ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘোষিত তিন দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবকে ‘নাটক’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির উপর জোর দিয়েছেন।

শুক্রবার সাংবাদিকদের একটি ছোট দলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জেলেনস্কি এসব কথা বলেন; যা শনিবার পর্যন্ত প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা ছিল। খবর আল জাজিরার।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যমটির খবরে বলা হয়েছে, মস্কোর বিজয় দিবস উদযাপনের সঙ্গে মিল রেখে রুশ নেতা তিন দিনের একতরফা যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেওয়ার পর, পুতিনের বিরুদ্ধে ‘খেলা’ করার অভিযোগ এনেছেন জেলেনস্কি।

আরো পড়ুন:

ইউক্রেন যুদ্ধে সেনা পাঠানোর কথা স্বীকার করল উত্তর কোরিয়া

ক্রিমিয়া ছাড়তে নারাজ ইউক্রেন, জেলেনস্কির কড়া সমালোচনায় ট্রাম্প

তিনি বলেন, “এটি তার (পুতিনের) পক্ষ থেকে একটি নাটকীয় পরিবেশনা। কারণ দুই বা তিন দিনের মধ্যে, যুদ্ধ শেষ করার পরবর্তী পদক্ষেপের পরিকল্পনা তৈরি করা অসম্ভব।”

রাশিয়া আগামী ৮ মে থেকে ৭২ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছে, কিন্তু এখনো কিয়েভ ও ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে প্রস্তাবিত নিঃশর্ত ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি মেনে নেয়নি। যুক্তরাষ্ট্র তিন বছর ধরে চলা রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসনের অবসান ঘটাতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

জেলেনস্কি ৭২ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবকে ‘গুরুত্বপূর্ণ নয়’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, কিয়েভ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উত্থাপিত দীর্ঘস্থায়ী, ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের জন্য প্রস্তুত।

 

তিনি বলেন, “আমরা কোনো সুন্দর পরিবেশ তৈরির খেলা খেলছি না, যাতে পুতিন ৯ মে’র অনুষ্ঠান উপলক্ষে নিজের একঘেয়েমি কাটিয়ে উঠতে পারেন।” ওই দিন রাশিয়ায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ বিজয় দিবস উদযাপনে প্রায় ২০টি দেশের নেতা মস্কো সফরে যাচ্ছেন।

ইউক্রেন মনে করে, রাশিয়ার তিন দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব আসলে কিয়েভকে ৯ মে’র অনুষ্ঠানে মস্কোতে হামলা না করতে বাধ্য করার কৌশল। 

জেলেনস্কি বিদেশী নেতাদের ৯ মে মস্কো সফর এবং বিজয় দিবস উদযাপনে অংশ নেওয়ার বিরুদ্ধেও সতর্ক করেছেন।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন, “রাশিয়ান ফেডারেশনের ভূখণ্ডে যা ঘটবে তার জন্য আমরা দায়ী হতে পারি না। তারা আপনাকে নিরাপত্তা প্রদান করে এবং তাই আমরা আপনাকে কোনো গ্যারান্টি দেব না।”

রাশিয়ান কর্মকর্তারা জেলেনস্কির মন্তব্যকে হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা জেলেনস্কির বিরুদ্ধে ৯ মে-এর অনুষ্ঠানে যোগদানের পরিকল্পনাকারী বিদেশী নেতাদের সরাসরি হুমকি দেওয়ার অভিযোগ করেছেন।

ক্রেমলিন হুুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, “কেউ গ্যারান্টি দিতে পারে না যে, ৯ মে বিজয় দিবস উদযাপনের সময় ইউক্রেন মস্কোতে হামলা করলে কিয়েভ ১০ মে পর্যন্ত টিকে থাকবে।”

রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের ডেপুটি চেয়ারম্যান দিমিত্রি মেদভেদেভ টেলিগ্রামে বলেছেন, “তিনি (জেলেনস্কি) পবিত্র দিবসে কুচকাওয়াজ এবং উদযাপনে আসা বিদেশি নেতাদের শারীরিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি দিচ্ছেন। তার বক্তব্য.

.. অবশ্যই, একটি সরাসরি হুমকি।”

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সাংবাদিকদের বলেন, “পুতিনের তিন দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব ‘শান্তির জন্য ইউক্রেনের প্রস্তুতির পরীক্ষা’। এবং আমরা অবশ্যই সরকারি ছুটির দিনে সংঘাত কমানোর লক্ষ্যে পদক্ষেপের জন্য অপেক্ষা করব।”

ঢাকা/ফিরোজ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইউক র ন ইউক র ন কর ছ ন র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

রয়েল টিউলিপে এনসিপি নেতাদের অবস্থান, ষড়যন্ত্রের অভিযোগে বিএনপির

কক্সবাজারে ইনানীর সি পার্ল বিচ রিসোর্টে (পুরোনো নাম রয়েল টিউলিপ) জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাদের অবস্থান এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠকের গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ার পর প্রতিবাদে সভা করেছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। তাদের অভিযোগ, রয়েল টিউলিপে বসে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। 

মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) দুপুর ২টার দিকে রয়েল টিউলিপের সামনে প্রতিবাদ সভা করেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে কক্সবাজারে পৌঁছান এনসিপির পাঁচ নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ, সার্জিস আলম, ডা. তাসমিন জারা, নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ও খালেদ সাইফুল্লাহ। 

প্রতিবাদ সভার নেতৃত্ব দেন উখিয়া উপজেলা বিএনপির সাবেক দপ্তর সম্পাদক সেলিম সিরাজী। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এখনো ষড়যন্ত্র থেমে নেই। যারা ভোটে ক্ষমতায় আসতে পারবে না, তারা এখানে বসে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। খুনি শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার এক বছর পূর্ণ হয়েছে আজ। সেই আনন্দের মুহূর্তে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের কারণে আমাদের এখানে প্রতিবাদে আসতে হয়েছে।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কক্সবাজার জেলা পুলিশের এক কর্মকর্তা রাইজিংবিডিকে বলেন, “এনসিপির নেতারা মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) সকাল ১১টা ২৫ মিনিটে বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে কক্সবাজার আসেন। পরে ইনানীর সি পার্ল বিচ রিসোর্টের (রয়েল টিউলিপ) ৫০০১, ৫০০২ ও ৫০০৩ নম্বর কক্ষে অবস্থান নেন।”

তিনি আরও বলেন, “এই রিসোর্টে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত পিটার হাস নেই। এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলমের স্ত্রীসহ তারা ঘুরতে এসেছেন।’’

ওই রিসোর্টের কক্ষ আগে থেকে বুকিং করা ছিল না বলেও জানান তিনি। 

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এনসিপির পাঁচ নেতার হঠাৎ কক্সবাজার আগমনের বিষয়টি প্রশাসন কিংবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও অবগত করা হয়নি।

রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে যে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক বাংলাদেশস্থ রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠক করতে কক্সবাজারে গিয়েছেন এই পাঁচ নেতা।

এনসিপি নেতাদের বহন করে বিমানবন্দর থেকে রয়েল টিউলিপে নিয়ে যাওয়া গাড়ির চালক নুরুল আমিন জানান, তার গাড়িতে করে হাসনাত আবদুল্লাহ, সারজিস আলম ও নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারীসহ দুইজন নারী- একজন সারজিস আলমের স্ত্রী এবং অপরজন সমন্বয়ক (তাসনিম জারা) রয়েল টিউলিপে যান।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. সাইফ উদ্দিন শাহীন বলেন, “এনসিপির পাঁচ নেতা রয়েল টিউলিপে অবস্থান করছেন। তবে, এখানে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত পিটার হাস নেই। পুরো হোটেলে মাত্র তিনজন বিদেশি আছেন, তারা সবাই চীনের নাগরিক।”এদিকে এনসিপি নেতা খালেদ সাইফুল্লাহ একটি সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, “আমরা এখানে পিটার হাস কিংবা অন্য কারো সাথে কোন মিটিং করিনি। এমনকি পিটার হাসের সঙ্গে আমাদের দেখাও হয়নি। আমরা কয়েকজন এখানে ঘুরতে এসেছি।” 
 

তারেকুর//

সম্পর্কিত নিবন্ধ