখন অনেকে বলেছিলেন, বিএনপি ভাঙার অপচেষ্টা হিসেবে দলের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নাম ও পদ ব্যবহার করে তৃণমূল বিএনপি তৈরি করা হয়েছে। একে অনেকে ‘কিংস পার্টি’ নামে অভিহিত করেছিলেন। বিএনপি-জামায়াতসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের নির্বাচন বর্জনে ঘোষণার পরও তখন বেশ কয়েকটি দল রাতারাতি গজিয়ে ওঠে, যার একটি এই তৃণমূল বিএনপি। এসব দল অভিনব কায়দায় নির্বাচনে প্রার্থী দিয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে আসার চেষ্টা করেছিল।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের পতন হয়েছে, বদলে গেছে রাজনীতির হাওয়া; নিষিদ্ধ হয়েছে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম। এখন আর তৃণমূল বিএনপি বলে কোনো দলের কার্যক্রম মাঠে দেখা যায় না; শোনা যায় না তাদের দলের নেতাদের নাম। গণমাধ্যমেও তাদের কোনো উপস্থিতি নেই।
এখন নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে বিএনপি। অথচ কোথাও শমসের মুবিন চৌধুরীর নাম উচ্চারিত হয় না। রাজনীতির আড়ালেই পড়ে ছিলেন তিনি। হঠাৎ সরব হলেন; তবে রাজনৈতিক বিদায়ের ঘণ্টা ধ্বনি শোনাতেই যেন অচমকা গভীর রাতে গণমাধ্যমে হাজির হলেন তিনি।
তৈমূর খন্দকার গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, শমসের মুবিন চৌধুরী অনেক দিন ধরেই দলে নিষ্ক্রিয়। তাদের দলও অনেক দিন ধরে নিষ্ক্রিয় হয়ে আছে। তিনি (শমসের মুবিন) ফোন করে অবসরের কথা জানিয়েছেন এবং তার কাছে একটি চিঠিও পাঠিয়েছেন।
তৈমূর খন্দকার বরাবর চিঠিতে শমসের মুবিন লিখেছেন, “এই মর্মে আপনাকে এবং আপনার মাধ্যমে সকলকে অবগত করছি যে, শারীরিক কারণে আমি শমসের এম চৌধুরী রাজনীতি থেকে অবসর গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। একই সঙ্গে তৃণমূল বিএনপির সকল পদ থেকে আমি পদত্যাগ করিলাম। আমার এই সিদ্ধান্ত অবিলম্বে ১৬ নভেম্বর ২০২৫ ইং থেকে কার্যকর হইল।”
“আমার উপরে উল্লেখিত সিদ্ধান্ত দলের সংশ্লিষ্ট এবং গণমাধ্যমে অবগত করার জন্য আপনাকে সবিনয় অনুরোধ করিলাম”, লেখেন তিনি।
সাবেক কূটনীতিক শমসের মুবিন চৌধুরী একসময় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান পদে ছিলেন। পরে তিনি বিএনপি ছেড়ে সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরীর ‘বিকল্পধারা বাংলাদেশ’ নামে দলেও যোগ দিয়েছিলেন।
বিকল্পধারা ছেড়ে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে তৃণমূল বিএনপি নামে দলটির চেয়ারপারসন হন শমসের মুবিন।
ঢাকা/রায়হান/রাসেল