দার্জিলিংয়ের মিরিক লেক-ইন্দ্রধনু সেতু
Published: 4th, May 2025 GMT
ভ্রমণের শুরুটা হয়েছিল গত বছরের নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে সহধর্মিণীর প্রবল জোরাজুরিতে। ব্যাগপত্র গুছিয়ে দুজন চেপে বসি ঢাকার শ্যামলী থেকে ছেড়ে যাওয়া রাতের বাসে। গন্তব্য পাহাড়ের রানি দার্জিলিং। ভোরবেলায় বাস পৌঁছায় বুড়িমারী-চ্যাংড়াবান্ধা স্থলবন্দরে। শীতের হালকা কুয়াশায় ভেজা রোদের সোনালি ছোঁয়া। রোদ পোহাতে পোহাতে আমরা কিছুক্ষণ অপেক্ষা করি বাস কাউন্টারে, এরপর সকালের নাশতা বিখ্যাত ‘বুড়ির হোটেল’-এ।
সকাল নয়টার দিকে বাস কাউন্টার থেকে আমাদের ইমিগ্রেশনে যাওয়ার কথা বলা হলো। নতুন ভারতীয় ভিসা ইস্যু না হওয়ায় লোকজন কম হলেও কাউন্টারের সংখ্যা সীমিত থাকায় বেশ সময় লেগে যায়। ইমিগ্রেশান পার করে বর্ডারে এক অসাধারণ ঘটনা—বিজিবি চেকপোস্টে দায়িত্বপ্রাপ্ত এক সদস্য আমার স্ত্রীর পাসপোর্ট দেখে বলে উঠলেন, ‘আরে! আমরা তো একই এলাকার!’ তারপর যা আন্তরিকতা, সাহায্য আর আতিথেয়তা পেলাম, সেটা ভোলার নয়। তখন মনে হলো, আমরা যেখানেই থাকি, মন পড়ে থাকে আমাদের নিজ জায়গায়। নিজ এলাকার মানুষকে মনে হয় পরম আপন।
চ্যাংড়াবান্ধা থেকে ভারতীয় ইমিগ্রেশন পেরিয়ে শিলিগুড়ির উদ্দেশে যাত্রা শুরু হয় তুলনামূলক ছোট্ট কিন্তু আরামদায়ক একটা বাসে। পথজুড়ে চোখে পড়ে জলপাইগুড়ির অপূর্ব চা–বাগান আর সবুজের সমারোহ। মাথায় তখন ঘুরপাক খাচ্ছে সমরেশ মজুমদারের ‘উত্তরাধিকার’–এ জলপাইগুড়ির ডালাসের চা–বাগান।
‘নাগরিক সংবাদ’-এ জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর আমরা পৌঁছাই শিলিগুড়ি।
যাত্রা শুরুর আগে অনেক ঘাঁটাঘাঁটি করে রুট ঠিক করেছিলাম মিরিক লেক হয়ে লেপচাজগত। কিন্তু ওই এলাকায় ভ্রমণে অভিজ্ঞদের পরামর্শ ঠিক তার উলটোটা ছিল। সবাই বলছিল, এত সময় পাওয়া যাবে না, ইমিগ্রেশনে সময় চলে যাবে। কিন্তু শিলিগুড়ি পৌঁছে মনের ভেতর থেকে ডাক এল, ‘একবার মিরিক দেখে নিই!’ শিলিগুড়িতে কোনোমতে দুপুরের খাবার সেরে রিজার্ভ গাড়ি নিয়ে ছুট দিলাম পাহাড়ি পথে, মিরিক লেকের উদ্দেশে।
যেতে যেতেই সময় কুলানোর চিন্তায় চালককে বারবার জিজ্ঞাসা করছিলাম, কত সময় লাগবে? তিনি বললেন, ‘পাহাড় কিন্তু এক জীবন্ত মরীচিকা!’ গন্তব্য চোখে দেখলে কাছে মনে হয়, কিন্তু পথ ফুরোয় না.
শিলিগুড়ি থেকে ৪৬ কিলোমিটার দীর্ঘ পাহাড়ি পথ পেরিয়ে যখন মিরিক লেকে পৌঁছালাম, তখন বিকেলের শেষ আলো, হিমেল ঠান্ডা চারপাশে। আর সেই সঙ্গে শুরু হলো হালকা ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। দার্জিলিংয়ের মাটিতে পা দিয়েই এমন সুন্দর প্রাকৃতিক আয়োজন হবে ভাবতেই পারিনি।
স্থানীয় মানুষের কাছে ‘সুমেন্দু লেক’ নামে পরিচিত ১ দশমিক ২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ কৃত্রিম মিরিক লেকটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১ হাজার ৪৯৫ মিটার উঁচুতে অবস্থিত। লেকের এক পাশে পাইনবন, অন্য পাশে অসংখ্য ফুলের গাছে সাজানো বাগান।
ঝিরিঝিরি বৃষ্টির মধ্যে শান্ত মিরিক লেকের ধারে হাঁটা, ফুলে ভরা পার্ক, নিরিবিলি পরিবেশ—এ যেন প্রকৃতির এক নিখুঁত উপস্থাপনা। কিছুক্ষণ পরই আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল এক অপূর্ব দৃশ্য, হাঁটতে হাঁটতে লেকের মাঝে অবস্থিত ৮০ ফুট দীর্ঘ পেডেস্ট্রিয়ান ব্রিজে (হাঁটার সেতু) এসে দাঁড়ালাম, কিছু ছবি তুললাম—বৃষ্টি থেমে যেতেই ঝকঝকে আকাশে মিরিক লেকের পূর্ব আকাশে রংবেরঙের ছাদওয়ালা বাড়িগুলোর ওপরে দেখা দিল একটি পরিপূর্ণ রংধনু। এমন রংধনু বহু বছর দেখিনি। প্রায় ১৮ ঘণ্টার দীর্ঘ যাত্রার সব ক্লান্তি যেন মুহূর্তেই মুছে গেল। যেন প্রকৃতি নিজেই আমাদের জন্য সব আয়োজনসহ অপেক্ষা করছিল। পরে নেট ঘাঁটাঘাঁটি করে জানলাম, ব্রিজটির নামই ‘ইন্দ্রাণী বা ইন্দ্রধনু সেতু’ বা সোজা বাংলায় রংধনু সেতু। কারণ, বৃষ্টিপ্রবণ এ এলাকায় বৃষ্টির পরে প্রায়ই এ সেতু থেকে রংধনুর দেখা পাওয়া যায়।
সন্ধ্যা নেমে এলে আমাদের তাড়াহুড়া শুরু হয় ২০ কিলোমিটার দূরে লেপচাজগতের দিকে, তবে এই মোহময় পরিবেশে লেকের পাশে দাঁড়িয়ে আমাদের মতো ‘মোমো লাভার’দের মন তো থামানোই দায়। তার ওপর সেটা যদি হয় দার্জিলিংয়ে বসে দার্জিলিং মোমো প্রথমবার চেখে দেখার সুযোগ, তাহলে তো কথাই নেই। তাই আমরা বসে পড়ি পাশের একটি ধাবায়—ভেজ মোমো ও স্থানীয় ভাষায় ডাল–মরিচের ঝাল চাটনি খাওয়ার জন্য। খেতে খেতে আমরা উপভোগ করতে থাকি—ভ্রমণের প্রথম দিনের সূর্য হাসতে হাসতে আমাদের থেকে বিদায় নিচ্ছে মিরিক লেকের ওপাশে।
এটা ছিল আমাদের দার্জিলিং যাত্রার প্রথম অধ্যায়।
একটা দীর্ঘ ভ্রমণ, ক্লান্তি, হাসি, প্রকৃতি আর ভালোবাসায় মোড়া প্রতিটি মুহূর্ত মনের ক্যানভাসে ধারণ করার চেষ্টা।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলে নতুন করে হামলা ইরানের, ৩ জন নিহতের দাবি
মঙ্গলবার সকালে পরপর তিন দফায় ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের দক্ষিণে তিনজন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির ফায়ার অ্যান্ড রেসকিউ সার্ভিস।
ইসরায়েলের জরুরি সেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড আদম ঘটনাস্থলের বর্ণনা দিয়ে জানায়, যে এলাকায় হামলা হয়েছে সেখানে গিয়ে আমরা দেখতে পেয়েছি কালো ধোঁয়া উড়ছে। সামনের দিকে এগোতেই দেখতে পাই একাধিক ভবনে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের ঘটনা ঘটেছে। একটি ভবনের বাইরে একজনকে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেছি। ভবনের ভেতর ঢোকার পর আমরা একজন নারী ও এক পুরুষকে অচেতন অবস্থায় পাই।
ইসরায়েলের জরুরি সেবা বিভাগ জানিয়েছে, হামলায় আহতদের জন্য জরুরি চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া হামলার পর যারা ভবন থেকে বেরিয়ে এসেছে তাদেরও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে।